প্রথম পর্বের লিংক
প্রথমেই জানিয়ে রাখি, কাজাখস্তান গড়ে উঠেছে বিভিন্ন জাতিসত্তার লোকের সমন্বয়ে। মোট জনসংখ্যার বেশীরভাগ (৬৭%) কাজাখ হলেও রাশান ( ২৭%) দের সংখ্যাও মোটেও কম নয়। তাছাড়া বাকী উজবেক, তাতার, উইঘুর জনগোষ্ঠী তো রয়েছেই। সোভিয়েত শাসনের কারণে দেশের সকলেই (প্রত্যন্ত অঞ্চলের কিছু যাযাবর কাজাখ বাদ দিলে) রাশান বলতে এবং লিখতে পারে।
আলমাতি দেশের সবচেয়ে বড় এবং জনবহুল শহর হলেও ১৯৯৭ সালে রাজধানী আলমাতি থেকে আস্তানাতে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বাধীনতা অর্জনের পরে বেশীরভাগ সময় ক্ষমতায় থাকা বর্তমান প্রেসিডেন্ট নাজারবায়েভের উদ্যোগেই করা হয় কাজটি। নাজারবায়েভের এরকম আরও কতগুলি দূরদর্শী পরিকল্পনার মধ্যে যেটি সবচেয়ে বেশী আমার নজর কেড়েছে সেটা হল উনি কিরিলিক ( রাশান, কাজাখ, তাজিক, বুলগেরিয়ান প্রভৃতি ভাষা যে হরফে লেখা হয়) এর পরিবর্তে ল্যাটিন ( ইংরেজী, ফরাসী প্রভৃতি ভাষা যে হরফে লেখা হয়) স্ক্রিপ্ট চালু করতে চাচ্ছেন। এইটা চালু হলে ভাষা জানা না থাকলেও এলাকার নাম, রাস্তার নাম প্রভৃতি সহজে পড়া যাবে। বর্তমান বিশ্বে বেশীরভাগ লোকই যেহেতু ল্যাটিন স্ক্রিপ্ট চেনে নাজারবায়েভের উদ্যোগ যে ট্যুরিজম প্রমোটে ভাল ভূমিকা রাখবে তা না বললেও চলে।
এবার আলমাতি শহরটিকে নিয়ে কিছু বলি। আলমাতি ( কাজাখ উচ্চারণে আলমাতা) শব্দটা এসেছে আলমা এবং আতা শব্দ থেকে। কেন জানিনা, কাজাখ ভাষায় আতা মানে হল আপেল আর আলমা মানে হল বাবা। আপেল গাছের সংখ্যাধিক্যের কারণেই নাকি শহরের নাম আলমাতা রাখা হয়েছিল। কালের চক্রে যা শেষ পর্যন্ত আলমাতি হয়ে গেছে। যদিও কাজাখ লোকজন এখনও শহরটিকে আলমাতা বলেই ডেকে থাকেন।
বাজারে প্রচণ্ড সস্তায় বিভিন্ন ধরণের ফ্রেশ আপেলের সমারোহ দেখেও আপনি আঁচ করতে পারবেন যে আপনি আপেলের দেশে এসেছেন।
১৯২৯ থেকে ১৯৯১ কাজাখ এসএসআর এর এবং ১৯৯১ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত কাজাখাস্তানের রাজধানী শহরটি জুড়ে রয়েছে প্রচুর পার্ক। পুরো শহর জুড়েই রয়েছে প্রচুর গাছের সমারোহ। দেশটির সবচেয়ে জনবহুল শহর হওয়া সত্ত্বেও জনারণ্য তো নয়ই বরং বেশ নিরিবিলি একটা শহর বলে মনে হবে আপনার কাছে। কোন একটা মেট্রোপলিটন শহরেও যে বুক ভরে পরিষ্কার বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়া যায়, আলমাতি তে আসলে আপনি সেটা বুঝতে পারবেন।
এবার ফের ফিরে আসি আমার গল্পে। বিমানবন্দর থেকে হোটেল এ পৌঁছে ফ্রেশ হয়েই মনে হল সেই সাত সকালে নাস্তা করে বাসা থেকে বের হয়েছি, এর মধ্যে শারজাহ বিমানবন্দর এ টুক আর বিমানে টাক ছাড়া জম্পেশ কিছু পেটে পড়েনি।
রিশেপশন থেকে একটা ম্যাপ নিয়ে জেনে নিলাম কাছে পিঠে কোন্ কোন্ রেস্টুরেন্টে অথেনটিক কাজাখ খাবার সার্ভ করে। রাশান এ লেখা ম্যাপটাতে রিশেপশনিস্ট কয়েকটা রেস্টুরেন্ট সহ হোটেলের অবস্থান মার্ক করে দিল। লোনলি প্ল্যানেট মারফত জানি যে আলমাতি বেশ নিরাপদ শহর, দুএকটা ছিনতাই ফিনতাই যা ঘটে তা বেশ রাতে এবং নির্জন পার্ক এ। ঢাকায় এতগুলো বছর কাটানো আমার কাছে তো এ ধরণের শহর মানে হল নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো শহর। তারপরেও রিশেপশনিস্ট এর কাছ জেনে নিলাম কত রাত পর্যন্ত ঘোরা নিরাপদ আর আশেপাশে কোন নিরাপত্তা-জনিত সমস্যা আছে কিনা। আমার সতর্কতা দেখেই কিনা জানিনা রিশেপশনিস্ট জানিয়ে দিল যে হোটেলের পাশেই যে দিকটা বেশ নির্জন টাইপের ওখানে ফ্রেঞ্চ অ্যাম্বাসী, সুতরাং ওদিক এ কোন ভয় নেই, আর অন্য দিকটাতে ১০০ মিটার দুরেই হচ্ছে একটা মেইন রাস্তা যেখানে রাত ২-৩ টা পর্যন্ত লোকজন চলাচল করে, সুতরাং খুব বেশী দূরে না গেলে আমার ভয়ের কোন কারণ নেই।
হোটেল থেকে বেরিয়ে সেই রাস্তার দিকে হাঁটা দিলাম। রাস্তায় পৌঁছে দেখলাম এটা একটা চৌরাস্তার মোড়, সুতরাং এটাকে ল্যান্ডমার্ক বানিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। কত বড় ভুল টা যে করলাম তা আলমাতির নিচের ম্যাপটা দেখলেই বুঝতে পারবেন।
গোটা শহরটাই এরকম ব্লকে ব্লকে ভাগ করা, সুতরাং প্রত্যেকটা ব্লকের পরেই একটা করে চৌরাস্তা পড়ে আর আমি কিনা কোন একটা চৌরাস্তাকে ল্যান্ডমার্ক ধরে রেখে নিশ্চিন্ত মনে এগিয়ে চলছি! ! ! বেশ কিছুক্ষণ মনের আনন্দে হাঁটার পর টের পেলাম যে আমি আমার হাতে থাকা ম্যাপ ফলো করছিনা আর নতুন শহরে প্রথম রাতে সীম ছাড়া অবস্থায় বেরিয়েছি বলে ফোনের জিপিএস দিয়েও ম্যাপ ব্রাউজ করতে পারছি না।
এইবার পড়ে গেলাম কাজাখস্তানের ক্লাসিক সমস্যায়, ম্যাপটা আগে বাড়িয়ে দিয়ে যার কাছেই আমার হোটেল টা কোথায় জানতে চাই তারা নো ইংলিশ বলে সরে যায়। যারা তাও কথা শুনতে প্রস্তুত তারা কাছে এসে আমার ম্যাপ টা অনেকক্ষণ দেখে কিন্তু দেখে কি যে বলে বুঝতে পারি না। শেষে ভাবলাম যা হবার হবে আরও একটু ঘুরে বেড়াই।
কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে পড়লাম একদল মাতাল স্ট্রীট আর্টিস্ট এর পাল্লায়, হেঁড়ে গলায় গান গাচ্ছে আর হ্যাট এগিয়ে দিয়ে টাকা চাচ্ছে। আমাকে দেখেই পাকড়াও...এবার আমি শুরু করলাম ওদের মত কাজ....ভ্যাবলার মত কিছুক্ষণ ওদের দিকে চেয়ে থাকলাম। যতই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আমাকে ওদের ভাষায় বোঝাতে চায় আমি তত ই ভ্যাবলা হয়ে যাই। পরিশেষে আমাকে ছেড়ে অন্য মক্কেল এর দিকে তাকাতেই আমি জোর কদমে সেখান থেকে কেটে ঢুকে পড়লাম একটা সুপারমার্কেট এ। খাবারের সেকশনে বেশীরভাগ ই অচেনা খাবার, সেই সাথে সবগুলি খাবারের নাম কিরিলিক এ লেখা। ফুড ইন্সপেক্টরের ভাব নিয়ে গম্ভীরভাবে রেডি খাবারের পুরা সেকশন ঘুরে একটা পাফ কিনলাম। বেভারেজ সেকশন থেকে কিনলাম এক বোতল কুমিস।
কুমিস হল অনেকটা লাবানের মত এক প্রকার ফার্মেন্টেড ডেইরী প্রোডাক্ট যেটা ঘোড়ার দুধ থেকে তৈরী হয়। এটা শুধু সেন্ট্রাল এশিয়াতেই পাওয়া যায় আর আমি ঠিক করে রেখেছিলাম যে পানীয় হিসেবে সবসময় শুধু কুমিস আর শুবাত ( এটা তৈরী হয় উটের দুধ থেকে) চালাব।
পৃথিবীর বেশীরভাগ দেশে ডোমেস্টিক ক্যাটল হিসেবে গরু/ভেড়ার যে ভূমিকা সেন্ট্রাল এশিয়ায় ঘোড়া ঠিক সেই ভূমিকা পালন করে । মালপত্র টানাটানি,চাষবাস এবং যাতায়াত ছাড়াও এ এলাকার মানুষের ডেইরী/মাংসের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে ঘোড়ার ভূমিকা অপরিসীম।
সে যাই হোক, সুপার মার্কেট থেকে যা কিনলাম তা দিয়ে তো ঠিক পেট ভরবে না, এটা সেটা ভাবতে ভাবতে সুপারমার্কেট থেকে বেরোতে না বেরোতেই চোখের সামনে পড়ে গেল ওয়েস্টার্ন গল্প থেকে উঠে আসা এক রেস্টুরেন্ট। নামটা ঠিক মনে নেই, তবে ঢোকার গেটের ঠিক উপরে যে একটা বিশাল শিঙওয়ালা গরুর মাথার খুলি ছিল সেটা এখনো মনে আছে। সুইং ডোর ঠেলে ভিতরে ঢুকে ঠিক ঠাহর করে উঠতে পারলাম না, আমি কি কাজাখস্তানে আছি নাকি ১৮০০ সালের বুনো পশ্চিমে চলে এসেছি।
সবগুলো চেয়ার এর ব্যাকসাইড গরুর চামড়া দিয়ে মোড়ানো। এখানে সেখানে গরুর চামড়ার উপরে চাপানো স্যাডল, দেয়াল জুড়ে গরুর শিঙ কিংবা মাথার খুলি দেখে যে কেউ বলে উঠবে যে বুনো পশ্চিম থেকে সরাসরি রেস্টুরেন্টটা হয়তো এখানে উঠিয়ে আনা হয়েছে। মেন্যুও যে চামড়া মোড়ানো হবে সেটা তো আন্দাজ করতেই পারছেন,মুশকিল শুরু হল মেন্যু আমাকে দিয়ে যাওয়ার পর থেকে। সবকিছু রাশান এ লেখা এবং আমাকে আরো বেশী বিপদে ফেলার জন্য আল্লাহর রহমতে তাতে কোন খাবারের ছবি নেই। প্রথম দিন ইচ্ছা ছিল কাজাখদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ডিশ বেশবারমাক দিয়ে আমার খাদ্যাভিযান শুরু করব, কিন্তু যতবারই আমি বেশবারমাক বলি ততবারই ওয়েটার আমাকে রাশানে কিছু বলে যেটা আমি কিছু বুঝতে পারি না। তার কথার মধ্যে শুধু কাজাখ শব্দটা বুঝে যেই একটু মাথা নাড়িয়েছি অমনি ডাশডুশঠুশঠাশ করে কাজাখে বলা শুরু করল। যাই হোক এর পরে রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার এর সাথে আবার কিছু ডাশডুশঠুশঠাশ হওয়ার পরে কোন একজন ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট কাম পার্ট টাইম ওয়েটার এর সহায়তায় অনেক কষ্টে আমার বেশবারমাক খাবার ইচ্ছে পেশ করতে পারলাম। শেষ পর্যন্ত যদিও ওই রেস্টুরেন্ট এ আর বেশবারমাক খাওয়া হয়নি, কারণ ওদের সার্ভিং সাইজ হচ্ছে ৪ জনের এবং অনেক কাকুতিমিনতি করে ও আমার সুবিশাল ভুঁড়ি দেখিয়েও তাদের কে বিশ্বাস করাতে পারিনি যে ৪ জন রাশান এর সমান না হলেও অন্তত দুজনের খাবার খাওয়ার ক্ষমতা আমার আছে। যাই হোক বেশবারমাক যখন মিললই না তখন অন্য যা ছাইপাঁশ আছে তাই দাও বলায় আবার ইংরেজী, রাশান, কাজাখ এ ৩ জন মিলে আমাকে সবগুলি ডিশ বুঝানো শুরু করে দিল। এ অঞ্চলে ব্রোথ এবং তার মধ্যে মাংস দেওয়া বেশ কিছু ডিশ আছে, সেরকম একটা ডিশের অর্ডার দিলে মোটামুটি অখাদ্য নিচের ডিশ টা আধাঘণ্টা পরে টেবিলে আসল।
ক্ষুধা এবং ক্লান্তির চরম সীমায় পৌঁছে যাওয়ার কারণে যদিও সেই অখাদ্য গলাধঃকরণ করতে কয়েক মিনিটও লাগল না। খাওয়া দাওয়া শেষ করে খাওয়ার বিলের কপিটা যে আমার দরকার সেটা বোঝাতে চলে গেল আরও মিনিট ৩০ এর মত সময়। অবশেষে ক্লান্ত অবসন্ন অবস্থায় বাইরে বেরিয়ে এসে খাবারের বিলটার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম কেন কোন একজন একদা বলেছিল – “ আমি ইহাকে পাইলাম”। তখনও জানি না দুঃসময় কেবল শুরু। ১০ মিনিটের মধ্যে হোটেল এ পৌঁছে কেমন একটা গাড় ঘুম দিব ভাবতে ভাবতে রওয়ানা দেবার ২০ মিনিট পরে সেই রেস্টুরেন্ট এর কাছে আবার ফিরে আসাতে আমি টের পেলাম যে আমি পথ হারিয়েছি। ইচ্ছা করে দিগভ্রান্তের মত এদিক ওদিক চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলাম এই ভেবে যদি কোন সহৃদয়/সহৃদয়া এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে “পথিক তুমি কি পথ হারাইয়াছ?”, দু-একজন যে জিজ্ঞেস করল না তা নয়, কিন্তু আমি কথা শুরু করতে না করতেই তারা সবাই কি যেন একটা বলে সরে পড়তে লাগল। তিনদিন পরে সেই “কি যেন” কথার মর্মোদ্ধার করতে পেরেছিলাম। ওনারা তখন বলছিলেন – “মাফ কর, ইংরেজী নয়, ইংরেজী নয়”। যাই হোক ঘুরতে ঘুরতে কিভাবে যেন একটা নির্জন পার্কের কাছে চলে আসলাম আর ঘড়ির কাঁটাও তখন মাশাল্লাহ রাত ১২ টা ছুঁয়ে গেছে। কাজাখস্তানেই হয়ত আমি জীবনের প্রথম ছিনতাইকারীর দর্শনলাভ করব এই ভেবে ছিনতাইকারীর খোঁজে চারিদিকে তাকাতে তাকাতে একটা পুলিশ ভ্যান পেয়ে গেলাম কিন্তু সেই একই ক্লাসিক কমিউনিকেশন সমস্যার কারণে আমার হোটেল এর হদিশ পেলাম না। রাত সাড়ে ১২ টার দিকে যখন রাস্তায় আজ রাত কাটাতে হবে মোটামুটি ধরেই নিয়েছি, আল্লাহ তখনই সাহায্যকারী পাঠিয়ে দিলেন বেশ কেতাদুরস্ত পোশাকআশাক পরিহিতা এক সহৃদয়ার ছদ্মবেশে। আল্লাহর ইশারা ব্যতীত যে গাছের একটা পাতাও নড়ে না সেটার মর্মার্থ আমি উপলব্ধি করলাম এবং উনার প্রেরিত সাহায্যকারীর দেয়া ডিরেকশন অনুযায়ী নিরাপদে হোটেল পৌঁছে গেলাম। মজার ব্যপার হল আমি সন্ধ্যা থেকে রাত ১২:৩০ অবধি কখনই আমার হোটেল থেকে ৫০০ মিটারের বেশী দূরে যাইনি, কিন্তু চৌরাস্তার বিলবোর্ডকে ল্যান্ডমার্ক ধরার কারণে হোটেল এর আশে পাশে বিভিন্ন রাস্তার গোলকধাঁধায় ঘুরে বেড়িয়েছি অথচ হোটেল এ ঢুকতে পারিনি।
এত ঘুরাঘুরির পর হোটেল এ ফিরে এসে রুমে ঢুকতেই আবার খিধে পেয়ে গেল। ভাবলাম আমার কাছে তো ঘোড়ার দুধের কুমিস আছেই সুতরাং চিন্তার কোন কারণ নেই।
কুমিস বানানোর জন্য ঘোড়ার দুধ সংগ্রহ ( ছবি গুগল)
এক ঢোঁক খাওয়ার পরে বীভৎস স্বাদের জিনিষটা সেই যে ফ্রিজে ঢুকালাম আর বের করার সাহস হয়নি।
কুমিস খাওয়ার পরের অবস্থা ( ছবি গুগল)
চলবে
প্রথম পর্বের লিংক
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:০৬