যেভাবে ছাত্রদের প্রতি ভালোবাসা নিবেদন করে আমরা লিখালিখি করছি তাতে নির্বাচনের আগে শিক্ষকমহল আবার জোটবদ্ধ হয়ে যেনো রাস্তা অবরোধ কিংবা আমরণ অনশনে না যায়! ছাত্রদের প্রতি এত দয়ালু অবস্থানে মন্ত্রী মিনিস্টারাও আগে যাননি! একজন ছাত্রী একজন শিক্ষিকার প্ররোচনায় গলায় দড়ি দিয়ে মৃত্যুবরণ করার ঘটনাটি যদিও আমাদের কাছে মর্মান্তিক তথাপি কিছুদিন আগে নিরাপদ সড়কের দাবীতে ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনাটিরও কিন্তু কোনো বিচার হয়নি!!
প্রতিদিন কত ছাত্র সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করছে এতে কোনো সড়ক মন্ত্রী কিংবা এমপির এমপিও গেল না কেন? নাকি মৃত্যুর ভেদাভেদ ক্ষমতা দ্বারা নিয়ন্ত্রন করা হয়?
আচ্ছা একটা ছাত্রী গলায় দড়ি দিয়ে মৃত্যুবরণ করাতে দেশ একদম উত্তাল হয়ে গেছে! সাংবাদিকরা ক্যামেরা রাখার জায়গা পাচ্ছে না! কিন্তু প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন ঘটনায় গলায় দড়ি দিয়ে যেসব ছাত্র-ছাত্রী মৃত্যুবরণ করছে পুলিশ কয়টা মামলার নিষ্পত্তি করতে পারছে? কই এতে তো কোনো পুলিশের চাকরি কিংবা বেতন ভাতা বন্ধ হলো না!!
ছাত্রীরা মানুষ আর আম-পাবলিক মানে ছাত্র-ছাত্রীদের বাবা, মা,ভাইবোন,আত্মীয়-স্বজন, পরিবার-পরিজন এরা কেউই মানুষ না! এদের হত্যাকান্ড,সড়কে অপমৃত্যু, এগুলোর জন্য কারো চাকরিও যায় না কারো বেতন ভাতাও বন্ধ হয় না!!
এখন নিশ্চিত,শিক্ষকদের উপর চাপ প্রয়োগ করা হবে নানান ভাবে, যেমন শিক্ষকদের প্ররোচনায় ছাত্র-ছাত্রীদের মৃত্যু হতে পারে কিংবা ধ্বংসও হতে পারে শিক্ষা ব্যবস্থা তেমনি যদি এখন বলি যে,আমাদের শিক্ষকদের উপর বিভিন্ন কটুক্তি কিংবা সমালোচনা তাদের জন্য মৃত্যুর কারণ হতে পারে অথবা শিক্ষা ব্যবস্থার বারোটা বাজাতে পারে!
সাধারণত শিক্ষকরা এই নির্যাতন কিংবা সমালোচনার ঝড়ে মনগড়া পড়া লেখা করাবেন ছাত্র-ছাত্রীদের! কারণ কোনো শিক্ষকই তো আর চাইবেন না তাদের এমপিও বাতিল হোক,বেতন বন্ধ হোক,সমাজের চোখে দুর্বিসহ হয়ে উঠুক!! এরপর শিক্ষকরা বলা শুরু করবেন, আমরা পড়াতে না পারলে আপনার সন্তানকে আপনি বাড়িতে পড়ান,আপনার সন্তান পড়তে না পারলে আমাদের করার কিছুই নেই!!
এই শিক্ষকদের আজকে যতটা হেনস্থ করা হচ্ছে ঠিক ততোটাই শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে আমরা পিছিয়ে পড়ছি! আমি বলছিনা কোনো অপরাধীই বিচারহীনতায় মুক্তিপাক!
পেট থেকে ফুটে বের হতেই আমরা স্কুল,প্রাইভেট নির্ভরতায় যখন ভুগছি তখন আমার কাছে মনে হয় সবার আগে আমাদের উচিৎ সকল বাবা মায়েদের কাউন্সেলিং করানো যাতে তাদের সন্তানদের অন্তত যুদ্ধ করে পড়া লেখা না করান!
যেই মেয়েটা মরছে তার কথা বাদ দিলাম,কিন্তু যেই পিতা মাতা সন্তানকে অমুক করবেন তমুক করবেন বলে জোর করে শরীরের থেকে বেশি ওজনের ব্যাগ ঘারে তুলে দেয় তাদের বিচার সবার আগে করা দরকার!!
আমরা নিজেদের সন্তান হারানোর কষ্ট বুঝি কিন্তু অন্যজনের মৃত্যুতে খিলখিল করে হাসি! যতদিন এই স্বার্থপরতা আমাদের মাঝে কাজ করবে ততোদিন আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাসহ সবকিছুতেই ধ্বংস অনিবার্য!!
লেখকঃ এম এ মোমেন