‘ডাক সার্ভিস বন্ধের আল্টিমেটাম’ শিরোনামে একটি সংবাদ একটি অনলাইন পত্রিকায় দেখলাম।খবরটি দেখে সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘রানার’ কবিতার কয়েকটি লাইন মনে পড়ল,
রানার ছুটেছে তাই ঝুম্ঝুম্ ঘন্টা বাজছে রাতে
রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে,
রানার চলেছে, রানার !
রাত্রির পথে পথে চলে কোনো নিষেধ জানে না মানার ।
দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার-
কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার ।
ডাকবিভাগের অবিভাগীয় (ইডি) কর্মচারীদের মাসিক সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পোস্টাল ইডি কর্মচারী ইউনিয়ন। সরকার এ দাবি পূরণ না করলে আগামী ১৬ আগস্ট থেকে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর গ্রামীণ ডাকঘরসহ দেশের সকল শাখা ডাকঘরে ডাক সার্ভিস বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন কর্মচারিরা।আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধন থেকে এ ঘোষণা দিয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশ গ্রামীণ ডাকঘরে ই-সেন্টার চালু হচ্ছে। আর পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে সকল ডাকঘরে তথ্য প্রযুক্তির পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম করা হবে। ফলে ডাক সার্ভিসের গুরুত্ব আরো বৃদ্ধি পাবে।
বর্তমানে গ্রামীণ ডাকঘরে কাজ-কর্ম, সেবার মান ও ডাকবিভাগের আয় বৃদ্ধি হচ্ছে। এতে ইডি কর্মচারীরা অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। যার ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকারের সুনামও বাড়ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় গ্রামীণ ডাকঘরের একজন পোস্টমাস্টারের মাসিক সম্মানী ভাতা মাত্র এক হাজার ২৬০ টাকা। এটি কর্মচারীদের জন্য যেমন অসম্মানজনক, তেমনি সরকারের জন্যও লজ্জাজনক।বর্তমান বাজারে এ টাকা দিয়ে তেমন কিছু হয় না। মাসিক বাজার খরচও চলবেনা।ছেলে-মেয়েদের পড়া-লেখার খরচও কম নয়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে একজন ব্রাঞ্চ পোস্ট মাস্টারের সম্মানী ভাতা ৩৫ টাকা থেকে ৭৫ টাকায় উন্নীত করেন। এ বৃদ্ধির হার ছিলো ৭২ শতাংশ। এরপর থেকেই বৃদ্ধির হার কমতে থাকে।
পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে ৬৮ শতাংশ, ১৯৮১ সালে ৬৪ শতাংশ, ১৯৮২ সালে ৩০ শতাংশ, ১৯৮৪ সালে ২০ শতাংশ, ১৯৯১ সালে ৫০.৮৮ শতাংশ, ১৯৯৫ সালে ২০ শতাংশ, ১৯৯৯ সালে ২০ শতাংশ, ২০০৪ সালে ১০ শতাংশ, ২০১০ সলে ৩৪ শতাংশ ও ২০১৩ সালে ২৫ শতাংশ হারে ইডি কর্মচারীদের সম্মানীভাতা বাড়ানো হয়।
কর্মচারী ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রণালয় থেকে শতভাগ বৃদ্ধির নির্দেশনা থাকলেও ২০১৪ সালের জুলাই মাসে ডাক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মাত্র ২৫ শতাংশের প্রস্তাব পাঠানো হয়। এতে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে ডাক মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবটি ফেরত আসে। পরবর্তীতে ৫০ শতাংশ সম্মানীভাতা বাড়ানো হয়।
তাই কর্মচারিদের দাবি,ইডি সাব-পোস্ট মাস্টার’র ভাতা ১ হাজার ৬৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭ হাজার ৫০০ টাকা, ব্রাঞ্চ পোস্ট মাস্টারের ভাতা ১ হাজার ২৬০ টাকা থেকে ৬ হাজার ৫০০ টাকা, চিঠি বিলিকারীর ভাতা ১ হাজার ২৩০ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা, ডাক বহনকারীর ভাতা ১ হাজার ১৮০ টাকা থেকে ৫ হাজার ৫০০ টাকা এবং চৌকিদার ও ঝাড়ুদারদের ভাতা ১ হাজার ১৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা করা। এটি ইডি কর্মচারিদের ন্যায্য দাবি এতে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়। কারণ, একজন কর্মচারি এত অল্প বেতনে কিভাবে সংসার চালাবে তা সবার মনে প্রশ্ন জাগবে।
আমি একবার এক ইডি কর্মচারির বিরুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় ২০০০ সালের দিকে একটি রিপোর্ট লিখেছিলাম। তখন ওই কর্মচারি তাঁর দুর্দশার কথা জানিয়েছিল। সে বলেছিল, আপনি আমার বড় ক্ষতি করেছেন ভাইজান। আমি জনগণের স্বার্থে রিপোর্টটি করেছিলাম। মাঝে মধ্যে ওই কর্মচারির সাথে দেখা হয়। উনি এখনও আমার গ্রামের ডাকঘরে চাকুরির মাধ্যমে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাঁর ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। সন্তানদের ভাল প্রতিষ্ঠানে পড়া-লেখার সুযোগ দিতে পারেননি। পারেননি বাড়ি ঘর করতে। বাবার তৈরি করা বাড়িতে কোনো মতে থেকে দিনাতিপাত করেন।
এ ধরনের অনেক মানুষ রয়েছে যারা গ্রামীণ ডাকঘরে চাকরি করছেন। তাদের বয়স নেই অন্য পেশায় সম্পৃক্ত হওয়ার । আশায় আশায় প্রহর গুণে জীবনের মূল্যবান বয়সও শেষ করেছে; একদিন হয়ত চাকুরি স্থায়ীকরণ হবে। কিন্তু বর্তমান প্রযুক্তির যুগে ডাকঘরের ওপর মানুষ নির্ভর করে না ।আর চিঠি-পত্র তেমন পাঠায় না। তাই এ সেক্টরের ইডি কর্মচারিরা অবহেলার শিকার। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাই, গ্রামীণ ডাকঘরের ইডি কর্মচারিদের দাবি মেনে নিয়ে তাদের সেবা করার সুযোগ দিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:২১