somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গ: শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা

১২ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাতিসংঘ তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৮ দশমিক ৬ শ্রবণ প্রতিবন্ধী ও ৩ দশমিক ৯ হচ্ছে বাক প্রতিবন্ধী। এরা শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তুলনায় একেবারে পিছিয়ে বলা যেতে পারে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সাতটি বিদ্যালয়ে আসন রয়েছে মাত্র ২৭০ জন এবং বে-সরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছে শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা খরচ ব্যয়বহুল হওয়ায় কেবল উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা সুযোগ পান।
অথচ সুস্থ ও স্বাভাবিক শিশুদের জন্য দেশে রয়েছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ ও সোশাল অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ফর দি ভলনারেবল (সার্ভ) এর যৌথ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আমাদের দেশে প্রায় ২ লাখ ৫৭ হাজার ৬০০ জন শ্রবণ ও ৬২ হাজার ৪০০ বাক প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে যারা স্কুলে যাওয়ার উপযোগী। অথচ মাত্র ৪ ভাগ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। যে সব বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুরা শিার সুযোগ পাচ্ছে তারা উচ্চবিত্ত বা ধনাঢ্য পরিবারের। গ্রাম বা মফস্বল অঞ্চলের বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুরা মোটেই শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না।
তবে আমাদের দেশে প্রায় ২৪ লাখ গুরুতর শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী রয়েছে। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থা অন্যান্য প্রতিবন্ধী শিশুদের চেয়ে জটিল। এরা কথা বলতে পারে না। কানে শুনতে পায় না। একমাত্র তাদের পরিবারই কিছুটা বুঝে তাদের ভাষা। তা আবার সম্পূর্ণ রূপে নয়। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার মাধ্যম হচ্ছে ‘ইশারা ভাষা (Sign language) । এই ইশারা ভাষা বা Sign language জানা লোকের সংখ্যা খুবই কম। বলা যেতে পারে বাংলাদেশে হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন। ফলে এরা এখনোও শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রতিবন্ধী শিশুদের চেয়ে বেশি বঞ্চিত। সরকারিভাবে এদের শিক্ষার ব্যাপারে তেমন গবেষণা করা হয় না। বে-সরকারী সংস্থা সমূহ তেমন জোড়ালো ভূমিকা রাখে না। এমনকি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে কর্মরত সংগঠন সমূহের কার্যক্রমও তাদের ক্ষেত্রে অগ্রগতি নয়। স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে নেতৃত্বদানকারি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এই বৈষম্য নীতি-চর্চার সমাধান করতে পারে নি।
ফলে সাধারণ শিক্ষায় ঠাইঁ হয়নি সিংহভাগ শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী শিশুদের। তাদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে ইশারা ভাষা। হিয়ারিং এইড সহায়ক উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে মৃদু শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগ করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের একুশে বই মেলার উদ্বোধনী বক্তব্যে ইশারা ভাষাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছিলেন। ফলে পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক ভাষা ইন্সটিটিউটে ইশারা ভাষা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু এখনও সর্বক্ষেত্রে ইশারা ভাষার ব্যবহার নেই বললেই চলে। পঞ্চম শ্রেণির বেশি পড়া-লেখার সুযোগ নেই ইশারাভাষায় আমাদের দেশে। গ্রামাঞ্চলের শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা আজও ‘হিয়ারিং এইড’ ব্যবহারের ব্যাপারে সচেতন নয়। তাছাড়া ‘হিয়ারিং এইড’ দরিদ্রদের জন্য কেনা সম্ভব নয়।
শ্রবণ ও প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে হলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিার ভার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপর ন্যস্ত করা প্রয়োজন। এছাড়াও দেশব্যাপী ইশারা ভাষার প্রচলন করা, প্রতিটি শিা প্রতিষ্ঠানের শিকদের ইশারা ভাষার ওপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলা ও সমাজ বিষয়ক পাঠ্য গ্রন্থে ‘ইশারা ভাষা’ সম্বন্ধে একটি প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমাদের দেশে বাংলাদেশ টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারের সময় ইশারা ভাষা প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু সব বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সমূহের মাধ্যমে শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ইশারা ভাষায় লেকচারের ব্যবস্থা করলে অনেক ছাত্র-ছাত্রী উপকৃত হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, দেশ টিভি শুধু সন্ধ্যা ৭ টার সংবাদ ইশারা ভাষায় প্রচার করছে। অথচ দেশে অনেক স্যাটেলাইট চ্যানেল সংবাদ প্রচার করে থাকে।

২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ আয়োজিত বিশ্ব সম্মেলনে গৃহীত হয় মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল্ড (এমডিজি) বা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য। এটাতে আটটি টার্গেট দেয়া হয়েছে। টার্গেটসমূহের মধ্যে একটি হচ্ছে- ২০১৫ সালের মধ্যে সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার শতকরা ১০০ ভাগ উন্নীত করা এবং প্রাথমিক শিক্ষায় ড্রপ আউটের হার শুণ্যে নামিয়ে আনা। বিশ্বের ১৯৩ টি রাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশও এই ঘোষণায় একাত্মতা প্রকাশ করে সাক্ষর করে। সেখানেও প্রতিবন্ধী শিশুদের শিার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন কথা উল্লেখ নেই। আর কয়েকমাস পর এমডিজি’র মেয়াদ শেষ হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, দেশের মাত্র ৪% সকল ধরনের প্রতিবন্ধী শিশু স্কুলে লেখা-পড়ার সুযোগ পাচ্ছে বলে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা জরিপে পাওয়া যায়। বিষয়টির প্রতি বর্তমান সরকারের সুদৃষ্টি আশা করছি।
লেখক-

আজমাল হোসেন মামুন
সহকারী শিক্ষক, হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
মোবাইল নং-০১৭০৪২৪৪০৮৯।


সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:০৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×