ইদানীং আমি খুব খারাপ অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি।চারদিকজুড়ে শুধু শূন্যতা আর শূন্যতা।এই শূন্যতার ভেতর কোন আনন্দ নেই।শূন্যতা কেবল যন্ত্রণার মাঝেই সীমাবদ্ধ।এক আকাশ যন্ত্রনায় কাতর হয়ে আছি।কি বলবো ভাই দুনিয়ায় জুলুমের পরিমান যেই হারে বেড়েছে আমি ভয় পাচ্ছি কখন আল্লাহ্ সুবাহানাহুতা’লার গজব এসে পড়ে!
আপনি একবার ভাবুন, যখন একজন অন্যায়কারী একজন নিরীহের ওপর জুলুম করে তখন মানুষজন সেটা মুখ বুজে দেখে যায়।এতে অন্যায়কারী আর এই সকল মানুষের মাঝে পার্থক্যটা থাকলো কি?আবার আমাদের চোখের চারপাশে যে সকল ঘটনা ঘটছে আমরা সেগুলো প্রত্যক্ষ করি;তা থেকে শিক্ষা গ্রহন করি।অর্থাৎ আমরা যখন দেখছি অন্যায়টা ঘটছে তখন আমরা ভাবি এই কাজটা না করলেই আমরা পার পেয়ে যাবো।এই শিক্ষা কোন ভালো শিক্ষা নয়।এই শিক্ষার নাম কুশিক্ষা।আবার আপনার সামনে যখন একজনের ওপর জুলুম হচ্ছে তা এক পলক দেখে আপনি কেটে পড়েন এই ভেবে যে বেটা খুন হয়ে যাক তাতে আমার কি?কিন্তু আমরা ভাবি আমাদের ওপর যখন অন্যায়কারী জুলুম করবে বাকীরা এসে আমাদের রক্ষা করবে ঠিকই।এটা সুচিন্তা নয়।আজ আপনি একজন মজলুমের পাশে দাড়ালেন না অথচ আপনি কি করে ভাবেন কাল আপনার বিপদে অন্য একজন লোক আপনার পাশে এসে দাঁড়াবে?এটা প্রমান করে আপনি নিজেই একজন অপরাধী।কারন অন্যায়ের প্রতি ব্যক্তির নিষ্ক্রিয়তাই প্রমান করে সেও অপরাধী।
মানুষ মানে কি?যিনি বিবেকবান অথবা জ্ঞানবুদ্ধি সম্পন্ন জীব।মনুষ্যনীতির মধ্যে সর্ব প্রথম যে বিষয়টা এসে দাঁড়ায় সেটা হলো মানবতা।মানবতা থেকে আসে আত্মসম্মান পরজনের প্রতি সম্মান।আর এভাবেই আমরা মনুষ্যত্বের স্তরে পৌঁছতে পারি।এখন কি আর সেসব আছে? মানুষ হিসেবে আমরা ঠিক থাকলেও সঠিক নীতির মধ্যে কয়জনইবা স্থির আছি?সেদিন একজন শিক্ষার্থী যার নাম আবরার ফাহাদ, তিনি দেশের স্বার্থের কথা ভেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের মতামত ব্যক্ত করেন।ফলশ্রুতিতে সম্মান দেখানো তো দূরে থাকুক, তার স্বদেশী লোকজনই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেন।তার ভুল শুধু এটাই ছিলো যে, তিনি স্বদেশের পক্ষে লিখেছেন যেখানে তার ও বাকীদের স্বার্থ জড়িত।আমি বিস্মিত হলাম!এ কেমন মানুষ তারা?কি তাদের বিচারবুদ্ধি!আমি বেদনাসিক্ত।কতটা নির্বোধ কতটা হীনমন সম্পন্ন হলে তারা একাজ করতে পারে!তাদের পরিবারের মুখে থুঃ।পরিবারের কথা আসে।কারন পরিবার তাদের প্রশ্রয় দিয়েছে।সেটা হোক প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে।
আবরার হত্যাকারীদের একজন হলেন মুন্না।মুন্নার মায়ের দাবী তার ছেলে একাজে জড়িত নন।তার দাবী মুন্নাকে ফাঁসানো হয়েছে।আসলে প্রতিটি মা’ই মনে করেন তাদের সন্তান কোন অপরাধ করতে পারেন না।প্রশ্ন থেকে যায় তাহলে দুনিয়ার কোন মানুষটা অপরাধী?আমি তো মনে করি কোন মানুষই অপরাধী না।কারন প্রত্যেক অপরাধীর মায়েদের দাবী তাদের সন্তান অপরাধী নন।আসলে মায়েরা এসকল কথা আবেগ থেকে বলেন।সন্তান যতই বড় হোক তাদের কাছে সন্তান মানে সদ্য জন্ম নেয়া সেই ছোট্ট শিশুটি।তারা এ কথা ভাবতেই চান না যে ছোট্ট সন্তান বড় হয়ে যায় এবং বড় হওয়ার সাথে সাথে সন্তান আগের মত নিষ্পাপ থাকে না।তখন ভালো-মন্দ বিচার করার মত গুনাবলী অর্জন করে সে।অতঃপর যে কোন এক পথে সে নিজেকে পরিচালিত করে।
এ সকল মাকে বোঝাতে হবে, সন্তানের পাশাপাশি তারা নিজেরাও একেকজন অপরাধী।এই জন্য নয় যে সন্তানকে জন্ম দিয়েছেন এই জন্যই যে অপরাধীর পক্ষে অবস্থান করছেন ইচ্ছে করেই।হ্যাঁ আমি কিন্তু অবাস্তব কিছু বলছি না।মনে আছে সেই ফাতেমা (রাঃ) এর কথা।যিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহ’ম্মদ(সঃ) এর কন্যা, কলিজার টুকরা।মহানবী(সঃ) তার মেয়ে সম্পর্কে বলেছেন যদি ফাতেমা(রাঃ) চুরি করেন তবে তিনি তার কন্যার হাত কেটে ফেলবেন।মনে আছে কি সেই ওমর ইবনে খত্তাব (রাঃ) এর কথা, যিনি মদ্যপানের অভিযোগে নিজেই সন্তানকে বেত্রাঘাত করেছেন কোন মায়া দয়া ছাড়াই?প্রতিটি মায়েরই উচিৎ এই সকল মহামানবদের অনুসরন করা।সন্তান যেমনই হোক অপরাধ করলে নিজেদের অবস্থান হকের পক্ষে শক্ত রাখা।আমাদের মনে রাখা উচিৎ,আমাদের নিজেদের সন্তানের প্রতি যেমন ভালোবাসা আছে তেমনি বাকীদেরও।
এখন কথা হলো, আবরার ফাহাদ যাদের দ্বারা নিহত হলেন তাদের তো অনুভূতি শূন্য।তারা যে কাজ করেছেন সেটা অত্যান্ত ঘৃণিত।এই জন্য তাদের শাস্তি দিতে হবে।তবে বরাবরের মতো প্রশ্ন রয়েই যায় কে তাদের শাস্তি দিবে?আদৌ কি আবরারের পরিবার সঠিক বিচার পাবেন?জাতিসংঘের একজন মহিলা কর্মী বলেছেন, আমি একজন মা হিসেবে সন্তান হত্যাকারীদের শাস্তি চাই, বাংলাদেশী কয়েকজন মহিলা বলেছেন তারা মা হিসেবে শাস্তি চান।আবার আরেকজন বললেন, মা হিসেবে আমি এই শাস্তি নিশ্চিত করবো।প্রশ্ন হলো বিচারের ক্ষেত্রে "মা হিসেবে" এই শব্দটা আসবে কেন?আপনি কি কারো প্রতি করুনা করতে চাচ্ছেন নাকি সংবিধান বাস্তবায়ন করতে চাইছেন? একটা দেশে সংবিধানিকভাবে বিচার নিশ্চিত করতে হয়। এই বিচারের ক্ষেত্রে মা-বাবার হিসেব আসবেই বা কেন?আমি মনে করি এটা বাড়াবাড়ি।বলা উচিৎ একজন নাগরিক হিসেবে উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত প্রত্যেকের বাংলাদেশ সংবিধান অনুসারে সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।আমি একজন রাষ্ট্রনেতা হিসেবে, বিচারক হিসেবে সংবিধান অনুসারে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবো। আপনাকে মনে রাখতে হবে রাসূল (সঃ) এবং ওমর (রাঃ) তারা কিন্তু বাবা হিসেবে নয় বরং বিচারক হিসেবে আল্লাহর সংবিধান বাস্তবায়ন করেছেন।আপনার উচিৎ তাদের পূর্ণরুপে অনুসরন করা।
মনে রাখতে হবে আইন করুন ওপর চালানো যায় না, আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হয়।যদি এটা নিশ্চিত করা যায় তবেই একটা সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়া সম্ভব।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:৩৯