সৃষ্টিকর্তা যখন মা বানাচ্ছিলেন তখন তিনি লাগাতার ছয়দিন ধরে কাজ করছিলেন। এটা দেখে তাঁকে এক দেবদূত এসে জিজ্ঞেস করেন, “প্রভু, আপনি এই একটি জিনিসের পেছনে কেন এত সময় ব্যয় করছেন?”
সৃষ্টিকর্তা জবাবে বললেন, “তার কি কি জিনিস থাকবে, তুমি কি সে কাগজ টা দেখেছো? তাকে একাই দশ জনের কাজ করতে হবে! তিনি কালো কফি বা উচ্ছিষ্ট খেয়েই চলতে পারবেন। তার কোলে তিনটি পর্যন্ত শিশু অনায়াহে একসঙ্গে থাকতে পারবে। তার চুমু কেটে যাওয়া হাঁটু থেকে শুরু করে ভেঙে যাওয়া হৃদয় পর্যন্ত- সবকিছু সারাতে লাগাতে পারবে! আর তার লাগবে কয়েক জোড়া হাত!”
এই একটি জিনিসের এতকিছু প্রয়োজন দেখে দেবদূতের চোখ কপালে উঠল, “কয়েক জোড়া হাত! কিন্তু কিভাবে সম্ভব?”
সৃষ্টিকর্তা বললেন, “এক জোড়া হাত নিয়ে তিনি তার সন্তানদের আজীবন ধরে রাখবে। দ্বিতীয় জোড়া হাত দিয়ে তাদের জন্য কাজ করে যাবেন। তৃতীয় জোড়া হাত দিয়ে তিনি সন্তানদের শেখাবেন কিভাবে স্বাবলম্বী হতে হয়।“
“কিন্তু তিন জোড়া হাতে তো কোন সমস্যা নেই, সমস্যা হচ্ছে তিন জোড়া চোখ নিয়ে!”
“এই মডেলের ভেতরেই কি তিন জোড়া চোখও থাকবে?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন দেবদূত।
সৃষ্টিকর্তা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন।
“যখন সন্তানরা চোখের সামনে থাকে তখন তিনি তাদের দেখে রাখবেন একজোড়া চোখ দিয়ে। যখন দূরে চলে যাবে তখনও আরেক জোড়া চোখ দিয়ে তিনি তাদের দেখে রাখবেন। ঐ দ্বিতীয় জোড়া চোখ দিয়ে সন্তান যা গোপন করে বা করতে চায় তা-ও জেনে যাবেন তিনি। আর তৃতীয় জোড়া চোখ দিয়ে সন্তানদের চোখের দিকে তাকিয়ে কোন কথা না বলেই তিনি জানিয়ে দিতে পারেন যে, তিনি তাদের ভালোবাসেন।”
দেবদূত তাঁকে বললেন, “ঠিক আছে, আজকের মতো কাজ থামিয়ে চলুন ঘুমানো যাক। আগামীকাল না হয় আবার কাজ শুরু করা যাবে।”
“কিন্তু আমার পক্ষে সম্ভব নয়।” সৃষ্টিকর্তা বললেন, “আমি আমার হৃদয়ের সবচেয়ে কাছের একটি জিনিস তৈরির একেবারে শেষ পর্যায়ে আছি। উনি যখন অসুস্থ হন, তখন নিজেই নিজেকে সারিয়ে তুলতে পারেন। এক পাউন্ড হ্যামবার্গার দিয়ে কিংবা এক মুঠো চাল দিয়ে তিনি ছয়জন বা ততোধিক সদস্যের একটি পরিবারকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে পারেন। ”... মুগ্ধস্বরে বলতে থাকেন সৃষ্টিকর্তা।
দেবদূত এবার কাছাকাছি এসে নারীটিকে স্পর্শ করলেন, “কিন্তু আপনি তাকে এত নরম করে তৈরি করেছেন কেন?”
সৃষ্টিকর্তা একমত হলেন। “সে নরম কিন্তু আমি তাকে কঠিন করেও বানিয়েছি। তোমার কোন ধারণাই নেই যে, তার পক্ষে কি কি করা সম্ভব!”
“সে কি চিন্তা করতে পারবে?” দেবদূতের প্রশ্ন।
“সে শুধু চিন্তা করতে পারবে তা-ই নয়, সে হবে যুক্তিপরায়ণ এবং পরামর্শদাতাও।”
কিছু একটা দেখে দেবদূত নারীটির গাল স্পর্শ করলেন, “মনে হচ্ছে এই মডেলটিতে একটি ছিদ্র রয়েছে। আমি আগেই বলেছিলাম যে, একটি জিনিসের ভেতর এত বেশী কিছু দেয়ার প্রয়োজন নেই।”
“ওটা ছিদ্রের কারণে নয়।” সৃষ্টিকর্তা বললেন, “ওটি হচ্ছে অশ্রু!”
দেবদূত বললেল, “কিন্তু অশ্রু কি জন্যে?”
সৃষ্টিকর্তা বললেন, “অশ্রুই হচ্ছে তার আনন্দ, দুঃখ, হতাশা, কষ্ট, একাকীত্ব এবং তার গর্ব প্রকাশের উপায়।”
দেবদূত ওজন মাপার যন্ত্রের কাছে গিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “তার ওজন এত বেশী কিন্তু সে ভারে তিনি নুয়ে পড়ছেন না কেন?”
সৃষ্টিকর্তা বললেন, “অপর এক বা একাধিক মানুষ তিনি দশ মাস দশদিন ধরে তার গর্ভে বহন করে বেড়াবেন। তাদের রক্ষা করবেন, খাওয়াবেন এবং অসীম এক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে তাদের পৃথিবীতে নিয়ে আসবেন। এত এত ওজন তার মধ্যে পুরে দেয়া হয়েছে যে, এজন্য তিনি তার নিজের ওজনে তিনি কখনোই নুয়ে পড়বেন না।”
“এরকম অসাধারণ এক সৃষ্টির প্রাপ্তি কি! কেনই বা তিনি এত কষ্ট সহ্য করবেন!”- দেবদূত জিজ্ঞেস করেন।
“প্রাপ্তি বা অপ্রাপ্তির হিসেব কখনোই তিনি করবেন না। “মা” ডাকটাই তার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হবে। নিমিষেই তিনি ক্ষমা করে দিতে পারবেন। স্বার্থহীন ভাবে তিনি তাকে প্রস্তুত করবেন। আর প্রাপ্তি??? সেটা আমি নিজে দেব তিনি হবেন মমতাময়ী। জীবন কিংবা মরণে তিনিই হবেন সন্তানদের সকল শান্তি এবং শক্তির আধার।”
দেবদূত অবাক হয়ে বলে উঠলেন, “প্রভু কিছু মনে করবেন না। আপনার এই সৃষ্টির কার্যক্রম, গুণাবলী দেখছি, অনেক খানি আপনার মতোই! তবে কেন আপনি মা সৃষ্টি করছেন??”
সৃষ্টিকর্তা হেঁসে জবাব দিলেন, “সৃষ্টিকর্তার পক্ষে পৃথিবীতে কাওকে সরাসরি সাক্ষাত দেয়া সম্ভব নয়, তাই তিনি মা সৃষ্টি করেছেন!”
এবার মুগ্ধ হয়ে দেবদূত বললেন “আপনি সত্যিই প্রতিভাবান। আপনি সব কিছুই দেখি তার মধ্যে পূর্ণ করে দিয়েছেন। সত্যিই মায়েরা সৃষ্টিকর্তার সর্বশ্রেষ্ঠ এবং বিস্ময়কর সৃষ্টি!!”
_________________________________________________
** অনেক পুরানো একটা ডাইরির মাঝে একটা লেখা পেলাম। নিচে শুধু লেখা ছিল সংগৃহীত! কোথায়, কখন, কার কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলাম জানি না। কিন্তু পাড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। কিছুটা পরিমার্জিত করে লেখাটি দিলাম।
সামুর সকল মায়ের জন্য শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাযোগে উৎসর্গিত।
ছোট বেলায় পড়া কাজী নজরুল ইসলামের “মা” কবিতার কথা এখনো মনে আছে।
“যেখানেতে দেখি যাহা
মা- এর মতন আহা
একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,
মায়ের মতন এত
আদর সোহাগ সে তো
আর কোনখানে পাইবে না ভাই।
হেরিলে মায়ের মুখ
দূরে যায় সব দুখ,
মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরান,
মায়ের শীতল কোলে
সকল যাতনা ভোলে
কত না সোহাগে মাতা বুকটি ভরান।“
সবশেষে বলিঃ মা, ধন্যবাদ!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১২ রাত ৮:৩৫