গত মার্চ মাসের শেষের দিকে কাজের প্রয়োজনেই যাওয়া হয়েছিলো বাংলাদেশের পূর্বের সুন্দর সাজানো গোছানো ও ঐতিহাসিক শহর কুমিল্লাতে। কাজের ফাকে ফাঁকেই ছবিগুলো তোলা।
কুমিল্লা দাউদকান্দিতে মহাসড়কের ঠিক পাশে স্বাধীনতা স্তম্ভ।
শহরের রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে দেখতে পেলাম একটি ব্যাপ্টিস্ট চার্চ ।
কুমিল্লা যাবার পথে বাসের জানালার পাশে বসে সূর্যাস্ত। কানে তখন বাজছিল আমার অনেক প্রিয় একটি গান - "জানি দেখা হবে।"
কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান "ভিক্টোরিয়া কলেজ"। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ১৮৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। রায় বাহাদুর আনন্দ চন্দ্র রায় রানী ভিক্টোরিয়ার নামে এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
কুমিল্লার আরেকটি ঐতিহাসিক স্থান কান্দিরপাড় এর "মহারাজ বীরচন্দ্র মানিক্য বাহাদুর পাঠাগার" । ১৮৮৫ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক এফ এইচ স্ক্রাইন ত্রিপুরা জেলার চাকলা রোশনাবাদের জমিদার নরেশ মহারাজ ‘বীরচন্দ্র মানিক্য বাহাদুর ’- এর কাছে পাঠাগার তৈরীর নিমিত্ত জমি প্রদানের অনুরোধ জানান । মহারাজ কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ে ১০ বিঘা জমির উপর একটি ভবন নিজস্ব অর্থায়নে করে দেন। এটিই এখন কুমিল্লার গনপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন, যা কুমিল্লা টাউন হল নামে পরিচিত। এ টাউন হলে পদধূলি দিয়েছেন মহাত্মা গান্ধী, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ অনেক বরেণ্য ব্যাক্তি।
কুমিল্লার ঐতিহাসিক "ধর্মসাগর" এর কিছু আলোকচিত্র। ত্রিপুরা রাজ্যের অধিপতি মহারাজ ধর্মানিক্য ১৪৫৮ সালে জনগনের পানি ও জলের সুবিধার জন্য এ দীঘি খনন করেন।
"শালবন বৌদ্ধ বিহার" এর আলোকচিত্র।
কুমিল্লা ময়নামতির ঐতিহাসিক "শালবন বৌদ্ধ বিহার" । ধারণা করা হয় যে খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব এ বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণ করেন। শালবন বৌদ্ধ বিহার বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। কুমিল্লা জেলার লালমাই-ময়নামতি প্রত্নস্থলের অসংখ্য প্রাচীন স্থাপনাগুলোর একটি এই বৌদ্ধ বিহার।
"ওয়ার সিমেট্রি" এর ভেতরের কিছু আলোকচিত্র
ওয়ার সিমেট্রি বাংলাদেশের কুমিল্লাতে অবস্থিত একটি কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বার্মায় সংঘটিত যুদ্ধে যে ৪৫০০০ কমনওয়েলথ সৈনিক নিহত হন, তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে মায়ানমার (তৎকালীন বার্মা), আসাম, এবং বাংলাদেশে ৯টি রণ সমাধিক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশে দুটি কমনওয়েলথ রণ সমাধিক্ষেত্র আছে, যার একটি কুমিল্লায় এবং অপরটি চট্টগ্রামে অবস্থিত। এই সমাধিক্ষেত্রটি "Commonwealth War Graves Commission (CWGC)" কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ও তারাই এ সমাধিক্ষেত্র পরিচালনা করেন। প্রতি বছর নভেম্বর মাসে সকল ধর্মের ধর্মগুরুদের সমন্বয়ে এখানে একটি বার্ষিক প্রার্থনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সমাধিক্ষেত্রটিতে ৭৩৬টি কবর আছে। এর মধ্যে অধিকাংশ কবর হল সে সময়কার হাসপাতালের মৃত সৈনিকগণের। তাছাড়াও যুদ্ধের পর বিভিন্ন স্থান থেকে কিছু লাশ স্থানান্তর করেও এখানে সমাহিত করা হয়। বাহিনী অনুযায়ী এখানে রয়েছেন ৩ জন নাবিক, ৫৬৭ জন সৈনিক এবং ১৬৬ জন বৈমানিক। সর্বমোট ৭২৩ জন নিহতের পরিচয় জানা সম্ভব হয়েছিল।
এই স্থানগুলো ছাড়াও কুমিল্লাতে আরও ঐতিহাসিক স্থান আছে ঘুরে আসার মতো। তবে আমি সময় স্বল্পতার জন্য অন্য কোথাও যেতে পারিনি। তবে যে কয়দিন এই সুন্দর জেলা শহরটিতে ছিলাম- এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছি।
* প্রতিটি ছবির নিচের তথ্যগুলো ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৬ বিকাল ৩:২৬