somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কৌতুহল

১০ ই আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৫:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবি- রুমানিয়ার সংসদ ভবন, পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী বিল্ডিং।

আগের কাহিনী জানতে আশাভঙ্গ

সকালের বুখারেস্ট।
এখনো শহরের ঘুম পুরো ভাঙ্গেনি।
বাসের জানালা দিয়ে বিষণ্ণ মনে রাস্তার দুপাশ দেখছি।
শেষ পর্যন্ত রাবিয়া আসতে পারলো না! আমাকে একাই আসতে হয়েছে!

বুখারেস্ট ভার্সিটির কাছাকাছি ওল্ড টাউনে এক হোটেলে উঠলাম।
নির্ধারিত ফরম পূরণ করে ফিরিয়ে দিতেই রিসেপসনিশট তরুণী কিছুটা সময় নিয়েই পুরোটা পড়লো। তারপরে চাবি এগিয়ে দিতে দিতে কিছু বিধিনিষেধ জানিয়ে দিলো। শুনে অবাক হলেও, মাথা ঝাকিয়ে ছোট করে হাসতে চেষ্টা করলাম। যা অনেকটাই বোকার মতো এক হাঁসি হয়ে গেল।

রুমের সাইজ কিংবা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে মন খারাপ করার মতো কিছু নেই।
দেয়ালগুলো ঝকঝকে, এমনকি ফ্লোরের কার্পেটটা পর্যন্ত সুন্দর এবং পরিষ্কার। কিন্তু সমস্যা হলো, টয়লেট আর গোসলের ব্যবস্থা রুমের বাইরে! রুমের ভিতরে শুধু পানির ব্যবস্থাসহ একটা বেসিন আছে। কিন্তু এরকম পরিস্থিতিতে এর আগে কখনো পরিনি। তা নাহলে, রুম চেক করেই উঠতাম। সান্ত্বনা এই যে, সারাদিন তো বাইরে বাইরেই ঘুরবো। শুধুমাত্র রাতে ঘুমাতে এখানে আসা।

তখনো জানতাম না, আমার জন্য আরো বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছে!
টয়লেটে গিয়ে দেখি, পানি নেই। মানে, পানি ব্যবহারের কোন ব্যবস্থাই নেই।
টয়লেট পেপারই একমাত্র ভরসা।
সারা জীবন পানি ব্যবহার করে অভ্যস্থ! এখন কী উপায়?
অবশেষে মাথায় বুদ্ধি এলো।
একবারে গোসল সেরে তারপরে বাইরে এলাম।

বুখারেস্ট ট্যুর গাইডের একটা কপি হাতে নিয়ে হাটছি।
আকর্ষণীয় স্পটগুলো আগেই ম্যাপে মার্ক করে রেখেছিলাম। সেগুলোই এক এক করে দেখছি। রাস্তাঘাট, দোকানপাট, ঘরবাড়ি এবং অফিস বিল্ডিং দেখে যেরকম শুনেছিলাম, তেমন খারাপ অবস্থা মনে হচ্ছে না। আর্থিক অবস্থা হয়ত কিছু মানুষের খারাপ হতে পারে।

দৃষ্টি কাড়ল, তাদের পার্লামেন্ট বিল্ডিং।
পেন্টাগনের পরে এই বিল্ডিং হলো দুনিয়ার বৃহত্তম বিল্ডিং। তবে দুনিয়ার সবচেয়ে ভারী বিল্ডিং হিসেবে স্বীকৃত। শুধু জাঁকজমকপূর্ণ বিশালত্বের কারণেই নয়। চমৎকার নির্মাণ শৈলীরও একটা ভুমিকা আছে মানুষকে মুগ্ধ করার। প্রাক্তন স্বৈরশাসক নিকোলাই চসেস্কু এই বিল্ডিং নির্মাণের পরিকল্পনা করলেও শেষ দেখে যেতে পারেননি।

ম্যাগডোনাল্ডসে ফিস এবং ভেজিটেবল বার্গারের সেট মেন্যু আছে।
দামেও পোষায়। আবার, হালাল তো বটেই।
ম্যাপে দেখলাম, আর কিছুদুর এগোলেই পাওয়া যাবে।
দাড়াতে হলো মোড়ের ট্রাফিক সিগন্যালে।
সবুজ বাতি জ্বলে উঠার আগেই একজন জেব্রা ক্রসিং দিয়ে হাটতে শুরু করলো।
অন্য সবাই ফুটপাতে, রাস্তায় পা পর্যন্ত ফেলেনি। হঠাৎ এক প্রাইভেট কার সজোরে এলেও, জেব্রা ক্রসিংএ লোকটির কারণে ব্রেক চাপতে বাধ্য হয়। পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময়, ড্রাইভার জানালার কাঁচ নামিয়ে লোকটির গায়ে থুথু ছুঁড়ে টান দিয়ে চলে যায়। কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই, সবকিছু অত্যন্ত দ্রুত একের পর এক ঘটে যায়। ঘটনার আকস্মিতায় বিহ্বল লোকটি হাত উচিয়ে, দাত খিঁচিয়ে চিৎকার করতে শুরু করে। ততোক্ষণে সেই গাড়ী দূরে চলে গেছে। একটু পরেই বাতি সবুজ হলে, সবাই রাস্তায় নেমে আসে। তাদের ভিড়ে লোকটাকে আর আলাদা করার উপায় থাকে না।

সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে একা একা রীতিমতো বিরক্তিকর লাগছিল।
বের হয়ে রাস্তা ধরে হাটলাম কিছুক্ষণ।
কয়েকটা সাইনবোর্ড দেখেই বুঝলাম, নির্দোষ বিনোদনের জন্যে অনেকেরই কাঙ্ক্ষিত স্থান। ফ্রেন্ডদের সাথে এ নিয়ে ঠাট্টা বহুবার হয়েছে। তারপরেও আজ কয়েক কদম দূরে দাঁড়িয়ে, ভিতরে যেতে মন সায় দিলো না। তারপরে কাছেই একটা বারে গিয়ে ঢুকলাম। ওয়েট্রেসকে যখন বললাম, তার পছন্দ মতো যে কোন একটা নন-এলকোহোলিক ড্রিংক্স দিতে। তার বাঁকা চাহনি দৃষ্টি এড়ালো না। ছোট একটা স্টেজে গান চলছে। গায়ক মনে হয় কাস্টমারদেরই কেউ একজন। ভাষা কিছুই বুঝতে পারছি না। তবে ছন্দ আর বাদ্যযন্ত্রের কারণে ভালোই লাগছে।

ড্রিংক্সের গ্লাস হাতে, ত্রিশের কাছাকাছি বয়সের একজন হঠাৎ আমার টেবিলে বসলো।
আমাকে কিছু জিজ্ঞেস না করেই বসে পড়াতে, স্বভাবতই বিরক্ত।
তবে বিরক্তির ভাব চোখে মুখে ফুটতে দিতে চাইছি না।
কোত্থেকে এসেছি?
কয়দিন থাকবো?
কোথায় উঠেছি? ইত্যাদি প্রশ্নের মাধ্যমে সে আলাপ জমাতে চাইছে।
তবে, এক তরফা জিজ্ঞাসাবাদের মতো হয়ে যাচ্ছে অনেকটা।
ততক্ষণে সন্দেহ জেগে উঠেছে, ব্যাটা কি পুলিশ নাকি? অবৈধ অভিবাসী মনে করেছে আমাকে?

মতলব নিজেই খোলাসা করলো, কিছুক্ষনের মধ্যেই।
সে ট্যুরিজম ব্যবসার সাথেই জড়িত। ট্যুরিস্টদের বিনোদনের ব্যবস্থা করে।
এক পর্যায়ে, সরাসরি জানতে চাইল যে, আমি মেয়ে চাই কিনা?
আরো জানালো, তার কাছে ইয়াং এবং ফ্রেস মেয়ে আছে। সবাই খুবই সুন্দরী। রুমানিয়ার মেয়েরা যে সুন্দরী সেটা আগে থেকেই জানতাম। এছাড়া সারাদিনের ঘোরাঘুরিতে স্বচক্ষে দেখার যথেষ্ট সুযোগ এই একদিনেই পেয়েছি।

এক মুরুব্বী উপদেশ দিয়েছিলেন,
- “বিদেশে যাচ্ছো, অনেক কিছুর সুযোগ আসবে। সব কিছু করতে হবে, এমন কোন কথা নেই। কিন্তু তাই বলে, দেখতে তো দোষ নেই?“ সেই অমীয় বাণী মনে পড়াতে কৌতূহলী হয়ে উঠলাম।
এতক্ষণ সে প্রশ্ন করছিল, আর আমি দায়সারা গোছের জবাব দিচ্ছিলাম।
এখন, আমি প্রশ্ন করছি। সে উত্তর দিয়ে যাচ্ছে।

এক পর্যায়ে তার ইশারা লক্ষ্য করে একটা টেবিলে তাকিয়ে দেখি এক তরুণী আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পরেই সে এসে আমাদের টেবিলে যোগ দিল। এখন আর তাকে তরুণী মনে হচ্ছে না। বড়জোর উঠতি তরুণী বলা যেতে পারে। লোকটি নিজে থেকেই বলল, এই মেয়েটিই কিছুটা ইংরেজি জানে। পছন্দ না হলে, অন্য জায়গা থেকে ইংরেজি জানা মেয়ে এনে দিতে পারবে। সময় লাগবে না।

ছবিঃ গুগল থেকে নেয়া।
পরবর্তী কাহিনি অসহায়ত্ব

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ১২:৩৬
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×