পুলিশের গাড়িতে ছোড়া ককটেলে আহত পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্ত গত ২৬/১২/২০১৩-তে মারা গেছেন। মনে আছে? মনে থাকার কথা না কারন আমরা এসব কখনও মনে রাখার চেষ্টা করি না। এইসব চুনোপুঁটির কথা মনে রেখে কোন লাভ আছে? তারপরও বলি, ডাক্তার বলেছিল ককটেল বিস্ফোরণে সিদ্ধার্থের চামড়া এমনভাবে ঝলসেছিল যে বাইরে থেকে ফুসফুস দেখা যাচ্ছিল, স্প্লিন্টার বিঁধেছে তার ফুসফুসে!
"হুম, মারা গেছে। তো কি হইছে? পুলিশের চাকরি যখন নিছে, দায়িত্ব পালন করতে গিয়া মারা যাইতেই পারে, ব্যাপার না। এগুলা নিয়া মথা ঘামান মানে হুদাই টাইম লস!" আমাদের সবারই চিন্তা ভাবনা এখন ঠিক এমনই। কেউ কেউ আবার আরো কয়েক কাঠি উপরে, তারা বলে "মরছে ভাল হইছে, সরকারের এইসব দুই পয়শার চামচাগুলা আরও মরা দরকার! খালি সরকারের দালালি ছাড়া এরা আর করছেটা কি?!"
বলতে লজ্জা লাগছে, আসলেই আমরা বড্ড অমানবিক আর নির্লজ্জ হয়ে গেছি। অনুভূতিতে মরিচা ধরে গেছে আমাদের। কিছুকাল আগেও যে আমরা যে কারো মৃত্যুতে হা হুতাশ করতাম সেই আমরাই এখন হাজার হাজার মৃত্যুকে খুব স্বাভাবিক ভাবে গ্রহন করি। আমাদের অসুস্থ রাজনীতি আমাদেরকে এমনটা করে দিয়েছে। এখন আর আমরা ভাবি না যে এই মানুষগুলো আমাদের জন্যই দিন রাত খেটে মরে। আমাদের চলার স্বাধীনতা দিতেই তারা পরাধীন হয়ে বেঁচে আছে। আমাদের জীবনের সিকিউরিটি দিতেই দিনের পর দিন ইনসিকিউর্ড জীবন যাপন করে চলে ওইসব 'দুই পয়শার' পুলিশ কনস্টেবলেরা।
আমরা ভুলে যাব, আমাদের এই গোল্ড ফিসের মেমরি কিছুই মনে রাখবে না। আমরা ভাববো না আমাদের মত ওদেরও একটা পরিবার আছে, থাকাটাই স্বাভাবিক। এদের উপরও যে কেউ না কেউ ভর করে বেঁচে থাকে সেটা আমরা কখনই চিন্তা করি না। আমরা ভাবতে চাইনা যে ওদের ঘরেও কেউ রাত হলে অপেক্ষা করে থাকে মানুষটা কখন ফিরবে বলে, ওদের জন্যও কেউ ঘুম ঘুম চোখে খাবার টেবিলে ভাত তরকারি বেড়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত ক্ষুদার্ত মানুষটা বাসায় ফিরে তৃপ্তি করে খাবে বলে!
সিদ্ধার্থের সৎকার হয়ে গেছে বহু আগেই, আমাদের বাতাসে হয়ত মিশে গেছে তার শরীরের প্রতিটি কণা। আমরা হেঁটে বেড়াব এই বাতাসে, নিঃশ্বাস নেব বেঁচে থাকার তাগিদে, আর গালি দেব ওদের 'দুই পয়শার কনস্টেবল' বলে। হাসি মুখে গালি দিতে দিতে দু'দিন পর ভূলেও যাব ওর কথা। কী হবে এই দু'পয়শার বীরের কথা মনে রেখে! সিদ্ধার্থ হয়ত এখন উপর থেকেই দেখে যাবে আমাদের এইসব নির্লজ্জতা আর হয়ত ক'ফোটা চোখের জল ফেলবে তার প্রিয় মানুষগুলোর কথা ভেবে। আমরা ভুলমনা ভুলেই থাকব।
শুধু আমাদের চোখের আড়ালে থেকে কোন মমতাময়ী নারী হয়ত কিছুদিন তাকে মনে রাখবে চোখের জল ঝরিয়ে… তারপর ক্ষুদা তৃষ্ণা মেটাবার যুদ্ধে নেমে হয়ত সেও একদিন ভুলে যাবে! এ পৃথিবীতে সব শূন্যতাই ক্ষণকালের, কেউই বেশিদিন মনে রাখে না... কেউই না।
আসলেই, আমরা পারিও…
© আমিরুল লিসান
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:২৩