মেলা থেকে এডওয়ার্ড সাইদের কাভারিং ইসলাম বইটা কিনলাম। এটা পড়ছি আর ভাবছি কিছুদিন পূর্বে ঘটে যাওযা ইসরাইলী গনহত্যার মিডিয়া কাভারেজের সাথে বইটার বক্তব্যর কত মিল! বিশ্বের প্রভাবশালী মিডিয়া আজ ইসরাইলী লবীর করায়াত্বে তা সুস্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে বুশ যুগের সমাপ্তি পর্বে এবং ওবামা যুগের প্রারম্ভিক পর্বে ফিলিস্তিনিতে ঘটে যাওয়া নৃসংশ গন হত্যার মিডিয়া কাভারেজে। পশ্চিমা বেশিরভাগ মিডিয়াই এই গনহত্যার সঠিক খবর উপস্থাপন করছিল না। শেষে যখন দেখলো যে নিরপরাধ নিস্পাপ ফিলিস্তিনি শিশুদের বিভীষিকাময় মৃত্যুর ছবি অন্যান্য আরব মিডিয়া প্রকাশ করা শুরু করেছে তখন তারা এটাকে এমন ভাবে পশ্চিমে উপস্থাপন করলো যাকে বলা যায় নিজের চরিত্র ঢাকতে অন্যর চরিত্র হনন পদ্ধতী। সংক্ষেপে আমি নাম দিয়েছি ‘নিচঢাঅচহন’ পদ্ধতী। এই পদ্ধতীর মাধ্যমে তারা তাদের প্রভাবাধীন একটি বিখ্যাত পত্রিকায় প্রথম পাতায় ছাপালো এক শহীদ ফিলিস্তিনি শিশুর পাশে তার মায়ের আহাজারি। তার ঠিক পাশেই এক মৃত (সম্ববত এও শহীদ, শিশুরা নিষ্পাপ) ইসরাইলি শিশুর পাশে কান্নারত তার মায়ের ছবি।
ইসরাইলি শিশুটির মৃত্য হয়েছে বহুপূর্বে। তাহলে বর্তমান ফিলিস্তিনি গনহত্যার শিকার এই ফিলিস্তনি শিশুটির মৃতুদেহের পাশে তার ছবি দেবার মানে কি? মানে পরিষ্কার বোঝা যায় যখন পৃথিবীবাসী অবলোকন করে এই সব মিডিয়া, যারা গনহত্যায় মৃতের সংখ্যা যখন শতক পূরণ হয় তখনো কোন সংবেদনশীল বা ইসরাইলের প্রতি নিন্দাসূচক কোন বার্তা প্রদান করে না,
পৃথিবী বাসি যখন অবলোকন করেএকুশ শতকের মানবতা বিরোধী মারনাস্ত্র শ্বেত ফসফরাসের আঘাতে তিন বোনের দুই বোন হারানো কোন এক ফিলিস্তিনি কিশোরীর দুটি পায়ের নিরাময় অযোগ্য ক্ষত সৃষ্টির পরও তার নিন্দা করে না এই সব তথাকথিত ভদ্র সশীল মিডিয়া, বিশ্বের প্রতিটি সহানুভুতশীল জীব যখন উপলব্ধি করে এটা একটা অসম বর্ণবাদী মানবতাবিরোধী অপকর্ম তার পরও সেই সব মিডিয়ার বিবেক জাগ্রত হয় না, তখন সবাই বুঝতে পারে এই সব মিডিয়ার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য।
পাশা পাশি দুটি ছবি দিয়ে তারা মানুষের সহানুভতি ফিলিস্তিনিদের থেকে দূরে সরানোর অপচেষ্টা করেছে। তারা বোঝাতে চাচ্ছে দেখ তারাও আমাদের শিশুদের হত্যা করে। সুতরাং তাদের শিশুদেরও আমাদের হত্যা করার অধিকার আছে।সাবেক আমেররিকার প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের (জুনিয়র) প্রিয় উক্তি ছিল যে ‘ইসরাইলের আতœরক্ষার অধিকার আছে’। এই ছবি দিয়ে তারা বোঝাতে চান যে ইসরাইলি শিশুদেরও আতœরক্ষার অধিকার আছে। সেটা কিভাবে? ফিলিস্তিনি শিশুদের হত্যার মাধ্যমে।
আমরা নিরাপরাধ সকল মানব হত্যার নিন্দা জানাই। কিন্তু বিশ্ববাসীকে উপলব্ধি করতে হবে একটা এলাকায় খোলা আকাশের নিচে খ্যাদ্য-বস্ত্র পানীয় বিহীন একটি সম্প্রদায়রে মানবেতর জীবনযাপনের কথা। বিশ্বসম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন, কঠিন মানবতাহীন অবোরধের শিকার একটা জাতি যখন দেখে তার দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে , যখন তারা দেখে তাদের প্রিয় আবাসভূমি ক্রমাগত দখল করে তাদের সে জায়গা থেকে উচ্ছেদ করছে তখন তারা বাঁচার জন্য যা আছে তাই নিয়েই চেষ্টা করে। এই ক্ষেত্রে হামাসের রকেট নিক্ষেপের ঘটনা মাঝে মাঝে ঘটে সেটা ইসরাঈলী জঙ্গি বিমান হামলা বা অবরোধের জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষের মানবেতর করুন জীবন যাপনের তুলনায় কিছুই না।
তারা এখন হামাস কে সন্ত্রাসী বলে যেই হামাস কে তারা ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদা প্রতিরোধ করতে ইয়াছির আরাফাতের বিরুদ্ধে সহায়তা করেছে। ফাতাহর নেতাদের দূর্নীতির জন্য ২০০৬ সালে ফিলিস্তিনিরা হামাসকে তাদের নেতৃত্বের জন্য রায় দিয়েছিল। এই রায়ের মাধ্যমে আরেকবার বিশ্ববাসীর সামনে গনতন্ত্রের ধ্বজ্জা ধারীদের আসল মুখোস উম্মোচন হয়েছে। হামাস তো বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি। তারা নির্বাচানের ম্যাধমে শান্তি পূর্ণ ভাবে জয়লাভ করেছে। তাহলে তাদের কেন সরকার গঠন করতে দেওয়া হবে না? তাদের কেন সাহায্য করা হবে না? এর উত্তর কি পারবে দিতে যারা মধ্যেপ্রাচ্য সহ সারা বিশ্বে গনতন্ত্র রপ্তানী করতে চায়? যেহেতু তাদের তৈরি মতবাদের মাধ্যমে হামাস ক্ষমতায় চলে এসেছে তাহলে একে কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় তা নিয়ে শুরু করলো এক জঘন্য ষড়যন্ত্র। তারা তাদের সেই চিরাচরিত সূত্র ‘ নিচঢাঅচহন” পদ্ধতী প্রয়োগ করা শুরু করলো। তারা হামাস কে সন্ত্রাসী এবং জঙ্গি সংগঠন হিসেবে তাদের তৈরি মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করা শুরু করলো। পশ্চিমারা তাদের এই অপপ্রচারের ফাঁদে পা দিয়ে ইসরাইলের লক্ষ্য পুরনে সহায়তা করলো।
এখন আমরা দৃষ্টি প্রসারিত করতে পারি ইতিহাসের দিকে। ইসরাইলী লবী তথা ইহুদী লবীর এই অপপ্রচার হযরত ইসা (আ) এর সময় থেকে জোড়ালোভাবে শুরু হয় যদিও তারা এর আগেও বহু নবী রাসূল কে হত্যা করেছে। তারা বেশিরভাগ সময়ই সত্যকে অস্বী^কার করেছে। ঈসা (আ.) যখন সত্যর দাওয়াত নিয়ে আসলেন তখন তারাই প্রথম তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে দিল। এক পর্যায়ে তারা তাকে হত্যা করতে প্রবিত্ত হয়।
এর পর আসে হযরত মুহাম্মদ (সা) এর সময়। তারা এই নবীর বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে। তাদের নিজ দোষ ঢাকতে তারা নবী কে পাগল, কামুক, গনক, কবি (নেতিবাচক ভঙ্গিতে), ইত্যাদি বলে অপপ্রচার করতে থাকে। সে সময় যেহেতু আজকের মতো মিডিয়া ছিল না তাই তারা বেছে নিত হজের সময়। তখন তারা অনেক লোকদের একত্র করে নবীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করতো।
এভাবে তারা আজঅব্দি মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত। পশ্চিমা মিডিয়া এখন তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দী ভাবে মুসলমানদেরকে। তাই তারা মুসলমানদের চরিত্র হনন করেত তাদের নেতা মুহম্মদের নামে মাঝে মাঝেই উদ্ভট উদ্ভট কার্টুন, ফিচার, খবর প্রকাশ করে।
ইহুদীরা জাতিগত ভাবে প্রচন্ড মেধাবী। তারা সংখ্যা লঘু একটা জাতি হলেও কিভাবে পৃথিবীর উপর নিয়ন্ত্রন নেওয়া যায় তার প্রমান এখন আমরা পাচ্ছি। তারা বুঝতে পেরেছিল যে তাদেরকে টিকে থাকতে হলে মিডিয়া তৈরি করতে হবে। তারা আজ এই কাজে সফল।
তারা আজ অসংখ্য প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া তৈরি করে মুসলমানদের চরিত্রহননের কাজ সুচারুরুপে সম্পন্ন করছে।
আমার এই ইতিহাসের ধারাটি টেনে আনার বিষয়টি সার্থক হবে যদি পাঠক আমাদের দেশের কিছু মিডিয়ার সাথে এর সাদৃশ্যটা বুঝতে পারেন ।আমাদের দেশেরও বেশ কিছু মিডিয়া আছে যারা নিজেদের দলের নেতা কর্মীদের হীনচরিত্র লুকাতে অন্য দলের নেতা কর্মীদের চরিত্র হনন করে। এসব মিডিয়া তাদের বিরোধী আদের্শের দলের কোন ভালো কাজ কখনই তাদের মিডিয়াতে প্রচার করে না। এর প্রমান হিসেবে আমারা দেখতে দেখতে পাই এদেশের প্রচার সংখ্যার দিক থেকে প্রথম সারির একটি পত্রিকার বিশেষ ধরণের প্রথম পৃষ্ঠার খবর। যেখানে দেশের প্রধান তিনটি ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ,ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের খারাপ দিক তুলে ধরলেও তাদের আদর্শের ছাত্রসংগঠনের কোন খারাপ দিক তুলে ধরেনি।
দেশের মানুষকে বোকা ভাবা কোন মিডিয়ারই উচিৎ নয়। ছাত্র সমাজ যে সব সময়ই খারাপ কাজ করে এমনটি কিন্তু নয়। তারা বিভিন্ন সময় ভালো ভালো কাজও করে। সেগুলি আমরা মিডিয়াই কদাচিৎ দেখতে পাই। উৎকর্ষের অভিমুখে গতিশীলতার দাবিদার কোন মিডিয়ার উচিৎ নয় এমন খবর কে বিশেষভাবে প্রচার করা যার মাধ্যমে দেশবাসী ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে ভূল বার্তাপায়। এদেশে এমনও ছাত্রসংগঠন আছে যারা ছাত্রসমাজের সার্বিক কল্যানের জন্য অদম্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আছে বিসিএস পরীক্ষার জন্য ফ্রি সেমিনারের আয়োজন, বইপাঠ প্রতিযোগীতা, মেধাবী ছাত্রদের বৃত্তিপ্রদান, গরীব ছাত্রদের আর্থিকভাবে সহয়তা করণ সহ আরো অনেক কল্যানমুখি কর্মকান্ড। আমরা কেন এসব কর্মকান্ডের খবর মিডিয়াতে পাই না যা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বচক্ষে দেখি? একটা দেশের মিডিয়াই পারে দেশটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে। অন্যকে বদলাতে চাইলে অবশ্যই আগে আমাদের নিজেদেরকে বদলাতে হবে।আমরা সেই শুভ দিনের অপেক্ষায় যে দিন মিডিয়া গুলি নিরপেক্ষভাবে দলমত নির্বিশেষে সকলের ভাল এবং মন্দ দিক তুলে ধরবে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩৯