সিনেমা হল সব মানুষের কাছে পরিচিত। সিনেমা শব্দটি ইংরেজি শব্দ। বাংলা অর্থ চলচ্চিত্র,ছায়াছবি ও বায়োস্কোপ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাধারণ মানুষের কাছে সিনেমা ‘বই’ হিসেবেই সুপরিচিত। একটা সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাধারণ মানুষের বিনোদনের প্রধান মাধ্যম ছিল সিনেমা। এ জেলায় স্বাধীনতার পর থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত সিনেমা হলের আঙিনা দর্শকদের পদচারণায় মুখরিত থাকতো। রাস্তার পাশে থাকত সিনেমার রঙিন পোস্টার। কখনও ভ্যান গাড়ি , কখনও ঘোড়ার গাড়িতে মাইকিং চলত আসিতেছে আসিতেছে ,চলিতেছে চলিতেছে বাবা কেন চাকর, জলন্ত বারুদ ইত্যাদি সিনেমার নাম। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে সন্ধ্যায় সিনেমা হলে ভীড় জমাতো সাধারণ পরিবারের দর্শকরা। মানুষের মুখে একটি কথা প্রচলিত ছিল যে যত বেশি সিনেমা দেখেছে সে তত বেশি চালাক চতুর হয়েছে। স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানরা একসঙ্গে সিনেমা উপভোগ করতো। এমনকি নবজাতকের সুন্দর নাম রাখার জন্য সিনেমা দেখতো বেশি বেশি। সিনেমা থেকে পছন্দনীয় নাম নির্বাচন করে সন্তানের নাম রাখতো।
তথ্য মতে, জেলায় ২০টি সিনেমা হল থাকলেও বর্তমানে মাত্র ২টি হল রয়েছে । যেগুলো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। নেই তেমন জৌলুস। শোনা যায় না সাধারণ মানুষের মুখে মুখে সিনেমার কাহিনী বা সিনেমার নাম। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে শিবগঞ্জ বাজারে শিবগঞ্জ সাংস্কৃতিক পরিষদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় পদ্মা নামে একটি সিনেমা হল যা আজও টিকে আছে।তবে আগের মতো সিনেমার দর্শক নেই।এরপর ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে শিবগঞ্জ বাজারে এদ্রিশ আহমেদ মোল্লা নামক স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর উদ্যোগে লাকি সিনেমা হল প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সিনেমা হল একসময় দর্শকের ভীড়ে মুখর থাকতো।কিন্তু বিগত তত্ত্ববধায়ক সরকারের আমলে হলটি বন্ধ হয়ে যায়। হলের জায়গায় মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।
বিনোদপুর বাজারে রফিকুল ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন ঝুমুর হল। দাদনচকে স্মৃতি, কানসাট বাজারে সাপলা, রানীহাটি বাজারে স্মরণিকা সিনেমা হল নব্বই দশকের দিকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। শিবগঞ্জের এক প্রত্যন্ত অঞ্চল আড়গাড়া হাটে স্থানীয় ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে আশা সিনেমা হল।হলটি ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে বন্ধ হয়ে যায়। ভোলাহাট উপজেলায় স্বপ্না ও কিরণ নামে দুটি সিনেমা হল খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও এখন বন্ধ। হল ভেঙে বহুতল ভবন তৈরি করা হয়েছে।গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুরের ব্যবসায়ী মোঃ ফারুক আলম ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে রঙধনু হল প্রতিষ্ঠা করে। রহনপুর বাজারের আরেকি জনপ্রিয় সিনেমা হল ছিল মুক্তাশা যা প্রতিষ্ঠা করেন মুশা সরকার। অভিলাষ নামের সিনেমা হলটি গোমস্তাপুর উপজেলার সব মানুষের কাছে অতি পরিচিত ছিল। কিন্তু এখন গোমস্তাপুর উপজেলার সব সিনেমা হল পুরোপুরি বন্ধ আছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে কোনোমতে টিকে আছে অত্যাধুনিক সিনেমা হল রাজমহল।এ হলটির মালিক স্থানীয় ব্যবসায়ী সাবের মীর। অথচ একসময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে আক্তার ইমাম প্রতিষ্ঠা করেছিল গুলশান হল। পরবর্তীকালে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রূহুল আমিন হলটি কিনে নিয়েছিল।এ সীনেমা হলে সুপার হিট সিনেমা চলতো।এ সিনেমা হল ভেঙে ক্লাব সুপার মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে।নেই হলের কোনো চিহ্ন।একইভাবে সন্ধ্যা সিনেমা হলে সিনেমা দেখা খুব গর্বের বিষয় ছিল।এ সিনেমা হল প্রতিষ্ঠা করেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রূহুল আমিন।এখন হলের জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণ করে কমিউনিটি সেন্টার তৈরি করা হয়েছে।উদয়ন মোড়ে উদয়ন সিনেমা হলে বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি সিনেমা চলতো।দূর দূরান্ত থেকে দর্শক আসতো দলে দলে।এখন উদয়ন সিনেমা হল পরিত্যক্ত রয়েছে কয়েক বছর থেকে।এ হলের মালিক সাবের মীর। নাচোল উপজেলায় ছিল আশা ও প্যারাডাইস নামে দুটি সিনেমা হল। বর্তমানে এ সিনেমা হলে পোল্ট্রি মুরগির খাদ্যের গোডাউন তৈরি করা হয়েছে।
জেলার সিনেমা হলগুলোতে দুই ঈদে থাকতো তরুণ-তরুণীদের উপচে পড়া ভিড়।চলতো টিকেট কেনার প্রতিযোগিতা। টিকেট না পেয়ে অনেক সিনেমা প্রেমীরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিনেমা দেখতো। সে সোনালি অতীত আর নেই। কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। শুধু রয়েছে কতিপয় হলের নাম মানুষের মুখে মুখে। অধিকাংশ সিনেমা হলের স্মৃতি চিহ্ন বলতে কিছুই নেই।তবে সিনেমা হলের নামানুসারে নামকরণ হয়েছিল বিভিন্ন মোড় ও মহল্লার।
লোকসানের ভারেই বন্ধ হয়ে গেছে এসব সিনেমা হলগুলো। এছাড়াও মুক্ত আকাশ সাংস্কৃতির কারণে ঘরে বসেই দেশি-বিদেশি সিনেমা দেখা যাচ্ছে সহজেই। শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ ইউটিউব ভিডিও চ্যানেলে সিনেমা দেখা। পাশাপাশি এক শ্রেণির মানুষ সামাজিক যোগাযোগ সাইটের মাধ্যমে সময় কাটাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে।দেশি চলচ্চিত্রের মানও খুব ভালো নয়।এতে সিনেমা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে দর্শকরা। দেশি সিনেমা দ্বারা দর্শক টানা খুব চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জেলার সিনেমা দর্শক ও সাংস্কৃতিক কর্মী ফাইজুর রহমান মানি বলেন, এখনকার নির্মিত বাংলা সিনেমার কাহিনি দর্শকের টানতে পারছে না। এছাড়া ঘরে ঘরে রয়েছে টেলিভিশন।
মোঃ ইউসুফ আলী নামে একজন সিনেমা দর্শক জানান, বর্তমান যুগে সবাই ব্যস্ত। অপরদিকে হাতের মুঠোয় ইউটিউব চ্যানেল চলে আসায় হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে মন চাই না। বর্তমানে মানসম্মত সিনেমা তৈরি হচ্ছে না।
সিনেমা হল এখন কালের সাক্ষী:
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২০ টি সিনেমা হলের মধ্যে ১৮টি বন্ধ
আজমাল হোসেন মামুন:
সিনেমা হল সব মানুষের কাছে পরিচিত। সিনেমা শব্দটি ইংরেজি শব্দ। বাংলা অর্থ চলচ্চিত্র,ছায়াছবি ও বায়োস্কোপ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাধারণ মানুষের কাছে সিনেমা ‘বই’ হিসেবেই সুপরিচিত। একটা সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাধারণ মানুষের বিনোদনের প্রধান মাধ্যম ছিল সিনেমা। এ জেলায় স্বাধীনতার পর থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত সিনেমা হলের আঙিনা দর্শকদের পদচারণায় মুখরিত থাকতো। রাস্তার পাশে থাকত সিনেমার রঙিন পোস্টার। কখনও ভ্যান গাড়ি , কখনও ঘোড়ার গাড়িতে মাইকিং চলত আসিতেছে আসিতেছে ,চলিতেছে চলিতেছে বাবা কেন চাকর, জলন্ত বারুদ ইত্যাদি সিনেমার নাম। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে সন্ধ্যায় সিনেমা হলে ভীড় জমাতো সাধারণ পরিবারের দর্শকরা। মানুষের মুখে একটি কথা প্রচলিত ছিল যে যত বেশি সিনেমা দেখেছে সে তত বেশি চালাক চতুর হয়েছে। স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানরা একসঙ্গে সিনেমা উপভোগ করতো। এমনকি নবজাতকের সুন্দর নাম রাখার জন্য সিনেমা দেখতো বেশি বেশি। সিনেমা থেকে পছন্দনীয় নাম নির্বাচন করে সন্তানের নাম রাখতো।
তথ্য মতে, জেলায় ২০টি সিনেমা হল থাকলেও বর্তমানে মাত্র ২টি হল রয়েছে । যেগুলো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। নেই তেমন জৌলুস। শোনা যায় না সাধারণ মানুষের মুখে মুখে সিনেমার কাহিনী বা সিনেমার নাম। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে শিবগঞ্জ বাজারে শিবগঞ্জ সাংস্কৃতিক পরিষদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় পদ্মা নামে একটি সিনেমা হল যা আজও টিকে আছে।তবে আগের মতো সিনেমার দর্শক নেই।এরপর ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে শিবগঞ্জ বাজারে এদ্রিশ আহমেদ মোল্লা নামক স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর উদ্যোগে লাকি সিনেমা হল প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সিনেমা হল একসময় দর্শকের ভীড়ে মুখর থাকতো।কিন্তু বিগত তত্ত্ববধায়ক সরকারের আমলে হলটি বন্ধ হয়ে যায়। হলের জায়গায় মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।
বিনোদপুর বাজারে রফিকুল ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন ঝুমুর হল। দাদনচকে স্মৃতি, কানসাট বাজারে সাপলা, রানীহাটি বাজারে স্মরণিকা সিনেমা হল নব্বই দশকের দিকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। শিবগঞ্জের এক প্রত্যন্ত অঞ্চল আড়গাড়া হাটে স্থানীয় ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে আশা সিনেমা হল।হলটি ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে বন্ধ হয়ে যায়। ভোলাহাট উপজেলায় স্বপ্না ও কিরণ নামে দুটি সিনেমা হল খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও এখন বন্ধ। হল ভেঙে বহুতল ভবন তৈরি করা হয়েছে।গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুরের ব্যবসায়ী মোঃ ফারুক আলম ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে রঙধনু হল প্রতিষ্ঠা করে। রহনপুর বাজারের আরেকি জনপ্রিয় সিনেমা হল ছিল মুক্তাশা যা প্রতিষ্ঠা করেন মুশা সরকার। অভিলাষ নামের সিনেমা হলটি গোমস্তাপুর উপজেলার সব মানুষের কাছে অতি পরিচিত ছিল। কিন্তু এখন গোমস্তাপুর উপজেলার সব সিনেমা হল পুরোপুরি বন্ধ আছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে কোনোমতে টিকে আছে অত্যাধুনিক সিনেমা হল রাজমহল।এ হলটির মালিক স্থানীয় ব্যবসায়ী সাবের মীর। অথচ একসময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে আক্তার ইমাম প্রতিষ্ঠা করেছিল গুলশান হল। পরবর্তীকালে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রূহুল আমিন হলটি কিনে নিয়েছিল।এ সীনেমা হলে সুপার হিট সিনেমা চলতো।এ সিনেমা হল ভেঙে ক্লাব সুপার মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে।নেই হলের কোনো চিহ্ন।একইভাবে সন্ধ্যা সিনেমা হলে সিনেমা দেখা খুব গর্বের বিষয় ছিল।এ সিনেমা হল প্রতিষ্ঠা করেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রূহুল আমিন।এখন হলের জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণ করে কমিউনিটি সেন্টার তৈরি করা হয়েছে।উদয়ন মোড়ে উদয়ন সিনেমা হলে বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি সিনেমা চলতো।দূর দূরান্ত থেকে দর্শক আসতো দলে দলে।এখন উদয়ন সিনেমা হল পরিত্যক্ত রয়েছে কয়েক বছর থেকে।এ হলের মালিক সাবের মীর। নাচোল উপজেলায় ছিল আশা ও প্যারাডাইস নামে দুটি সিনেমা হল। বর্তমানে এ সিনেমা হলে পোল্ট্রি মুরগির খাদ্যের গোডাউন তৈরি করা হয়েছে।
জেলার সিনেমা হলগুলোতে দুই ঈদে থাকতো তরুণ-তরুণীদের উপচে পড়া ভিড়।চলতো টিকেট কেনার প্রতিযোগিতা। টিকেট না পেয়ে অনেক সিনেমা প্রেমীরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিনেমা দেখতো। সে সোনালি অতীত আর নেই। কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। শুধু রয়েছে কতিপয় হলের নাম মানুষের মুখে মুখে। অধিকাংশ সিনেমা হলের স্মৃতি চিহ্ন বলতে কিছুই নেই।তবে সিনেমা হলের নামানুসারে নামকরণ হয়েছিল বিভিন্ন মোড় ও মহল্লার।
লোকসানের ভারেই বন্ধ হয়ে গেছে এসব সিনেমা হলগুলো। এছাড়াও মুক্ত আকাশ সাংস্কৃতির কারণে ঘরে বসেই দেশি-বিদেশি সিনেমা দেখা যাচ্ছে সহজেই। শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ ইউটিউব ভিডিও চ্যানেলে সিনেমা দেখা। পাশাপাশি এক শ্রেণির মানুষ সামাজিক যোগাযোগ সাইটের মাধ্যমে সময় কাটাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে।দেশি চলচ্চিত্রের মানও খুব ভালো নয়।এতে সিনেমা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে দর্শকরা। দেশি সিনেমা দ্বারা দর্শক টানা খুব চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জেলার সিনেমা দর্শক ও সাংস্কৃতিক কর্মী ফাইজুর রহমান মানি বলেন, এখনকার নির্মিত বাংলা সিনেমার কাহিনি দর্শকের টানতে পারছে না। এছাড়া ঘরে ঘরে রয়েছে টেলিভিশন।
মোঃ ইউসুফ আলী নামে একজন সিনেমা দর্শক জানান, বর্তমান যুগে সবাই ব্যস্ত। অপরদিকে হাতের মুঠোয় ইউটিউব চ্যানেল চলে আসায় হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে মন চাই না। বর্তমানে মানসম্মত সিনেমা তৈরি হচ্ছে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৩৩