মানচিত্র শব্দটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। কিন্তু এই মানচিত্র শব্দটার ব্যাপকতা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে গুগল ম্যাপস এবং গুগল আর্থ। গুগলের এই মানচিত্র সেবার পরিধি দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। বর্তমানে পৃথিবীর মানচিত্রের পাশাপাশি চাঁদ, সমুদ্রপৃষ্ঠ, সমুদ্রের তলদেশ, আকাশ ইত্যাদি রয়েছে।
গুগল ম্যাপস: গুগল ম্যাপস এর ওয়েব ঠিকানা হচ্ছে http://maps.google.com। এখানে সার্চের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানকে খুঁজে পাওয়া যাবে। এছাড়াও নিজের পরিচিত বা দরকারী স্থানকে আরো তথ্য সমৃদ্ধ করে অনলাইনে সংরক্ষণ করা যাবে। অনলাইনে সংরক্ষণ করার জন্য অবশ্য গুগলে একাউন্ট থাকতে হবে। নিজের ম্যাপিং করা এসব স্থানের লিংক শেয়ার করা বা মেইল করা যাবে এমনকি প্রিন্টও করা যাবে। ম্যাপিং করা স্থানগুলো গুগলে সার্চেও পাওয়া যায়। মোবাইলে গুগল ম্যাপস দেখা যাবে m.google.com/maps বা http://www.google.com/gmm সাইটে থেকে।
গুগল ম্যাপসের স্থান গুগল আর্থে দেখা: পছন্দের কোন স্থান গুগল ম্যাপসে সংরক্ষণ করা থাকলে বা খুঁজে পেলে তা গুগল আর্থের জন্য এক্সপোর্ট করা যায়। যা গুগল আর্থে চালু করলেই স্থানটি চলে আসে। এজন্য গুগল ম্যাপসে স্থানটি এনে View in Google Earth বাটনে ক্লিক করে সংরক্ষণ করতে হবে। এবার ফাইলটি গুগল আর্থে খুললে তা Places প্যানেলে আসবে। Temporary Places থাকা উক্ত স্থানে মাউস দ্বারা দুইবার ক্লিক করলে গুগল আর্থে দেখাবে।
গুগল আর্থ: গুগল আর্থ হচ্ছে ডেক্সপট ক্লাইন্ট। এই সফটওয়্যার দ্বারা পৃথিবীটাকে ত্রিমাত্রিকভাবে দেখা যাবে। যদিও এর সাথে পৃথিবী ছাড়াও আরো অনেক পরিসেবা যুক্ত হয়েছে। কীহোল ইনকর্পোরেশন ২০০৪ সালে আর্থ ভিউয়ার থ্রিডি তৈরী করে যা পরবর্তিতে গুগলের অধিগ্রহনের মাধ্যমে ২০০৫ সালে গুগল আর্থ নামে অবমুক্ত হয়। বর্তমানে গুগল আর্থের ৫.০ সংস্করণ রয়েছে। গুগল আর্থ ফ্রি, গুগল আর্থ প্লাস এবং গুগল আর্থ প্রো (৪০০ ডলার) হিসাবে ব্যবহার করা যায়। গুগল আর্থে চিত্রগুলো স্যাটলাইট ইমেজ, মানচিত্র এবং ভূখন্ড হিসাবে দেখা যাবে। এছাড়াও ত্রিমাত্রিক ভবন, গ্যালাক্সী, মহাশুন্য মহাসাগর দেখা যাবে। পৃথিবীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের ত্রিমাত্রিক চিত্র Click This Link থেকে ডাউনলোড করে তা গুগল আর্থে দেখা যাবে।
গুগল আর্থের পাশাপাশি মার্স, স্কাই এবং মুন দেখা যাবে। আর কোন স্থানকে গুগল ম্যাপসে দেখা যাবে View in Google Maps বাটনের সাহায্যে।
গুগল আর্থ সফটওয়্যারটি উইন্ডোজের সকল সংস্করণের পাশাপাশি ম্যাক, ব্ল্যাকবেরি স্ট্রোম, আইফোন, ফ্রিবিএসডি এবং লিনাক্সে চলবে। এবং ৩৭টি ভাষাতে ব্যবহার করা যাবে। সফটওয়্যারটি http://earth.google.com থেকে বিনামুল্যে ডাউনলোড করা যাবে। ব্রাউজারের উপযোগী প্লাগইন পাওয়া যাবে http://earth.google.com/plugin থেকে।
গুগল ওশন: পৃথিবীর ভৌগলিক চিত্রের পাশাপাশি সমুদ্রের পৃষ্ঠ এবং তলদেশের চিত্র দেখা যাবে গুগল আর্থের সাহায্যে। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারী (গুগল আর্থ ৫.০ সংস্করণ) থেকে চালু হওয়া গুগল ওশন এর মাধ্যমে আর ১৪ এপ্রিল থেকে চালু হয়েছে সমুদ্রের তলদেশের চিত্র দেখার ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে সমুদ্রের মানচিত্রে নিদিষ্ট অঞ্চলে বসবাসকারী সামুদ্রিক প্রাণী ও জীব জগতের ভিডিওচিত্র দেখা যাবে। এগুলো সাজানো হয়েছে বিষয় ভিত্তিক ২০ টি স্তরে। মহাসাগরগুলোর আলোচিত স্থানগুলোর স্থির এবং ভিডিও চিত্রগুলো সংযুক্ত করা হয়েছে।
গুগল স্কাই: ২০০৭ সালের ২২শে আগষ্ট (গুগল আর্থ ৪.২ সংস্করণ) থেকে গুগল আর্থে গুগল স্কাই চালু হয়। এতে তারকাসহ বিভিন্ন গ্রহ, নক্ষত্র দেখা যায়। ২০০৮ সালের ৩ মার্চ থেকে গুগল স্কাই এর ওয়েব সংস্করণ আসে। http://www.google.com/sky ঠিকানাতে দেখা যাবে গুগল স্কাই।
গুগল মার্জ: গুগল আর্থ ৫ সংস্করণ থেকে যুক্ত হওয়া গুগল মার্জে এর মাধ্যমে ত্রিমাত্রিকভাবে মার্জে বিভিন্ন চিত্র দেখা যাবে। এছাড়াও http://www.google.com/mars সাইট থেকেও দেখা যাবে।
গুগল মুন: ২০০৯ সালের ২০শে জুলাই এ্যাপোলো১১ এর চন্দ্র অভিযানের ৪০ বার্ষিকী উপলক্ষে গুগল আর্থে যুক্ত করা হয় গুগল মুন। এতে এ্যাপোলো অভিযানের ত্রিমাত্রিক ছবিসহ বিভিন্ন চিত্র দেখা যাবে। http://www.google.com/moon সাইটেও দেখা যাবে গুগল মুন।
স্ট্রীট ভিউ: স্ট্রীট ভিউ এর মাধ্যমে কোন স্থানে বা ভবনের ত্রিমাত্রিক বস্তুগুলোকে ৩৬০ ডিগ্রিতে দেখা যায়। ফলে সেগুলোকে জীবন্ত বলে মনে হয়। সহজেই তীর চিহ্নের সাহায্যে ঘুরা ফেরা করা যায় এই ভাচুয়াল জগতে। যদিও প্রাইভেসির কারণে কিছু কিছু তথ্য স্ট্রীট ভিউ থেকে মুছে ফেলা হয়েছে বা কালো করে দেওয়া হয়েছে। ২০০৮ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে গুগল আর্থে (৪.৩ সংস্করণ) চালু হয় এর আগে ২০০৭ সালে ২৫মে থেকে গুগল ম্যাপসে চালু আছে। বর্তনামে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো স্ট্রীট ভিউতে দেখার ব্যবস্থা রয়েছে এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো, যুক্তরাজ্য, চেক প্রজাতন্ত্র, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, ইতালী, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, পর্তুগাল জাপান এবং তাইওয়ান এর কিছু অংশ রয়েছে। শীগ্রই দ: আফ্রিকা, হংকং, সিঙ্গাপুর, দ: কোরিয়া, অট্রিয়া, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, জার্মানী, গ্রিস, হাঙ্গেরী, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, নরওয়ে, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, সুইডেন, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল এবং চিলি যুক্ত হবে। স্ট্রীট ভিউ গুগল ম্যাপসের পাশাপাশি গুগল আর্থেও দেখা যাবে। এ বিষয়ে আরো তথ্য পাওয়া যাবে Click This Link থেকে।
গুগল ম্যাপ মেকার: গুগল ম্যাপকে আরো সমৃদ্ধি করার লক্ষ্যে গুগল কর্তৃপক্ষ গুগল ম্যাপ মেকার চালু করেছে। ব্যবহারকারীরা এই ওয়েব টুলের মাধ্যমে নিজ এলাকার বিভিন্ন স্থান যেমন রাস্তা, নদী, স্কুল-কলেজ, পার্ক, প্রতিষ্ঠান বা আনুসাঙ্গিক বর্ণনা যুক্ত করতে পারবে। এখানে যুক্ত করা সকল বা আংশিক তথ্য অন্যান্য ব্যবহারকারী, সম্পাদক বা মডারেটরের যাচাই করার পরে চুড়ান্তভাবে হালনাগাত করা হবে। যা অনান্য মানচিত্রে থেকে দেখা যাবে। ওয়েব ভিত্তিক এই সাইটটি হচ্ছে http://www.google.com/mapmaker।
গুগল ল্যাটিটিউড: গুগল ল্যাটিটিউড হচ্ছে স্থান অবহিতকর মোবাইল এ্যাপলিশেন। এর দ্বারা ব্যবহারকারীর অবস্থান জানা যাবে। ওয়েব ঠিকানা হচ্ছে http://www.google.com/latitude।
এছাড়াও http://www.wikimapia.org বা http://www.panoramio.com এর ব্যবহার করে গুগল ম্যাপের আরো কিছু অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়া যাবে।