১৫ জন ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর “নাৎসি” এবং তাদের পরিনামঃ
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্র হবার সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয় এর ৫ বছরই বিভিন্ন কোর্স এ আমাদের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে পড়তে হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এই বিশালতার মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় টপিক ছিল ঃ নাৎসি জার্মানি, হিটলারের যুদ্ধনীতি এবং পররাষ্ট্র নীতি।
কোন সন্দেহ নেই যে হিটলারের স্বপ্নের থার্ড রাইখ যা ১৯৩৩-১৯৪৫ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল তা চরম ঘৃণিত হয়েছিল নাৎসি শাসনামলের ভয়াবহতার জন্য। তাদের উগ্র জাতীয়তাবাদ, বর্ণবাদ এবং ব্যাপকহারে ইহুদি নিধন এর জন্য। এই নাৎসি শাসনামলেরই ১৫ জন “ভয়াবহ নিষ্ঠুর” বলে বিবেচিত নাৎসি সদস্য এবং তাদের করুন পরিনতিই এই লেখার মূল উপজীব্য।
১৫. হারম্যান গোয়েরিংঃ
নাৎসি জার্মানির অন্যতম প্রভাবশালী ব্যাক্তি ছিলেন। গোয়েরিং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের একজন বীর যোদ্ধা ছিলেন এবং পরবর্তীতে হিটলারের নাৎসি জার্মানির বিমানবাহিনী [লুফটওয়াফে] এর প্রধান ব্যাক্তি ছিলেন। ভয়ঙ্কর “গেসটাপো” এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ব্রিটেনের সাধারণ জনগনের উপর তারই নির্দেশে জার্মান বিমানবাহিনী আক্রমন করেছিল। তিনি গণহত্যার পরিকল্পনার সাথে যুক্ত ছিলেন এবং নুরেমবারগ ট্রায়ালে তাকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয়। কিন্তু দণ্ড কার্যকরের পূর্ব রাতেই তিনি তার সেল এ সায়ানাইড ক্যাপসুল এর মাধ্যমে আত্মহত্যা করেন।
গোয়েরিং আত্মহত্যার পরের ছবি
১৪. ইলস কচঃ
এই স্যাডিস্ট নারী নাৎসি পরিচিত তার ভয়াবহ নিষ্ঠুরতার জন্য। নিষ্ঠুরতার জন্য তার নাম হয়ে গিয়েছিল “বুখেনউয়ালড এর কসাই”। তার স্বামীও ছিল আরেক কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প এর প্রধান এস.এস. অফিসার কার্ল অটো কচ। কথিত আছে ইলস কচ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প এ বন্দীদের মেরে ফেলে তাদের চামড়া খুলে তার ল্যাম্প শেড বানাতেন। বিশ্বযুদ্ধের পরে তাকে বন্দী করা হয়। ১৯৬৭ সালে অনুশোচনাতে দগ্ধ হয়ে আত্মহত্যা করেন।
ডক্টর পল জোসেফ গোয়েবলসঃ
নাৎসি জার্মানির প্রোপাগান্ডা মিনিস্টার গোয়েবলস ছিলেন প্রচণ্ড ইহুদি বিদ্বেষী। ইহুদিদের বিপক্ষে তার ঘৃণায় পূর্ণ বক্তৃতা জার্মান জনমতকে ইহুদিদের বিপক্ষে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। “টোটাল ওয়ার” থিয়োরির প্রবক্তা।
জার্মানির পরাজয় নিশ্চিত জেনে হিটলারের চরম অনুগত গোয়েবলস তার স্ত্রী মাগডা গোয়েবলস কে সাথে নিয়ে আত্মহত্যা করেন। অবশ্য এর আগে তার ছয় শিশু পুত্র কন্যাকে সায়ানাইড দিয়ে আগেই খুন করেন।
গোয়েবলস দম্পতি আত্মহত্যার পরে পাশে তাদের ৬ ছেলেমেয়ের নিথর দেহ
১২. ফ্রাঞ্জ স্তাঙ্গলঃ
অস্ট্রিয়ান বংশোদ্ভূত এই নাৎসি অফিসার ছিলেন “সবিবর এবং ত্রেবলিঙ্কা” ক্যাম্প এর প্রধান। পরবর্তীতে হাইনরিখ হিমলার এর সরাসরি নির্দেশে তাকে “Euthansia Institute at Schloss Hartheim” এর প্রধান করা হয় যেখানে মানসিক এবং শারীরিক ভাবে অক্ষম বন্দীদের নির্মূল করবার জন্য পাঠানো হতো।
যুদ্ধে পরাজয় এর পরে তিনি ব্রাজিল এ পালিয়ে যান এবং সেখান থেকেই ১৯৬৭ সালে তাকে বন্দী করা হয়। তার বিরুদ্ধে ৯,০০,০০০ খুন এর অভিযোগ আনা হয়। পরবর্তীতে তিনি সব অভিযোগ স্বীকার করে নিলেও সে যুক্তি দিয়ে বলে যে –“My conscience is clear…I was simply doing my duty.”
যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করবার সময় ১৯৭১ সালে হঠাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
১১. পল ব্লবেলঃ
এই নাৎসি কম্যান্ডার এর বিরুদ্ধে ৫৯,০১৮ টি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়। ইউ.এস. মিলিটারি নুরেম্বারগ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়। ১৯৫১ সালের ৮ ই জুন ল্যানডসবারগ জেল এ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
১০. জোসেফ ক্রেমারঃ
বারগেন-বেলসেন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের প্রধান ক্রেমার তার নিষ্ঠুরতার জন্য পরিচিত ছিলেন “বেলসেন এর পশু” নামে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মামলা চলবার সময় বন্দীদের প্রতি তার নিষ্ঠুর আচরন আর অনুভুতিশুন্যতার কথা জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলেছিল ঃ “ I was just following orders.”
৯. আরন্সট কালটেনব্রুনারঃ
অত্যন্ত উচ্চপদস্থ এস.এস অফিসার কালটেনব্রুনার ছিলেন নাৎসি জার্মানির “CHIEF OF SECURITY”। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ছিলেন ইন্টারপোল এর প্রধান। গণহত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী। ১৯৪৬ এর ১৬ ই অক্টোবর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
৮. ফ্রেডরিখ জেকলিনঃ
অবরুদ্ধ সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রায় ১,০০,০০০ ইহুদী, রোমা এবং জিপসি হত্যার জন্য এই নাৎসি কে অভিযুক্ত করা হয়েছিলো। বহুসংখ্যক বন্দীকে সহজে হত্যা করবার জন্য তার নিজস্ব পদ্ধতি ছিল যা পরিচিত ছিল “জেকলিন সিস্টেম” নামে। রিগা তে ১৯৪৬ এর ৩ ফেব্রুয়ারি তার ফাঁসি কার্যকর করে সোভিয়েত বাহিনী।
৭. অস্কার ডার্লওয়াগনারঃ
ডার্লওয়াগনার ব্রিগেড এর প্রধান ছিলেন। এই ব্রিগেড এর বিপক্ষে যুদ্ধের সময় নিরীহ জনগণকে হত্যা, ধর্ষণ সহ ভয়াবহ অপরাধের অভিযোগ ছিল।
ফরাসী সেনাবাহিনী তাকে আহত অবস্থায় একটি হাসপাতাল থেকে বন্দী করে এবং পোলিশদের হাতে তুলে দেয়। এই নাৎসি কে ১৯৪৫ এর ৫ ই জুন পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়।
৬. ওডীলো গ্লোবোকনিকঃ
অস্ট্রিয়ান নাৎসি এবং পরবর্তীতে উচ্চপদস্থ এস.এস অফিসার। তাকে সবচেয়ে বেশি অভিযুক্ত করা হয় লক্ষ লক্ষ ইহুদী নিধন এর জন্য। ওয়ারসও ঘেটোতে ৫,০০,০০০ ইহুদী এবং বীয়ালস্টক
ঘেটো গণহত্যার দায়ে তাকে অভিযুক্ত করা হয়। ১৯৪৫ সালের ২১ শে মে আত্মহত্যা করেন।
৫. এডলফ আইখম্যানঃ
এক কথায় তাকে বলা হতো – “THE ARCHITECT OF THE HOLOCAUST” । ইহুদী জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করে ঘেটো এবং কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প এ পাঠানোর জন্য তিনি হিব্রু ভাষা শিখেছিলেন। পরবর্তীতে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা “মোসাদ” আর্জেন্টিনা থেকে তাকে বন্দী করে। ১৯৬২ সালে ইসরায়েলে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
বন্দী অবস্থায় আইখম্যান
৪. ডাঃ জোসেফ মেনগেলঃ
বন্দীদের নিয়ে নিষ্ঠুর পরীক্ষা করবার জন্য তার নাম হয়ে গিয়েছিলো “ANGEL OF DEATH” । অসউইচ ক্যাম্প তার এই নিষ্ঠুর পরীক্ষা নিরীক্ষার আরও সুযোগ করে দেয়। তার ডাক্তারি পরীক্ষাগুলো অনেকটা এরকম ছিল- একজন যমজ শিশুর চোখের মণি তুলে আরেক যমজের মাথার পেছনে লাগানো। চোখের রং পরিবর্তনের জন্য বাচ্চাদের চোখে কেমিক্যাল দেয়া। যুদ্ধের পরে পরিচয় গোপন করে দক্ষিণ আমেরিকাতে পালিয়ে যান এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।
৩. রাইনহার্ড হাইডরিকঃ
হাইডরিক ১৯৪২ এর ওয়ানশি কনফারেন্স এ সভাপতিত্ব করেন যেখানে জার্মান অধিকৃত ভূমিতে ইহুদীদের বিতারন এবং হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। চেক আততায়ীদের আক্রমণে আহত অবস্থায় ১৯৪২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে বলা হয় - “ THE MASTERMIND OF THE HOLOCAUST.”
২. হাইনরিখ হিমলারঃ
ইহুদী নিধন মূলত হিমলার এর নির্দেশেই হতো। তাকে বলা হয়- “THE ARCHITECT OF THE HOLOCAUST” । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয় এর পরে আত্মহত্যা করেন।
১.এডলফ হিটলারঃ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সামান্য কর্পোরাল থেকে সারা জার্মানির অধিকর্তাতে পরিণত হওয়া হিটলার ১৯৩৯ সালে অস্ট্রিয়া আক্রমণের মাধ্যমে শুরু করেন ভয়াবহ যুদ্ধের সূচনা। ১৯৪৫ সালে পরাজয় এর পরে নিজ বাঙ্কারে প্রেমিকা ইভা ব্রাঊন এর সাথে আত্মহত্যা করেন।
হিটলার সম্পর্কে জানতে যে চলচ্চিত্রগুলো সহায়ক ঃ
1. Hitler: Rise of the Evil [Part 1 and 2]
2. Downfall
যে বইগুলো পড়তে পারেন ঃ
১. হিটলার- সৈয়দ মুজতবা আলী
২. মহাযুদ্ধের নায়ক হিটলার- আনিস সিদ্দিকি
হিটলারের নিজের লেখা যা “নাৎসি বাহিনীর বাইবেল” বলে বিবেচিত
১. মাইন কাম্ফ- এডলফ হিটলার
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন