পোষাকে আসাকে ও বোলচালে যতই ধার্মিক ভাবভঙ্গি দেখানো হোক না কেন; কিংবা মহাজ্ঞানী, হুজুর, মওলানা, হাজি, পীর সাহেব, জজ-ব্যরিষ্টার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যতই নাম-ডাক ছড়িয়ে পরুক না কেন- অন্তরে অহংকার দানা বাঁধলে কিন্তু সবই বৃথা। এমনকি প্রেসিডেন্ট, প্রধান-মন্ত্রী বা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হলেও নিস্তার নেই। লোক দেখানো জন্য মুখে লম্বা, খাট বা চাপ দাড়ি কিংবা মাথায় টিক্কি রেখে, শ্বেত-বস্ত্র, টুপি, পৈতা-ধুতি পড়ে ও হাতে তসবি ঝুলিয়ে পার পাওয়া যাবে না। আর সুট পড়ে কশে টাই বেধে, হাতে সোনার ঘড়ি, আঙ্গুলে হিরের আংটি ও গলায় মতির লকেট ঝুলিয়েও অহংকারে যতই দুদিনের দাপাদাপি করার চেষ্টা করা হোক- এসব করে সাময়িকভাবে একালে যতই খ্যাতি বা প্রতিপত্তি জুটে যাক না কেন- পরকালের খাতায় একজন অহংকারীর প্রাপ্তিটা কিন্তু বড়ই নাজুক ও মূল্যহীন হয়ে যেতে পারে।
অহংকারীদের সম্পর্কে আল-কোরআনে প্রদত্ত মহান আল্লাহতায়ালার সাবধান বাণী-
সূরা আন নিসা (মদীনায় অবতীর্ণ)
(০৪:৩৬) অর্থ- আর উপাসনা কর আল্লাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে। পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্নীয়, এতীম-মিসকীন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং তোমাদের 'ডান হাতের অধিকারভুক্তদের' (যুদ্ধবন্দি/দাস-দাসীদের) প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ আত্মম্ভরী ও দাম্ভিককে পছন্দ করেন না।
(০৪:১৭৩) অর্থ- যারা ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে, তিনি তাদেরকে পরিপূর্ণ পুরষ্কার দান করবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরো বেশী দেবেন। পক্ষান্তরে যারা হেয় জ্ঞান করে এবং অহঙ্কার করে, তিনি তাদেরকে দেবেন বেদনাদায়ক আযাব। আল্লাহকে ছাড়া তারা কোন সাহায্যকারী ও সমর্থক পাবে না।
সূরা আল আ’রাফ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(০৭:৪০) অর্থ- নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছে এবং এগুলো থেকে অহংকার করেছে, তাদের জন্যে আকাশের দ্বার উম্মুক্ত করা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। যে পর্যন্ত না সূচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করে। আমি এমনিভাবে পাপীদেরকে শাস্তি প্রদান করি।
(০৭:১৪৬) অর্থ- আমি আমার নিদর্শনসমূহ হতে তাদেরকে ফিরিয়ে রাখি, যারা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে অহঙ্কার করে। যদি তারা সমস্ত নিদর্শন প্রত্যক্ষ করে ফেলে, তবুও তা বিশ্বাস করবে না। আর তারা হেদায়েতের পথ দেখলেও সে পথ গ্রহণ করবে না। অথচ গোমরাহীর পথ দেখলে তাই গ্রহণ করে নেবে। এর কারণ, তারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা বলে মনে করেছে এবং সে সম্বন্ধে তারা উদাসীন ছিল।
সূরা নাহল (মক্কায় অবতীর্ণ)
(১৬:২৩) অর্থ- নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের গোপন ও প্রকাশ্য যাবতীয় বিষয়ে অবগত। নিশ্চিতই তিনি অহংকারীদের পছন্দ করেন না। (১৬:২৯) অর্থ- অতএব, জাহান্নামের দরজাসমূহে প্রবেশ কর, এতেই অনন্তকাল বাস কর। আর অহংকারীদের আবাসস্থল কতই নিকৃষ্ট।
সূরা বনী ইসরাঈল (মক্কায় অবতীর্ণ)
(১৭:৩৭) অর্থ- পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূপৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না।
সূরা লোকমান (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৩১:১৮) অর্থ- অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।
(৩১:১৯) অর্থ- পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর এবং কন্ঠস্বর নীচু কর। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।
সূরা আল-যুমার (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৩৯:৭২) অর্থ- বলা হবে, তোমরা জাহান্নামের দরজা দিয়ে প্রবেশ কর, সেখানে চিরকাল অবস্থানের জন্যে। কত নিকৃষ্ট অহংকারীদের আবাসস্থল।
সূরা আল-মু’মিন (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৪০:৩৫) অর্থ- যারা নিজেদের কাছে কোন দলীল প্রমাণ না থাকলেও আল্লাহর আয়াত/নিদর্শন সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়, তাদের এ কাজ, আল্লাহ ও মুমিনদের কাছে খুবই অসন্তোষের। এমনিভাবে আল্লাহ প্রত্যেক অহংকারী-স্বৈরাচারী ব্যক্তির অন্তরে মোহর এঁটে দেন।
সূরা হা-মীম সেজদাহ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৪১:৫১) অর্থ- মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করলে সে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং অহংকারে দূরে সরে যায়, আর যখন তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করে, তখন সুদীর্ঘ দোয়া করতে থাকে।
সূরা আল হাদীদ (মদীনায় অবতীর্ণ)
(৫৭:২২) অর্থ- পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর কোন বিপর্যয় আসে না, যদি না লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়, আমরা (আল্লাহ- সম্মান সূচক) তা সংঘটিত করার বহু পূর্বেই। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ।
(৫৭:২৩) অর্থ- এটা এজন্যে বলা হয়, যাতে তোমরা যা হারাও সেজন্যে বিমর্ষ না হও এবং তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তার জন্য খুব উল্লসিত না হও। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন উদ্ধত, অহংকারীকে-
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১১ সকাল ১১:১৫