“মেডিচি পরিবার গত বছর ক্যারোলিনজিয়ান আমলের CIXটি মুদ্রা খুঁজে পায় তাদের বসতভিটায়,” জিওভান্নি বলেন। “এই কথাটিতে CIX হচ্ছে এটি রোমান সংখ্যা, আর CIX সংখ্যাটিতে C, I, X প্রত্যেকে একেকটি অঙ্ক। আপনার সারাসিন গণিতের ভাষায় বললে, মেডিচিরা পেয়েছিলেন 1●9টি মুদ্রা, যেখানে 1●9 একটি সংখ্যা যার অঙ্ক 1, ● ও 9। আবার আমরা যদি বলি মানুষের এক হাতে থাকে Vটি বা 5টি আঙুল, তাহলে V বা 5 এখানে সংখ্যা, আবার অঙ্কও বটে। তার মানে গণিতের যেকোনো অঙ্কই সংখ্যা হিসেবে প্রয়োগ করা যায়। আপনারা যেহেতু সিফরকে (●) অঙ্ক দাবি করেন, এর উপর ভিত্তি করেই কি সিফরকে সংখ্যা হিসেবেও দাবি করেন?”
“না, মহোদয়, শুধু এরকম যুক্তিতেই সিফরকে সংখ্যা দাবি করি না। আমরা জানি, কোনো রাশি সংখ্যা হতে হলে প্রাচীন চারটি গাণিতিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার মতো বৈশিষ্ট্য বা গুণ থাকতে হবে তার। অন্যান্য সংখ্যার মতো আমাদের সিফরও গাণিতিক এ প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করতে পারে।”
“তাই নাকি! প্রমাণ দেখান তো,” লরেঞ্জো বলেন।
“আপনারা যদি অনুমতি দেন, তাহলে মঞ্চে উঠে জলপাইগুলো নিয়ে আমি গাণিতিক প্রক্রিয়াগুলো প্রদর্শন করতে চাচ্ছি।”
সকলের চোখ নিবদ্ধ হয় গ্রিস থেকে আনা জলপাইগুলোর উপর, সভার শুরুতে যেগুলো পরিবেশন করা হয়েছিল বণিকদের। খাওয়া শেষে কিছু জলপাই তখনও রয়ে গেছে অবশিষ্টস্বরূপ।
“আচ্ছা, অনুমতি দেয়া হলো,” জিওভান্নি বললেন। ভীনদেশি এই গণিতের প্রতি বেশ একটা কৌতূহল বোধ হতে লাগল তাঁর।
মঞ্চে উঠে আসেন হারমান তার ঝোলাটি নিয়ে, দাঁড়ান বড় টেবিলটির এক পাশে। অন্যান্য পাত্র থেকে কিছু জলপাই এনে খালি একটি পাত্রে রাখেন তিনি। তারপর লরেঞ্জোর দিকে তাকিয়ে বলেন, “আপনার নিকট সবিনয় প্রশ্ন, মহোদয়, পাত্রে কয়টি জলপাই রয়েছে?”
“সাতটি জলপাই, এত রহস্য করার কী আছে?” লরেঞ্জো বললেন।
পাত্র থেকে জলপাইগুলো তুলে নিয়ে পাত্র আবার খালি করে ফেলেন হারমান। “এখন কয়টি জলপাই দেখতে পাচ্ছেন, মহোদয়?” সবাই যাতে দেখতে পায়, এজন্য পাত্রটি একটু উঁচু করে তোলেন তিনি।
“কোনোকিছুই তো নেই পাত্রে,” ক্ষোভের সঙ্গে বলেন লরেঞ্জো।
“আপনারা বলেন, কিছুই নেই,” ব্যাখ্যা করেন হারমান, “কিন্তু আমরা অ্যালগোরিস্টরা বলি, না, সিফরসংখ্যক জলপাই রয়ে গেছে পাত্রে। অর্থাৎ সাত থেকে সাত বিয়োগ করলে থাকে সিফর। বিষয়টিকে গাণিতিক প্রতীকে লিখলে,
7 − 7 = ●।”
“যা কোনোকিছুই না, তাকে সিফর বললেই কি নিঃসন্তান সন্তান লাভ করে ফেলবে, অন্নহীন অন্ন পাবে, গৃহহীন গৃহ?” মাফিও বলেন। হাসির ছোট একটি ঢেউ বয়ে যায় জনতার মধ্যে।
“তা অবশ্য পাবে না,” হারমান বলেন।
“তাহলে সিফর আর অশ্বডিম্বের পার্থক্য কী?” টিপ্পনী কাটে এক দর্শক।
“সংখ্যার বিয়োজনে ঘটনাক্রমে কোনোকিছুই না এরূপ ফল আসলে ব্যাপারটি উপেক্ষা না করে, সেখানেই থেমে না গিয়ে, তাকে সিফর গণ্য করে অগ্রসর হতে পারি আমরা, সমন্বয় করে নিতে পারি তাকে পরবর্তী হিসেবের সঙ্গে,” হারমান ব্যাখ্যা করেন। “এ কথা সুস্পষ্ট বলা যায়, সংখ্যাব্যবস্থাকে বিস্তৃত, চলমান এবং আরও সুসংহত করেছে সংখ্যা সিফর। আপনাদের অনুমতিক্রমে বিষয়টি আরেকটু বিস্তারিত করার প্রয়াসে, এই পাত্রে আবারও কিছু জলপাই রাখলাম আমি। এখন জলপাইয়ের সংখ্যা কত হয়েছে, বলবেন কি দয়া করে?” জলপাইগুলো এক এক করে পাত্রে ছাড়েন হারমান যাতে সবাই সহজে দেখতে পায়।
গণিতে আগ্রহী এক দল কিশোর-তরুণ, যারা জড়ো হয়েছিল হারমানের সমর্থনে, চিৎকার করে উত্তর দেয়, “পাঁচটি জলপাই।”
“যথার্থ বলেছেন, সম্মানিত সুধীমণ্ডলী,” দর্শকদের দিকে মাথা খানিকটা ঝুঁকিয়ে সম্মতি জানান হারমান। “আমরা এক্ষেত্রে বলি, সিফরের সঙ্গে পাঁচ যোগ করলে যোগফল পাঁচ হয়:
● + 5 = 5।”
বণিকদের দিকে তাকান হারমান। “আপনারা বিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ, আপনারা অবশ্যই জানেন যে সংখ্যার সঙ্গে কেবল সংখ্যারই যোজন বিয়োজন ঘটতে পারে, অন্যকিছুর নয়। আমরা 7 থেকে 7 বিয়োগ করে ● পেলাম, ●-এর সঙ্গে 5 যোগ করে 5 পেলাম। সিফরকে আমরা বিয়োজন করলাম, যোজন করলাম, কিন্তু আমাদের হিসেবনিকেশে কোনো বিশৃঙ্খলা হলো না। এখন আপনারাই বলুন, সিফর কি যৌক্তিকভাবে একটি সংখ্যার মতো আচরণ করছে না? সিফরকে যদি আমরা সংখ্যার মর্যাদা না দেই, তাহলে 7 থেকে 7 বাদ দেয়া, তারপর ফলাফলের সঙ্গে 5 যোগ করা, প্রক্রিয়াগুলো কি অর্থহীন বা অযৌক্তিক নয়, মহোদয়গণ?”
“গাণিতিক যে দুটি প্রক্রিয়া প্রদর্শন করলেন আপনি,” জিওভান্নি জবাব দেন “তাতে সিফরকে সংখ্যা হিসেবে পরিগণ্য করা যায় বটে। এর ফলে গণিতবিধিতে কিছু সুবিধাও প্রতীয়মান হচ্ছে, যদিও তার বিপরীতে কোনোকিছুই না এমন কিছুকে সিফর গণ্য করার প্রাথমিক জটিলতাটি ছোট নয়। তবে ব্যবহারিক আলোচনা আপাতত বাদ। আপনি নিশ্চয়ই বলতে চাচ্ছেন না যে সিফর দ্বারা সুশৃঙ্খলভাবে গুণন প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করা যায়?”
“সিফর এতই অনন্য যে, মহোদয়, এ দিয়ে সাবলীলভাবে গুণের কাজও করা যায়,” মৃদু হেসে বলেন হারমান।
_______________
প্রথম প্রকাশ: Stargazer & Ropestretcher
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০৪