somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিছু রূপ চিরকাল অপরূপ চিরজীবন্ত- তেমনি দুষ্প্রাপ্য কিছু রূপ ২য় পর্ব

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উলট চণ্ডাল :
এই ফুলটি (Gloriosa superba) একেবারে সংক্ষিপ্ত সময়ের অতিথি হয়ে আসে আমাদের প্রকৃতিতে। তবে গাছটির মূল ও পাতাকে যে পরিমাণ বিষাক্ত মনে করা হয়, আদতে পরিমাণটা সেই রকম কিছু নয়, জীবাণুনাশক গুণটাই মুখ্য। বরং চমত্কার ওষুধিগুণের জন্য ব্যাপক আদৃত। মধুপুরের বন ও উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে। গাছ লতানো, পাতার আগা আকর্ষীতে রূপান্তরিত। তা দিয়েই আশ্রয় বেয়ে ওঠে। পাতা লম্বা, বোঁটাহীন, বিন্যাস বিপ্রতীপ। ফুল গ্রীষ্মের শেষে ও বর্ষায়, ফোটে কাক্ষিক মঞ্জরিতে, এক বা একাধিক, গন্ধহীন, প্রথমে হলুদ, পরে কমলা ও লাল, পাপড়ি ছয়। ওপরের দিকে উলটানো, কিনার কুঁচকান, ছয় সেন্টিমিটার লম্বা। শরতে শুকিয়ে শীতে মরে যায়, গ্রীষ্মে আবার গুচ্ছমূল থেকে নতুন চারা গজায়।

নীল ঘণ্টা :
ইদানিং প্রায় সব বাগানেই দেখা যায়। কেউ কেউ শুধু বেড়ার জন্যও এ গাছ লাগায়। তাতে ফুল ও পাতার সৌন্দর্য দুটোই উপভোগ করা যায়। নীল ঘণ্টা (Thunbergia erecta) প্রায় সব বাগানেই সহজদৃষ্ট। প্রস্ফুটন প্রক্রিয়া বর্ষব্যাপ্ত হওয়ায় বাগানসজ্জায় আদর্শ। গাছে ঝোপাল, একসঙ্গে অনেকগুলোর ঝাড় থাকে। ১ দশমিক ৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে, শীত পাতা ঝরানোর মৌসুম। পাতা ছোট, তিন-পাঁচ সেন্টিমিটার লম্বা, মসৃণ। ফুল ফোটে পাতার কক্ষে, একেকটি বা সজোড়, গাঢ়-নীল বা নীল-বেগুনি, চওড়া ও সামান্য বাঁকা, তিন সেন্টিমিটার লম্বা দলনল সাদা, ভেতর হলুদ, মুখ প্রায় চার সেন্টিমিটার চওড়া। গোড়ার চারা ও কলমে চাষ। ক্রান্তীয় আমেরিকার প্রজাতি। শীত ছাড়া প্রায় সারা বছর ফুল থাকে।

গুল নার্গিস অথবা ডে-লিলি :
অনেক ফুলের ভিড়ে রংটা একটু আলাদা। গড়নও কিছুটা ভিন্ন। এ কারণেই চট করে চোখে পড়ে। রমনা পার্কসহ প্রায় সব বাগানেই খুব সহজে দেখা যায়। বেড-আকারে লাগানো ফুলগুলো একসঙ্গে চমত্কার দেখায়। গুল নার্গিস (Hemerocallis fulva) কন্দজ বর্ষজীবী গাছ। কাণ্ড ৬০-৯০ সেন্টিমিটার উঁচু। গোড়ায় একগুচ্ছ পাতা, ঘাসের গড়ন, সরু ও লম্বা। শাখায়িত কাণ্ডের আগায় ঘণ্টাকৃতির ফুল ফোটে, সাধারণত সিংগেল, ডাবলও আছে, হলুদ-কমলা বা পাটকিলে হলুদ রঙের, গন্ধহীন। শীতপ্রধান দেশের বর্ণবৈচিত্র্য, দারুণ উপভোগ্য। জলার পাশে কিংবা ঝোপঝাড়ের সম্মুখে স্বাচ্ছন্দ্যে বেড়ে ওঠে। মূলের গোছা ভাগ করেই চাষ। এপ্রিল থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ফুল থাকে। আর্দ্রতা পছন্দ। ইউরোপ ও এশিয়ার প্রজাতি।

ব্রুনফেলসিয়া :
অনেকেই মনে করেন, একই গাছে দুই রকম ফুল ফুটেছে। প্রথম দর্শনে সে রকম মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কারণ গাছে সব সময় দুই রঙের ফুল দেখা যায়। আসলে তা না। বৈচিত্র্যটা তাজা আর বাসী ফুলের মধ্যে। তাজা ফুল বেগুনি রঙের, বাসী ফুল সাদা। ফুল বাসী হলেও তাত্ক্ষণিকভাবে ঝরে না পড়ায় রঙের এমন বৈপরীত্য নজর কাড়ে। ব্রুনফেলসিয়া (Brunfelsia calycina) মোটামুটি সহজলভ্য। মূলত গাছের গড়ন, পাতা, ফুল ও গন্ধের কারণেই আদর্শ। আদি আবাস ব্রাজিল হলেও সব উষ্ণমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়েছে। গাছ এক থেকে দুই মিটার উঁচু, ছোট ছোট অজস্র ডালে ঝোপাল ও পত্রমোচি। পাতা তিন-ছয় সেন্টিমিটার লম্বা, গাঢ় সবুজ, মসৃণ, শীতের শেষে ঝরে পড়ে। গ্রীষ্মে প্রায় নিষ্পত্র গাছে অজস্র ফুল ফোটে। ফুল তিন সেন্টিমিটার চওড়া। শরত্-হেমন্ত পর্যন্ত বেশ কয়েকবার ফুল হয়। আরেকটি প্রজাতি B. americana লম্বাটে গড়ন, পাতাও আকারে বড়, ফুল প্রথমে সাদা, পরে হলুদ, সুগন্ধি, দলনল পাঁচ-ছয় সেন্টিমিটার লম্বা ও মুখ চার সেন্টিমিটার চওড়া। কলমে চাষ।

সাদা করবী :
সাদা করবী অনেকটাই অখ্যাত। করবী (Nerium oleander) প্রাচীন ফুল। আদিবাস এশিয়া ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল। গাছ চির সবুজ, দুই থেকে আড়াই মিটার উঁচু হতে পারে। গোড়া থেকে অনেকগুলো ডাল গজিয়ে ঝোপাল হয়ে থাকে। পাতা বেশ সুন্দর, ডালের আগার দিকে বেশি, থাকে বিপ্রতীপ বিন্যাসে, ১২ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা, ভল্লাকার, ডাবল জাতের করবীর পাতা আরেকটু বড় ও পুরু। ফুল গ্রীষ্ম-বর্ষায়, কখনো কখনো শরৎ-হেমন্তেও দুই-একটি। ডালের আগায় গুচ্ছবদ্ধ ফুল সাধারণত তিন রকম—রক্ত করবী, সাদা (শ্বেত করবী) ও ডাবল গোলাপি বা পদ্ম করবী। তিন থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার চওড়া, হালকা সুগন্ধি। গোলাপি রঙের সিংগেল ভ্যারাইটিও আছে। ফল সজোড়, সরু, লম্বা, খাড়া। মূল, পাতা, বীজ—সবই বিষাক্ত।

ল্যান্টানা :
ল্যান্টানা সারা দেশেই মোটামুটি সহজলভ্য। আমাদের প্রকৃতির সঙ্গে দারুণ মমতায় মিশে যাওয়া এ ফুলের (Lantana camara) জন্ম এখানে নয়, সুদূর দক্ষিণ আমেরিকায়। গাছ লতানো ধরনের, চির সবুজ, ঝোপাল, নরম কাঁটায় ভরা ও অনেক ডালপালাযুক্ত। সাধারণত ৬০ সেন্টিমিটার থেকে দুই মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। পাতা ডিম্ব-আয়তাকার, আড়াই থেকে চার সেন্টিমিটার লম্বা, ঝাঁঝালো গন্ধী ও দন্তর প্রান্তিক। পাতার কোলে ও ডাঁটার আগায় ছোট ছোট ছত্রাকার থোকায় সাদা, গোলাপি, লাল ও বেগুনি রঙের ফুল প্রায় সারা বছরই ফোটে। সময়ের সঙ্গে ফুলের রং বদলায়। গুচ্ছবদ্ধ ফল দেখতে গোলাকার ও কালো। খাটো গাছের হলুদ ফুলের একটা ভ্যারাইটিও বাগানে আছে। কাঁটাহীন, গড়ান ও বেগুনি ফুলের একটি ভ্যারাইটি ভারি সুন্দর। বীজ ও কলমে চাষ।

মাধবীলতা :
ভুল করে মধুমালতী বা মধুমঞ্জরিকে মাধবী নামে ডাকা হয়। কিন্তু বাস্তব মাধবী (Hiptage benghalensis) দুষ্প্রাপ্য। আছে গানে আর বনে। জানামতে, রমনা পার্ক, শিশু একাডেমীর বাগান ও বলধা গার্ডেনে আছে। প্রস্ফুটন স্বল্পকালীন। ‘মাধবী হঠাত্ কোথা হতে এল ফাগুন-দিনের স্রোতে/এসে হেসেই বলে যাই যাই যাই’। কাষ্ঠলতা, ছড়ানো, পত্রনিবিড়, শীতে পাতা ঝরায়। পাতা ভল্লাকার, ১০-১৬ সেন্টিমিটার লম্বা, চার্ম, বিন্যাস বিপ্রতীপ। ফুল বসন্তের বার্তাবহ। প্রায় নিষ্পত্র ডাল ভরে থোকা থোকা সুগন্ধি সাদাটে প্রায় ৩ সেন্টিমিটার লম্বা ফুল ফোটে। পাপড়িসংখ্যা পাঁচ, চারটি সমান ও সাদা, একটি ছোট ও হলুদ। ভারি সুগন্ধি, ভ্রমরাও উতলা হয়। সিলেটের বনে আপনিতেই জন্মায়। শুকনো ফলগুলো ভারি মজার—তিনটি পাখা মেলে দিব্যি হাওয়ায় ভেসে বেড়ায়।

স্কারলেট কর্ডিয়া :
শাহবাগের ঢাকা ক্লাব লাগোয়া টেনিস কমপ্লেক্স চত্বরে তিনটি মাঝারি আকারের গাছে কমলা রঙের অজস্র ফুল ফোটানো গাছগুলোই স্কারলেট কর্ডিয়া (Cordia sebestana)। কোনো বাংলা নাম নেই। তা ছাড়া দোয়েল চত্বরের পশ্চিমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের বিজ্ঞান গ্রন্থাগারের পাশে, রমনা পার্ক, শিশু একাডেমীর বাগান ও বলধা গার্ডেনসহ অনেকের ব্যক্তিগত বাগানেও দেখা যায়। আদি আবাস কিউবা ও পেরু, জন্মে উষ্ণমণ্ডলীয় দেশগুলোতে। আঠারো শতকে ওলন্দাজরা এ গাছ ভারতে নিয়ে আসে। গাছ ছোটখাটো, পাঁচ-আট মিটার উঁচু, চির সবুজ। পাতা একক, ডিম্বাকার। ডালের আগায় গুচ্ছবদ্ধ ফুল ফোটে প্রায় সারা বছর, তবে শীত থেকে বসন্তেই অধিক। ফুল তিন-পাঁচ সেন্টিমিটার লম্বা, পাপাড়িসংখ্যা ছয়। বীজ, কলম ও দাবাকলমে চাষ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×