‘‘মানুষ হতে মানুষ আসে, বিরুদ্ধতার ভিড় বাড়ায়
তুমিও মানুষ আমিও মানুষ তফাৎ শুধু শিড়দাড়ায়”
জোর গলায় বলছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ কোনভাবেই সংকুচিত করা চলবে না
এই বিষয় একদম পরিস্কার যে ২য় বার ভর্তি পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক ভাবে গৃহিত ও ছাত্র স্বার্থবিরোধী। পৃথিবীর প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে বয়স কোন বিবেচ্য বিষয় নয়, বিবেচ্য নয় ছাত্রের উচ্চমাধ্যমিক পাসের সাল তারিখ। ঢা.বি ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আচমকা এমন একটি সিদ্ধান্ত ছাত্রদের শিক্ষাজীবন যে চরমভাবে ব্যাহত করবে এটা বলাই বাহুল্য। যে ৪০০ সিট ফাকা থেকে যাবার কথা প্রশাসন বারবার বলছেন, ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যাওয়া ছাত্রদের আবারো ভর্তি পরীক্ষা দেবার সুযোগ আপাতত বাতিল করা যেতে পারে। কম বাজারদরের! বিষয়গুলো থেকে ছাত্ররা যদি এমনিতেই চলে যায় তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি করতে পারবে? তবে ছাত্ররা সিট ফাকা করে দিয়ে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য বিষয়ে পড়তে যাচ্ছে তাই নয় অনেক ছাত্রই আজকাল পছন্দের বিষয় না পেলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও চলে যাচ্ছে, চলে যাচ্ছে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়েও। সেটা প্রশাসন বন্ধ করবে কি করে?
এই সমস্যার মূল অন্য জায়গায় আরো গভীরে।বোঝা যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই বাজারে চাহিদা না থাকলে ছাত্ররা সেই বিষয়ে পড়তে আগ্রহী হচ্ছেনা। এদেশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করাটা সম্মানজনক কাজ পাবার প্রধান শর্তে পরিনত হয়েছে। ফলে গবেষনা নয় একটি চাকুরি পাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার প্রধান উদ্দেশ্যে পরিনত হয়েছে। যদি স্বাধীনতার এই এত বছরে দেশে শিল্পায়ন হতো ছাত্ররা উচ্চমাধ্যমিক পাস করেই সেই চাকুরি পেয়ে যেত। কাজে কাজেই অত্যন্ত স্বাভাবিক কারণেই উচ্চশিক্ষা গ্রহণেচ্ছু ছাত্র সংখ্যা কমে যেত, বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত হত প্রকৃত গবেষণার কেন্দ্রে। এদেশে বিশ্ববিদ্যালয় হতে “গবেষণা” শব্দটি এতামধ্যেই বিতাড়িত হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিণত হয়েছে স্বৈরতন্ত্র, দুর্ণীতি আর স্বজনপ্রীতির আখড়ায়।
কোচিং নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। প্রকৃত অর্থে পরীক্ষা একবারই হোক বা যে কয়বারই হোক কিংবা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরপরই নেয়া হোক রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ব্যাতিত কোচিং ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব নয়। ফলাফলের ধারা বিবেচনা করে দেখা গেছে ২য় বার অপেক্ষাকৃত সুবিধাবঞ্চিত ছাত্র ছাত্রীরা বিশেষ করে গ্রামের শিক্ষার্থীরা ভাল করেন। কারণ সমগ্র শিক্ষাজীবনে এ ধরনের প্রশ্ন পদ্ধতির সাথে পরিচয় না থাকা। ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলোও এমনভাবে প্রনীত যে, বিগত বছরগুলোতে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক হালে পি.এস.সি , জে.এস.সি’র মতো পাবলিক পরীক্ষায় পাস করবার পরও প্রশ্ন পদ্ধতিটি ছাত্রটির কাছে অপরিচিত ঠেকে। পশ্ন পদ্ধতিটি নিজেই একটি বড় সমস্যা। সে সময়ই সুযোগ নেয় কোচিং; সুবিধাপ্রাপ্ত ছাত্ররা কোচিং গৃহশিক্ষক ও অন্যান্য যোগাযোগের কারনে প্রশ্ন পদ্ধতির সমস্যা উতরে যান। যে শিক্ষার্থীটি ১ম বার সুযোগ না পেয়ে ২য় বার সুযোগ পায় সে মূলত বাস্তব কাঠামোগত সমস্যার কারনে ১ম বার সুযোগ পাননা ,তাকে সঙ্গতকারণেই কমমেধাবী বা অমেধাবী বলার সুযোগ নেই।
শিক্ষাপদ্ধতি না বদলালে, প্রশ্নের ধরন বিষয়ভিত্তিক না হলে কোচিং সেন্টারগুলো সুযোগ নেবেই।
কোচিং সেন্টারের দোহাই দিয়ে আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রচেষ্টার নিন্দা জানাই। দ্বিতীয় বার ভর্তি পরীক্ষা দেবার সুযোগ বন্ধ করে ছাত্রদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সংকোচনের সিদ্ধান্ত কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা সহজেই অনুমেয় ভর্তি পরীক্ষায় বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন হলে কম সুবিধাপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ভালো করার সম্ভাবনা বাড়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই আমাদের হতে হবে সব্যসাচী,যে কোন একটা বিষয়ও খুব গভীরভাবে জানেন না।
আমরা আন্দোলনে রাজপথে নামবার পরে এ বিষয়টা স্পষ্টই বুঝতে পারছি যে প্রশাসন ছাত্রদের সাথে সংলাপে অনাগ্রহী, প্রশাসন ছাত্রদের আন্দোলনে উদাসীন, প্রশাসন অনশনকালে ভর্তিচ্ছু ছাত্রদের ব্যাপারে ন্যুনতম সংবেদনশীল আচরণও করেনি। প্রশাসনের এহেন আচরণ নিঃসন্দেহে স্বৈরতান্ত্রিক। এই ঘটনা নতুন না, আমাদের দেশের প্রায় স্বৈরতান্ত্রিক সংবিধান পুলিশ বাহীনিকে দলের লেজুড়ে পরিনত করার সুয়োগ দিয়েছে। গত ৭ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিতে গেলে ছাত্রদের উপর পুলিশ কর্মকর্তারা যে আক্রমণ করেছে তা ভালো করেই বোঝা যায় সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ঢা.বি ভি.সি আর প্রধানমন্ত্রীর তথাকথিত কাছের লোক পুলিশ কর্মকর্তাদের অতি আগ্রহের ফল। যে সরকারই আসুক তারা এমনভাবে প্রশাসনকে তাদের স্বার্থে ব্যাবহার করার সুযোগ পায় আমাদের সংবিধানে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রীর একনায়কতান্ত্রিক ক্ষমতার কারনে। আন্দোলন দমনে যথেচ্ছারভাবে পুলিশকে ব্যাবহার করা নিশ্চিতভাবেই রাষ্ট্রের অগণতান্ত্রিক চরিত্রকে আরো প্রকট করে তুলবে।
আমরা এমন কোন প্রশাসন চাই না, এমন কোন প্রক্টর চাইনা, এমন কোন ভিসি চাইনা যারা ছাত্রদের সাথে স্বৈরাচারী আচরণ করবে।
স্লোগান দিতে গিয়ে পরিচয় হয় নতুন মানুষের সাথে, পরিচয় হয় নতুন কল্পনার সাথে। রাজপথে নতুন মানুষের নতুন কল্পনা মিলে মিশে দেখিয়ে দেয় মুক্তির পথ।
দাবী আমাদের রাজপথেই আদায় করে নিতে হবে।