আলোচিত পোস্টে একখানি পোস্ট ঝুলছে। পোস্টের বিষয়বস্তু সকরুণ: বেগম রোকেয়া নারী হয়ে মুসলিম মেয়েদের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন, নারী অধিকারের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন...ইত্যকার কারণে তৎকালীন ধর্মীয় সমাজ কোনো করবস্থানে তাঁর কবরের অনুমতি দেয়নি।
পোস্টের লেখক শাহ আজিজ সাহেব শিল্পী মানুষ। তিনি প্রায়ই বিভিন্ন সংবাদপত্র বা কারও দেয়াল থেকে সরাসরি সংবাদ কপি-পেস্ট করেন। একজন শিল্পীকে সবসময়ই মৌলিক পোস্ট দিতে হবে, এমন নয় বিষয়টি। তবে কারও ফেসবুকের বা অনুরূপ কোনো দেয়াল থেকে সরাসরি কোনোকিছু অন্যত্র পেস্ট করা অশোভন বলা যায়, অকাট্য যাচাই-বাছাই ও গ্রহণযোগ্য উৎস উল্লেখ ব্যতিরেকে, বিশেষ করে বিষয়টি যদি সংবেদনশীল হয় এবং অধিকতর বিশেষ করে যদি তাঁর অসমর্থিত পোস্টের উপর ভিত্তি করে অন্যেরা কোনো সম্প্রদায় বা ধর্ম নিয়ে অশোভন আচরণ করেন এবং তাতে তিনি তাল মেলাতে থাকেন।
কলকাতায় বেগম রোকেয়ার কবর হয়নি বলে তিনি আফসোস করে ধর্মীয় সমাজকে তিনি একহাত নিয়েছেন। তো কবরটি কোথায় হয়েছে? পানিহাটির অন্তর্গত সোদপুরে (সৈয়দপুরে) । সোদপুর কোথায়? উত্তর কলকাতায়, কলকাতার কেন্দ্র থেকে ১৫-১৬ কিলোমিটার থেকে। গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট থেকে মিরপুর দশের গোল চত্বরের দূরত্ব মোটামুটি ১২-১৩ কিলোমিটার। অবিভক্ত ভারতের কেন্দ্র, তুলনামূলক উদার কোলকাতায় মৌলবাদীদের কারণে বেগম রোকেয়ার কবর হয়নি, অথচ মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে সোদপুরের মুসলমানগণ এত উদার হয়ে গেল!
বেগম রোকেয়ার কবর নিয়ে বিশদ আলোচনা এই পোস্টের উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য হচ্ছে এ বিষয়টি প্রণিধান করা যে, ফেসবুকের বাজে স্ট্যাটাসের সমতুল্য পোস্টেও যদি বেশ কিছু স্বনামধন্য ব্লগার (চিহ্নিত ইসলামবিদ্বেষীদের কথা বলা হয়নি এখানে), যারা গঠনমূলক মন্তব্য ও লেখার জন্য পরিচিত, গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে একটি উৎসবিহীন পোস্টে শিষ ও সিঁটি বাজাতে থাকেন, তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই না করেন, তা জ্ঞানার্জনের জন্য অশনিসংকেত। এজন্যই হয়তো একবিংশ শতাব্দীতে মানুষের জানা ও পড়াশোনা হবে বেশি, কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে এই জানা হবে অর্থহীন, কারণ আবর্জনা ও জ্ঞান পার্থক্য করার ক্ষমতা আদৌ তাদের থাকবে না অথবা থাকলেও কুঁড়েমির কারণে পার্থক্য করা হবে না।
১৯৩২ সালে রোকেয়ার মৃত্যুর পরপর তাঁর স্মরণে অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক, মুসলমান পত্রিকা, বঙ্গীয় মুসলিম নারী সংঘ ও নিখিলবঙ্গ মুসলিম ছাত্র সমিতির শ্রদ্ধা জ্ঞাপন থেকে স্পষ্টতই প্রমাণ হয় কলকাতার কেন্দ্রে কবর না হওয়াটা কোনো গোঁড়াবাদীয় আপত্তির কারণে নয়, বরং পারিবারিক কারণে। মূল দায়টা অবশ্য এককভাবে অবিভক্ত বাংলার হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-খ্রিস্টান বা অন্য কোনো বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী কোনো পক্ষের নয়, বরং সকল বাঙালির। কারণ বাঙালি জীবদ্দশায় তাঁর মনীষীকে কদর করে না।
পানিহাটির একটি ওয়েবসাইট নিচের লিংকে পড়তে পারেন:
http://rokeyamemorialpanihatiwb.in
http://rokeyamemorialpanihatiwb.in/death_and_tribute
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ২:৩৮