আজ জাতিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭ তম জন্মজয়ন্তী :জাতিয় কবির প্রকৃত জাতিয় মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হোক
---------------------------------------------------------------
আমাদের জাতিয় কবি, সাম্যের কবি, বিদ্রোহী কবি, ইসলামি জাগরনের কবি কাজী নজরুল ইসলামের আজ ১১৭ তম জন্মবার্ষিকী। কবির জন্ম জয়ন্তির প্রধান বা জাতিয় আয়োজনটি এবার চট্টগ্রামে হচ্ছে --এ জন্য কতৃপক্ষের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ, যদিওবা এ আয়োজন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ৮৭ নজরুল শিল্পী -----তাঁদের অভিযোগ হলো, জেলা প্রশাসক যে হাতে গোনা ৬-৭ জনকে নিয়ে সভা করেন --এদের অধিকাংশই ছিলেন আধুনিক, রবীন্দ্র ও মঠশিল্পী সংস্হার বহিরাগত অংশগ্রহনকারী। জানিনা এখানে কী রাজনীতি হয়েছে --তবে চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এ জাতিয় অনুষ্ঠানে মতবিরোধ কাম্য ছিলনা। আজ এ উপলক্ষে চট্টগ্রামে আসছেন মহামান্য রাস্ট্রপতি। এবারের জন্মজয়ন্তী'র প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে নাকি ---"সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতারোধে নজরুলের প্রাসঙ্গিকতা "। এ প্রসঙ্গে কবির দৃস্টিভঙ্গির মূল্যায়ন যেন যথাযত হয় সেটাই কাম্য। এ সুযোগে কেউ হয়তো কবি'কে তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক, নাস্তিক্যবাদীও বানাতে চাইবে --যদিওবা তাঁর কবিতা, আর গান যতদিন সংরক্ষিত থাকবে, ততদিন তাদের সে স্বপ্ন পূরণ হবার নয়। আজ, সচেতন সমাজ মনে করে যে, কবি'কে শুধু লোকদেখানো জাতিয় কবি হিসেবে যাদুঘরে ফেলে রাখা হয়েছে মাত্র ---শিক্ষা, সংস্কৃতি ও জাতিয় চেতনায় বরং তাঁর চেয়ে অন্যদের বেশি মূল্যায়ন করা হচ্ছে। কবি জীবদ্দশায় যেমন ষড়যন্ত্রের শিকার ছিলেন, এখনো তা অব্যাহত আছে। তাঁর রচনাবলীর বাঁকে বাঁকে সে সব হিংসুটে চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভের বহির্প্রকাশ ঘটেছে । বাংলায় ইসলামি সাহিত্যরস ঢালবার অযুহাতেই তিনি বিরাগভাজন হয়েছিলেন ----আজো একই কারণেই তিনি কৌশলে উপেক্ষিত। তাঁর গান ও কবিতার বিশাল ইসলামি ভান্ডার আজ নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত নয় বললেই চলে, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্হা থেকে সে সব সযত্নে আড়ালে রাখা হচ্ছে ---তথাকথিত সাম্প্রদায়িক বিষ বিবেচনায় হয়তো ! হয়তো আজকের প্রতিপাদ্য বিষয়ের সাথে সামন্জস্য বজায় রাখতে ---আজও কবি' নজরুল ইসলাম' থেকে সুকৌশলে ইসলাম বর্জিত হবে। যেভাবে তাঁর মাজারে লেখা -----মসজিদের ঐ পাশে আমায় কবর দিও ভাই, যেন গোরে থেকেও মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই" মুছে ফেলা হয়েছে। আজ নজরুল ইসলামের ভাষায় বলতে ইচ্ছে করে --------
বন্ধুগো আর বলিতে পারিনা বড় বিষ জ্বালা এই বুকে --দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি তাই যা আসে কই মুখে "। ----
বড় কথা বড় ভাব আসেনাকো মুখে, বন্ধু বড় দুখে ---অমর কাব্য তোমরা লিখিও বন্ধু যাহারা আছ সুখে "।
আঘাতের পর আঘাত এসেছে কবির জীবনে যা তাঁকে সহসা নিরব নিথর করে দিয়েছিল, নিয়ে গিয়েছিল কবরে, চিরসুখের ঠিকানায়। দিয়েছিলেন আগাম ঈঙ্গিত সে অভিমানী প্রেমিক কবি, বলেছিলেন ---ফুলের জলসায় নিরব কেন কবি! বলেছিলেন, ---তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু আমি আর জাগিবনা --কোলাহল করি সারা দিনমান কারো ঘুম আর ভাঙ্গিবনা "। তাঁর শেষ বক্তৃতা ছিল ----" বিশ্বাস করুন, আমি কবি হতে আসিনি, আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, আমি প্রেম পেতে এসেছিলাম, সে প্রেম পেলামনা বলে, এ প্রেমহীন নিরস পৃথিবী থেকে, নিরব অভিমানে চিরবিদায় গ্রহন করলাম "।
আজ আমাদের সাধ্য নেই কবির অভিমান ভাঙ্গাবো। কিন্তু তাঁর যথাযত মূল্যায়ন চাই সর্বত্র। কিন্তু বেড়ালের গলায় ঘন্টা পড়াবে কে ? ইসলামের কথা বলে যেমন তিনি চক্ষুশূল হয়েছেন তথাকথিত অাধুনিকদের , ঠিক তেমনি সুন্নিয়ত ও সূফিবাদের জয়গান গেয়ে বিরাগভাজন হয়েছেন অরসিক কাঠমোল্লা - অসুন্নিদের। তিনি নিজেই সে সময় এদের ---"মৌ লোভী " যত মৌলবীর দল বলেছিলেন। সুতরাং এরাও আসবেনা। তাই, এগিয়ে আসতে হবে আমাদের। আমাদেরই জাগতে হবে। কিন্তু কবি'র আফসোস ছিল আমাদেরকে নিয়ে। তিনি বলেছিলেন -------মোরা আসহাবে কাহাফের মত, হাজারো বছর শুধু ঘুমাই --আমাদের কেহ ছিল বাদশাহ্ -কোন কালে তারি করি বড়াই, ---জাগি যদি মোরা, দুনিয়া আবার কাঁপিবে চরণে টাল্মাটাল "।-----ওরে বে -খবর তুইো ওঠ জেগে,তুইও তোর প্রান -প্রদীপ জ্বাল।।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৩:২৩