রাস্তার মোড়ে দাড়িয়ে আমি আর হাবীব সিগারেট খাচ্ছিলাম। বেনসনের প্রতি আমার কেমন যেন একটা টান টান ভাব আছে, তা না হলে অন্য সব সিগারেট আমার কেন ভাল লাগে না! হয়ত বা সত্যিই আছে। হঠাৎ দেখি হিমেল রিক্সা থেকে নামছে। আমাদের দেখে হাসি হাসি মুখে বলল “বিড়ি দে”। আরে বাবা বিড়ি খাবি ভাল কথা একটু স্থির হ আগে। ঐ রহিম, একটা বেনসন দে, সাথে সাথে হিমেল প্রতিবাদ করে উঠলো এই না না, আমি গোল্ড লিফ খাব। আমি বললাম না দোস্ত, তাতো হবে না। আমি বেনসন ছাড়া কিছু খাই না খাওয়াইও না। তাইলে তোর দরকার নাই খাওয়ানোর। হাবীব তুই খাওয়া না, ভাই। দে ত রহিম একটা গোল্ড লিফ। সিগারেট খেতে খেতে হঠাৎ হিমেল বলে উঠলো, কিরে কাল যে রাব্বির বিয়ে তার কি খবর? যাবি না? যাব না মানে! রাব্বির বিয়ে আর আমরা যাব না! রাব্বি সেনাবাহিনীতে চাকরী করে, আর আমাদের বন্ধুদের মাঝে সে-ই প্রথম বিয়ে করছে তাই আমরা সবাই খুবই উত্তেজিত, বন্ধুর বিয়ে বলে কথা। কিন্তু হ্যা, সালা ত এখনো ফোন দিল না। হাবীব বলল রাব্বি খুব চিন্তায় আছে, পরশুদিন বাড়ি ফেরার পথে সিনতাইকারীর কবলে পড়ছে। তাছাড়া বাড়িতে এমন কেউ নেই যারা বিয়ে বাড়ির কাজ কর্ম করবে। আমাকে ফোন দিছিল, বলছে সবাইকে নিয়ে সন্ধ্যার আগেই চলে যেতে। আমি বললাম তাহলে আমরা সন্ধার আগেই চলে যাই, তার ফোনের দরকার নাই। হিমেল বলল, আমরা বিকেলে ৫টায় আমাদের আস্তানা চিতার সামনে আসব, কি বলিস? আমি বললাম তা ঠিক, সেখান থেকেই যেতে ভাল হবে। আর শোন, সিয়াম আর মিন্টুকেও খবর দিস যে তারা সময়মত সেখানে থাকে।
কিরে সবাই এসে পড়ছিস? তোর দেরী হল কেন? হাবীব চিৎকার দিয়ে বলল। আরে বাবা আসার সময় রাস্তায় একটা একসিডেন্ট হইছে লোকজনের সাথে আমিও আহত লোকদের হাসপাতালে দিয়ে আসলাম। হিমেল বলল আচ্ছা চল।
ও হ্যা বলতে ভুলে গেছি, হিমেল সবে মাত্র আইন পাস করেছে। আর কয়েকদিনের মধ্যেই নাকি মামলা লড়তে পারবে বলে আশা দিয়েছে তার সিনিয়র। আমরা বলি ভালই হল এখন শুধু আমরা অপকর্ম করব আর তুই ছাড়িয়ে আনবি। সবাই হু হু হু করে হেসে উঠলো। তবে সে আমাদের সবাইকে খাওয়াইছিল।
ছয়টার মধ্যে রাব্বির বাড়িতে হাজির হলাম, দেখি বেচারা নিজে বিয়ে করছে নাকি অন্য কারো বিয়ে দিচ্ছে বুঝতেই বড় কষ্ট হল। এটা রেখে ওটা করছে, ওটা রেখে সেটা ধরছে। পুরাই ডুবিডুবি অবস্থা। আমাদের দেখে মনে হয় তার হালে পানি এল। “তোরা এত দেরী করলি যে” মধু মিশানো কন্ঠে বলল রাব্বী। হাবীব বলল, কিরে বিয়ে কার? তোর নাকি তোর দাদাজানের? খিল খিল করে হেসে রাব্বি বলল, ওর দাদী আছে, ইচ্ছে হলে আমার সাথেই নিয়ে আসিস। কেউ আর হাসি থামিয়ে রাখতে পারলাম না।
রাব্বির হাতের কাজগুলো শেষ করে সবাই ওদের বাড়ির সামনে বাগানে আরাম করে বসে বিড়ি খাচ্ছি। এমন সময় দেখি রাব্বির মেজ আপু এসে হাজির আমরা লজ্জায় জবথবু হয়ে গেলাম, কিন্তু আপু ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলল, আরে বোকারা, এ বয়সে একটা আধটু খেতেই পারিস, ও কিছু না। তবে হ্যা, বেশি কিন্তু না। মনে থাকবে? সবাই বললাম হ্যা আপু মনে থাকবে। কিন্তু, তখন আর টানলাম না। হঠাৎ দেখি আপুকে পিছন থেকে ভাবী ভাবী বলে ডাকতে ডাকতে একটি সুন্দরী মেয়ে আসছে। দেখতে ফর্স, লম্বা মুখ, সুডৌল কাধ, লম্বা চুল আর হৃষ্ট পুষ্ট বাহু সব মিলিয়ে অসাধারণ। বুঝলাম রাব্বির বিয়াইন। তার মানে আমাদেরও বিয়াইন। আপুকে কে যেন ডাকছে বলতেই আপু চলে গেলে। রাব্বি বলল, নাদিয়া কখন আসছ? ভাই-ভাবীর সাথে। আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। আমাদের বিড়ির আড্ডা আর জমল না। তাতে কারো মনে রাগ নেই মনে হচ্ছে। যাই হোক। আড্ডা চলতে থাকলো দীর্ঘ সময় ধরে। হঠাৎ করে বাড়ির ভিতরে ডাক পরল। সবাই চলে গেলাম।
কিছুক্ষণ পরে দেখি মিন্টু নাদিয়ার সাথে চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। আড্ডার অবস্থা দেখেই বুঝা যাচ্ছে হয়ে গেল দুই জনের মধ্যে। আমরা সবাই ভাবলাম ভালই হল একে একে সবার হিল্লে হয়ে যাচ্ছে। ভালই লাগছে সবার। কিছুক্ষণ পর দেখি আরেকটি মেয়ে এসে রাব্বিকে বলছে ভাইয়া গায়ে হলুদ দেওয়ার জন্য ওবাড়ি থেকে লগন এসে পরছে। এস তাড়াতাড়ি। মেয়েটা দেখতে কিছুটা খাটো, গায়ের রং শ্যামল, চুলগুলোও ছোট তবে, দেখতে বেশ!মেয়েটির নাম সুমি।
কনের বাড়ির লোকদের বিদায় করে দিয়ে আমরা আবার আড্ডায় বসলাম, কিন্তু, বিড়ি ছাড়া। কারণ, মেয়েরাও যে ছিল সেখানে। অনেক রাত হয়ে গেল হঠাৎ দেখি হিমেলকে সুমি কানে কানে কি যেন বলল, হিমেল এসে মিন্টুকে কি যেন কানে কানে বলল। দেখি তারা দু-জনে উঠে কোথায় যেন চলতে লাগলো। এই তোরা কই যাস? চিৎকার করে বলল হাবীর। আসছি কিছুক্ষণের মধ্যে।
মিন্টু আর হিমেল দেখি ব্যাগে করে কি যে নিয়ে আসল, দেখি চার পাঁচটা আইসক্রীম, বিস্কুট, সেভেন আপ। নিয়ে এসে নাদিয়ার হাতে দিল সাথে সাথে আরো দু-তিন জন্ মেয়ে এসে হাজির। ভাবছি ভাগ বসাব, কিন্তু কোন উপায় ছিল না। মোটামুটি ভালই খরচ হল। টাকাটার বেশিই হিমেল দিছে হ্য়ত বা পুরেটা-ই। কারন, মিন্টু খুব চালাক, সে দেয় নাই আমি নিশ্চিত।
আড্ডা, নাচ, গান আর নানা রং তামাশায় রাত অনেকটা হয়ে গেল। ঘুমানোর জন্য ত আর কোন ঘর খালি পাওয়া যাবে না। কি আর করা, হলের অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগিয়ে ছাদে সবাইকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি নাস্তা রেডি। নাস্তা করে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে দুপুরে গোসল করে কনে বাড়িতে যাওয়ার জন্য রেডি হলাম। ও হ্যা হিমেল আর মিন্টু কিন্তু আমাদের সাথে ঘুরতে যায় নাই, নাদিয়া আর সুমির সাথে চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছিল, তাই আমরা তাদের ডাকি নাই। বুঝলাম তাহলে ফাইনাল হয়েই গেল। সালাদের কাছ থেকে একটা পার্টিত অবশ্যই আদায় করতে হবে। আমরা ঘুরতে ঘুরতে পার্টিতে কি কি করব সেসব প্লান করছিলাম। রাব্বি যখন বর বেশে বের হল; দেখি বাহ! ভালইত লাগছে! একটু অপেক্ষা ত করতেই হবে। যাক হিমেল আর মন্টুকে আগে সিরিয়াল দিব, তারপর আমরা। এসব বলতে বলতে আমারা এগুচ্ছিলাম, দেখি হিমেল আর সুমি, মিন্টু আর নাদিয়া একসাথে এগিয়ে আসছে। হঠাৎ কোথা থেকে একটি ছেলে এসে হাজির হলো। সুমি ধমক দিয়ে বলল এত সময় লাগল কেন? কখন থেকে অপেক্ষা করছি। এস পরিচয় করিয়ে দেই। ভাইয়ারা, এ হল আমার বয়ফ্রেন্ড। এ শুনে ত আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল মনে হয়। বেচারা হিমেলের মুখটা দেখি আমাবস্যা রাতের মত কালো হয়ে গেল। ও মা একি কান্ড দেখি দেখি একটা ১২-১৩ বছরের মেয়ে একটা ছোট বাবুকে কোলে করে এনে নাদিয়াকে বলছে। আপু তোমার মেয়েকে ধর আর পারছিনা। কি কান্নাই করতে পারে রে বাবা! ধর, ধর। বাবুটি কি কান্না করতে পারে জানি না কিন্তু আমাদের হিমেল আর মিন্টু যে কি করবে আমার মাথায়ই ধরছে না। বেচারাদের মুখের দিকে তাকানোই যাচ্ছে না । আমাদের সকল আনন্দই মাটি হয়ে গেল। কিন্তু, কি আর করা বন্ধুর বিয়ে, ফিরে ত আর আসতি পারি না। কোন রকম কনে বাড়ি থেকে ফিরে সোজা আমাদের আস্তানা চিতায় এস হাজির হলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৬ সকাল ১১:৫৮