আমাদের দেশে অনলাইন পত্রিকার সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নাগরিক সাংবাদিকতা। ফলে প্রযুক্তগত জ্ঞানের অধিকারী শিক্ষিত সচেতন নাগরিকরা ’নাগরিক সাংবাদিকতা’ বা সিটিজেন জার্নালিজম’র দিকে ঝুঁকছে। বাংলাদেশে অনলাইন পত্রিকা হিসাবে নিবন্ধনের জন্য ২ হাজার ১৮টি আবেদন করেছেন অনলাইন পত্রিকার জন্য। তবে অনলাইন পত্রিকার সঠিক সংখ্যা বলা কঠিন।
বর্তমানে দেশে বেসরকারি অনুমোদিত টেলিভিশন চ্যানেলের সংখ্যা ৪৫টি আর মোট নিবন্ধিত পত্রিকার সংখ্যা ৩ হাজার ২৫টি। এর মধ্যে দৈনিক পত্রিকা রয়েছে ১ হাজার ১৯১টি, অর্ধ সাপ্তাহিক পত্রিকা ৩টি, সাপ্তাহিক পত্রিকা ১ হাজার ১৭৫টি। পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশিত হয় ২১২টি, মাসিক ৪০৪টি, দ্বিমাসিক ৭টি, ত্রৈমাসিক ২৮টি, চতুর্মাসিক ১টি, ষাণ্মাসিক ২টি এবং বার্ষিক পত্রিকা ২টি। (সূত্র: জাতীয় সংসদ অধিবেশন, ২০১৮, জানুয়ারি)।
এসব মিডিয়ার মাধ্যমে দেশের সব সমস্যা তুলে ধরা যেমন সম্ভব হয় না তেমনি মিডিয়ার আন্তরিকতার অভাবও রয়েছে। অন্যদিক সাংবাদিকতা করার শখ থাকলেও সে সুযোগ থেকে অনেকেই বঞ্চিত নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে। এসব মানুষদের জন্য নাগরিক সাংবাদিকতা করা সুযোগ রয়েছে দেশে। সুযোগটি সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেন blog.bdnews24.com ২০১১ সালের দিকে। ‘সচেতন নাগরিক, সচেতন নাগরিক সাংবাদিক’ শ্লোগানকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে নাগরিক সাংবাদিকতা করার সুযোগ পেয়ে নিজেক নাগরিক সাংবাদিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন অনেকে।
কারণ, সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের অনেক সাংবাদিক মালিকপক্ষের কারণে সব সংবাদ প্রকাশ বা প্রচার করতে পারে না। কিন্তু নাগরিক সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সে সুযোগ রয়েছে। সে জন্য অনেক প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিকও নাগরিক সাংবাদিকতাকে নেশা হিসেব গ্রহণ করছে যা নাগরিক সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এক মাইল ফলক। ‘প্রত্যেক নাগরিকই সাংবাদিক’ এ মূলমন্ত্রকে ধারণ করেই নাগরিক সাংবাদিকতা গড়ে উঠেছে। blog.bdnews24.com এ ক্ষেত্রে সফল। প্রতিদিনই ভিজিটর ও নাগরিক সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়েই চলছে।
স্বতস্ফূর্ত ও স্বপ্রণোদিত হয়ে গণমানুষের বা আম-জনগণের খবর ও তথ্য সংগ্রহ, পরিবেশন, বিশ্লেষণ এবং প্রচারে অংশগ্রহণ করার নামই সিটিজেন জার্নালিজম বা নাগরিক সাংবাদিকতা। বর্তমানে বাংলাদেশে সিটিজেন জার্নালিজম ভিত্তিক উন্নয়ন সফলতার একটি সম্ভাবনা জেগে উঠেছে। এ্টি বিস্তার লাভ করার সাথে সাথে অধিকতর গুরুত্বের সাথে এর গতিপথ ইতিবাচক রাখতে হলে প্রস্তুতির পাশাপাশি পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। যাতে এর ব্যাপক প্রসার ঘটানো সম্ভব হয়। কারণ, দেশে বাড়ছে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা। বাংলাদেশে মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যা ১৪ কোটি এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৮ কোটিতে পৌঁছেছে। (সূত্র: ১৪ নভেম্বর ২০১৭ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। তাই শিক্ষিত মানুষরা সিটিজেন জার্নালিস্টের প্রতি আকৃষ্ট হলে প্রত্যন্ত এলাকার সমস্যার কথা সহজেই তুলে ধরার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সহজ হবে।
blog.bdnews24.com এর সঞ্চালক আইরিন সুলতানা ‘সিটিজেন জার্নালিজম নিয়ে অল্পস্বল্প গল্প‘ নামক এক লেখায় নাগরিক সাংবাদিকতার কিছু নাম রয়েছে তা দেখিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, সিটিজেন জার্নালিজম -ই বেশি প্রচলিত, তবে বিভিন্ন সময়ে এর ভিন্ন নামকরণও ঘটেছে। যেমন –
স্ট্রিট জার্নালিজম, পাবলিক জার্নালিজম, ডেমোক্রেটিক জার্নালিজম, পারটিসিপেটরি জার্নালিজম।
যদিও অনেক প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক নাগরিক সাংবাদিকতা ধারণাকে মানতে নারাজ। এ ক্ষেত্রে ডেভিড সাইমন একজন। তিনি বলেছেন, ‘সখের বশে লেখালেখি করা আনপেইড ব্লগারদের পক্ষে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত, পেশাদার, ঝানু সাংবাদিকদের জায়গা দখল করা সম্ভব নয়।’ কথাটির সঙ্গে অনেক খ্যাতিমান সাংবাদিক একমত পৌষণ করলেও কথাটির ধারণা পাল্টে দিয়েছে এ দেশের সিটিজেন জার্নালিস্টরা। ফলে নাগরিক সাংবাদিকতার বিপ্লব ঘটেছে। অনেক নাগরিক সাংবাদিকের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে জনপ্রিয় সংবাদপত্র ও টেলিভিশন অনুসন্ধ্যানী প্রতিবেদন তৈরি করছে যা নাগরিক সাংবাদিকতাকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে বলে মনে করি।
পরিশেষে বলতে চাই, প্রত্যেক নাগরিকই সাংবাদিক। তাই বর্তমান যুগ হচ্ছে সিটিজেন জার্নালিজম এর যুগ। এ যুগে সবাই নিজস্ব রচিত সংবাদ মুক্তভাবে প্রকাশ করতে পারছে সহজে। সমস্যা, সম্ভাবনা ও উন্নয়নসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের খবর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিচ্ছে। জয়তু সিটিজেন জার্নালিজম বা নাগরিক সাংবাদিকতা।