সচরাচর প্রতিবছরের মতন এই বছরও তাদের স্রষ্টার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে ফুল একটি বাহারি কেক আর নিশাদ-নিনিতের জন্য খেলনা নিয়ে দখিনা হাওয়ার দরোজায় একে একে হাজির হিমু-রুপা, শুভ্র, বাকের ভাই এবং সবার শেষে তার সেই ঢঙে মিসির আলী! তারা পরস্পরের কুশল জানাজানি করে- অনেকক্ষণ কলিংবেল বাজতে থাকে- কিন্তু কোনও সাড়া শব্দ নেই। সবাই চিন্তায় পড়ে যায়- অবশেষে মিসির আলীর বুদ্ধিতে তারা যায় আয়েশা ফয়েজের বাসায়, আয়েশা ফয়েজ তাদের স্রষ্টার মা। কিন্তু সেখানেও যে নেই- হিমু একহাতে কদম আরেক হাতে রূপাকে ধরে দৌড়াতে থাকে, তাদের পিছু নেই বাকীরাও; একসময় তারা পৌঁছে যায় নুহাশ পল্লীতে- নুহাশ পল্লী, তাদের স্রষ্টার আরেক আজব সৃষ্টি! সেখানে দেখে শাওন দুহাতে নিষাদ আর নিনিতকে ধরে অপলক একদিকে চেয়ে আছে, তারা শাওনকে অনুসরণ করে তাকালে দেখে তার দৃষ্টি মার্বেল দিয়ে ঘেরা কবরের মত কোনও এক জায়গায় নিবন্ধ! তারা দৌড়াতে দৌড়াতে সেদিকে যায়, কিন্তু কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। মিসির আলী চোখ বন্ধ করে কী যেন বলছে, হিমু তাকিয়ে আছে রুপার দিকে, তার হাত থেকে ততক্ষণে কদম গুচ্ছও পড়ে আছে, রুপার চোখে ঝরছে বরিষণ! মিসির আলী তার মতই, কোনও ভাবাবেগ নেই, ফাঁসির মঞ্চে যে বাকের ভাই ছিল অবিচল সেও আজ কেমন জানি হয়ে গেছে। তারা নুহাশ পল্লীর প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে খুঁজে বেড়ায়, কিন্তু কোথাও কেউ নেই। অবশেষে তারা যখন ক্লান্ত বিধ্বস্ত হয়ে বসে পড়ে, মিসির আলীর চোখ থমকে যায় একটি এপিটাফের দিকে [হুমায়ুন আহমেদ (১৩ নভেম্বর,১৯৪৮-১৯ জুলাই,২০১২)]! হিমু আবিষ্কার করে মিসির আলীর চোখে জল। তারা ফুলগুলো দিয়ে আসে সেই এপিটাফে, রুপা কাঁদতেই থাকে!
শুভ জন্মদিন হুমায়ুন আহমেদ। আপনার সৃষ্টির মাধ্যমেই আপনি লাভ করেছেন অমরত্ব। সেই এপিটাফ কী আপনার প্রস্থান বুঝাবে? কখনোই না! আপনি ছিলেন আছেন থাকবেন, অগণিত হিমু-রুপা-শুভ্র-মিসির আলী-বাকের ভাইদের মাঝে! অনেক বেশী ভালো থাকবেন!