আমার অনেক খারাপ লাগছিল পুরে ব্যাপারটি জেনে। আমি টিভি দেখি না তাই অনেক খবর জানি না।। বিষয়টি আমাকে বেশ নাড়া দিয়েছে।বিষয়টি নিয়ে আমি বিষদ জানার চেষ্টা করছি। রিফাত আপনার মতন কম বয়সী একজন মানুষ যদি বিষয়টি ঠিক ভাবে বিশ্লেষণ করতে পারে, আমাদের দেশের বাকী মানুষের কি হলো! আমি বিভ্রান্ত!
আমরা কি পারি না ঐশীর এই পরিনতির জন্য দায়ী ব্যাক্তিদের মুখোশ উন্মেচন করতে?
আমরা সবাই আমাদের সন্তানদের প্রানের চেয়েও বেশী ভালবাসি। আমরা মাঝে মাঝেই সন্তানদের চাওয়া পাওয়ার মধ্যে ব্যালান্স করে জীবন যাপন করতে ব্যার্থ হই। যখন বুঝতে পারি ভুল হচ্ছে আবার নিজেদের শুধরে নেই। ডিজিটাল এই যুগে প্রতি নিয়ত যুদ্ধ করতে হচ্ছে সংসার, অফিস সামলিয়ে বাচ্চা মানুষ করার ব্যাপরগুলো। সংসারে একজনকে লাগবেই বাচ্চাদের মানুষ করার সময়। অশিক্ষিত কাজের মানুষের কাছে বাসায় বসে একটা বাচ্চা কি শিখবে? বাচ্চাদের তাই দাদা-দাদী, নানা-নানী, খালা -ফুপু ( বিয়ের আগ পর্যন্ত) এবং অন্যান্য নিকট মুরুব্বী আত্নিয় স্বজন থাকা দরকার।
নোট: এই মেয়েটির নিরাপদ জীবন আমাদের ভবিষৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ করতে পারে বলে আমার মনে হচ্ছে। তাকে যদি আমরা ভালো কলেজ জীবন এবং ভালো শিক্ষা দিতে পারি, (ঐশী যদি অনুতপ্ত হয়ে নিজের জীবনকে গড়ে তুলে ) একদিন তাকে একজন ভালো কাউন্সেলর বানানো যাবে। যে নিজের জীবন থেকে অভিজ্ঞতার বর্ননা দিয়ে ক্লাসে ক্লাসে ছাত্র ছাত্রীদের সাবধান করে দিতে সমর্থ হবে মাদকের আগ্রাসনে তার জীবন বিপন্ন হওয়ার ঘটনা।আমরা এবং আমাদের সমাজ কি পারে না ঐশীকে ক্ষমা করে দিতে? আমাদের দেশে জেলে বসে কি ভালো পড়াশোনা করা যায় না?
আমাদের দেশে যুগ যুগ থেকে ছেলেরা স্ত্রীকে এবং মা বাবাকে মারছে এবং হত্যা করেছে মাধকাসক্ত হয়ে। আজ পর্যন্ত কাউকে দেখলাম না ফাঁসির আসামী হতে। কেউ কেউ হলেও কোনো পত্রিকা ফলাও করে ছাপায়নি। আমাদের দেশে সত্যিকারের ট্রায়েলের চেয়ে মিডিয়া ট্রায়েল বেশী হয়। সেটাই দুঃখজনক।
নাহিদ হাসান রিফাত (ইর্টানি ডাক্তার) এর লেখাঃ
অবসেশন ভয়ংকর ধরনের একটি মানুষিক রোগ, আমার কাছে মনে হয়।
অন্যরা অবসেশন এর মানে কি বুঝেন আমি জানি না, কিন্তু,আমি যা বুঝি তা কিছুটা এমন...
ধরুন,আপনি কোন একটি কাজ (খারাপ/ভালো) করতে চাচ্ছেন না কিন্তু মনকে কোন ভাবেই বুঝাতে পারবেন না। ঘুরে ঘুরে সে খারাপ জিনিসটার কাছেই ফিরে আসবে ।
আপনি জানেন কাজটা কি পরিমান খারাপ, ওয়েল ওরিয়েন্টেড, ওটার কন্সিকোয়েন্সও খুব খারাপ, তারপড়েও জেনে শুনেই মনকে বুঝাতে না পেরে কাজটা করে ফেললেন।
আজ ঐশী নামের মেয়েটার ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে।খুব অবাক হয়ে দেখলাম অনলাইন নিউজ এর নিচে কমেন্টে অনেক অনেক মানুষের অদ্ভুত সব কমেন্ট।
ছোট বেলায় যখন সামাজিক বিজ্ঞান পড়তাম, তখন অপরাধ নামক চাপ্টারে পড়েছিলাম অপরাধি হবার পিছনে অশিক্ষা, মূর্খতা একটি বিশাল কারন ছিল।
পরিবার, একজন মানুষ কেমন হবে, তা ঠিক করে।
কিন্তু ঐশী কেন এমন হলো?
ও তো মুর্খ ছিল না ! ঢাকার নাম করা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছাত্রী।
তার পারিবারিক শিক্ষা কেমন ছিল তা কেউ জানতে চায় নি ? !
আপনি প্রশ্ন করতে পারেন..সবার তো পরিবার থাকে না।
সবাই তো আর মা-বাবা খুন করে না ?
কিন্তু টিন এজ একজন মেয়ের কাছে আপনি কতটা আশা করেন ? এই বয়সের ছেলেমেয়েরা কতটা নিজের ভালো বোঝে ?
টাকার প্রাচূর্যের মাঝে বড় হয়েছে মেয়েটি।
লাইফের অনেকটা সময় পার করে দিয়েছে চলাফেরায় কোন রকম সীমাবদ্ধতা ছাড়াই।
যখন যা চেয়েছে তাই পেয়েছে।
পাগলা ঘোড়া বা কুকুরের গলার দড়ি আস্তে আস্তে টানতে হয়।হেচকা টান দিতে হয় না।
ঐশীর বাবা মা এই ভুলটাই করেছেন।ওনারা মেয়েকে স্বাধীনতা দিয়ে পাগল করে দিয়েছেন যখন বুঝতে পেরেছেন তখনই গলার দড়িটা হেচকা টান দিয়েই সব শেষ করে দিলেন।
একটা সত্যি কথা কি জানেন???
ঐশীর মৃত বাবা-মার জন্যে আপনার আমার চাইতেও ঐ অপরাধী মেয়েটারই ভালোবাসাই বেশী। খোঁজ নিলে দেখবেন এমন অনেক অনেক দিন গেছে জেল খানার ভিতরে তার বাবা মার জন্য ও কেদে সারাটা রাত কাটিয়েছে।
পরিতাপের আগুনে দগ্ধ ঐশী নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে নি।কারন সে একজন এডিক্ট।যখন তা কন্ট্রোল করার দরকার ছিল সেটা করা হয়ে উঠা সম্ভব হয়নি।
বাবা-মাকে খুন করার পর সব চাইতে খারাপ বুঝি তারই লেগেছিল।
কারন সে খুনটা ঠান্ডা মাথায় করেনি, ঐ যে বল্লাম!
সে সব কিছু নিয়ে এতটাই অবসেশন এ ছিল যে তার কাছে তখন খুন করাটা কিছুই মনে হয় নি।
তাই একজন মানুষকে খারাপ বলার আগে তার পরিবেশটা দেখুন, ব্যাকগ্রাউন্ডটা দেখুন।
মানুষ এমনি এমনি খারাপ হয় না।
ঐশী জন্মের পর যতটা নি:স্পাপ হয়ে জন্মেছিল...আমি, আপনি সবাই ঠিক ততটাই নি:স্পাপ হয়ে জন্মেছিলাম।