আমাদের মহান অর্থমন্ত্রী জনাব মাল সাহেব বলেছেন "তারা ৫০ হাজার টাকা ৩০ হাজার টাকা বেতন দিতে পারে। মাত্র ৭.৫ পার্সেন্ট ভ্যাট কেনো দেবে না? তাদের আন্দোলনে আমার কোনোভাবেই সমর্থন নেই।"
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভ্যাট দিতে কোন সমস্যা ছিল না যদি না ব্যাপারটা এমন হত যে, সরকার দেশে হাজার হাজার সরকারী ভার্সিটি বানায়ে রাখছে, এইচএসসির পর সবাই কোন না কোন সরকারী ভার্সিটিতে চান্স পাচ্ছে আর বাকিরা শখের বশে বেসরকারিতে ভর্তি হচ্ছে; কিন্তু তা তো হচ্ছে না। প্রতিবার দেশে যে পরিমান শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করে বের হয় তার ১০ ভাগেরও জায়গা ঠিকঠাক মত সরকারী ভার্সিটিতে হয় না। তো বাকি ৯০ ভাগ যাবে কোথায়? পড়াশোনা ছেড়ে ঘরে বসে থাকবে? সরকারী ভার্সিটিতে আসন সংখ্যা না বাড়িয়ে বলতে গেলে সরকারই তো বাধ্য করছে ওই ৯০ ভাগ শিক্ষার্থীকে বেসরকারি ভার্সিটিতে ভর্তি হতে।
এখন কি বলবেন ওই ৯০ ভাগ 'বাধ্য হয়ে প্রাইভেটে পড়ুয়া' সব শিক্ষার্থীই বড়লোকের ছেলে? যারা স্কুল, কলেজের বেতন যোগাড় করতে হিমশিম খেয়েছে তারা তো বাধ্য হয়ে পড়াশোনাই ছেড়ে দিবে; আর যাদের কিছুটা সামর্থ্য আছে, তারা সাহস করে নিজের ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে প্রাইভেটে ভর্তি করিয়ে দিচ্ছে। ঘরের খরচের কিছুটা অংশ মাসে মাসে জমিয়ে বা কোথাও থেকে ধার করে চার-ছয় মাস পর পর ভার্সিটির খরচ মেটাতে ছেলে মেয়ের-হাতে ৩০ হাজার ৫০ হাজার টাকা তুলে দিচ্ছে। এখন সাথে আরও সাড়ে ৭ পার্সেন্ট ভ্যাট জুড়ে দেয়াটা "মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা"-এর মত দাঁড়ালো আর ইনডিরেক্টলি বলা হল যে "হ্যাডাম না থাকলে প্রাইভেটে পড়ার দরকার নাই"।
জনাব অর্থমন্ত্রী সাহেব, আপনি হাতের ওই ৩০ হাজার ৫০ হাজার টাকাটাই দেখলেন, পেছনের যে কি কষ্টটা পোহানো হয়েছে সে টাকা যোগাড় করতে তা আপনার চুল ছাড়া মাথায় ধরে নাই। ওই ৯০ ভাগ প্রাইভেট পড়ুয়া শিক্ষার্থীর পিতা-মাতার জন্য যদি ৩০-৫০ হাজার টাকা দেয়া 'ছেলের হাতের মোয়া'-র মতই হত, তাহলে তো বাংলাদেশ আর ডেভেলপিং কান্ট্রি থাকত না, ডেভেলপড কান্ট্রিই হয়ে যেত বহু আগে।
জনাব মাল সাহেব, মানুষ হয়ে জন্মাইছেন, মানুষের মত চিন্তা করার 'চেষ্টা' করেন। নিজেরা 'উপরি আয়'-এর উপর চলেন বলে ভাববেন না যে দুনিয়ার সবাই লাখ লাখ টাকা 'উপরি আয়' করে আপনাদের মত কোটিপতি বনে বসে আছে; এক্সট্রা আট-দশ হাজার টাকা তাদের কাছে হাতের ময়লা! সেটা আপনাদের মত গুটিকয়েক মানুষদের জন্য হাতের ময়লা হতে পারে, সবার না। জনগণের ভোটে (!!!) আপনাদেরকে নির্বাচিত করে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর জনগণের টাকায় স্যালারি দিয়ে আপনাদেরকে সরকারী গদিতে বসানো হয়েছে দেশের সবার কথা ভাবার জন্য, গুটি কয়েকের কথা ভাবার জন্য না। দয়া করেন দেশের সবার কথা ভাবুন। উচ্চশিক্ষাকে পণ্যের কাতারে ফেলবেন না।
© লেখাঃ আমিরুল ইসলাম লিসান
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:০৮