দেশে প্রশ্নপত্র ফাঁস নতুন কোন ঘটনা না হলেও এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় তা অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করে। এরপরও সরকার বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার কম চেষ্টা করেনি। শিক্ষামন্ত্রী বার বার প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি গুজব হিসেবে উড়িয়ে দিলেও শেষ পর্যন্ত স্বীকার করতে বাধ্য হন মূলত জাফর ইকবাল স্যারের একাধারে নাছোড় বান্দার মত লেখনী ও শহীদ মিনারে অবস্থানের কারণে।
জাফর ইকবাল স্যারের সাথে সাথে আরও অনেকেই বিষয়টি নিয়ে তথ্য প্রমাণ সহ লিখেন। ফেইসবুক সহ বিভিন্ন মাধ্যমে রীতিমত আলোড়ন সৃষ্টি হয় বিষয়টি নিয়ে। এক পর্যায়ে শিক্ষামন্ত্রীকে অনেকটা অসহায় লাগে। আমি সবার লেখালেখি পড়ে শুধুমাত্র সমালোচনাই দেখতে পাই। কোথাও কোন সমাধানের প্রস্তাব চোখে পড়েনি। শেষ পর্যন্ত প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রতিরোধের উপায় উল্লেখ করে এ বিষয়ে একটি কলাম লিখি যা প্রথম গত ৩১ শে মে ২০১৪ তারিখে সিলেটের সকাল অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হয় (http://sylhetersokal.com/?p=67978)। প্রকাশের পর পরই সিলেটের তখনকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) জনাব মনিরুল সাহেব তা পড়েন এবং প্রস্তাবটি উত্তম হিসেবে উল্লেখ করে পত্রিকার সম্পাদক সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জনাব মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাসকে ফোনে অবহিত করেন। সম্পাদক সাহেব খুশী হয়ে সাথে সাথে আমাকেও জানান।
পরবর্তীতে লেখাটি বিগত ৩রা জুন ২০১৪ তারিখে সিলেটের সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিকা দৈনিক সিলেটের ডাকে প্রকাশিত হয়(Click This Link) এবং ঐদিন বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব মোঃ সোহরাব হোসেন প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রতিরোধে বিভিন্ন পদ্ধতি মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন হিসেবে উল্লেখ। সচিব মহোদয়ের বক্তব্যে আমার প্রস্তাবিত পদ্ধতিও ছিল। আমার প্রস্তাব সংক্ষেপে এরকম ছিল- এরকম একটি চেষ্টা এমন হতে পারে- আগে প্রশ্ন তৈরী না করা। পরীক্ষার দিনই প্রশ্ন তৈরী করা হল। এর পুরো মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকলেন মন্ত্রী। সপ্তাহখানেক আগে মন্ত্রী বাছাইকৃত পাঁচজন শিক্ষককে প্রশ্ন তৈরী করার জন্য নির্দেশ দিলেন। পরীক্ষার দিন ভোরে পরীক্ষার কমপক্ষে দুই ঘন্টা আগে শিক্ষকরা যার যার প্রশ্ন নিয়ে আসলেন। মন্ত্রী দুই জন মডারেটর নিয়ে আসলেন। এবং ঐ জায়গায় স্ক্যানার, প্রিন্টার, কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকল। দুই জন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক প্রশ্ন প্রণয়নকারী পাঁচজনের মধ্যে যেকোন একজনের প্রশ্নকে পরীক্ষার জন্য বাছাই করলেন। সাথে সাথে কম্পিউটার অপারেটর তা ইমেইলে প্রত্যেকটি পরীক্ষা সেন্টারে পাঠিয়ে দিলেন। প্রত্যেকটি সেন্টার সাথে সাথে ইমেইলে প্রাপ্ত প্রশ্ন প্রিন্ট ও ফটোকপি করে নিল তাদের ছাত্র সংখ্যা অনুযায়ী। এতে ঘন্টাখানেক সময় লাগতে পারে। তাই প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষার হলে আসতে হবে এক ঘন্টা আগে। অন্যদিকে কোন সাত জন শিক্ষক প্রশ্ন তৈরীর সাথে জড়িত তা মন্ত্রী ছাড়া আর কেউ জানতে পারবে না। এমনকি তারা পরীক্ষার দিনের আগে নিজেরা একে অন্যের সম্পর্কেও জানবে না। এতে প্রশ্ন ফাঁসের সম্ভাবনা একেবারে থাকবে না। তারপরও যদি হয় তাহলে কোন কমিটি করতে হবে না। যিনি প্রশ্ন প্রণয়ন করেছেন তিনিই ফাঁস করেছেন হিসাবে প্রমাণিত হবে। এখনকার মত দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ থাকবে না। অন্যদিকে শীর্ষ নিউজে প্রকাশিত অতিরিক্ত সচিবের বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলা হয়- মো. সোহবার হোসাইন জানান, ফাঁস ঠেকাতে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হলে পরীক্ষার এক ঘন্টা পূর্বে কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র পাঠানোর ব্যবস্থা থাকবে। এক্ষেত্রে ই-মেইলে প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, প্রতি কেন্দ্রে ইন্টারনেট সংযোগসহ এক বা একাধিক কম্পিউটার ও প্রিন্টার থাকবে। পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা পূর্বে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে মন্ত্রণালয় থেকে ই-মেইলযোগে প্রশ্ন পাঠানো হবে। পরে কেন্দ্রে থাকা কম্পিউটার থেকে প্রশ্ন প্রিন্ট করে পরীক্ষার্থীদের দেওয়া হবে। – See more at: Click This Link
যা আমার প্রস্তাবের হুবহু কপি। জানি না তারা পত্রিকায় কলাম দেখে এ পদ্ধতি গ্রহন করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন না নিজেরাই চিন্তা করে বের করেছেন। আমার একই লেখা পরবর্তীতে জাতীয় দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত হয় বিগত ৯ই জুন-২০১৪ তারিখে (http://ejugantor.com/2014/06/09/index.php)।
মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যে আমার প্রস্তাবের হুবহু মিল দেখে দুটো কারণে খুশী হয়েছিলাম। একটি হচ্ছে আমি সত্যি বিশ্বাস করি এরকম পদ্ধতি গ্রহন করলে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা যাবে কার্যকরভাবে। আর দ্বিতীয়টি জাতির কল্যানে নিজের চিন্তা ও লেখনী কাজে লাগলে যেকারো খুশী হওয়ার কথা তাই আমিও খুশী।
দূর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের মন্ত্রী মহোদয় ৩২ সেট প্রশ্নের নতুন ফর্মূলা জাতির সামনে উপস্থাপন করলেন। এ ফর্মূলাটি বেশীরভাগ মানুষের কাছে হাস্যকর ও অকার্যকর হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আনন্দের বিষয় হচ্ছে প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমদ পলক ৩২ সেট ফর্মূলার বিরোধীতা করে দুই ঘন্টা আগে প্রশ্ন করার আমার প্রস্তাবটি গত ২৪ শে আগস্ট ইত্তেফাক ভবনে প্রযুক্তি বিষয়ক এক সেমিনারে বলেন। কিন্তু মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী কেন সহজ সমাধানটি পাশ কাটিয়ে ভিন্ন চিন্তা করছেন জানিনা। নাকি কোন বিখ্যাত ব্যক্তির কাছ থেকে প্রস্তাবটি না আসায় তিনি আমলে নিচ্ছেন না। এখন প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রতিরোধে নতুন আইন তৈরী করে এমন অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে যাতে প্রশ্ন ফাঁস হলেও কেউ আইনের ভয়ে বলতে সাহস না পায়।
আশা করি শিক্ষার মান উন্নয়ন ও বর্তমান বিপর্যয়কর অবস্থা ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন। নতুবা এ জাতি মেরুদন্ড নিয়ে দাড়াতে পারবে না।
লেখক: ব্যাংকার ও কলামিস্ট
[email protected]
http://sylhetersokal.com/?p=67978
Click This Link
http://ejugantor.com/2014/06/09/index.php