প্রবাসী ছেলে জীবনে প্রথম মাসের বেতন পেয়ে তার বাবাকে ফোন করেছে-
হ্যালো, বাবা?
-হ্যা বাবা কেমন আছিস?
-বাবা, আমি ভালো আছি। তুমি ভালো আছো তো?
-শরীরটা ভালো, তবে তোকে খুব মনে পড়ে। বাদ দে তোর কি খবর বল?
-আমিও ভালো আছি। আমি সেলারি পেয়েছি বাবা। পুারো এক লাখ।
-আরে বাহ, বলিস কি রে?
-বাবা একটা কথা বলি? ( কিছুটা দুষ্টুমির ছলে)
-এতোদিন পর ফোন করেছিস, মাত্র একটা কথাই বলবি?
-বাবা তুমি তো বলেছিলে, পিতৃঋণ কোনো দিন শোধ হয় না।
তুমি ছাব্বিশ বছরে আমার পেছনে যতো টাকা খরচ করেছো, তুমি কি জানো আমি আগামী
তিন বছরে সে টাকা তোমায় ফিরিয়ে দিতে পারি? আমার এখানে এক টাকা তোমার ওখানে একশ টাকা বাবা।
-বাবা : ( কিছুটা মুচকি হেসে) একটা গল্প শুনবি?
ছেলেটা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। নিচু স্বরে বললো, বলো বাবা শুনবো...
-বাবা : তোর বয়স যখন চার, আমার বেতন তখন তিন হাজার টাকা।
১,২০০ টাকা ঘর ভাড়া দিয়ে আঠারোশ টাকায় চলে সংসার। আমি আমার
সাধ্যের মধ্যে সব সময় চেষ্টা করেছি তোকে আর তোর মাকে সুখী রাখতে।
তোকে যেবার স্কুলে ভর্তি করলাম সেবার-ই প্রথম আমরা আমাদের ম্যারেজ ডে টা পালন করিনি। সে বছর তোর মাকে কিছুই দিতে পারিনি আমি। তুই যখন কলেজে উঠলি তখন আমার আর্থিক অবস্থা কিছুটা ভালো। আমার অনেক দিনের শখ ছিলো একটা মোটর বাইক কেনার। একদিন শো-রুম থেকে একটা বাইক দেখেও আসলাম। সে রাতে আমি স্বপ্নেও দেখেছিলাম আমি বাইকে চড়ে
অফিস যাচ্ছি। কিন্তু পরের দিন তুই বায়না ধরলি, বাড়ি থেকে বাসে করে ইউনিভার্সিটি যেতে তোর কষ্ট হয়। তোর কষ্টে আমার কষ্ট হয় বাবা। আমি তোকে বাইকটা কিনে দিয়েছিলাম।
আমার এক টাকা তোর ওখানে এখন এক পয়সা! কিন্তু মনে করে দেখ, ওই এক টাকা দিয়ে তুই বন্ধুদের নিয়ে পার্টি করেছিস, নতুন জামা-কাপড় কিনেছিস, বেড়াতে গেছিস। তোর প্রতিটা দিন ছিলো স্বপ্নের মতন।
আর এখন তুই আমাকে একশ টাকা পাঠালে তা আমি কিভাবে খরচ করবো, তা ভেবে পাইনা।
-ছেলে : বাবা চুপ করো প্লীজ! আমি তোমার কাছে চলে আসবো। টাকা না, তোমার ভালোবাসা তোমায় ফিরিয়ে দেবো।
-বাবা : হাহাহা। বোকা ছেলে! বাবাদের ভালোবাসা কখনও ফিরিয়ে দেয়া যায় না। তোকে একটা প্রশ্ন করি বাবা। ধর তুই, আমি আর তোর খোকা তিন জন এক নৌকায় বসে আছি। হঠাৎ নৌকাটা ডুবতে শুরু করলো, যে কোনো একজনকে বাঁচাতে পারবি তুই। কাকে বাঁচাবি বল? ছেলেটা হাজার চেষ্টা করেও একচুল ঠোঁট নড়াতে পারছে না!
-বাবা : কিছুক্ষণ পর বললেন, উত্তর দিতে হবে না। ছেলেরা বাবা হয়, বাবা কখনও ছেলে হতে পারে না। পৃথিবীতে সব চেয়ে ভারী জিনিস কি জানিস? পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ!
আমি শুধু আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে একটাই প্রার্থনা করি-আমি যেনো আমার ছেলের কাঁধে চড়ে কবরে যেতে পারি। তাহলেই তুই একটা ঋণ শোধ করতে পারবি-তোকে কোলে নেয়ার সেই ঋণ...
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৬ ভোর ৪:৫৯