পর্ব:-১
কোনো একটা ট্যুর এলেই, আমার একদিন আগ থেকেই অস্থির, অস্থির অনুভূব হয়। কখন সে সময়টা আসবে যখন আমি কনভার্স আর ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়বো, অজানাকে জানার এবং দেখার জন্য।
আমি ডিসেম্বরের ২২ তারিখের কথা বলছি, যেদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে বসে আছি, বের হওয়ার অপেক্ষায়।
'
কিন্তুু আমার ধৈর্যচ্যুতি ঘটিয়ে ভার্সিটি থেকে ৬৯ নং বাস যখন একেখান মোড়ে দাঁড়িয়ে আমাকে, রুবেল এবং লাভলুকে তুলে নিলো, তখন মনে হলো, আমি সিলেট ট্যুরের একজন সৌভাগ্যবান হিসেবে, সিলেটবিভাগ কে ঘুরে দেখার সুযোগ পাচ্ছি।
বাসে উঠেই বড়ভাই এবং ছোটভাইদের গানের তালে আর আমাদের ছোটখাটো অংশিদারত্বে ষ্টেশন পর্যন্ত পুরো বাস তাল হারিয়ে, বেসামাল এক আনন্দের স্রোত বইয়ে দিচ্ছিলো সবার মনে।
তখনি ঠিক বুঝে গিয়েছিলাম ট্যুরটা কেমন হচ্ছে।
'
যতটা না আনন্দের স্রোত বইছিলো মনে, ততটা বিষাদ্বের বিষ সময়ের সাথে সাথে আনন্দের মাঝে ঢেলে দিচ্ছিলো। তার একমাত্র কারণ হচ্ছে, বাংলার ট্রেন। ৯টা ৪৫ এর ট্রেন ১১টা ৫০ এর দিকে ছাড়লে কার মাথা ঠিক থাকে বলুন।
তারউপর, আরো মেজাজ বিঘড়ে দিয়েছিলো, আমরা ৪জন যখন ৯৫ জন মেম্বারের বগি থেকে পুরোপুরি বিছিন্ন হয়ে, নতুন এক দল টুরিস্ট গ্রুপের সাথে জয়েন করি।
তাদের সম্পর্কে একটু বলে নি, তারা ছিলো ২৫ জনের একটি সিলেটি গ্রুপ এবং তারা ৪ দিনের অসাধারণ একটি কক্সবাজার ভ্রমণ শেষে, নীড়ে ফিরছিলো ।
'
যখন আমরা বিরক্তির শেষ পর্যায়ে এসে পৌছলাম, তখন আমরা ৪জন, আমাদের অন্য মেম্বারদের বগিতে পৌছার মাঝেই তাদের সাথে মাঝ একবগিতে দেখা।
তারাও আমাদের সাথে আড্ডা দেওয়া এবং সময়কে উপভোগ করার জন্য, আমাদের বগির উদ্দেশ্যে আসতেছিলো।
আমরা যখন আমাদের বিছিন্ন বগিতে সময়কে উপভোগ করার জন্য হইচই করছিলাম, ঠিক তখনি কিছু সাধারণ যাত্রী আমাদের উপর ক্ষেপে যায় ।
এতে আমাদের ই জয় হয় বলে ধরা যায়, কারণ, ঐ সিলেটি টিমটি আমাদের যথেষ্ট সার্পোট দেয়।
তারপরও সাধারণ যাত্রীরা আমাদের উপর চাপা ক্ষোভ নিয়ে সিলেটসহ বিভিন্ন ষ্টেশনে নেমে যায়। সে এক অভূতপূর্ব অবিজ্ঞতা।
তারপর, আমরা আমাদের সে ঐতিহাসিক বগিতে যাই। যে বগির প্রতিটি অংশে রয়ে গিয়েছে আই আই সিউয়ন ইবি ডিপার্টমেন্টের ছাত্রদের একটি রঙ্গিত রাত।
সে রাতে কি হয়েছে বললে ভূল হবে, কি হয় নি, সেটাই পাঠকরা জিজ্ঞেস করা উচিত !
হারুণ স্যার তখন ঘুমিয়ে। তার একটি ঘুমন্ত ছবি আশিক তুলার পর যোবায়ের স্যার এর অনুপ্রেরণায় "স্টাডি ট্যুর "গ্রুপে আপলোডের পর, অনেক প্রশংসায় ভেসে যান পোষ্ট দাতা
আধো ঘুম, আধো জাগরনে, তখন আমরা শ্রীমঙ্গল ষ্টেশন পৌছে মনে হলো আমরা লর্ডস এর কোনো এক ষ্টেশনে ঘুম জাগরিত হয়ে, জানালার কাচ তুলে, এক কাচ গরম চায়ের আকুল জানাচ্ছি..
দীর্ঘ ১০ ঘন্টা ট্রেন জার্নির পর আমরা যখন সিলেট পৌছলাম, তখন বন্ধু রুবেলের মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো ।
'
সে প্রকাশ না করলে, ট্রেনে বুঝে গিয়েছিলাম, রুবেল হ্যাপিকে না পেলে ও, হ্যাপির যৌগ্যতা পূরণের এক মধুর চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছিলো
মেয়ের সাথে কথা না বললে ও রুবেল কৌশলে, তার চাচির সাথে কথা বলে তাদের ঠিকানা জেনে নেয়।
সবাই খেয়াল রাখবেন তার দিকে, যেনো সে ট্যুরের টাইট সিডিউলের মধ্যে ও জিন্দাবাজারের ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের পাশের গলির ৭ নং বাসার দিকে উঁকি না মারতে পারে...
....
'
'
পর্ব:২ নীল পাহাড়ের দেশে
ষ্টেশন যখন পৌছলাম তখন ৩টা বাস আমাদের জন্য দাঁড়িয়েছিলো। মাত্র ৫ মিনিটে আমরা পৌছে গেলাম আমাদের বরাদ্দকৃত হোটেল "সাউথ সিটিতে "
সেখানে আধা ঘন্টা রেস্ট নিয়ে,আমরা আবার বাসে উঠলাম। হালকা নাস্তা বাসে সেরে, যখন তন্দ্রার মতো হচ্ছিলো ঠিক তখনি পৌছে গেলাম "সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়ামে "। আমাদের ভাগ্য এতো ভালো ছিলো যে, তখন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে একটা খেলা চলছিলো।
স্টেডিয়াম আবার দেখার কি ?
এ ভাবনা নিয়ে যারা, স্টেডিয়ামেরর ভিতরে ডুকছিলো, তারা কিছুক্ষণেরর জন্য স্তব্দ হয়ে গিয়েছিলো।
কারণ, গ্রীণ গ্যালারি, পাহাড় কেটে অসাধারণ বসার জায়গা, মুগ্ধ করেছিলো সবাইকে। সেখানে আমাদের নিষেধাজ্ঞা শর্তে ও গ্রুপ ফটো এবং পারসোনাল ছবি তোলা হয়..
'
বিছনাকান্দির পথে ::
শহর থেকে প্রায় ৭০ কি.মি দূরে প্রাকৃতিক অপূর্বের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ দেখা যায়, ভারত এবং বাংলাদেশের বর্ডার সেকশনে।
প্রায় ৩ঘন্টার পথ সিলেট থেকে। সময়টা বড় কথা নয়, কথা হলো রাস্তা নিয়ে। এতো খারাপ রাস্তা , এতো খারাপ না গেলে বোঝা যাবে না। বিছনাকান্দির পাথর বয়ে নিয়ে আসা ট্রাকগুলো, এ ক্ষতিকর এবং ভয়াবহ রাস্তার কারণ
বাস থেকে নেমে, হাঁটার পথ। হাঁটা সমস্যা হতো না, যদি না সেটা যাওয়া আসা মিলে ৮ কি.মি হতো
এতো কষ্ট তখনি সার্থক হলো তখনি যখন বিছনাকান্দি এসে পৌছলাম।
এক কথায় অসাধারণ। সেখান থেকে দেখা যায়, ভারতের নয়াবাজার বস্তি।
পাথর, পানি কি অপূর্ব প্রকৃতির সংমিশ্রন না গেলে বোঝানো মুশকিল।
পানি, পাথর, পাহাড় এবং নীল আকাশের এক অপূর্ব সংমিশ্রন। এ জায়গায় এলেই ছবি তোলার জন্য মন আকুপুকো করবেই, সাথে ফ্রী মনের মেডিটেশন.
এরপর আমরা হযরত শাহজালাল (র এর মাজার জেয়ারত করি। শেষে পানসীতে ডিনার শেষে, হোটেল এ ফিরে গিয়ে, এক ঘুমে রাত কাভার..
...
'
পর্ব:-৩ স্বচ্ছ পানির দেশে
গানের কলি এসে
গলা ফাটার শেষে
নীল পাহাড়ের দেশে
মুখটি বাড়িয়ে শেষে
পৌছে গেলাম
দুই ঘন্টা সময়ের
জাফলং এর দেশে..
আমাদের ২টা বাস থাকায়, সামান্য দূরত্বের জন্য, ২টা বাস দুদিকে চলে যায়। মন তখনি খারাপ হলো যখন শুনলাম, ১ম বাসের সদস্যরা, তামাবিল পোর্ট ল্যান্ডে লার্নিং সেশন এবং ভারতের কিছু অংশ ঘুরে আসে।
যখন তারা ঘুরছিলো, ছবি তুলছিলো, কিছু আনন্দঘন মুহূর্ত কাটাচ্ছিলো, ঠিক তখনি আমরা ২য় বাসের সদস্যরা, জাফলং রুটে একজোট হয়ে আমাদের বাসকে জ্যাম মুক্ত করে, ড্রাইবারের ভুলের কারণে তালাবিল পোর্ট ল্যান্ড জিরো পয়েন্ট এসে পৌছলাম।
তারপর আমরা ২য় বাসের সদস্যদের সাথে একজোট হয়ে জাফলং এর একটি অংশে পানিতে নামলাম।
জাফলং সিলেটের প্রকৃতির এক অপূর্ব সৌন্দর্যের বহি:প্রকাশ। হাজার হাজার মানুষ এখানে আসে প্রতিদিন। শুধুমাত্র প্রকৃতিকে খুব কাছে থেকে দেখার জন্য।
পানি এতো ঠান্ডা, নামতে খুবই ভয় পাচ্ছিলাম। কিন্তুু কিছুক্ষণের মধ্যে, পানিতে বড় ভাই পানিতে নেমে উল্লাসের কারণে, ফুটবলের শর্ট প্যান্ট পড়ে, পানিতে নেমে যাই। খুব ঠান্ডার মাঝে ও এতো এতো মজা করলাম, পানিতে পাথরে স্লিপ খেয়ে পড়ার পরে ও মনে হয় নি ব্যথা পেলাম।
এ পয়েন্ট থেকে ভারতের অনেক ঘরবাড়ি দেখা যায়, যা পাহাড়ের উপর অবস্থিত মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
'
জিরো পয়েন্টে দাঁড়ানোর পর, এ পারে বাংলা আর ওপারে ভারত। যা মনকে খুবই রোমাঞ্চিত করে।
জাফলং থেকে একটা ছোট পাটা আর একটা হুতা, অনেক অনেক পাথর বেছে পছন্দ করলাম। একজন বিজিবি বললো, পাথর কি বাড়িতে নিবেন ?
জ্বি
বিয়ে করে ফেলেন
হাসি দিলাম
ওনি আমার তাচ্ছিলোতা শর্তে ও আবার রঙ্গ করে বললেন, বিয়ে করে ফেলেন, বউয়ের কাজে লাগবে পাটা, হুতা ।
শেষ হাসি দিয়ে বাসে ফিরে, এসে জামা কাপড় পড়ে, সবাই রওনা দিলাম, জৈন্তা হিল রির্সোট এ।
সেখানের পরিবেশটাও মনোমুগ্ধকর। পাহাড় এবং নীল আকাশের পাশে, আধো আলোতে দুপুরের খাবারটা আমরা শেষ করি, ঠিক সুর্য হারিয়ে যাওয়ার শেষ মুহুর্তে।
এরপর আবার বাস। এবার গন্তব্য শহরে। প্রায় ২ ঘন্টা পর আমাদের জন্য অপেক্ষায় আছে বহুল আলোচিত গ্র্যান্ড ডিনার
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৩০