মনটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেলো যখন জানতে পারলাম এই বর্ষাতে বান্দরবনের পাহাড় ট্রেক করার উপযোগী নয় ,মাথা পাগল হবার জোগাড় আরে ধুর !! বহুদিন থেকে বসে আছি এই বান্দরবন ট্যুরের জন্য ,মাথা ঠান্ডা করার জন্য একটা কিছূ করার দরকার । সামুতে কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটি করলাম তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম যা হবার হবে আগামীকাল রাতেই রাঙ্গামাটি যাবো । সবাইকে সবকিছু খুলে বললাম সবাই সাথে সাথে রাজী হয়ে গেলো....আমাদের রাঙ্গামাটি ট্যুর শুরু হলো.......................||
নয়টার ট্রেন কয়টায় আসে ? এই চক্করে পড়ে সিদ্ধান্ত নিলাম কুমিল্লা থেকে সরাসরি বাসে রাঙ্গামাটি যাবো.
রাত একটায় কুমিল্লা থেকে রওয়ানা দিলাম রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে
## ঢাকা থেকে সরাসরি হানিফ,শ্যামলি বা এস আলম বাসে করে রাঙ্গামাটি আসতে পারেন ভাড়া পড়বে ৩৮০ টাকা । অথবা চিটাগাং এসে অক্সিজেন মোড় থেকে রাঙ্গামাটি আসতে পারেন ভাড়া পড়বে ৬০-১০০ টাকা ।
আমাদের ট্যুরটা এইভাবে প্ল্যান করেছিলাম যে ঠিক সকালের দিকেই রাঙ্গামাটি পৌছে যাবো তারপর হালকা নাস্তা করে শহরে ঘুরতে বের হয়ে যাবো আর পরের দিন বোট নিয়ে শুভলং ঝরনা দেখতে যাবো ।
প্ল্যানমতো সকালে পৌছেই গ্রীন ক্যসেল নামে একটা হোটেলে উঠলাম,হোটেলটা রিজার্ভ বাজারে অবস্হিত আমাদের ৫ জনের জন্য একটা বড় রুমের ভাড়া দিতে হয়েছে ১০০০ টাকা ।
সকাল বেলা ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে বৃষ্টির মধ্যেই আমাদের ভ্রমণ মিশন শুরু করলাম ,প্রথমে ঠিক করলাম জাদুঘর দেখবো । সিএনজি নিয়ে চলে গেলাম জাদুঘরে....জাদুঘরে রাঙ্গামাটির উপজাতিদের জীবন যাত্রার নমুনা দেখতে পাবেন । মোটামুটি ভালোই জাদুঘরটা ঘুরে আসতে পারেন
এবার বনবিহারে যাবার পালা উপজাতীয় জাদুঘর থেকে কাছেই রাজ বনবিহার। এ অঞ্চলের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর তীর্থ স্থান এটি। এখানে আছে একটি প্রার্থনালয়। প্রতি শুক্রবার ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে এখানে চলে প্রার্থনা। এখানে সপ্ত স্বর্গ নামে একটি সাততলা বিল্ডিং আছে যেটাকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সাতটা স্বর্গ হিসেবে গণণা করে । আমার এক বন্ধু সাত স্বর্গে জুতা নিয়ে উঠার কারণে ঝামেলাতে পড়েছিলাম যাউগ্গা সেই কাহিনী আরেকদিন কমুনে যেখানেই যান সেখানকার ধর্মীয় কালচার শ্রদ্ধা করার পরামর্শ রইলো ।
বনবিহারের পাশেই আছে চাকমা রাজার বাড়ী ,নৌকা দিয়ে পার হয়ে আকা বাকা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলেই দেখতে পাবেন নয়নাভিরাম চাকমা রাজার বাড়ি,এমনটাই ব্লগে পড়েছিলাম কিন্তু আফসুস বর্তমানে বাড়িটি অগ্নিকান্ডের কারণে কিছুই অবশিষ্ট নেই ।
এদিক সেদিক টুটু করতে করতে দুপুর হয়ে যাওয়াতে হোটেলে ফিরে এসে খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম তারপর বৃষ্টির কারণে হোটেলে আটকা বিকালের দিকে বৃষ্টি কমে যাওয়াতে পযর্টন কমপ্লেক্স এর ভিতরে বিখ্যাত ঝুলন্ত সেতু দেখতে গেলাম ।
পানি কম হওয়াতে সৌন্দর্য্য একটু কম ফুটে উঠলো । তারপর এক ঘন্টা ৩০০ টাকায় একটা নৌকা ভাড়া নিয়ে ঝুলন্ত সেতু সংলগ্ন কাপ্তাই লেক টু মারতে গেলাম । সামনের দিকে ছোট ছোট দ্বীপের মতো দেখতে পাবেন নৌকা দিয়ে গিয়া ঘুরে আসতে পারেন মজা পাবেন আশা করি ।
ভাড়া করা বোটের মাঝে
বোট থেকে নেমে এভাবে ঘুরতে পারবেন লেকের মাঝে জেগে থাকা ছোট দ্বীপগুলোতে
সন্ধ্যাটা ওইদিকে কাটিয়ে ফিরে আসলাম হোটেলে রাতে উপজাতীয়দের মার্কেটে গেলাম এদিক সেদিক শহরের ঘুরলাম তারপর হোটেলে ফিরে খেয়ে দেয়ে শিলার যৌবনের গান দেখে দেখে ধুম ধাড়াক্কা নাচলাম গাইলাম ভিডিও করলাম ক্লান্ত হয়ে দিলাম ঘুম
সকাল বেলা উঠেই নাস্তা সেরে ম্যানাজারকে বললাম একটা বোট ঠিক করে দেনতো । ম্যানাজার কুমিল্লার হওয়াতে ভালো খাতির হয় গিয়েছিলো এজন্য আমাদেরকে বললো বোট নিয়া কোন টেনশনের দরকার নাই সকালে বোট পেয়ে যাবেন তাই আমরা আর আগ বাড়িয়ে কিছু করি নাই । ম্যানাজার একজন বোটওয়ালাকে দেখিয়ে দিলো,বললো বোটটা দেখে আসেন পছন্দ হলে দাম দর করবো । গিয়ে দেখি বোটওয়ালাও কুমিল্লার ।
নরামালি রাঙ্গামাটিতে যে বোটগুলো টুরিষ্টদের নিয়ে ঘুরতে যায় সেগুলোতে নিচে বসার জায়গা আছে চেয়ার আছে কিন্তু ছাদে যাবার ব্যবস্হা থাকেনা কিন্তি এই বোটটা একটু ব্যাতিক্রম কারণ এই বোটটা আসলে এদিক সেদিক মালপত্র নিয়ে যায় সুযোগ পেলে টুরিষ্টদের নিয়ে ঘুরতে যায় কিন্তু আমার এই বোটটা দেখে পছন্দ হয়েছে কারণ হলো এই বোটের ছাদেও বসা যাবে নিচেও বসা যাবে আবার নিচে শুয়ে ও থাকা যাবা । পরামর্শ হিসেবে এই ধরনের বোট ভাড়া করার পরামর্শ রইলো তাহলে মজা পাবেন বেশি ।
নৌকার ভিতরে
ছাদে আমরা
শুভলং ঝরনাতে যাবার আগেই চাংপাং রেষ্টুরেন্টে থামলাম, আগে আগে নাকি খাবার অর্ডার দিতে হয় যখনই খেতে আসেন না কেন কোন সমস্যা নাই তারা খাবার রেডি করে রেখে দিবে আপনার জন্য ,খাবারের দাম আমার কাছে অতিরিক্ত মাত্রায় বেশি মনে হলো।তবুও কবে আর আসবো এজন্য অর্ডার দিলাম । পাহাড়ি দুই চারটা আইটেম আছে অর্ডার দিতে পারেন ।
চাং পাং রেষ্টুরেন্ট
মনমুগ্নকর কাপ্তাই লেক দেখতে দেখতে শুভলং ঝরনার দিকে রওয়ানা দিলাম ।
শুভলং ঝরনা দেখে কিছুটা হতাশ হলাম কারন আমার ধারণা মতে পানি বেশি হবার কথা ছিলো এখন দেখি পানি কম
যাইহোক ঝরনাতে নেমেই পাশ দিয়ে বেয়ে বেয়ে একেবারে ঝরনার পাহাড়ের মধ্যখানে উঠে গেলাম উপরে উঠে চরম মজা পাইলাম । পাশ দিয়ে উপরে উঠার বেলায় সাবধানতা অবলম্বন জরুরি কারণ সামান্য একটু পা ফসকালে একদম নিচে গিয়ে পড়বেন । ঝরনাতে প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে গোসল করলাম ভিজলাম নাচলাম গাইলাম ছবি তুললাম
পা ফসকাইলে খবর আছে
শুভলং ঝরনার পাশেই আছে ১৬৮০ ফুট উচু টিএন্ডটি পাহাড় শইলে দম থাকলে উঠতে পারেন তবে আমার পরামর্শ কষ্ট একটু হলেও বেয়ে উঠে যান পাহাড়ে, জীবনে আর কি আছে যদি দুই চারটা পাহাড়ই না বাইতে পারলেন হেহেহেহ ।
টিন্ডটি পাহাড় বেয়ে উঠার সময়
টিন্ডটি পাহাড়ের উপরেই আছে পুলিশ ক্যাম্প ।আল্লাহ জানে এই পুলিশ বাহিনী কি পাপ করছিলো যে ক্যাম্প একেবারে ১৮৬০ ফুট উপরে ।
কষ্ট করে ১৮৬০ ফুট টিএন্ডটি পাহাড়ে উঠে যে আতিথেয়তা পেয়েছি তা কোনদিন ভুলবোনা । পুলিশ ক্যাম্পের তিনজন পুলিশ ছিলো কুমিল্লার এরাতো নিজ জেলার লোক পেয়ে খুব খাতির করলো । পুলিশ ক্যাম্পের আম গাছ থেকে আম পাড়লাম জাম পাড়লাম আবার গাছ পাকা কাঠালও পাড়লাম তারপর আমরা পুলিশ ভাইয়েরা মিলে মিশে সাবাড় করলাম । অনেকক্ষণ পাহাড়ের উপরে পুলিশ ভাইদের সাথে সময় কাটিয়ে আবার বোটে ফিরে আসলাম ।
পাহাড়ের উ্পর থেকে বরকল উপজেলা
পেট সিগন্যাল দেয়া শুরু করে দিয়েছে পেটে খাবার সাপ্লাই দেবার জন্য তাই চাংপাং রেষ্টুরেন্টের দিকে রওয়ানা দিলাম । সবাই পেট পুরে খেয়ে চাংপাং রেষ্টুরেন্টে বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যা মিলাবার আগেই বোটে উঠলাম ।
পাহাড়ি আইটেম ব্যাম্বো চিকেন
মাছের ভর্তা
এবার রাঙ্গামাটি শহরের দিকে ফিরবার পালা । সূর্য আস্তে আস্তে বিদায় নিচ্ছে আর আমরাও ফিরে আসছে নিজেদের গন্তব্যের দিকে ।
কাপ্তাই লেকের সূযার্স্ত
রাত ৯ টার বাসের টিকেট আগেই কেটে রেখেছিলাম তাই ধীরে সুস্হে রাঙ্গামাটি শহরে ফিরে আসলাম তারপর নাস্তা করলাম এবং হোটেল ম্যানাজারের কাছে জিম্মা রাখা ব্যাগগুলো নিয়ে বাসে উঠে পড়লাম ।......কুমিল্লা ফিরে আসলাম
সংক্ষেপে পরামর্শ ::::
##যদি আমাদের মতো দুইদিনের প্ল্যান করে যান তাহলে প্রথম দিন শহরের আশা পাশে মানে বনবিহার রাজবিহার ঝুলন্ত সেতু এগুলো ঘুরে দেখুন সাথে কাপ্তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রেও যেতে পারেন আর দ্বিতীয় দিন পুরাটাই শুভলং ঝরনা আর কাপ্তাই লেকের জন্য রাখুন ।কাপ্তাই লেকে বোটে বসে সুর্যাস্ত দেখুন । সেই রকম মজা । তবে ইচ্ছা করলে একদিনেও রাঙ্গামাটি ঘুরে আসতে পারেন ।
##রাঙ্গামাটি হলো দেশের একমাত্র রিকশামুক্ত শহর এখানে সিএনজি চলে শুধু,ভাড়া প্রতিজন ১০-২০ টা সবোর্চ্চ
##আমরা প্রথম দিন রাতে হোটেলে থেকে শুভলং যাবার দিন সকালেই হোটেল থেকে লগআউট করে বের হয় এসেছি আমাদের সাথে ম্যানাজারের খাতির ছিলো বলে তার জিম্মায় সবগুলো ব্যাগ রেখে একটা ব্যাগে সব মুল্যবান জিনিসপত্রর নিয়ে সেই ব্যাগটা আমাদের সাথে নিয়ে বাকী ব্যাগগুলো রেখে এসেছি আপনারা ব্যাগগুলো নিয়ে বোটে চলে আসতে পারেন একটা ব্যাগে মুল্যবান জিনিসগুলো রাখলেই পারেন ।
##প্রথম দিন রাতে বহু খোজাখুজি করেও উপজাতীয়দের রেষ্টুরেন্ট পাইনি পরের দিন বাস ছাড়ার এক ঘন্টা আগে ৪/৫ টা রেস্টুরেন্ট পেয়েছি তবে তারা বললো যে আগে অর্ডার দিতে হয় । আফসুস...
তবে রিপেনডিল ভাইয়ের ব্লগ হতে ঠিকানা দিয়ে দিলাম
সিএনজি তে করে সন্ধ্যায় চলে আসুন বনরুপা বাজারে। কাচা বাজারের রাস্তা ধরে নেমে যান, ১৫-২০ মিনিট হাটার পর রাস্তে ২ ভাগ হবে, বামে গেলে দেখবেন রাস্তা শেষ, ঢাল বেয়ে নেমে যান নিচের কাপ্তাই লেকের পাড়ে। শুকনা থাকলে হেটেই পার হতে পারবেন আর পানি থাকলে দেখবেন একটা নৌকা বাধা আছে, মাঝি বা বইঠা নেই কোন, নৌকায় বসে দড়ি টেনে ওপার যেতে হবে। ওপারের টিলায় উঠে যান। একটি রেষ্টুরেন্ট দেখতে পাবেন, মুলত উপজাতীয়দের জন্য, যা ইচ্ছা হয় অর্ডার দিয়ে ফেলুন। শামুক, ব্যাং খাবেন কিনা আপনার ইচ্ছা তবে গামলা ভর্তি চাপিলা মাছ ভাজি আর কাচা বাশের বাচ্চুরি না খেলে মিস করবেন। দাম খুব বেশি নয়। এছাড়া বনরুপা বাজারেই আরও কিছু উপজাতীয় রেষ্টুরেন্ট পাবেন কি খাবেন তা আপনার উপরে ছেড়ে দিলাম ।
##আমাদের খরচ হয়েছিলো পার হেড ২৭০০ টাকা করে ।
##হোটেল খরচ হয়েছিলো এক রাত ৫জন ছিলাম ১০০০ টাকা
##বোটওয়ালাকে দিয়েছিলাম ১০০০ টাকা ।
##আমরা একটা বড় ভুল করছি কাপ্তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে যাবার কখা ভুলে গিয়েছিলাম আপনারা গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন ।স্হানীয়দের জিজ্ঞাস করলেই রাস্তা বলে দিবে ।
##শহর থেকে ১৫ কিমি আগে কালা পাহাড় নামে একটা বড় পাহাড় আছে ইচ্ছা হলে ট্রেক করে আসতে পারেন ।
##নিরাপত্তা নিয়ে কোন সমস্যা নেই তবুও শহরের থানার টেলিফোন নাম্বারটা দিয়ে দিলাম ০৩৫১-৬২০৬০, ৬২০২২
আমার নিজস্ব ব্লগে পূর্বে প্রকাশিত
আশা করি ভালো লেগেছে ভ্রমণ কাহিনী তবুও আরও কিছু জানতে চাইলে কমেন্টস করুন আমি যতসম্ভব দ্রুত জবাব দেবার চেষ্টা করবো ।