প্রসঙ্গঃ মিয়ানমারের সাম্প্রতিক দাঙ্গা বনাম মানবতা।
রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার অবসন ঘটতে চলেছে। কিন্তু খুবই আশ্চর্যজনক এই যে, গত বিশ দিন ধরে এই দেশটিতে যা ঘটে চলেছে- তাকে সভ্য মানুষরা নাম দিয়েছে—সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা!! আমি বলি, ধর্মকে ব্যবহার করে একটি হত্যা যজ্ঞ!!
পৃথিবীর কোন ধর্মতে কি আছে- আসুন মানুষ হত্যা করি, ঘর- ফসল জ্বালিয়ে দেই, নারী ধর্ষণ করি, শিশুকে মেরে ফেলি??!! না, কোন ধর্ম বাণীতেই হত্যার স্থান নেই, অমানবিকতার স্থান নেই। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান— কোন না কোন ভাবে সব ধর্মের মূল বাণী শান্তি, মানবতা!
অথচ গত কদিনে আমাদের পাশের এই দেশটিতে যা হচ্ছে, সোজা ভাষায় মিয়ানমারের সংখ্যাগুরুদের (বৌদ্ধ সম্প্রদায়) সাথে সংখ্যালঘুদের (মুসলমান এবং বাঙালী) উপর নির্যাতন।
যে সম্প্রদায়ের উপর এই আমানবিক অত্যাচার ও নির্যাতন চলছে, তাদের সম্পর্কে জানতে গিয়ে নেটে চার্চ দিয়ে রীতিমতো হা হয়ে গেলাম। মিয়ানমারের পশ্চিমে রাখাইন রাজ্যের প্রায় ৮ লক্ষ্য রোহিঙ্গার বসবাস। কিন্তু তারা যেন, স্বাধীন দেশে থেকেও পরাধীন একটা জাতি। এই অত্যাচার, এই নিপীড়ন বছরের পর বছর ধরে মুখ বুঝে সহ্য করে চলেছে!
অত্যন্ত কঠোর আইন ব্যবস্থা তাদের জন্য। এমনকি তাদের গতি সীমিত করে রাখা হয়, তদের জন্য শিক্ষার সুযোগ খুবই কম, স্বাস্থ্য সেবা বলে কিছু নেই! নিজ দেশেই জীবিকার জন্য অন্য কোথাও গেলে তাদের রোহিঙ্গা পরিচয় গোপন রাখতে হয়, নিজ গোত্রের বাইরে বিয়ে করা রীতিমত অপরাদ! নিজ দেশেই এরা যাযাবরের মতো থাকে! থাকার জন্য নির্দিষ্ট কোন জায়গা নেই, পেশা নেই, নাগরিক কোন অধিকার নেই!! ৮ লক্ষ্য রোহিঙ্গাকে ধর্মীয় ও ভাষাগত কারণে সংখ্যালঘু করে সুবিধাবঞ্চিত করে রাখা হয়েছে!
সুত্রপাতঃ
মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ৩ জন রোহিঙ্গা মুসলিম দ্বারা একজন বৌদ্ধ নারীর ধর্ষণ ও খুন, এবং পরে এজন্য আরও ১০ জন রোহিঙ্গা পুরুষ কে হত্যার রেশ ধরেই এই দাঙ্গার সূত্রপাত ঘটে।
৮ জুন মুগ্ধ টাউন হলে একজন বৌদ্ধ ধর্মগুরু তার বক্তৃতায় রাখাইন সম্প্রদায় ও মুসলমান জাতিকে “সন্ত্রাসী” বলে আখ্যা দিলেই এই উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে। গত কয়দিনের এই দাঙ্গায় সরকারী হিসেবে কমপক্ষে ২৫ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। কিন্তু বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা নাকি আরও অনেক। গৃহহীন হয়ে পড়েছেন প্রায় ১ লাখ মানুষ। প্রায় ১,৬৬২ টি ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে! এমনকি অনেক নারীই ধর্ষিত হচ্ছেন। কোথায় ছিল তাদের প্রশাসন!?! বহিঃবিশ্বে এই দাঙ্গার খবর খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ ভাবে প্রকাশ করা হয়নি! যেন এতো খুব স্বাভাবিক! প্রায় দেশেই হয়!!
দাঙ্গার কিছু ছবি, আমাদের বিবেক যেখানে ঘুমায়।
মূলত রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অধিবাসী। তাই রোহিঙ্গারাও নিজেদের মিয়ানমারের নাগরিক রূপেই ভাবতে চায়, কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, মিয়ানমার সরকার এই জাতিকে এখনো নিজেদের দেশের নাগরিক স্বীকৃতি দিতে নারাজ। বিভিন্ন সময়েই তাই এরা মিয়ানমার, বাংলাদেশ, ম্যালেশিয়া সহ সীমান্ত দেশগুলোতে যখন যেখানে সুযোগ পায় সেখানে বসবাস গড়ে তোলে!!
কি ভয়ানক কথা!!
এদের প্রায় সবাই মুসলমান, বাংলা এবং আরাকানি ভাষার সংমিশ্রণে মূলত এরা কথা বলে। আমাদের চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার সাথে অনেক টাই মিলে যায়। তাছাড়া কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, টেকনাফ, এবং নাফ নদীর উপকূলে এদের অনেক বড় একটি জনপদ আছে। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই বলা যায়, এই রোহিঙ্গারা আমাদের প্রতিবেশী। ভাষা, ধর্ম, জীবিকায় এদের সাথে অনেক খানি মিল রয়েছে আমাদের উপকূলবর্তী বাসিন্দাদের সাথে।
ইউটিউব থেকে পাওয়া একটি ভিদিওঃ
অতঃপর
প্রতিবেশী এই নিপীড়িত অসহায় মানুষ গুলোকে আমরা আমাদের সীমানায় আমরা প্রবেশ করতে দিচ্ছি না। কারণ হিসেবে আমাদের রাষ্ট্র বলছে, আমাদের জনসংখ্যা এমনিতেই অনেক বেশী, তাছাড়া এই অনুপ্রবেশকারীরা হয়তো পরবর্তীতে তাদের নিজেদের জায়গায় ফিরে নাও যেতে পারে! মিয়ানমার সরকার এদের আর ফেরত নাও নিতে পারে। এবং কূটনৈতিকভাবে বলা হচ্ছে, মিয়ানমার সরকার বা জাতিসংঘ এখনো কাগজে কলমে এই উদ্বাস্তু মানুষগুলোকে আশ্রয় দেবার জন্য বাংলাদেশ সরকার কে অনুরোধ করেনি!!
অসহায় মানুষগুলোর আর্তনাদ।
এই শিশুগুলোকে কোন দেশ নিতে চায় না। এরা তবে কোথাকার নাগরিক!?
আমি রাষ্ট্রের এসব কলা কৌশল বুঝি না। শুধু জানি শত শত মানুষ বড় আশা ভরসা নিয়ে, জীবন বাজি রেখে কেবল প্রান বাঁচানোর আশায় বাংলাদেশে ছুটে আসছে! তারা মানে এদের সাথে আমাদের ভাষায়, ধর্মের মিল আছে, অন্তত এরা আমাদের দুঃখ দুর্দশা বুঝবে। আমাদের আশ্রয় দেবে!
নৌকা, ট্রলার যে যেভাবে পারছে একটু আশ্রয়ের জন্য ভিড় করছে সেন্টমার্টিন, টেকনাফ সহ উপকূলবর্তী জায়গা গুলোতে। সরকারের কড়া নজরদারী নাকি রয়েছে, যে কোন মূল্যের এই অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যস্ত “বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড।” মানুষে ঠাসা এক একটা ট্রলার আসে আর আমরা তাদের “পুশআপ” করি! এদের মধ্যে একেকটা দল নাকি তিন চার দিন ধরে সমুদ্রে ভাসছে! সপ্তাহ খানেক ধরে না খেয়ে আছে। আশ্রয়প্রার্থী বেশীরভাগ মানুষই নারী, শিশু এবং বৃদ্ধ।
এ কোন বিশ্ব? এ কোন মানবতা? এ কোন রাজনৈতিক কলা কৌশল আমি জানি না! মানুষ বড় নাকি ধর্ম, দেশ, নাকি রাজনীতি??? ৭১ এ আমরাও তো আশ্রয়হীন ছিলাম, অন্য দেশে উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে ছিলাম দিনের পর দিন। আমাদের তো এই বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা টা রয়েছে!! আমরা কিভাবে এমন করে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারি!!
বোধ করি দারিদ্রতার পরে ধর্মীয়, জাতিগত হাঙ্গামা, দাঙ্গা এই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ! এবং বর্তমান বিশ্বে এই একটি সমস্যার সমাধান হলেই মনে হয় বাদ বাকী সমস্যার সমাধান সম্ভব। আমরা কেন ভুলে যাই সবার রক্তের রং লাল, সবার চোখের পানিই বর্ণহীন। সব ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী, জাতি, গোষ্ঠীতে ভালোর সাথে মন্দও আছে। একজন দুজন মানুষের পাপের জন্য পুরো একটা জাতি, সম্প্রদায়, গোষ্ঠীকে কেন ভুগতে হবে!
সুস্থ সবল, কর্মক্ষম মানুষ কিভাবে একটা দেশের বোঝা হতে পারে? তাছাড়া নজরদারি যখন রয়েছেই তখন হিসেব রেখেই তো এই অসহায় মানুষগুলোকে আশ্রয় দেয়া যেতে পারে। আমাদের দেশের সরকারসহ, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মানবিক দৃষ্টি কামনা করি। সেই সাথে মিয়ানমার সরকারকে বিশ্ব সমাজ চাপ প্রয়োগ করা হোক, এই সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য।
** তথ্য ও চবিঃ ইন্টারনেটের বিভিন্ন লিঙ্ক।
লিঙ্ক-১
লিঙ্ক- ২
লিঙ্ক- ৩
লিঙ্ক- ৪
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন