ছুটির দিনের সকাল বলতে শৈশবে বুঝতাম খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠা, কম ঘুমিয়ে বেশী খেলা আর মায়ের হাতের মজার মজার খাবার । এখন ছুটির দিন মানে ফজরের নামাজের পর যত বেশী ঘুমানো যায় আর রান্না ঘড়ে হরতাল।
যারা আমাকে আলসে মা আর দায়িত্ব জ্ঞানহীন বিবি ভাবছেন তাদের জানাচ্ছি ।
আমি দেরীতে উঠা মানেই ছেলে মেয়ের একটু বেশীক্ষণ আইপ্যাড ,এক্সবক্স নিতে পারা আমি একটু বেশিক্ষন ঘুমানো মানে কর্তার আর একটু বেশী বিছানায় থাকার লাইসেন্স ।
বছরের এই সময়গুলি এখানকার আবাহাওয়া এতটাই চমৎকার যে বেশিক্ষন আলসেমী করা ও অন্যায়। সারা বছরের লু হাওয়া আর বৈরী পরিবেশ মুহূর্তেই আপন মনে হয় ,সেই পরিবেশের চমৎকার উপযোগ করে এখানে চলছে দুবাই শপিং ফেস্টিভ্যাল সারা বছরের মত মরুভূমি র সাফারি আরো কত শত আয়োজন ।
আরব আমিরাতের অর্থনীতি প্রধানত প্রাকৃতিক ভাবে প্রাপ্ত তেল থেকে উন্নতি করা শুরু করলে ও বর্তমানে তারা চমৎকার ভাবে তেল এর উপর নির্ভরতা কমিয়ে ৭১% বাৎসরিক আয় আনতে সক্ষম হয়েছে অনান্য খাত থেকে।এর মাঝে অন্যতম হচ্ছে পর্যটন শিল্প ,বিশ্বের অন্যতম বিলাস বহুল কিছু হোটেল সহ,এদের রয়েছে প্রচুর পর্যটক টানার মত অসম্ভব ভাল কিছু পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ।
গ্লোবাল ভিলেজ তাদের মাঝে একটি, দুবাইল্যান্ড এ প্রতিবছর নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে এপ্রিল এ শেষ হয় এই আন্তর্জাতিক পর্যটন আনন্দ বিনোদন ,সংস্কৃতি আদান প্রদান কেন্দ্র । অনেকটাই আমাদের দেশের বানিজ্য মেলা ধরনের তবে নিঃসন্দেহে মানের দিক থেকে সত্যিকারের আন্তর্জাতিক ।
Make Your Senses Come Alive
এই শিরোনামে ২০তম বারের মত চলছে গ্লোবাল ভিলেজ , সেই আয়োজন কে ধন্য করতে শুক্রবারের বিকেলের ঘুম কে বিসর্জন দিলাম,আমি নিশ্চিত ওদের সফলতার ইতিহাসে আমার এই ত্যাগ আরবদের খাঁটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে ।আর যদি আমার অবদান কে এরা মুল্যায়ন না করে বুঝে নেব আমার অবদান ধারন করার মত বিশালত্ব এই আয়োজনের আয়োজকদের এখন ও হয়ে উঠে নাই ।
এবারের আয়োজনে মধ্য প্রাচ্য, দূর প্রাচ্য ,ইউরোপ্,আফ্রিকা্,আমেরিকা এবং সাউথ এশিয়া থেকে আসা দেশ নিয়ে ৩৭ টি আলদা প্যাভেলিয়্ন সাজানো হয়েছে ।নিজের দেশের সংস্কৃতি ঐতিহ্য কে তুলে ধরে প্রায় প্রতিটি দেশের নির্ধারিত যায়গায় চমৎকার ভাবে সংগীত নৃত্য পরিবেশন চলে সমান তালে আর থাকে নিজেদের দেশের উৎপাদিত পণ্যের সমাহার ।
চলেন ঘুরে আসি গ্লোবাল ভিলেজ থেকে।
প্রবেশ মুখে ই দেখলাম ইউ এ ই র নিজস্ব সামগ্রীর পসরা
আরব সাজে শিশুরা
এমারতিদের ট্র্যাডিশনাল খাবার
ছোট ছোট তাঁবু সাজিয়ে সেখানেই ভাঁজা হচ্ছিলো এই পিঠে
আরব আমিরাতের নিজস্ব নাচ দেখুন দুঃখিত গানের ছবি তোলা গেল না ।
এবারের আয়োজনে আমাদের কিছু কেনার চাইতে মজার মজার সব খাবার খাওয়াতে আকর্ষণ বেশী ছিল
থাই স্যুপ আর পিঁয়াজের আঙটি
বাহারাইনের মাশরুম সাথে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই
মিশরের ভাপে রান্না
তুরস্কের কাবাব
এইটা রোমানিয়া থেকে আগত
বসনিয়া র রাজধানী হারজেগোভিনিয়া বা এই রকম কিছু বিশ্ব বিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় শিখেছিলাম সেখানকার খাবার ও টেস্ট করা উচিত
রাস্তার পাশের স্টল ডাইনী ঝাড়ু হাতে এদের ভাষায় kiosk
আমার মত যারা অতি ভোজনে ক্লান্ত বা শিশু এবং বয়স্কদের আনন্দ দানের ছিল সাইরপ্রাইজ এই বাহন একেবারে নাচে গানে ভরপুর
এবারের গ্লোবাল ভিলেজের সবচাইতে সুন্দর প্যাভিলিয়ন আমার মতে সাজিয়েছিল চায়না
মিশর
চমৎকার কিছু আরব মেয়েদের পোশাক
এগুলো ইতালীর
রাশিয়ান প্যাভেলিয়নের এই মিস্টি ডল গুলি বেশ আগ্রহ নিয়ে আমাদের দেখছিল
আফ্রিকার কুটির শিল্প
তুরস্কের ড্রাই ফ্রুট সাজানো
দেখেই বুঝতে পারছেন এরা ছবির দেশ কবিতার দেশের
ইনারা দ্যা ইউ এস এ
ইরানের জাফরানের বেশ কদর
মধ্যপাচ্যে অথচ খেজুর নাই হতেই পারে না
তিউনিসিয়ার হস্তশিল্প সমাহার
ইন্দোনেশিয়া
ইতালি প্যাভেলিয়নে পাস্তায় রঙের বাহার
স্পেনের হাতে তৈরি প্রাকৃতিক সাবান দারুন মন কারা সুবাস ।
আফগান প্যাভেলিয়ন এ ছাড়া এদের ছিল বিশাল ড্রাই ফ্রুট সম্ভার চমৎকার সব পাঁথরের গয়না
লেবাননি শিল্পীদের আঁকা চমৎকার কিছু ছবি
ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত আমরা চলে এলাম লেকের পানিতে নৌকা ভ্রমণে
বিলাস বহুল এই Abra ৩০ মিনিটের জন্য ৫০ দিরহাম এ পাওয়া যাচ্ছিলো
(ইহার চেয়ে হতাম যদি আরব বেদুঈন ) উদাসী হাওয়ার রেশ কাটার আগেই বেদুঈন জীবন যাপন দেখতে এলাম
আবার শুরু প্যাভিলিয়ন টু প্যাভিলিয়ন চক্কর যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়েমেনের খাঁটি মধুর পসরা
এবারে বাচ্চাদের বাবা সহ বাচ্চা রা বিদ্রোহ ঘোষণা করলো শপিং এর মত নন প্রডাক্টিভ কাজে তারা আর নাই বাধ্য হয়ে
হুম ঠিক ধরেছেন ঐ দেখা যায় (তাল গাছ ) এডভ্যাঞ্চার
ছিল থ্রিলিং জেট স্কি শো [/sb
রাস্তায় চলতে সিরিয়ার স্পেশাল তেঁতুলের শরবৎ
ঠিক রাত ৯টা বাজতেই শুরু হল বুরজ খালিফা ফাউন্টেনের অনুকরণে তৈরি ফাউন্টেন এন্ড লাইটিং শো
এবারে আমার পালা পাকিস্থানের লন আর কাশ্মীরী শাল নিলাম কিছু বেশ সস্তায়
ছেলের জন্য
ফিলিস্থিন প্যাভেলিয়ন
এবারে
আরবদের বাকাল্ভা না খেলে হয় সাথে খেলাম পাকিস্থানি হালিম আর হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি
কাতার রা রেখেছিলো ফ্যালকন হাতে নেয়ার সুযোগ সাথে দারুন সুগন্ধী
মরক্কো
প্রায় সব আরবদের ই ছিল আবায়া র বিশাল সম্ভার
আগর কাঠ oud scent
চাইনিজদের পেইন্টিং
কারু শিল্প
চমৎকার সব লং ড্রেস
মাঝে মাঝেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
ক্লান্ত বিধ্বস্ত চিন্তার কিছু নেই রয়েছে ফুট ম্যাসাজ টিম
জাপানী খালা কে ভুলে যাওয়া একদম উচিত হয় নাই
বহুকিছু বাকি রয়ে গেলো কিন্তু হাতে ও সময় নেই আর সামু এর চাইতে বেশী ছবি ও আপলোড করতে দিচ্ছে না
আরেয়ে সব তো আমি ই খেলাম এটা আপনাদের জন্য কষ্ট করে সাথে ছিলেন তাই
এক ঝটাকায় ফ্রেশ হয়ে বাসায় এলাম
বেশীর ভাগ ছবি গ্লোবাল ভিলেজ ইনিস্তাগ্রাম থেকে নেয়া
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১২