ব্যারিষ্টার আমীর-উল ইসলামের নাম শুনেছিলাম তবে এর আগে কখনো তার কথা শুনিনি। গত পরশু দিন ২৭/০৫/২০১৪ তারিখে বাংলার পাঠশালা আয়োজিত সংবিধানের সংশোধনী বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠানে তার কথা শোনার সুযোগ হল। উনি স্বাধীনতার ঘোষনা পত্র তৈরী করেছিলেন, ছিলেন ৭২ এর সংবিধান প্রণয়ন কমিটিতেও।
ব্যারিষ্টার আমীর-উল ইসলাম যৌবনে যে সাহস দেখাতে পেরেছিলেন আজকের সময়ে সেটা হারিয়ে বসে আছেন তা তার কথায় স্পষ্ট বোঝা গেল গতকাল। ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সভায় তিনি শেখ মুজিবুর রহমান কে এই কমিটিকে অস্থায়ী খসড়া সংবিধান প্রণয়ন এর পূর্বে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সভা অবশ্যই আহবান করা উচিত, আর গণপরিষদকে অন্তর্বতীকালীন সময়ে অইনপ্রণয়নের ক্ষমতা না দেয়াটা চরম অগণতান্ত্রিক হবে বলে দাবি করেন। শেখ মুজিবুর রহমান তাকে আনএক্সপেরিন্সেড ও স্টুপিড বলে চলে যান।(মেকিং দ্য কন্সটিটিউশন, ব্যারিষ্টার আব্দুল হালিম)।
একালে তিনি ৭১ এর ১লা মার্চ এর পর থেকে আওয়ামীগ দায়িত্বপ্রাপ্ত ও বদলে যাওয়া পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে গনপ্রতিনিধি নির্বাচন অপ্রয়োজনীয় ছিল আর সংবিধান প্রণয়ন করার এখতিয়ার তাদের সেই সংবিধান প্রণয়ন কমিটি রাখেন বলে দাবী করেন।
৭০ এর অনুচ্ছেদ এর সাফাই গাইতে গিয়ে আমীর-উল ইসলাম পুরো বাঙালী জাতিকে এন্থ্রপলজিকালি বিশৃঙ্খল ও বহুধা বিভক্ত হিসেবে চিত্রিত করেন। তিনি বলেন ৭০ এর ফলেই পার্লামেন্ট এ শৃঙ্খলা রাখা গেছে। তিনি পাকিস্তান আমলে এম.এন.এ দের আটকে রাখার উদাহরণ টানেন, তাদের আটকে না রাখলে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যেত না বলেও মন্তব্য করেন তিনি, কেননা আমরা বহু মতের লোক।
৪র্থ সংশোধনীর উদাহরন টেনে তিনি বলেন ওই সংশোধনীর বিষয়ে তিনি বিরুদ্ধে ছিলেন আর তাই তিনি পার্লামেন্টে অনুপস্থিত থেকে ভোটদানে বিরত থাকেন ফলে ৭০ মোতাবেক তার সদস্য পদ বাদ হয়ে যাবার সম্ভাবনা তৈরী হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান তাকে তার বাসায় নিজের বেডরুমে ডেকে সতর্ক করে দেন।এটা দাড়াল যে ৭০ কিভাবে ব্যাবহার করব এটা রাষ্ট্রপ্রধানের বিবেচনার বিষয়, রাষ্টপ্রধান ভাল হলে ৭০ কোন সমস্যা নয়। এভাবে ৭০ এর যৌক্তিকতা তুলে ধরেন তিনি।
যে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়নের ম্যান্ডেট তারা পেয়েছিলেন সেটা মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য কোন মতেই প্রযোজ্য হতে পারে না। অবশ্যই সংবিধান সভার নির্বাচনের পর জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই সংবিধান প্রণয়ন করাই জনগনের আকাঙ্খা ছিল। এভাবে সংবিধান প্রণয়ন করার এখতিয়ার আ.লীগ আর তার সংবিধান প্রণয়ন কমিটির থাকতে পারেনা।
আর একটা জাতিকে দোষারোপ করা খুব সহজ, আর জাতিকে সংগঠিত করার কাজ রাজনৈতিক দলের। আমরা বাংলাদেশীরা ছাগল শ্রেনীর তাই আমাদের জন্য ৭০ অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য এ জাতীয় কথা আজকাল বেশ চলছে। যে জাতির মাথা পর্যায়ের লোকেরা পুরো জাতির আত্মসম্মানে ঘা দিতে পারেন তাদের কাছ থেকে দায়িত্ববোধ আশা করা যায় না।
এই অঞ্চলের মানুষ বার বার প্রতিরোধ যুদ্ধ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খার সংবিধান প্রণয়নের দাবিতে আমরা জনগণকে সংগঠিত করছি। এই সংগ্রাম আমাদের সকলের, আমাদের জিততেই হবে।