সিজিপিএ! ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির পর বুঝতেছি এটা খুবই ইম্পরট্যান্ট একটা 'জিনিস'। স্বাধীনতার মতই সিজিপিএ-ও অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন! রেজাল্ট ভাল হইলে কচ্ছপের গতিতে বাড়ে, খারাপ হইলে থ্রীজি স্পীডে নামে। প্রতি সেমিস্টারেই কাউকে না কাউকে দেখি সেন্টু খায়া বসে আছে, প্রবলেম একটাই "সিজিপিএ উঠে নাই!"
এই সেন্টুর পেছনের কারন হল চাকরির বাজারে সবচেয়ে বেশি ইম্পরট্যান্ট হল সিজিপিএ, একটা স্টুডেন্টের ইন্টেলিজেন্সের মাপকাঠি ধরা হয় ওইটাকেই। এখন প্রশ্ন হল একটা স্টুডেন্টের মাথার ভেতরে 'মাল' কতটুকু আছে সেটা কি সিজিপিএ দিয়ে বুঝা সম্ভব?! আমার পরিচিত এমন অনেকেই আছে যাদের সিজিপিএ ভাল না হলেও অনেক ইন্টেলিজেন্ট। আবার এমন অনেক স্টুডেন্টকেও চিনি যাদের আকাশ ছোঁয়া সিজিপিএ হলেও তাদের মাথায় পুঁথিগত জ্ঞানের বাইরে আর কিছুই নাই। কিন্তু চাকরির জন্য কাকে নেয়া হবে? অবশ্যই যার সিজিপিএ 'আকাশ ছোঁয়া' তাকেই।
তাই প্রতিবার প্রি-অ্যাডভাইজিং (নেক্সট সেমিস্টারে কোন কোর্স নিব, তা ঠিক করা) এর আগের সপ্তাহজুড়ে আমাদের আলোচনার মূল বিষয় হল "কে ভাল পড়ায় সেটা ব্যাপার না, কে বেশি মার্কস সেটাই ব্যাপার। সো যে বেশি মার্কস দেয় তার কোর্সই নিব"। এতে আমাদের একমাত্র লাভ হল সিজিপিএ ভাল থাকে এবং সেটাই ইম্পরট্যান্ট। তাহলে কিছু শেখার কি হবে? সেটার দরকার নাই।
আমাদের সমস্যা হল আমরা জ্ঞান আহরনের জন্যে না পড়ে চাকরির জন্যে পড়াশুনা করি এবং সেটাই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সবারই আল্টিমেট লক্ষ্য হল একটা সিকিউর্ড ফিউচার এবং সেটার জন্য জ্ঞান থাকাটা যতটা দরকার, তার চেয়ে বেশি দরকার একটা ভাল চাকরি আর ভাল চাকরির জন্য ভাল সিজিপিএ। ব্যাস, ফিউচার সিকিউর্ড হয়ে গেল। আর ভাল সিজিপিএ ছাড়া নিজেকে প্রমান করার জন্য একটাই পথ হল ব্যাবসায় নেমে পড়া কিন্তু সেটার সামর্থ্যই বা কয়জনের আছে?!
প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে প্রতি সেমিস্টারে যে ৫০০ থেকে ১০০০ করে গ্র্যাজুয়েট বের হয়, একজন চাকরি দাতার পক্ষে কি এদের সবার ইন্টার্ভিউ নেয়া সম্ভব?! আমার মতে, হ্যাঁ সম্ভব। আমার প্রতিষ্ঠানে যদি আমি একজনকে চাকরি দিতে চাই যে আমার জন্য কাজ করবে এবং তার জন্য আমি বেতন দিব তাহলে আমি কেন এইটুকু কষ্ট কেন করব না?! আর ওই ৫০০ থেকে ১০০০ গ্র্যাজুয়েটের সবাই নিশ্চয়ই আমি যে জবের ভ্যাকেন্সি দিব সে জবের জন্য অ্যাপ্লাই করবে না। আর আমি যদি একবারই দেখে শুনে, ভাল করে বুঝে একজন নিয়োগ করি তাহলে তো আমাকে বারবার ওই কাজের জন্য লোক খুঁজতে ইন্টার্ভিউর বেবস্থা করতে হবে না। সুতরাং কষ্ট যা হবার তা একবারই হবে, বারবার করতে হবে না।
সব শেষে বলতে চাই, আমার মতে (যদিও আমার মত খুব একটা ইম্পরট্যান্ট না) সবচেয়ে ভাল হত যদি চাকরির জন্যে সিজিপিএর আগে একজন মানুষের ইন্টেলিজেন্সকে বেশি প্রাধান্য দিত, তাহলে আমরা প্রত্যেক সেমিস্টারে কোর্স নেয়ার সময় এটা ভেবে ইন্সট্রাক্টর সিলেক্ট করতাম যে "মার্ক কেমন দেয় সেটা ব্যাপার না, ব্যাপার হল কেমন বুঝায়" আর সেটা হলে সত্যিকার অর্থেই আমরা কিছু শিখতে পারতাম। কিন্তু আমাদের এডুকেশন সিস্টেম এখন যে পথে চলতেছে সেটা তো আর একদিনে তৈরি হয় নাই, বছরের পর বছর আমরা এই পথে হাঁটছি বলেই হইছে। তাই চেঞ্জটাও একদিনে করা সম্ভব না, সবাই একসাথে হয়ে চেষ্টা করে যেতে হবে। পরিবর্তন একদিন আসবেই, হয়ত আমরা সেই সুবিধা ভোগ করতে পারব না কিন্তু আমাদের পরের জেনারেশনতো পারবে। তাহলে সেটাই সই...
© লিসান
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:০৫