somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আশাভঙ্গ

০৯ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বড় ধাক্কাটা খেলাম, যেইনেপের ভ্রূ নাচানো প্রশ্নে।
গালভর্তি দুষ্টুমিপূর্ণ হাঁসি। চোখে বাঁকা চাহনী।
-“ তুমি কি এমন যাদু করেছ যে, রাবিয়া তোমার এত বড় ভক্ত হয়ে গেল?”
শুনে অপ্রস্তুত হয়ে যাই। কথা খুঁজে পাই না।
আকর্ষণীয়া এবং সুন্দরী তকমা পেতে একজন তরুণীর যা যা থাকতে হবে, সবই আছে রাবিয়ার মধ্যে। প্রথম দর্শনেই নজর কাড়বে, নজরকারা সুন্দরীর একেবারে পারফেক্ট উদাহরণ। সহজাত একটা মিষ্টি হাঁসি সব সময় ঠোঁটের কোনে চোখে পড়ে। পোশাক আশাকেও মানের উচ্চতা স্পষ্ট। তার উপরে লেখাপড়া শেষ করে একটা ব্যাংকে বছর খানেক আগে যোগ দিয়েছে।
আমার মতো একজন সাধারণ ভিনদেশী তরুণের পক্ষে তার মন জয় করতে পারার দুঃসাহস দেখানোর প্রশ্নই উঠে না। তাই, নিজের কাছেই লজ্জা লাগে। তার চেয়ে বড় কথা সোনালি চুলের লম্বা দীর্ঘাঙ্গী রাবিয়ার চেয়ে কালো চুলের এলিফকে আমার বেশি পছন্দ। এলিফ, তার কাজিন। মারমারা ভার্সিটির ছাত্রী। লেখাপড়া শেষ হতে কয়েক মাস বাকী। দু’জনের বাসা একই এলাকায়। একই ট্যুরে তাদের দুইজনের সাথে পরিচয় হয়। তাদের পরিবারও সাথেই ছিল।

সেটা ছিল দশদিনের এক ট্যুর।
সকাল-সন্ধ্যা সবাই একত্রেই কাটিয়েছি। খোলামেলা পোশাক, বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ, অযাচিতভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া ইত্যাদি দেখে যে ধারনাই হোক না কেন, তুরস্কের বেশীরভাগ মানুষই রক্ষণশীল। নারীর স্বাধীনতা এখানে শ্রদ্ধার সাথেই মূল্যায়ন করা হয়। ততোদিনে আমি এটা বুঝে গেছি। তাই, রাবিয়া, এলিফ, তাদের পরিবার এবং ট্যুরের অন্য সবার সাথেই আমার আচরণ ছিল সংযত। এতে করে আমার ধর্মীয় রক্ষণশীলতা এবং পারিবারিক মুল্যবোধ সবার কাছে স্পষ্ট হয়েছে অল্প কয়েকদিনেই।
বসফরাসের পাড়ে বসে চায়ের ক্যাপ চুমুক দিতে দিতে কথা হচ্ছিল।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাবিয়া, এলিফ আর আমি এমন আড্ডা নিয়মিতই দেই।
যেইনেপ আজ প্রথমবারের মতো আমাদের আড্ডায় যোগ দিয়েছে।
মুলত আমার সাথে পরিচিত হতেই এসেছে। কয়েক মাস আগের এক ট্যুরে গিয়ে পরিচয়ের পর থেকে রাবিয়া কাজের ফাঁকে ফাঁকে তার কলিগদের কাছে আমার সম্পর্কে এতো গল্প করেছে যে, স্বচক্ষে আমাকে দেখার লোভ সামলাতে পারেনি। আর হাকান এসেছে যেইনেপ’র সাথে। তাদের মধ্যে মন দেয়ানেয়া চলছে দীর্ঘ দিন ধরে। এই বছরের শেষ নাগাদ বিয়ে করবে। এসেই হাকান আর যেইনেপ ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে। তারা বেশিক্ষণ আমাদের সাথে থাকতে পারবে না।

আমরা তিনজন গত প্রায় দু’মাস ধরে একেক সপ্তাহে একেকজনের পছন্দের ক্যাফেতে বসি। আজ ছিল, আমার পছন্দের দিন। এখানকার কুম্পির (এক প্রকারের বেকড আলু) আমার খুব প্রিয়। তাই, আমি বেসিকতাসের এই ক্যাফেতে আসার প্রস্তাব দেই। অন্যরা অমত করেনি। কারণ, এই জায়গা তাদেরও পছন্দের।
বসফরাসের পাড়ের এই জায়গাটা সুন্দর।
গাছের ছায়ায় টেবিল ঘিরে কাঠের বেঞ্চ বিছানো।
দূরে ফাতিহ সুলতান মেহমেত ব্রিজ দেখা যায়।
আমাদের গল্প জমে উঠতে সময় লাগে না।
হাজারো গল্প জমে উঠেছে।
সামনে টেবিলে ছোট ছোট টার্কিশ চায়ের কাপ। বেচারাদের এক মুহূর্ত ফুরসত মিলছে না। একটু ক্ষনের জন্যেও খালি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না।

নিজের সীমাবদ্ধতা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই আমার। রাবিয়ার সাথে একটু ঘুরাঘুরি কিংবা এক টেবিলে বসে চা খাওয়াই আমার কাছে সৌভাগ্য মনে হয়। স্থানীয় কালচার মেনে গালে গাল ছুইয়ে চুমো দেওয়াটাই চরম প্রাপ্তি মনে করি। তাই, আমার যাবতীয় চেষ্টা এলিফের কাছে ঘেষে বসার, তার মেজাজ-মর্জি বুঝে চলার। আমার এই কাছে ঘেষার প্রচেষ্টাকে এলিফ কোনো মতেই পাত্তা দেয় না। বরং, যা চাইনি, তাই হচ্ছে। রাবিয়ার সাথে আমার সম্পর্ক ধীরে ধীরে অনেক কাছাকাছি পর্যায়ে চলে এসেছে। অথচ, আমি ঘনিষ্ঠতা কামনা করছিলাম এলিফের সাথে।

- “সামনেই সামার ভ্যাকেশন আসছে। কারো কোনো প্ল্যান আছে?”
যেইনেপ আর হাকান উঠে যাওয়ার পরেই রাবিয়া প্রশ্নটা তুলে। পরক্ষনেই নিজে নিজেই জানায় যে, সে এখনো কিছু ঠিক করেনি।
- “আমার প্ল্যান ছিল, বসনিয়া যাওয়ার। কিন্তু এখন আর সম্ভব হচ্ছে না।“
এরপরে, কিভাবে আমার বসনিয়া যাওয়ার প্ল্যান ভেস্তে গেছে বিস্তারিত খুলে বললাম।

এলিফ জানালো যে, সে আনতালিয়ার এক রিসোর্টে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বুকিং করে ফেলেছে।
শুনেই পুলকিত বোধ করি। প্রস্তাব করলাম,
-“আমি যোগ দিতে চাই। কোন রিসোর্ট? দরকার হলে আজকেই বুকিং করে ফেলবো।“
- “সেটা সম্ভব নয়। কারণ, মা-বাবা যাচ্ছে না। সাথে থাকবে ছোট বোন। আর কয়েকজন ক্লাশফ্রেন্ড। সব মেয়ে। কোন ছেলে নেই। আমার বোন তোমাকে চিনে। ঠিক মাকে বলে দিবে।“ দ্রুত উত্তর দেয় এলিফ। যেন সে এমন প্রশ্নের জন্যে তৈরি ছিল।

আমার কাছে ব্যাপারটা লোভনীয় মনে হয়। তার অনিচ্ছাকে পাত্তা দেই না।
আমি নাছোড়বান্দার মতো যোগ করি,
- “রিসোর্টে তো যে কেউ গিয়ে উঠতে পারে। আমি না হয় তেমনি কেউ একজন। এমন ভাব করবে যে, তোমার সাথে হঠাৎ দেখা হয়েছে। আগে থেকেই যে আমি জানতাম। কিংবা তুমি আছো বলেই যে আমি এখানে এসেছি, সেটা কাউকে বুঝতে দিয়ো না।“
- “তুমি বুঝবে না। কিছু সমস্যা আছে।“ বিনয়ের সুরে বলে এলিফ।
আমি আসলেও বুঝি না। সমস্যা কি হতে পারে? শেষ চেষ্টা করি,
- “ একটা রিসোর্টে গিয়ে পরিচিত কারো সাথে দেখা হতে পারে না? ব্যাপারটা না হয় তেমনি ধরনের হবে?”
- “নাহিদ, প্লীজ। এ নিয়ে জেদ করো না।“ এলিফের কণ্ঠে বিরক্তি।
মুখ ঘুরিয়ে নেয়। ভ্রূ কুচকে বসফরাসের পানির দিকে তাকিয়ে থাকে।
কিছুক্ষণ পরে, কপালের উপর থেকে সানগ্লাস দিয়ে ঢেকে দেয় কালো চোখজোড়া।

আমি ক্ষনিকের জন্যে বেকুব বনে যাই।
মুখে কথা আসে না। দৃষ্টি চলে যায় আরো সামনে।
বসফরাসের গাঢ় নীল পানির উপরে চলছে টুরিস্ট ভর্তি এক স্টীমার।
পিছনে পিছনে উড়ে আসছে একগাদা সীগ্যাল।
টুরিস্টদের কেউ কেউ সিমিট (এক ধরনের টার্কিশ বন্রুটি) ছিড়ে ছুঁড়ে মারছে সীগ্যালদের দিকে। পাখিগুলো খাওয়ার জন্যে কাছে আসতেই ক্লিক করে উঠছে, ট্যুরিস্টদের হাতের ক্যামেরাগুলো।

রাবিয়া আমার ত্রাণকর্তার ভুমিয়ায় আবির্ভূত হয়।
সে প্রস্তাব করে যে, আমরা মিশর যেতে পারি কিনা।
তার কয়েকজন ফ্রেন্ড গতবছর গিয়েছিল। পিরামিডের গল্প শুনে মনে হয়েছে, মিশরে একবার না গেলে জীবনটাই বৃথা।
আমি রাজী হলাম না। কারণ, পরেরবার দেশে ফেরার সময় আমি মিশর হয়ে ফিরবো। তাই এখন আর পয়সা খরচ করার প্রশ্নই উঠে না।
-“রুমানিয়া? আমাদের ব্যাংকের এক কলিগ কয়েক মাস আগে সেখানে বদলী হয়েছে। আমাকে কয়েকবার মেইল করেছে, যেতে।“ রাবিয়া আগ্রহ নিয়ে জানতে চায়।
-“রুমানিয়া সম্পর্কে আমার আইডিয়া কম। তবে যা কিছু শুনেছি, ভালো কিছু নয়। বিশেষ করে মেয়েরা।“ বলেই লজ্জিত বোধ করি। সত্যি হলেও এমন কথা বলা ঠিক হয়নি। তাই, ‘সরি’ বলতে সময় নেই না।

ইস্তাম্বুলের লালেলী এলাকা রুশ সুন্দরিদের জন্যে প্রসিদ্ধ। এখানেই বিশেষ এলাকায় প্রাক্তন সোভিয়েট ইউনিয়নের মেয়েদের সাথে রুমানিয়ার মেয়েদের অনেকেই থাকে। এছাড়া অনেক লং রোডের ট্রাক ড্রাইভারের প্রিয় গন্তব্যস্থান রুমানিয়া। কারন, ঐখানে মেয়ে সস্তায় পাওয়া যায়। মূলত গত কয়েক বছর থেকেই তাদের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। প্রায় একই অবস্থা পূর্ব ইউরোপের আরো কয়েকটি দেশে। তাই, রুমানিয়া কখনোই আমার পছন্দের তালিকায় ছিল না।

-“ রুমানিয়ার মেয়ে ভালো না মন্দ তা দিয়ে আমাদের কি? আমরা থাকবো আমাদের মতো।“ কিছুটা সময় নিয়েই উত্তর দেয় রাবিয়া।
আমরা!
আমরা মানে?
রাবিয়ার কথার যুক্তি অত্যন্ত সবল।
কিন্তু তার যুক্তির ধারের চেয়ে ‘আমরা’ শব্দটিই আমার মনোযোগের পুরো মাথাটাই খেয়ে ফেলে। প্রত্যুত্তরে কি বলবো ভাবতে থাকি।

রাবিয়া নিজে থেকেই বলে উঠে,
-“ এলিফ, চল। রুমানিয়া ঘুরে আসি। এক আনতালিয়া আর কতোবার যাওয়া যায়?“
- “ আমি পারবো না। তুমি ভালো করেই জানো। আমার মা কক্ষনোই আমাকে এভাবে একা যেতে দিবে না।“ একটু চিন্তা করেই এলিফ উত্তর দেয়।
-“একা কোথায়? আমি যাচ্ছি। আর, নাহিদকে তো তোদের বাসার সবাই চিনে।“ রাবিয়া বুঝানোর চেষ্টা করে।
বেশ কিছুক্ষণ এভাবে নিস্ফল চেষ্টার পরে, এলিফকে রাজী করানোর চেষ্টায় ক্ষান্ত দেয়।

শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়, আমি আর রাবিয়া এই দুজন যাচ্ছি। সে চেষ্টা করবে, আরো কিছু ফ্রেন্ডকে রাজী করাতে। যদি না পাওয়া যায়, শুধু আমরা দুজনেই যাবো। সে নিজেই দায়িত্ব নেয়। তার কলিগের সাথে যোগাযোগ করে আমাদের ট্যুর প্ল্যান চূড়ান্ত করবে। আমরা কোথায় গিয়ে উঠবো? কি করবো? এগুলো নিয়ে আমার মাথা না ঘামালেও চলবে। আপাততঃ আমার কাজ শুধুমাত্র আমার নিজের ভিসা যোগাড় করা।

আল্লাহ্‌ যা করেন, ভালোর জন্যেই করেন।
কথাটার প্রতি বিশ্বাস আরো বাড়লো। বসনিয়া যাওয়ার টিকেট পাইনি বলেই আজ এই অভাবনীয় সুযোগ সামনে এসেছে। সব কিছু কমপ্লিট হয়ে যাওয়ার পরে শুনি, যে তারিখে বসনিয়া যেতে চাচ্ছি, ঐ তারিখে কোনো সীট খালি নেই। তার কাছাকাছি সময়েও নয়। শুনে চরম হতাশায় ডুবে যাই। প্রায় সপ্তাহখানেক দৌড়াদৌড়ি করে ভিসা পেলাম। এর মধ্যেই বাসিচের সাথে কথা ফাইনাল হয়েছে। তুজলাতে তাদের বাসায় আমাকে থাকতে দিবে। ভিসা আনতে যাওয়ার সময় আদেলাইস টিপ্পনী কেটে বলেছে যে, সেই বাসায় বাসিচের এক কাজিন থাকে। প্রায় আমারই সমবয়সী। আমি যেন তার কাছ থেকে দূরে থাকি। মেয়ে হলেও সে কিন্তু একাই একশো। শুনেই আমি মনে মনে সুন্দরী এক বসনিয়ান তরুণীর ছবি মানসপটে এঁকে ফেলেছিলাম। কিন্তু টিকেট জটিলতায় সব ভেস্তে যেতে বসেছিল। এখন রুমানিয়ার ট্রিপটা নতুন সুযোগের দ্বার নয়, যেন পুরো আঙ্গিনা খুলে দিয়েছে।

এলিফ যেতে রাজী হয়নি বলে মনে মনে খুশীই হলাম।
প্রথমদিন থেকেই কেন যেন সে আমাকে একটু কম পাত্তা দেয়।
অন্যদিকে, আমার প্রতি রাবিয়ার আলাদা একটা টান আমি সবসময় খেয়াল করেছি। তার চেয়ে বড় কথা, রুমানিয়া গিয়ে রাবিয়ার সাথে একা বেড়ানোর মধ্যে আলাদা একটা আবেদন আছে। আমি আর রাবিয়া একা থাকলে যা করতে পারবো, এলিফ সাথে থাকলে কখনোই তা সম্ভব হবে না।

সপ্তাহ শেষে আবার আড্ডায় বসেছি।
এলিফ তার সিদ্ধান্ত বদলায়নি।
রাবিয়া তখন পর্যন্ত কাউকে পায়নি যারা আমাদের সাথে রুমানিয়া যেতে পারবে।
সবাই যার যার মতো সামার ট্রিপ প্ল্যান করে ফেলেছে। তাই, এখন আর বদলাতে চাচ্ছে না। সবশুনে আমি মোটেও হতাশ হলাম না। আমার কাছে মনে হলো, এগুলো সবই আমার জন্যে শাপে বর হতে চলেছে।

সাধারণত সপ্তাহের মধ্যে রাবিয়াকে কখনো ফোন করতাম না।
ফোন করার জন্যে কারণ থাকতে হবে তো?
সপ্তাহ শেষে না হয় জিজ্ঞেস করতে পারি, কোথায় দেখা হচ্ছে?
তবে এখন, বিনা কারণেই ফোন করি।
প্রতিদিনই জানতে চাই, কাউকে পেয়েছে কিনা?
যদিও, কথা বলতেই ফোন করা।
আদৌ কাউকে পেলো কি পেলো না, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ব্যাথা নেই।

রাবিয়া এখনো কাউকে পায়নি।
তবে, আমাদের ট্যুর প্ল্যান করা হয়ে গেছে।
বুখারেস্টে আমরা সময় নস্ট করতে চাইনা। বরাবর ঐতিহাসিক স্থানগুলো আমাকে টানলেও এবার সেগুলোতে গুরুত্ব কম দিলাম। রাবিয়ার পছন্দ মতোই আমাদের গন্তব্য বুখারেস্ট থেকে প্রায় ১৪০ কিমি উত্তরে সিনাইয়া স্কি রিসোর্টে। এই সিজনে স্কি করা যাবে না। তাই, ট্যুরিস্ট কম থাকবে। নিরিবিলি সময় কাটানো যাবে। একই সাথে কাছাকাছি ব্রাশোভ শহরে ঢুঁ মেরে আসা যাবে। শহরটিতে মধ্যযুগের কিছু স্থাপত্য আছে। এছাড়াও সিনাইয়াতে যে হোটেলে থাকবো, সেগুলোও মধ্যযুগের তৈরী। তাই, আমার পছন্দের ঐতিহাসিক স্থাপত্য আর রাবিয়ার নিরিবিলি সময় কাটানো – দুই’ই পূরণ হবে।

পরের কয়েকটা দিন কাটলো দৌড়ের উপরে।
কিন্তু, ভিসার জন্যে এমব্যাসিতে যাতায়াতের ব্যাস্ততা গায়েই লাগলো না।
রাবিয়ার সাথে কোথায় কোথায় বেড়াবো? কি কি করবো?
এরকম অনেক কল্পনা মাথায়। সবই ছিল সুখকর কল্পনা। একবার দু’বার পেটে প্রজাপতিও উড়লো। এ এক অন্যরকম অনুভূতি।

স্বর্গ থেকে মর্ত্যে নামতে বেশিদিন লাগলো না।
দুঃসংবাদটা ফোনের মাধ্যমেই পেলাম। কয়েকদিন পরেই।
রাবিয়ার মা-বাবা কোন মতেই রাজী নয়।
রাবিয়া যত বড়ই হোক না কেন। বয়স যাই হোক। ভার্সিটি শেষ। চাকুরি করে। তো কি হয়েছে?
এর আগে একাধিকবার ফ্রেন্ডদের সাথে ইউরোপে গেছে। সেটা ঠিক আছে।
কিন্তু, এই বার আমার সাথে, একা তাকে যেতে দিবে না। অসম্ভব।
যদিও তাদের বাসার সবাই আমাকে চিনে।
তারা সবাই আমাকে খুব ভালো একজন ছেলে বলেই বিশ্বাস করে।
তারপরেও।
তাদের এক কথা। আরো কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবী থাকলে, তারা কখনোই নিষেধ করতো না।

শুনেই বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।
ভিসা হাতে। প্লেনের টিকেটও।
আমাদের দেশের তরুণেরা নাকি রুমানিয়া দিয়ে পালিয়ে ইউরোপে ঢুকে।
তাই, টিকেট ছাড়া আমাকে ভিসা দিতে চায়নি। ভিসার জন্যে রিটার্ন টিকেট পর্যন্ত কিনতে হয়েছে। এদিকে হাতে সময় আছে মাত্র কয়েকদিন।

দুশ্চিন্তার সাথে জুটি বেঁধেছে আশাভঙ্গের বেদনা।
দুই দিন চলে গেল। ভাবছি, কি করা উচিৎ?
রাবিয়া যাবে না বলে আমি এতগুলো টাকা জরিমানা দিবো?
আশাহত হয়েছি ঠিকই। তাই বলে সব বরবাদ হয়ে যাবে?
ভাবলাম, একাই যাবো। পরক্ষনেই চিন্তার উদয় হলো। একা গিয়ে যদি কোন বিপদে পড়ি?

পরের পর্ব কৌতুহল
ছবি- গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৫:০৬
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×