আমাদের দেশে এখন হাজার হাজার মা নিজের বুকে দুধ পান করার পরিবর্তে গাভী বা বাজারে কৃত্রিম দুধ পান করান নিজের সৌন্দর্য কে ধরে রাখার জন্য। এতে লাভের চেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে। ভবিষ্যত জীবন অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে শিশুর। মায়ের দুধ হচ্ছে শিশুর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট খাবার এবং পানীয়। শিশুর রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ মায়ের দ্রুত আরোগ্য লাভের ক্ষেত্রে মায়ের বুকের দুধের বিকল্প নেই।
তাই মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘দি ওয়ার্ল্ড এলায়েন্স ফর ব্রেষ্ট ফিটিং একশন’-এর উদ্যোগে এবং ইউনিসেফের সমর্থনে ১৯৯২ সাল থেকে ১-৭ আগষ্ট পালিত হয়ে আসছে ‘মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ’। দিবসটি উপলক্ষে এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘কাজের মাঝে শিশু করবে মায়ের দুধ পান, সবাই মিলে সব খানে করি সমাধান। বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এবার প্রতিপাদ্যের সঙ্গে ৭টি বিষয়কে অন্তর্ভুক্তি করা হয়েছে।
এগুলো হল- সুযোগ, মাতৃত্বকালীন ছুটি, মাতৃত্বকালীন সুবিধা বা নগদ সহায়তা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, চাকরির সুরক্ষা ও বৈষম্যহীনতা, মাতৃদুগ্ধ দানের বিরতি এবং দুগ্ধদানের সুব্যবস্থা।
অপুষ্টির কারণে প্রতিদিন দেশে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সী ২০০ শিশু মারা যাচ্ছে। জন্মের প্রথম ঘণ্টায়, প্রথম ছয় মাস এবং প্রথম দুই বছর মায়ের ধুধ পান করলে শিশু মৃত্যুর হার ব্যাপকভাবে হৃাস পায় এবয়ং শিশু সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়। গত ৭ জুলাই ২০০৮ বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ দিবস পালন উপলক্ষে এক জাতীয় পরামর্শক সভায় এ কথা বলেন। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বসস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথম ঘণ্টায় শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ালে বছরে ২৭ হাজার নবজাতকের প্রাণ রক্ষা করা যায়। গত ১০ বছরে মৃত্যুর হার একটা কমেনি। এর কারণ হচ্ছে, এই সময় বুকের দুথ খাওয়ানোর হারও কমেনি। জন্মের প্রথম ঘণ্টায় মায়ের দুধ পান করালে ৬০ শতাংশ সংক্রমণ হ্রাস পেতে পারে। অথচ এ ধারণা আমাদের দেশের অশিক্ষিত মায়েদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শিক্ষিত মায়েরাও ভুল করে থাকে। দুর্দশা পোহাতে হয় নিষ্পাপ শিশুকে।
২০০১ সালে ৫৪তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে শিশুদের জন্মের প্রথম ৬ মাস শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানোর প্রস্তাব গ্রহীত হয়। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ সাস্থ্য অধিদপ্তর এই বিষয়ে যথেষ্ট ভূমিকা নিলেও অধিকাংশ মা আজও এ ব্যাপারে অসচেতন। বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ শিশু মায়ের দুধ পান করতে না পাওয়ায় অকালে প্রাণ হারায়।
পবিত্র কোরানুল কারীম ও হাদীস শরীফে মায়ের বুকের দুধ শিশুকে খাওয়ানোর ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পবিত্র কোরানুল কারীমে বলা হয়েছে, মায়েরা তাদের সন্তানকে পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করাবে।” স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মায়ের দুধে পর্যাপ্ত পরিমাণে আমিষ, শর্করা, স্নেহ ও ভিটামিন রয়েছে। ৬ মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করানো হলে শিশু তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে। বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ থেকে রক্ষা পায়। তাই সকল শিশুর পুষ্টি ও তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠার জন্য মায়ের বুকের দুধের বিকল্প কিছু নেই। এমনকি ডায়রিয়া বা পানি বাহিত রোগ দেখা দিলেও কোন অবস্থাতেই মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না। মায়ের বুকের দুধ পান না করানোর ফলে শিশুর মানসিক বিকাশ ও শারীরিক গঠনের জন্য শিশুদের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এতে দেখা যায়, যে সব শিশুরা মায়ের বুকের দুধ পান করার সুযোগ পায় নি তাদের অধিকাংশই পুষ্টিহীনতায় ভূগে। শিশু প্রতিবন্ধিতার শিকারও হয়। পড়া-শুনায় অমনযোগীও হয়ে থাকে। এখনও অনেকে শাল দুধ ফেলে দেয়। কিন্তু এটা মোটেও উচিত নয়। শাল দুধ শিশুর জন্য খুবই উপকারী। মায়ের দুধ শিশুর জন্য যেমন নিরাপদ, পরিষ্কার-পরিছন্ন, স্বাস্থ্যসম্মত, সহজেপ্রাপ্য তেমনি শিশু অন্যান্য সকল পুষ্টিকর ও দামী খাবারের চেয়ে সহজে হজম করতে পারে। মায়ের বুকের দুধে থাকে প্রয়োজনী তাপমাত্রা। যার দরুণ শিশুর দাত ও দাতের মাড়ি গঠনে খুবই প্রয়োজন।
তাই পরিশেষে বলা যেতে পারে, মায়ের দুধ মহান আলাহর একটি বিশেষ নিয়ামত। কারণ, অনেক মায়ের সন্তান হওয়ায় পরও শিশুকে পান করার পরিমাণ দুধ হয় না। এ ক্ষেত্রে পূর্বে থেকে মায়েদের পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। আজকের শিশু আগামী দিনের উজ্জ্বল ভবিষ্যত। শিশুদের শারীরিক মানসিক বিকাশের জন্য মায়ের বুকের দুধ খাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। এটা শিশুর জন্য মায়ের কাছে অধিকার বা প্রাপ্য রয়েছে। মায়ের দুধপান করা শিশুর মৃত্যুহারও একেবারে কম।
সরকারি-বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি সকলের উচিত মায়ের দুধপান করার ব্যাপারে বিভিন্ন কার্যক্রম পালন করা। প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক সচেতনতামূলক লেখা এবং সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আসুন এ ব্যাপারে সকলে সচেতন হয় এবং এগিয়ে আসি।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৮