somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভিক্ষাবৃত্তি ও আমাদের সামাজিক অবস্থান

২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভিক্ষাবৃত্তি পৃথিবীর সকল দেশেই একটি ঘৃনিত সামাজিক সমস্যা। এমন কোন দেশ নেই যেখানে এ আত্মসম্মানবিভর্জিত ঘৃনিত কাজটিকে সমর্থন করে। এটি সামাজিক মূল্যবোধকে নষ্ট করার অন্যতম পন্থা। ‘ভিক্ষুক’ কথাটি উঠলেই মনের মধ্যে সাধারণত এমন একজন মানুষের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে যে হবে দীনহীন, অতি দরিদ্র, যাকে দেখাবে খুবই রুগ্ন, যার কাছে সাধারণত খাবার থাকবে না, পরনে থাকবে না ভাল কোন জামা-কাপড়। বাংলাদেশের মত দেশে ভিক্ষাবৃত্তি একটি নিরাপদ পেশা, যেখানে পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশেও এটা আইনত অপরাধমূলক কাজ। উন্নত দেশগুলোতে অনেকে ভিক্ষা করে বিভিন্ন পরিবেশনা করে, মানুষকে বিনোদন দিয়ে কিন্তু, রাষ্ট্রীয়ভাবে এটাও নিষিদ্ধ। এক্ষেত্রে যদি তাদের পুলিশ ধরতে পারে ত আর রক্ষা নাই, সোজা জেল হাজতে। বাংলাদেশে বিশেষ করে শহরগুলোতে নিরাপদে ভিক্ষুক সম্প্রদায় তাদের এ ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশে ভিক্ষাবৃত্তির বিকাশের সাথে সাথে এটা টিকিয়ে রাখছে সমাজের দু-শ্রেণির মানুষ এক শ্রেণি হল যারা পূণ্য লাভের আশায় এবং নিজের সকল অপকর্ম ক্ষমার আশায় ভিক্ষা দেয়, এবং আরেক শ্রেণি হল যারা ভাবে যে মানুষ আমার কাছ থেকে হাত পেতে সাহায্য চাইবে এবং সেটা করে তারা বেশ গর্ববোধও করে। কিন্তু, যাদেরকে ভিক্ষা দিয়ে তারা এত আনন্দবোধ করে, তাদের মধ্যে আত্মসম্মানবোধই নেই, নেই লজ্জা শরমের কোন বালাই।

ইসলাম ধর্মসহ পৃথিবীর কোন ধর্মই এই ভিক্ষাবৃত্তিটাকে সমর্থণ করে না। কারণ, বিনা পরিশ্রমে অর্জিত এ কাজকে সকল ধর্মেই গর্হিত কাজ বলে মনে করা হয়। ইসলাম ধর্মে দান খয়রাতের কথা বলা হয়েছে কিন্তু, এটা বলা হয়নি যে তৃমি ভিক্ষা কর, বিশেষ করে যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি সুস্থ আছ। ইসলামে বলা হয়েছে যে যাকাত দাও বা দান কর তাদেরকে যারা প্রকৃত পক্ষে মিসকিন যাদের সে সামর্থ নাই যে নিজেরা উপার্জণ করতে পারে । হযরত মোহাম্মদ (সঃ) ভিক্ষাকে একটি ঘৃনিত কাজ বলে অভিহিত করেছেন এবং সামর্থ থাকতে নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে উপার্জণ কর।

বাংলাদেশের শহর ও গ্রামগুলোতে যে সকল ভিক্ষুক আমরা দেখি তাদের অধিকাংই সমর্থ এবং ভুয়া ভিক্ষুক। তারা অভিনয় করে, তাদের শারীরিক অসুস্থতার জন্য নয় মানসিক বিকারের কারণে এবং তারা এরকম জগন্য ও আত্মসম্মান ভূলুন্ঠিত কাজ করে। অনেকে আচ্ছে যাদের মোটামুটি চলার মত সম্পত্তি বা কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করার মত সামর্থ আছে কিন্তু, বিনাশ্রমে যে মোটা আয় হয় তার লোভ তারা সমালাতে পারে না। শহরে অনেক দালাল দেখা যারা এসব ভিক্ষারীদের মহাজন বা দালাল হয়। তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে অসুস্থ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, বা হারিয়ে যাওয়া ছোট ছোট বাচ্চা এমনকি অতি দরিদ্র বাবা মার কাছ থেকে তাদের সন্তানদের ক্রয় করে বা ভাড়ায় এনে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োগ করছে। অনেক সময় অতি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দিনে পর দিন এসব অসুস্থ মানুষগুলোকে রেখে আরো বেশি অসুস্থ বানিয়ে তারা তাদের স্বার্থ হাসিল করছে। এ সমস্ত টাউট বাটপারদের কারণে ভিক্ষাবৃত্তি দিনে দিনে অরো চাঙ্গা হয়ে উঠছে।

সরকারিভাবে এ ভিক্ষাবৃত্তি সমস্যাটি সমাধান কল্পে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তাদের পূনর্বাসনের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু, কিছু কিছু NGO আছে যারা বাংলাদেশের এসব ভিক্ষুকদের দুর্দশার কথা জানিয়ে, ছবি পাঠিয়ে বিদেশ থেকে প্রচুর ডলার পায়, আর সেসব দিয়ে নিজেরা ভোগ বিলাস করে বেড়ায়। তারা হাইকোর্টে রিট আবেদন করে সরকারের এ মহৎ প্রকল্পকে স্থগিত করে দেয়। তাদের ভয় হয় যদি ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ হয়ে যায় তাদের মোটা আয়ও বন্ধ হয়ে যাব । বিভিন্ন পূনর্বাসন সংস্থা আছে যারা বাস্তবিকই ভিক্ষুকদের পূনর্বাসন করতে অনেক প্রকল্প গ্রহণ করেছে । সেরকম একটা পূনর্বাসন সংস্থার আলমগীর হোসাইন নামক এক কর্মী তার অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, “আমরা এই কার্যক্রমের আওতায় একজন ভিক্ষুককে ১লক্ষ টাকার সমপরিমাণ সম্পদ অথবা ব্যবসায়ের পুজি প্রদান করি, তবে তাকে বন্ডে সই দিতে হয়, যে সে আর ভিক্ষা করবে না, সীতাকুন্ডের এক ভিক্ষুক আমার মুখের উপর বলে দিলো ' স্যার আপনারা আমাকে ১ লক্ষ টাকা দিবেন, যা থেকে আমার ৫০০০/৭০০০ টাকা মাসিক আয় করতে হবে এবং আমাকে ভিক্ষা ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু আপনি জানেন বর্তমানে আমার দৈনিক আয় ৭০০/১০০০ টাকা আর কোন উৎসবের সময় এমন দিনও যায় দৈনিক ২,০০০- ৫০০০ টাকা আয় হয়। আমি অসহায় এর মত ভাবলাম একজন ভিক্ষুক এর কাছে আমাদের ১লক্ষ টাকার অফার কতটা তুচ্ছ, মনে অনেক কথা ছিলো যে তাকে বুঝাবো ভিক্ষাবৃত্তি অসম্মানজনক, ধর্মীয় দৃষ্টিতেও ভাল নয়, কিন্তু মুখে কোন বাক্য গঠন করা সম্ভব হলো না।”

তাহলে বুঝা যায় যে, এ ভিক্ষাবৃত্তি ভিক্ষুকদের মনে প্রানে এমনভাবে গেঁথে গেছে যে তারা সৎভাবে, শারীরিক পরিশ্রম করে অল্প আয় করতে রাজি নয়। কিভাবে তারা এধরণের পূনর্বাসন সংন্থার মাত্র লক্ষ টাকার ঋণের অফার গ্রহণ করবে, যেখানে সে বিনা ঋণে মাত্র কয়েক মাসে আয় করতে পারে সে লক্ষ টাকা। আর এমন পরিস্থিতিতে কেমন করে এসব সংস্থাগুলো তাদের পূনর্বাসনের কার্যক্রমে সফল হবে? যেখানে ভিক্ষুকদের মানসিক চিন্তা শক্তিই নাই, নাই তাদের আত্মসম্মানবোধ, বিবেক যাদের মৃত হয়ে গেছে, লোভ যাদের অন্তরকে গ্রাস করে নিযেছে।

ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধের জন্য সরকার যতই চেষ্টা করুক না কেন তারা অত সহজে এটা বন্ধ করতে পারবে না, যদি না এসকল বিকৃতমনা মানুষগেুলো না বুঝে যে, এটা একটা সামাজিকভাবে ঘৃনিত কাজ, আত্মসম্মানের উপর এটা আঘাত করে। অন্যদিকে আমরা যারা সমাজের সাধারণ জনগণ আছি তাদেরও করনীয় আছে অনেক কিছু, সামাজিকভাবে এসব ভিক্ষুকদের ভিক্ষা দেয়া বন্ধ করতে হবে। যদি জনগণ তাদের ভিক্ষা দেয়া বন্ধ করতে পারে, যদি মনের এ ভাবটা দূর করতে পারে যে, আমার কাছ থেকে হাত পেতে কেউ চাইবে, তবেই সমাজ থেকে ভিক্ষাবৃত্তির মত এ ঘৃনিত কাজটা হয়ত কমে যাবে।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:৩৪
৩টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×