সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ জেলার উপজেলা। ১৭১.০২ বঃ কিঃ মিঃ আয়তনের এ ছোট উপজেলাটি মোঘল আমলের ছিল বাংলার রাজধানী। ঈশা খাঁর রাজধানী খ্যাত ইতিহাস ঐতিহ্যের চেতনায় সোনারগাঁও একটি প্রাচীন জনপদ, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষা বিধৌত এ জনপদটির অবস্থান ও বয়স কতোদিনের এ বিষয়ে গবেষনার যথেষ্ট দাবী রাখলেও এ কথাটি অস্বীকারের জো নেই যে সোনারগাঁও সভ্যতার বয়স ইতোমধ্যে দেড় সহস্র বছর পেরিয়ে গেছে। সুবর্ণগ্রাম বা আধুনিক সোনরগাঁওয়ের ভিত্তি যদিও গড়ে উঠেছে হিন্দুশাহী প্রশাসনিক কেন্দ্র বিক্রমপুরের পতনের পর তারপরেও বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্র স্বাক্ষ্য দেয় যে, প্রাক সুলতানি যুগে সুবর্ণগ্রাম একটি আভ্যন্তরীন আর্ন্তজাতিক নদী বন্দর হিসেবে এর অস্তিত্ব এ উপমহাদেশের পরিধি ছাপিয়েও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপ্ত হয়েছিল। বৈদিক যুগে গ্রীক নাবিক ও ব্যবসায়ীদের যে প্রাচীন নিম্নবঙ্গে ব্রহ্মপুত্রের তটরেখা বরাবর সমৃদ্ধ নগরীও বানিজ্য বন্দর গুলোতে পদচারনা ছিল তার পরিচয় কিন্তু মিলে অজানা গ্রীক নাবিকদের লেখা ‘‘পেরিপ্লাস’’ গ্রন্থ থেকে। পেরিপ্লাস গ্রন্থের অজানা নাবিকেরা ব্রহ্মপুত্রের তট বেয়ে এ অঞ্চলে যাতায়াত ছিল মূলত এ বদ্বীপের সমৃদ্ধ বস্ত্র শিল্পের জন্য।
ঐতিহাসিক ও বিদগ্ধ পন্ডিতদের ধারনা নিম্নবঙ্গের বিশেষ করে সুবর্ণগ্রামের পৃথিবীখ্যাত চারু ও কারু শিল্প জাত দ্রব্যাদির জন্যই এখানে আসা বিচিত্র কিছুই ছিল না গ্রীক নাবিকদের। হিন্দু পুরানের রানী কৈকিয়ির আব্দার ছিল সুবর্ণগ্রামের সুক্ষ্ম বস্ত্রের জন্যে। মিথই বলি আর ইতিহাসই বলি এ সমস্ত ঘটনার সূত্রপাত খৃস্টপুর্বকাল থেকেই । কাজেই একথাটা বলা যায় খৃষ্টপূর্বকালের বদ্ধীপের এই নিম্নভূমি ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করেছিল।
আরেকটি সূত্র স্বাক্ষ্য দেয় সুগন্ধিজাত মশলা রপ্তানিতেও সুবর্ণগ্রাম বন্দর নগরীর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। চারু ও কারু শিল্প বিকাশের জন্যে যে উর্বর ভূমির প্রয়োজন ছিল তার প্রকৃষ্ট স্বাক্ষী হলো ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার পলিবাহিত সমভূমি। প্রাচীন বৌদ্ধ দোহার সুক্ষ্ম কার্পাসিক বস্ত্র যে কার্পাস থেকে উৎপত্তি হতো তাতো বলার অপেক্ষা রাখেনা। প্রাচীন চর্য্যাপদের ভাষায় সোনারগাঁও অঞ্চলের ভূমি বর্তমানে কাপাসিয়া অঞ্চলকেই বুঝাই একথাও স্বীকার্য্য।
একথা স্মরণ রাখতে হবে যে, সোনারগাঁও শুধু প্রশাসনিক গুরুত্ব ও রাজধানী হবার কারনেই বিখ্যাত হয়ে উঠেনি। সোনারগাঁও সুবিখ্যাত হয়েছিল অর্থনৈতিক প্রাচুর্য্য, ভূমি বিন্যাস, কৃষি কৌমজাত উপকরনাদি নির্মাণ ও তার নান্দনিক চারু ও কারু শিল্পের জন্যেই। সোনারগাঁয়ের প্রাচুর্য্য ও সমৃদ্ধতার উৎস ছিল তার নিজস্ব উর্বর ভূমি ও এলাকার দক্ষ চারু-কারু শিল্পীদের উৎপাদিত শিল্পকর্মের জন্যে।
সোনারগাঁও এ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ইতিহাস আর ঐতিয্যের নানা নিদর্শন।
লোক ও কারু শিল্প ফাউন্ডেশন জাদুঘর
ফাউন্ডেশনের প্রবেশ পথেই একটি ভাস্কর্য আছে। একজন লোক গরুর গাড়ি ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। জাদুঘরের প্রবেশদ্বার সুন্দর কারুকাজ ও নকশায় সজ্জিত। জাদুঘর ভবনের সমনে বিশাল একটি দিঘী আছে। তিনদিকে বাঁধানো ঘাট একপাশের ঘাটের দুইপাশে দুটি ঘোড়ায় সওয়ার সৈন্যের মূর্তি। ফাউন্ডেশনে (সোনারগাঁ জাদুঘর) দর্শনার্থীদের জন্য মোট ১১টি গ্যালারি রয়েছে। প্রতিটি গ্যালারিতে দুর্লভ ঐতিহ্যের নিদর্শন সংরক্ষিত আছে। গ্যালারিগুলো হল-নিপুণ কাঠ খোদাই গ্যালারি, মুখোশ গ্যালারি, নৌকার মডেল গ্যালারি, আদিবাসী গ্যালারি, লোকজ বাদ্যযন্ত ও পোড়া মাটির নিদর্শন গ্যালারি, তামা, কাঁসা, পিতলের তৈজসপত্র গ্যালারি, লোকজ অলঙ্কার গ্যালারি, বাঁশ, বেত, শীল পাটি গ্যালারি ও বিশেষ প্রদর্শনী গ্যালারি। এছাড়া ফাউন্ডেশন ১৯৯৬ সালে আরো দুটি গ্যালারী স্থাপন করে। যার প্রথমটি কাঠের তৈরি প্রাচীন ও আধুনিককালের নিদর্শন দিয়ে সাজানো হয়েছে। আর অন্য গ্যালারীটি সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্যবাহী জামদানি ও নকশিকাঁথা দিয়ে সাজানো হয়েছে। গ্রামবাংলার প্রায় সব কিছুই এই জাদুঘরে স্থান পেয়েছে। নকশা করা কাঠের দরজা থেকে শুরু করে কাঠের সিন্ধুক, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র, বিভিন্ন নৌকার ছোট আকৃতির মডেল, পোড়ামাটির পুতুল, পাথরের থালা, পোড়ামাটির নকশি ইট কি নেই সেখানে।
পানাম সিটি
পানাম নগরী সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর হতে আধা-কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি ‘‘হারানো নগরী’’ নামেও পরিচিত। পানাম নগরীর নির্মাণশৈলী অপূর্ব এবং এর নগর পরিকল্পনা দুর্ভেদ্য ও সুরক্ষিত। এটি মুলতঃ ছিল বঙ্গ অঞ্চলের তাঁত ব্যবসায়ীদের মূল কেন্দ্রবিন্দু ও আবাসস্থল। এ স্থান হতে ব্যবসায়ীগণ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁত ব্যবসা পরিচালনা করতেন। বাংলার মসলিনসহ অন্যান্য তাঁত শিল্পের প্রচার প্রসার ও ব্যবসায়ের তীর্থস্থান এ পানাম নগরী।
নির্মানকালঃ প্রায় চারশত বছর আগ হতে পানাম নগরী স্থাপন শুরু হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। ধাপে ধাপে মোগল নির্মাণ শৈলীর সাথে বৃটিশ স্থাপত্য শৈলীর সংমিশ্রনে প্রায় চারশত বছরের পর্যায় ক্রমিক স্থাপন পুন:স্থাপন প্রক্রিয়ায় পানাম নগরী বর্তমান রূপলাভ করে।
নির্মানশৈলীঃ পানাম নগরীতে মোগল স্থাপত্য শৈলীর প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। তবে এতে পরবর্তিতে বৃটিশ বা কলোনিয়াল স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রন দেখাযায়। এটি ছকে আঁকা কোন নগরী নয় এবং এ নগরীর প্রতিটি বাড়ী সাইজ ও নকশায় ভিন্ন ভিন্ন। তাই এতে বাঙ্গালীর নিজ নিজ নির্মান কৌশলের ছাপ দেখা যায়। তাই এই নগরের নির্মানশৈলী একান্ত নিজস্ব ও বলা যায়। সঠিকভাবে একে পানাম স্থাপত্য কৌশল (Panam Style) বলা চলে। পানাম নগরীর নগর পরিকল্পনার মূল বৈশিষ্ট্য হলো এটি লেক বা খাল দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং সুরক্ষিত গেইট দ্বারা আবদ্ধ। সন্ধ্যার পূর্বেই গেইটসমূহ বন্ধ করে দেয়া হতো ফলে নগরীর অধিবাসীরা নিরাপদ জীবন যাপন করতো।
পানাম নগরীতে মূলত ব্যবসায়ী ও জমিদাররা বসবাস করতেন। এর পাশাপাশি রাজাদের, আমির ওমরাদের জন্য পানাম নগরী ও তার আশেপাশের গ্রামগুলোতে গড়ে উঠেছিল নিপুন কারুকাজ খচিত পাকা ইমারতরাজি। পানাম ও তার আশপাশকে ঘিরে পঞ্চদশ শতক থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত এক সমৃদ্ধ জনজীবন ছিল। এখানে সরু রাস্তার দুই ধারে গড়ে উঠেছিল অট্টালিকা, সরাইখানা, মসজিদ, মন্দির, মঠ, ঠাকুরঘর, গোসলখানা, কূপ, নাচঘর, খাজাঞ্চিখানা, টাকশাল, দরবার কক্ষ, গুপ্তপথ, প্রশস্থ দেয়াল, প্রমোদালয় ইত্যাদি।
পানাম নগরীতে দেখা যায় ৪০০ বছরের পুরনো মঠবাড়ি।
পানাম নগরের সৌন্দর্যে অনেকে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তখন পারস্যের বিখ্যাত কবি ছিলেন কবি হাফিজ। বাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ কবিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কবি হাফিজ সেই আমন্ত্রণরক্ষা করতে পারেননি। তাই তিনি উপহার স্বরূপ একটি গজল লিখে পাঠিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ফরাসি একজন পর্যটক সোনারগাঁয়ে এসেছিলেন। তিনি পানাম নগর দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন।
১৫ শতকে ঈসা খাঁ বাংলার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেছিলেন সোনাগাঁওয়ে। ঈসা খাঁর যাতায়াত ছিল এই নগরীতে। সেই সময়টাতেই অর্থাৎ সুলতানি আমলে বাংলার শিল্প ও সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করে। পূর্বে মেঘনা আর পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা নদীপথে বিলেত থেকে আসতো বিলাতি থানকাপড়, দেশ থেকে যেতো মসলিন। শীতলক্ষ্যা আর মেঘনার ঘাটে প্রতিদিনই ভিড়তো বড় বড় পালতোলা নৌকা। প্রায় ঐ সময়েই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে ইউরোপীয় অনুপ্রেরণায় নতুন ঔপনিবেশিক স্থাপত্যরীতিতে গড়ে উঠে পানাম নগরী। ইংরেজরা এখানে নীলের বাণিজ্যকেন্দ্র খুলে বসে। সেই সাথে মসলিনের বাজার দখল করে নেয় নীল বাণিজ্য।
পানামের অবকাঠামো-
পানাম নগরে ঢুকেই চোখে পড়বে একটি সরু রাস্তার ধারে সারি সারি পুরনো দালান। কোনটা দোতলা কোনটা আবার এক তলা। বাড়িগুলোর স্থাপত্য নিদর্শন দেখে বোঝা যায় এখানে ধনী বণিক শ্রেণীর লোকেরা বসবাস করতেন। বাড়ীগুলোতে মোঘল ও গ্রীক স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণ দেখা যায় এবং প্রতিটি বাড়ির কারুকাজ স্বতন্ত্র। কারুকাজ, রঙের ব্যবহার এবং নির্মাণকৌশলের দিক থেকে নতুন নতুন উদ্ভাবনী কৌশলের প্রমাণ পাওয়া যায় এখানে। প্রায় প্রতিটি বাড়ি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ঢালাই লোহার তৈরি ব্রাকেট। জানালায় ব্যবহার করা হয়েছে লোহার গ্রিল এবং ঘরে বায়ু চলাচলের জন্য ভেন্টিলেটর ব্যবহার করা হয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল বাড়িগুলোতে কাস্ট আয়রনের নিখুঁত কাজ আছে, এবং ইউরোপে ব্যবহৃত কাস্ট আয়রনের কাজের সাথে এই কাজের অনেক মিল লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও মেঝেতে লাল, সাদা, কালো মোজাইকের কারুকাজ লক্ষ্যনীয়। নগরীর ভিতরে আবাসিক ভবন ছাড়াও আছে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, মঠ, গোসলখানা, নাচঘর, পান্থশালা, চিত্রশালা, খাজাঞ্চিখানা, দরবার কক্ষ, গুপ্ত পথ, বিচারালয়, পুরনো জাদুঘর।
এছাড়া আছে ৪০০ বছরের পুরনো টাকশাল বাড়ি। পানাম নগরে টিকে থাকা বাড়িগুলোর মধ্যে ৫২টি বাড়ি উল্লেখযোগ্য। পানাম সড়কের উত্তর পাশে ৩১টি আর দক্ষিণ পাশে ২১টি বাড়ি রয়েছে। প্রায় প্রতিটি বাড়ি দুটি অংশে বিভক্ত। একটি বহির্বাটী এবং অন্যটি অন্দর-বাটি এবং বাড়ির সামনে উন্মুক্ত উঠান আছে। প্রতিটি বাড়ি পরস্পর থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থিত। নগরীর মাঝখান দিয়ে একটি সরু রাস্তা পানাম নগরীর ভেতর দিয়ে চলে গেছে। এই রাস্তার দুপাশেই মূলত পানামের বাড়িগুলো তৈরি করা হয়েছে। পানাম নগরে ঢুকেই আপনি হারিয়ে যাবেন কোন এক অতীতে।
ব্যবস্থাপনাঃ এটি প্রত্মতত্ত অধিদপ্তর সংরক্ষণ করে। এর সংরক্ষণের জন্য একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী দায়িত্ব প্রাপ্ত আছে।
শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম
সোনারগাঁ উপজেলার বারদী বাজারের পশ্চিম-উত্তর কোণে লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম অবস্থিত । প্রতি বছর উনিশ জৈষ্ঠ এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মহাপুরুষ লোকনাথ ব্রহ্মচারীর তিরোধান উৎসবও সপ্তাহ ব্যাপী মেলা বসে । ১২৯৭ সালের এই দিনে পরমপুরুষ শ্রীশ্রীলোকনাথ ব্রম্মচারী মৃত্যুবরণ করেন । তার এই মহাকাল প্রয়াণের দিনটিকে ভক্তি শ্রদ্ধার মধ্য দিয়ে স্মরণ করার জন্যই এই উৎসব ও মেলার আয়োজন হয় । এই তিরোধান উৎসবে অংশগ্রহণ করতে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কাসহ দেশের লক্ষাধিক লোকনাথ ভক্ত বারদী আশ্রমে এসে সমবেত হন । জৈষ্ঠের উনিশ তারিখ আশ্রমের চৌচালা ছাদের উপর থেকে ভক্তদের ছুঁড়ে দেয়া বাতাসা মিষ্টান্ন ও তা কুড়ানোর উচ্ছ্বল আয়োজন হয় যা “হরি লুট” নামে পরিচিত। এছাড়া দিন ব্যাপী চলে গীতা পাঠ, বাল্যভোগ, লোকনাথের জীবন বৃত্তান্ত পাঠ, রাজভোগ, প্রসাদ বিতরণ ও আরতী কীর্তনসহ ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠান।
শ্রী শ্রী বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রমের দক্ষিণের উঠানে তাঁর সমাধিস্থলের পশ্চিমে শত বৎসর ধরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল আকৃতির একটি বকুল গাছ । আশ্রমের ভেতরে আছে লোকনাথ ব্রহ্মচারীর বিশাল তৈলচিত্র । মূল আশ্রমের পেছনে খোলা উঠান পেরিয়ে বিশাল পাঁচতলা ভবনের যাত্রীনিবাস । পশ্চিমে আরও দুটি বিশালাকার যাত্রীনিবাস । ভক্ত ও দর্শণার্থীরা বিনা পয়সায় এখানে রাত্রিযাপন করেন। সাধক পুরুষ লোকনাথ ব্রহ্মচারী জীবিত থাকা অবস্থায় আশ্রমের পাশে কামনা সাগর ও জিয়স নামে পুকুর খনন করা হয়। এই পুকুরটিতে আশ্রমে আগত ভক্তরা স্নান করেন।
বারদীর লোকনাথ আশ্রম এখন শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থ স্থানই নয়, বরং ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে সকল ধর্মের, সকল মানুষের কাছে এক মিলন মেলা হিসেবে পরিচিত।
পঙ্খিরাজ ব্রীজ
পানাম পুল অবস্থানঃ
পানাম পুল নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার পানাম নগরীর সন্নিকটে অবস্থিত। এটি প্রায় ৪০০ বছরের পূর্বে নির্মিত পূরাকীর্তি। পায়ে হেঁটে ১/২ মিনিটে এ পুলে যাওয়া যায়। এটি পঙ্খিরাজ খালের উপর নির্মিত।
স্থাপত্য শৈলিঃ এ পুরাকীর্তি মোগল স্থাপত্যশৈলীর অবলম্বনে নির্মিত। এর উপরাংশ ঘোড়ার পিঠের মতো। নীচে একটি মুল খিলান রয়েছে যার মধ্য দিয়ে নৌকা যাতায়াত করা যায় এবং পার্শ্বে দুটি পাকা সাপোর্টিং খিলান রয়েছে।
আয়তনঃ এটি প্রায় ৮৬ ফুট দৈর্ঘ ৩৮ ফুট প্রস্থ এবং এর উচ্চতা ২০ ফুট।
ব্যবস্থাপনাঃ এটি প্রত্মতত্ত অধিদপ্তর সংরক্ষণ করে। এর সংরক্ষণের জন্য একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী দায়িত্ব প্রাপ্ত আছে।
বাংলার তাজমহল
তাজমহল বাংলাদেশ, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে ১০ মাইল পূর্বে সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত। এটি প্রকৃত তাজমহলের (ভারতের আগ্রায় অবস্থিত একটি মুঘল নিদর্শন। এটি ব্যক্তিমালিকানাধীন এবং তথ্যানুসারে এটি তৈরী করতে মাত্র ৫ বছর এবং USD ৫৮ মিলিয়ন$ খরচ হয়েছে। তাজমহল বাংলাদেশের মালিক আহসানুল্লাহ মনি একজন ধনবান চলচিত্র নির্মাতা। তিনি জানান এই তাজমহলের রেপ্লিকাটি তৈরী করা হয়েছে যেন তার দেশের দরিদ্র মানুষ যাদের ভারত গিয়ে প্রকৃত নিদর্শন দেখার সামর্থ নেই তারা যেন তাজমহল দেখার স্বপ্ন পূরন করতে পারেন নিজের দেশে থেকেই। তাজমহলের এই রেপ্লিকা সৃষ্টির ঘটনায় ভারত ক্ষুব্ধ হয় বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস থেকে জানানো হয় আহসানুল্লাহ মনিকে প্রকৃত তাজমহলের (৩০০ বছরের ও বেশী পুরোনো) মেধাস্বত্ব লংঘন করার দায়ে অভিযুক্ত করা হবে। মনি দাবি করেছেন তিনি মার্বেল পাথর আমদানি করেছেন ইতালী থেকে, হীরা আমদানি করেছেন বেলজিয়াম থেকে এবং প্রায় ১৬০ কিলোগ্রাম ব্রোঞ্জ আমদানি করেছেন গম্বুজের জন্য, যদিও কিছু মানুষ দাবী করেন রেপ্লিকাটি সম্পূর্ন নয় এবং দাবিকৃত উপকরন দিয়ে তৈরী করা হয়নি।
জ্যোতি বসুর বাড়ি
ভারতের প্রখ্যাত বাম রাজনীতিক ও পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মূখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ১৯১৪ সালের ০৮ জুলাই কোলকাতায় জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা ডাঃ নিসিকান্ত বসু নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার বারদী ইউনিয়নের অধিবাসী ছিলেন। ঢাকা থেকে প্রায় ২০ কি: মি: দূরে এই বারদী ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়ায় জ্যোতি বসুর একটি পৈতৃক বাড়ি রয়েছে। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সফরের সময় জ্যোতি বসু তার এই পৈতৃক বাড়িটি পাঠাগারে রূপান্তরিত করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। বাঙ্গালির অকৃত্রিম বন্ধু এই মহান রাজনীতিবিদ ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি ইহলোক ত্যাগ করেন। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাড়িটি পাঠাগারে রূপান্তরিত করার ঘোষণা দেন। বর্তমানে এটি পাঠাগার ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ ও পাঁচ পীরের মাঝার
সোনারগাঁও এর উল্লেখ্যযোগ্য ঐতিহ্যের মধ্যে আরো আছে গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ ও পাঁচ পীরের মাঝার যা সোনারগাঁও এর ঐতিয্য করেছে সমৃদ্ধ ও গৌরবান্নিত।
জামদানি শিল্প
সোনারগাঁওয়ের উল্লেখযোগ্য ইতিহাস ওঐতিহ্যের মধ্যে আরেকটি হল জামদানি শিল্প। হস্তশিল্পের মধ্যে সবচেয়ে ভাল একটি পন্য হচ্ছে জামদানি শাড়ী। জামদানি কার্পাস তুলা দিয়ে প্রস্তুত একধরনের পরিধেয় বস্ত্র। প্রাচীনকানের মিহি মসলিন কাপড়ের উত্তরাধিকারী হিসেবে জামদানি শাড়ি বাঙ্গালী নারীদের অতি পরিচিত। মসলিনের উপর নকশা করে জামদানি কাপড় তৈরি করা হয়। জামদানি বলতে সাধারণতঃ শাড়িকেই বোঝান হয়। তবে জামদানি দিয়ে নকশী ওড়না,কুর্তা, পাগড়ি, রুমাল, পর্দা প্রভৃতিও তৈরি করা হত। ১৭০০ শতাব্দীতে জামদানি দিয়ে নকশাওয়ালা শেরওয়ানির প্রচলন ছিল। এছাড়া, মুঘল নেপালের আঞ্চলিক পোষাক রাঙ্গার জন্যও জামদানি কাপড় ব্যবহৃত হত।
বর্তমানে ভাল মানের জামদানী শাড়ি কিনতে পাওয়া যায় সোনারগাঁও এর কাছে। সুফিয়া কামাল সেতুর আশেপাশে জামদানী পল্লী আছে সেখান থেকে। ওখানেই মূলত জামদানী শাড়ি বানিয়ে বিক্রি করা হয় এবং ট্রান্সপোর্ট করা হয় ঢাকায়। জামদানী পছন্দমত অর্ডার দিয়েও বানানো যায়। কোয়ালিটি নিঃসন্দেহে ভাল l আর হকার্স মার্কেট থেকে কিনলে সর্বনিম্ন ২৫০০ থেকে ৮০০০ টাকার মধ্যে পাবেন l কাপড়ের বুনন আর মানের উপর দাম ওঠানামা করে।
তথ্য সূত্র : ইন্টারনেট
ছবি সূত্র : ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২০