সোহেলের বাবা মারা গেছে খুব ছোটবেলায়। যখন সে মাত্র ১ম শ্রেণিতে পড়ে। সোহেল বার বার জিজ্ঞেস করে, ও মা! বাবা কোথায়? সবার তো বাবা আছে, আমার বাবা কোথায়?
তখন সোহেলের মা,মনকে শক্ত করে বলে, তোর বাবা খুব ভালো মানুষ তো, তাই কবরে শুয়ে আছে!একদিন আমি আর তুইও ওখানে যেতে হবে।
সোহেলকে চালানোর জন্য তার মা বাসা বাড়িতে কাজ শুরু করে। প্রথম প্রথম কেউ তাকে কাজের বুয়া হিসেবে নিতে চাইতো না। কারণ সোহেলের মা দেখতে সুন্দর ছিলো,কথা-বার্তায় ছিলো শালীন।
এভাবে কাজ দেখতে দেখতে এক পরিবারে কাজ পায় সোহেলের মা। ওই পরিবারে এক বুড়ো দম্পতি রয়েছে। তাদের দেখাশোনা করার জন্য তাদের বড় ছেলে,সোহেলের মাকে রেখে দেন।
কিন্তু যখন সোহেলের মা ঘরের কাজ করতেন, তখন বুড়ো মিয়া তার চারপাশে ঘুরঘুর করতেন। বুড়ো মিয়া রফিক সাহেব, সোহেলের মাকে পারু বলে ডাকতেন।কারণ সোহেলের মার পুরো নাম ছিলো, পারভীন।
রফিক সাহেব প্রতিদিন পারুর ঘর মোছা দেখতেন। দিনের এই সময়টাতে তিনি সবচেয়ে খুশি থাকতেন। কারণ, পারুর দেহের একটা অংশ তিনি চোখ দিয়ে গিলে খেতেন। পারুর কিছুই করার ছিলো না। রফিক সাহেব ভাবতেন,পত্রিকা চোখের সামনে রাখলে, পারু বুঝবে না। কিন্তু পারু সবই বুঝতো, শুধু ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুই বলতে পারছে না। কিছু বললে হয়তো,ছেলের ভবিষ্যৎ শেষ হয়ে যাবে এখানেই।হয়তো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হবে। তারচেয়ে এখানে থাকা অনেক ভালো।
এদিকে সোহেলও তার পড়াশোনা ভালো ভাবেই চালিয়ে যাচ্ছে। সোহেল মাঝে মাঝে বলে,তুমি আমার জন্য কতো কষ্ট করো! দেখো আমি বড় হয়ে, তোমার সব কষ্ট মুছে দিবো।
রফিক সাহেবের স্ত্রী এসব কখনো বুঝতেন না। পারুকে তিনি মেয়ের মতোই দেখেন আর সোহেলকে নাতির মতো। কারণ, তার সব নাতি যে তাকে ছেড়ে অনেক দূর দেশে থাকে।
একদিন রফিক সাহেব দুপুর বেলা সুযোগ পেয়ে, পারুকে বিছানায় ফেলে গায়ের উপর উঠে যায়। কিন্তু ভাগ্যের কি এক খেলা, রফিক সাহেবের পায়ে রগে টান পড়ে। ওনি পৈশাচিক আনন্দ ফেলে, এবার চিৎকার করা শুরু করেন। তখন রফিক সাহেবের স্ত্রী এসে দেখেন, পারু রফিক সাহেবের নিচে। লুঙ্গি অর্ধেক উঠানো। আর ভীষণ রকম কাঁপছেন।
সেদিন রফিক সাহেবকে তার স্ত্রী ভুল বুঝতে পারতেন। কিন্তু পারু ঘটনাকে অন্য ভাবে প্রকাশ করে।
পারু ঘটনার সময় রফিক সাহেবকে বাবা বলে সম্বোধন করেন। আর বলেন, মা বাবা হঠাৎ কাঁপা শুরু করে। আর তা দেখে, ওনাকে ধরতে গিয়ে, আমরা একসাথে খাটে পড়ে যাই।
মেয়েরা সাধারণত সন্দেহ পোষণ করে থাকে। ঘটনার সময় বাবা বলাটাই ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
তারপর থেকে রফিক সাহেবের কি হলো, কে জানে ওনি বদলে যেতে লাগলেন।
একদিন পারুকে ডেকে বলে, আমি তোমার সাথে খুব অন্যায় করেছি। আমার মেয়ের বয়সী তুমি, অথচ আমি কি করতে যাচ্ছিলাম। প্রতিনিয়ত তোমার সাথে, ছিঃ ছিঃ! ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে । আমাকে তুমি মাফ করো মা।
সেদিন পারু বলেছিলো, আমি সোহেলের মুখের দিকে তাকিয়ে সব সহ্য করে যাচ্ছি। সোহেল বড় হবে,ভালো মানুষ হবে,এটা আমার অনেক সখ। আপনি যদি আমাকে ঠাঁই না দিতেন, আমি কখনো সোহেলকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারতাম না। তাই আমি সব সহ্য করে যাচ্ছি,শুধু সোহেলের দিকে চেয়ে।
দুজনের চোখ বেয়ে জলের ধারা বহে যেতে লাগলো। একসময় দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরিয়ে কান্না শুরু করলো। এবার কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর অনুভূতি রফিক সাহেব আর পারু অনুভব করতে লাগলেন। আর সেটা বাবা - মেয়ের সম্পর্কই।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৪৮