প্রচারেই প্রসার,
বিজ্ঞাপন একটা মজার জিনিষ, এবং অবশ্যই একটা কাজের জিনিষ, যদি সেটা সেইভাবে তৈরি করা যায়। আমি এখানে টিভি বিজ্ঞাপনের কথা বলছিলাম। টিভি বিজ্ঞাপনগুলো সাধারনত এমনভাবে বানানো যাতে মানুষের কাছে সেটা মজার কিংবা হাসির মনে হয়। এটাইতেই আসলে মানুষের দৃস্টি আকর্ষন হয় বেশি, যেহেতু দৃষ্টি আকর্ষনের জন্যেই বিজ্ঞাপন। তবে বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায় বিজ্ঞাপনগুলো অতিরঞ্জিত। আবার দর্শকও বুঝে এটা অতিরঞ্জিত। তারপরও তারা মজা পায়। আর এটাই বিজ্ঞাপনদাতাদের লাভ। হোক না সেটা অতিরঞ্জিত, তাতে কি? দর্শকতো পণ্যের নাম জানলো। এটা আসল, এটাই দরকারি।
সেই ফ্রুটিকার এডের কথা মনে আছে? নেতা আজাইরা প্রতিশ্রুতি দিতে থাকে, হ্যান করেগা, ত্যান করেগা। তারপর যখন ফ্রুটিকা খায়, তখন তার মুখ দিয়ে সব সত্য কথা বের হতে থাকে।
এসব এড দেখে দর্শক মজা পাওয়ার সাথে সাথে সবদিকে ছড়িয়েও দেয়। আমাদের কোনো এক ফ্রেন্ড মিথ্যা কথা বললে বলতাম, অরে ফ্রুটিকা খাওয়া।
আসলে এভাবেই পন্যের নাম-ধাম ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ মনে রাখে পন্যের কথা। দোকানে গেলে পন্যটা দেখার পর ভাবে একবার নিয়ে দেখি।
তবে এসব অতিরঞ্জিত এড বাচ্চাদের পন্যে বেশি থাকে।
ছোটবেলায় একটা প্রান মিল্ক ক্যান্ডি চকোলেটের বিজ্ঞাপন দেখছিলাম এরকম, ভিলেনরা নিরীহদের মারতে আসে, তখন বিজ্ঞাপনের নায়ক মানে ১৩/১৪ বছরের একটা ছেলে একটা প্রান মিল্ক ক্যান্ডি চকোলেট হাতে নিয়ে হাত সামনের দিকে শপথের মতো করে বলল, প্রান মিল্ক ক্যান্ডি, আমাকে শক্তি দাও।
তারপর দেখা গেল, তার শরীরে সুপারম্যানের মতো পোষাক। অতঃপর নায়ক সাহেব ভিলেনদের আচ্ছামত পিটালেন।
সেইদিন এই এড দেখার পর আব্বুকে বললাম, আব্বু, একটা প্রান মিল্ক ক্যান্ডি নিয়ে আস।
এই হচ্ছে বিজ্ঞাপনের ইফেক্ট।
বিজ্ঞাপন যে শুধু হাসির হয় তা না। অনেক সময় সিরিয়াস কিছু বিজ্ঞাপনও থাকে। যদিও উদাহারন মনে পড়ছেনা। তবে আছে বেশখানিক।
টিভি কমার্শিয়াল গুলোতে মাঝে মাঝে ইন্ডাইরেক্ট মিনিঙয়ের উপস্থাপন দেখা যায়। এটার উদাহারন হিসেবে বলা যায়, ভোডাফোনের এডগুলো। একধরনের উপস্থাপন কিন্তু বোঝাচ্ছে অন্যকিছু। এসব এড গুলার মজাটা আলাদা। এগুলোও মানুষকে অর্থাৎ দর্শককে আকর্ষন করে। ভোডাফোনের এডগুলো যারা দেখেন নাই তারা ইউটিউবে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন।
এসব টিভি কমার্শিয়াল গুলার শুরু কিন্তু বেশিদিন আগের না। ১৯৫০ এর শুরুর দিকে টিভিতে এড দেওয়া শুরু হয়েছিল। এই টেলিভিশন কিন্তু ১৯২০ এর দিকে পরীক্ষামুলক ভাবে চালু হয়েছিল। আর বানিজ্যিক ভাবে চালু হয়েছিল ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর। অর্থাৎ ১৯৪৫-৫০ এর দিকে। তাহলে কমার্শিয়ালভাবে টেলিভিশন ব্যবহারের যাত্রা যখন শুরু ঠিক তখনই বা তার পরেই টিভি কমার্শিয়াল গুলাও শুরু।
কিন্তু এই বানিজ্যিক বিজ্ঞাপনের উদ্ভাবনটা আরোও কিছুদিন আগের। বিংশ শতাব্দির প্রথম দিকে
বিজ্ঞাপন তো আর শুধু টিভি বিজ্ঞাপনেই হয় না। অনেক ধরনের বিজ্ঞাপন আছে। প্রিন্ট মিডিয়াতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়, দেওয়া হয় ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েব সাইটে। সাধারনত এসব প্লাটফরমই বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য জনপ্রিয়।
বিভিন্ন নিউজপ্রিন্ট গুলোর কিছু জায়গা থাকেই বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য। এসব বিজ্ঞাপন সহজেই মানুষকে আকর্ষন করে।
শুধু কি পণ্য? পণ্যের দোকানেরও এড দেওয়া হয় মাঝে মাঝে, বিভিন্ন ভাবে। তা লিফলেটের মাধ্যমে কিংবা বিলবোর্ডে।
ফটো স্টুডিও গুলার কথাই ধরেন। এইতো পাচ-ছয় বছর আগেও বাংলাদেশে এনালগ ক্যামেরা ব্যবহার হতো। ডিজিটাল ক্যামেরার চল তখনও শুরু হয়নাই। স্টুডিও গুলো ছবি তোলার একদিন পর ছবি প্রিন্ট করে বের করতে পারতো। কিংবা কেউ এনালগ ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে দোকানে ফিল্ম/ নেগেটিভ দিয়ে আসতো। একদিন পর তার প্রিন্ট হাতে পাইত। তো, যখন বাংলাদেশে ডিজিটাল ক্যামেরা আসল প্রথমদিকে, তখন স্টুডিওগুলোর সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন ছিল "মাত্র ৫ মিনিটে ছবি তুলে দেওয়া হয়"
আর এখন অবশ্য "বিদ্যুৎ না থাকলেও চলে" -এইটাই বড় বিজ্ঞাপন।
বাংলাদেশে ডিজিটালাইজড এর নমুনা হিসেবে ইদানীং (বলা যায়) নতুন সংযোজন হচ্ছে ই-কমার্স সাইট গুলো। বাংলাদেশ বেইজড অনেকগুলো অনলাইন শপিঙয়ের সাইট রয়েছে যদিও, সবগুলো পপুলার হতে পারেনাই। রকমারির মতো দুএকটা সাইট হয়তো জনপ্রিয় আছে। আসলে বেশির ভাগ সাইট ঢাকার বাইরে ক্যাশ অন ডেলিভারি দেয় না। এটা একটা কারন হতে পারে। এবং আমরা বাঙালি তো। আমাদের জন্য এসব সাইট গুলোতে দামাদামি করার জন্য অপশন রাখা দরকার ছিল।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:১০