somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সবুজ বাতি

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেহেরের ফোন বেজে উঠলো সকাল সকাল, পাশের রুম থেকে ফোন করেছেন মেহেরের বাবা রেজাউল সাহেব। খুশিতে আত্মহারা কেননা মেহের পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে এল এল এম করবে। ক্লাস শুরু হতে আর বেশি দিন বাকি নেই, এক সপ্তাহ মাত্র। প্রথম দিন মেয়েকে ক্লাসে দিয়ে আসলেন রেজাউল সাহেব। তার অনেকদিনের স্বপ্ন ছিলো মেয়েকে নিয়ে যে মেয়ে তার পাবলিক ভার্সিটিতে পড়বে। মেহের দেখতে ভালো, সুন্দর,বেশ বড় চুল মাটিতে ছুঁইছুঁই, খুব সুন্দর গুছিয়ে কথা বলে আর আচরণ বাচ্চাদের মত এখনো।

ক্লাসে প্রথম দিন অনেকের সাথেই আলাপ হলো। নতুন মুখ, নতুন সব স্যার-ম্যাম রা। দিনটা ভালোই কেটেছিলো মেহেরের। বাড়ি ফিরে বাবার সাথে গল্প সারা দিনের -সারা সময়ের,তার নতুন যাত্রার। কিছু দিন যেতেই ক্লাসে শুরু হলো নতুন ঘটনার। কেউ একজন ছিলো যে মেহেরের মনে বাসা বাঁধার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলো। শাহরিয়ার তার নাম, সে আর কেউ না একজন লেকচারার। ক্লাসে ঢুকা থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত মেহেরকে নিয়ে তার আলোচনা। ক্লাসের সবাই ভাবতে শুরু করলো মেহের ও শাহরিয়ার স্যারের মধ্যে কিছু একটা চলছে কিন্তু এর কিছুই না। শাহরিয়ার স্যারের পড়ানো মেহের কিছুই বুঝতো না, স্যার পড়ানোর সময় সব উদহারণ গুলো মেহেরকে নিয়েই দিতো। কাকতালীয় ভাবে মেহের ও শাহরিয়ার স্যারের ড্রেস ও ম্যাচ হয়ে যেতো। সবাই এইসব নিয়ে আলোচনা করতো, মজা করতো মেহেরের সাথে। মেয়ে মানুষের মন বলে কথা, মেহের ও একসময় শাহরিয়ার স্যার কে নিয়ে ভাবতে শুরু করলো এবং বিষয় টা মেহের ওর মায়ের সাথে শেয়ার করলো। রেজাউল সাহেবের কানে যেতেও দেরী হলো না ব্যাপার টা।

দিন যাচ্ছে, মেহেরর মনে শাহরিয়ারের জন্য একটু একটু ভালোবাসা জন্মাচ্ছে। কিন্তু শাহরিয়ার কি করছিলো সেটা শাহরিয়ার ই ভালো জানতো। ক্লাসমেটদের কথাবার্তায় মেহেরের মাথায় শাহরিয়ার স্যার ছাড়া আর কিছুই ছিলো না। ভার্সিটি গিয়ে স্যারকে এক পলক দেখার আগ্রহ জন্মাতে শুরু করলো মেহেরের মনে। সাহস করে ফেইসবুকে রিকোয়েস্ট পাঠালো মেহের, শাহরিয়ার একসেপ্ট ও করলো। কিছুদিন পর মেহের অবুঝের মত শাহরিয়ারের ফোন নাম্বার টা অফিস থেকে কালেক্ট করলো এবং শাহরিয়ার কে ফোন দিলো। মেহেরের তখন মাথা থেকে ঘাম দরদর করে পড়ছে, হার্টবিট যেনো ঘোড়ার বেগে দৌড়াচ্ছে। ফোনটা শাহরিয়ার রিসিভ করলো, রাত তখন আট টা পঞ্চান্ন মিনিট। মেহের সরাসরি বললো, 'স্যার, আপনাকে আমার ভাল্লাগে'। শাহরিয়ার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, 'আমাকে ভালো না লাগলে আমার পড়ানো ও ভালো লাগবে না, অতএব আমাকে আগে ভালো লাগতে হবে'। মেহের সরাসরি বললো, 'আপনার পড়ানো আমি বুঝি না, আমি বলেছি আপনাকে আমার ভাল্লাগে, ভালো লাগা আর ভাল্লাগার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। ভালো সবাইকেই লাগতে পারে কিন্তু ভাল্লাগা শব্দটা ভিতর থেকে আসে যেটা কিনা একজনের জন্যই প্রযোজ্য'।

এই বলে মেহের শাহরিয়ার কে বললো ভুল কিছু বললে সরি স্যার। মাফ করে দিবেন,টাটা। মেহের অনেক লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলো সেদিন থেকে, নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে অনেক্ষণ বকলো যে কেন সে কাজটা করলো, নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিলো তার। তিনদিন পর যখন ক্লাসে গেলো শাহরিয়ারের মেজাজ ও খারাপ ছিলো, সে আর আগের মত সেদিন ক্লাসে মেহেরকে নিয়ে মজা করলো না। যা ইচ্ছা না তাই বললো ক্লাসে পড়ানোর ছলে। মেহের ভাবলো শাহরিয়ার এইসব কথা আর কাউকে না বরং তাকেই বলছিলো। প্রত্যাশিত বস্তু যখন অপ্রত্যাশিত হয় তখন আর কিছুই ভালো লাগে না। শাহরিয়ার মেহেরকে নানাভাবে অপমানজনক কথা বললো যা ক্লাসে মেহেরের অনেক বন্ধুই বুঝতে পেরেছিলো।

মেহের এর পর থেকে আর কখনো ইচ্ছে হলেও শাহরিয়ারের সামনে যেতো না কারণ ওটা শাহরিয়ারের শেষ ক্লাস ছিলো সেই সেমিস্টারে। পরীক্ষার হলে দেখা হলে বা ড্রেসের কালার মিললেও মেহের কখনো স্যারের দিকে আর তাকায়নি। মেহের এখনো গিল্টি ফিল করে সেই ফোনকলের জন্য কিন্তু ভালোবাসে সে এখনো তার সেই স্যার শাহরিয়ারকে ই।

ফেইসবুকে দেখা হয় মেহেরের তার স্যারের সাথে, কথা হয়না কখনোই। ফ্রেণ্ডলিস্টের সবুজ বাতিগুলোর মধ্যে যখন মেহেরের স্যারের নামটা জ্বলে উঠে তখন দেখা মিলে শাহরিয়ারের। এই এতটুকু দেখাতেই মেহেরের শান্তি ! আর যখন সবুজ বাতিটা অফ হয়ে যায় তখন মেহেরের মনেও যেনো কালো মেঘের আঁধার নেমে আসে।

আমাদের জীবনের কিছু ভালোবাসা শুধু সবুজ বাতিতেই আটকে থাকে যার কোন সমাপ্তি ঘটে না কখনোই......

হাফিজা নিপা
০৬.১২.২০১৭

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:০১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×