প্রায় ৫ বছরের পরিচয়ে প্রথম তিন বছর ওরা শ্রেফ বন্ধু, বলা যায় খুব ভালো বন্ধু হয়েই ছিল। তথাকথিত এবং সার্টিফাইড প্রেমিক প্রেমিকার স্বীকৃতি পেয়েছে গত দু বছর ধরে। একদিন ঊর্মি বলে বসল, “আমরা যদি বাকীজীবন একসাথে- একই ঘরে, একই খাটে কাটিয়ে দিই, তবে কেমন হয়??!! ”
তমাল বলল, “একই খাটে থাকার ব্যাপারটা দিয়ে একটা ট্রায়াল দেয়া যেতে পারে। তারপর না হয়, একে একে বাকীগুলো ভাবা যাবে!! হা হা হা......!!”
ঊর্মি চট করে একটা চড় লাগিয়ে চলে এসেছিল সেদিন।
সেই থেকে তমালের শুরু। ঊর্মিকে কারণে, অকারণে কষ্ট দেয়া, বিরক্ত করা, অস্থির রাখা। যাই বলে ঊর্মি খুব সহজেই তা বিশ্বাস করে ফেলে। তাই তমালের জন্য এই ব্যাপারগুলো করা খুব সোজা। কাজগুলো করে বেশ মজা পাওয়া যায় কারণ, ঊর্মির মতো বোকা একটা মেয়ে ওকে পাগলের মতো ভালবাসে বলে। তমাল বেশ বুঝতে পারে, আজ যদি ও ঊর্মিকে ছেড়ে চলে যায়, মেয়েটা দু দিনের মাথায় বিকারগ্রস্থ হয়ে যাবে! “This damn girl can’t live without me not for a single sec!!”
প্রথম দিকে তমাল বেশ উপভোগ করত। কিন্তু ধীরে ধীরে, এটা যেন অত্যাচার- মধুর অত্যাচারে রূপ নিয়েছে। প্রতি সপ্তাহে ডেটে যাওয়া, পার্কে বসে বাদাম চিবানো, হাতে হাত রেখে উষ্ণতা নেয়া, all are tired some!! “This fool girl completely addicted on me!”
প্রেমিক হয়েছে বলে কি একটা মানুষের নিজস্বতা বলে কিছু থাকবে না? ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বিসর্জন দিতে হবে?? তমাল তাই ইচ্ছে করেই মাঝে মাঝে ঊর্মিকে এড়িয়ে চলে। প্রায় ডেটে সে দু ঘণ্টা দেরীতে যায়। ঊর্মি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে, ফোনের পর ফোন দিতে থাকে, মেসেজ আসতে থাকে। climax টা pick এ যায় যখন, তমাল দূর থেকে ঊর্মির অপেক্ষা করা দেখে, এবং ফোনটা অফ করে দেয়। ঊর্মি কাঁদতে থাকে এক পর্যায়ে।
ওকে মানানোর জন্য তমালকে খুব একটা পরিশ্রম করতে হয় না। রাতে ফোন দিয়ে শুধু বলতে হয়, “hey sweetheart, I’m so sorry. Suddenly I had an urgent meeting at that time. You know how much I love u, dear. Now please smile!” ব্যস, ঊর্মির মনের আইসবার্গ মুহূর্তে গলে প্লাবন! সেই প্লাবনে সারা রাত ওরা ভাসতে থাকে।
সব মেয়েদের মতন, ঊর্মি সিগারেট, অ্যালকোহল পান করা পছন্দ করে না। তমাল রাত দুটায়, মাতাল গলায় অভিনয় করে বলে, “চাঁদের দিকে তাকিয়ে মদ খাবার মজাই আলাদা, জানো? মদের বোতলটাকে তোমার ঠোঁট মনে হচ্ছে, আর এই শূন্য ছাদটাকে মনে হচ্ছে তোমার শরীর। তোমার শরীরে যেন আমি ভ্রমণ করছি, বুঝলে??”
ঊর্মি চিৎকার করে উঠে, “ইতর ছেলে, তুমি মদ খাচ্ছো!! মাতলামি দেখাও!!” ও আর কথা বলতে পারে না, ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদতে থাকে শুধু।
তমাল ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে- অভিনয় ভালো হয়েছে দেখে।
শুক্রবার জুমার নামাযের সময় তমাল হয়ত বলে বসে, “সিনেমা দেখতে যাচ্ছি বন্ধুদের সাথে!! যাবা নাকি তুমিও?”
“শুক্রবার একটা পবিত্র দিন, অন্তত আমার জন্য। আমার নামায কালাম আছে। এই সময় কেও আড্ডা মারে নাকি? তোমার নামায নাই?”
“নামায?? কয় ওয়াক্ত যেন ওটা? কবে পড়েছি ভুলে গেছি!! আমি বাপু ধর্ম মানি না। দুনিয়ায় আসছি, এটা নিয়েই কাজ করছি। মরে যাবার পর কি হবে, ওটা জানার দরকার নেই আমার!”
ঊর্মি ভয়ে কাঁপতে থাকে। মনে মনে বলতে থাকে, “আল্লাহ্, ওকে আপনি হেদায়েত দিন। ও কি বলছে, ও হয়তো নিজেই জানে না! কিংবা কম জানে বলেই হয়তো, এতো স্পর্ধা পেল! ধর্ম কে অবজ্ঞা, অবহেলা করা, নাস্তিকতাটাকে এযুগে অনেকেই ফ্যাশন হিসেবে নিয়েছে। আলাদা ভাবে চিন্তা করে কেউ কেউ একে বিপ্লব মনে করে!”
ঊর্মি কেঁদে কেঁদে বলে, “তুমি এসব কেন বলো!! আমার ভয় লাগে। বড্ড ভয়! এমন ডেস্পারেট চিন্তা করা ঠিক না। প্রকৃতির কাছে আমরা অনেক অসহায়। And nature has own limit. We shouldn’t do anything or think extreme, so that nature could get the chance to take any revenge on us! ”
তমাল ধর্মে বিশ্বাস করে না, এটা পুরোটা সঠিক নয়। ধর্মচর্চা টা হয়তো কম হয়, এই যা। মাঝে মাঝে নামাযে যায়, জানাজায় অংশগ্রহণ করে, শরীরে আচমকা ব্যথা পেলে অন্য সবার মতো সেও মনে মনে বলে, “ও আল্লাহ্!”
আসলে এরকম বিপরীতমুখী কাজ গুলো করে ও ঊর্মিকে কষ্ট দেবার জন্য। কেন ও এসব করে, যে মেয়েটা ওকে জীবন দিয়ে ভালবাসে, সেই মেয়েটাকে এরকম মানসিক কষ্ট দেয়াটা কতটুকু সুস্থ চিন্তাধারার পর্যায়ে পড়ে, ও কখন ভাবেনি!!!
তমাল সেল ফোনটা হাতে নিল, না সেই একই রকম! সেল ফোনে ঊর্মির দেয়া ৪১ টা মিসড কল। তাও সেটা একদিন আগের!! গতকাল ওদের দেখা করার কথা ছিল। ঊর্মি সেই একই রকম ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল তমালের জন্য। আর ফোনের পর ফোন দিয়ে যাচ্ছিল। শেষে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পথে একটা বাস খুব সযত্নে ওর শরীর ঘেঁসে চলে গেল।
ঊর্মি কোমায়!! তমালের দম বন্ধ হয়ে আসে!! কখন যেন ফজরের আযান টা দেয়!! ওর অনেক কাজ বাকী। ক্ষমা চাওয়া! ঊর্মি কে ফিরিয়ে আনতেই হবে!! নিজের জন্যই, নিজের বেঁচে থাকার জন্যই।।
I see you hurting and I want so much, to take the hurt away. I want you to be happy, to be yourself. And yet I understand. Sometimes it’s hard, And all we want to do Is CRY....
** উৎসর্গঃ ব্লগে আমার দুজন খুব ভালো বন্ধু সমুদ্রকন্যা আর হাসান মাহবুব কে। যারা আমার মতোই বিশ্বাস করে, পৃথিবীটাকে সুন্দর করে গড়তে ভালোবাসার অনেক প্রয়োজন।