প্রতিদিনই অফিসে আসা-যাওয়ার পথে বিচিত্র মানুষের দেখা পাই। মাঝে মধ্যে নিজেকেও বিচিত্রই মনে হয়। বাসে বসে ভাবি।
বিকল্পের ১-জে বাসটাতে উঠেছেন কেউ? যারা মিরপুর টু মতিঝিল রুটে যাতায়ত করেন তাদের সবার কাছেই এই বাসটি আরাধ্য। কারণ একটাই ঝামেলা কম। দাঁড়িয়ে থাকার বালাই নেই। সিট পাওয়া নিশ্চিত। তবে তার আগে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে ঘণ্টাখানেক। কখনো-সখনো একটু কম-বেশি হতেও পারে।
যাক কথা হলো মাঝে মধ্যেই দেখি বাসে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠানো নিয়ে কাপঝাপ শুরু হয়। আর সবার লক্ষ্যব্যক্তি একজন তিনি হেলপার।
'ওই ব্যাটা তুই দুইজন দাঁড়াইয়া লইছস ক্যান, ভাড়া কিন্তু অর্ধেক পাইবি' কিংবা 'দাঁড়াইয়া লইছস তুই নাইম্মা যা, নইলে তোর কোলে লইয়া ব'।
আজও এমনই একটা ঘটনা ঘটেছে। এক লোক বেশ অয়েল ড্রেসড, গলায় টাই গিট মারা, সাদা স্ট্রাইপ শার্ট আর কালো প্যান্ট। জুতোও বেশ চকচকে। তবে সব চকচকে ভাব ছাপিয়ে বেশি চোখে পড়ছিল ঘামে ভেজা মুখখানা। বুঝতে বাকি রইলো না- তিনি কোনো প্রতিষ্ঠানের বিপণন কর্মকর্তা। বেশ তাড়া আছে। নতুন কোনো প্রডাক্ট গেলাতে হবে কাউকে!
বাসটি শেওড়াপাড়া পৌঁছার পর লাফ দিয়ে তিনি বাসে উঠে পড়েন। এর পর পরই শুরু হয় ভদ্র যাত্রীদের ... কথাবার্তা। এক পর্যায়ে ওই বিপণন কর্মকর্তা ক্ষেপে ওঠেন। কথা বলতে শুরু করেন ইংরেজিতে। অনর্গল। যাত্রীরা চুপ মেরে যান। কারো মুখে টু শব্দটি নেই। হয়তো তারা কিছুটা ভড়কেও গেলেন।
এবার আসল কথায় আসি। আচ্ছা বাঙালি রেগে গেলে ইংরেজি কিংবা দুর্ভোদ্য ভাষায় কথা বলে কেন? এটা শুধু বাঙালিরাই করে এমন নয়। কালে কালে দেখা গেছে সব জাতির মধ্যেই এ আচরণ।
মির্জা আসাদুল্লাহ খান গালিব- এর নাম শুনেছেন। বৃটিশ ঔপনেবিশক আমলের ভারত উপমহাদেশের চিরায়ত উর্দু এবং ফারসি কবি। তার সময়কালে মঘল সম্রাজ্য তার উজ্জ্বল্য হারায় এবং শেষে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়, তিনি তার লেখায় এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তিনি তার জীবনকালে বেশ কয়েকটি গজল রচনা করেছিলেন যা পরবর্তীতে বিভিন্ন জন বিভিন্ন আঙ্গিকে বিভিন্ন ভাবে গেয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ায় তাকে উর্দু ভাষার সবচেয়ে প্রভাবশালী কবি বলে মনে করা হয়। আজও শুধু ভারত বা পাকিস্তানে নয় সাড়া বিশ্বেই গালিবের জনপ্রিয়তা রয়েছে।
তাকে টেনে আনার উদ্দেশ্য হলো এই কবি ও গজলশিল্পী নিজেও তার কবিতায় কিংবা গজলে ফারসি শব্দ প্রচুর ব্যবহার করেছেন। কিছুটা দুর্ভোদ্য করার উদ্দেশ্যেই কী তিনি ফরাসি শব্দ ব্যবহার করতেন! আমি জানি না। হতেও পারে।
এবার কথা হলো আমরা বাঙালিরা কোনো কিছু দুর্ভোদ্য করার জন্য কিংবা ক্ষেপে গেলে কিংবা নিজেকে জাহির করার জন্য ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করি (পাত্রে-অপাত্রে)। ইংরেজদের ক্ষেত্রে এটা কী হতে পারে। কিংবা ফরাসিদের ক্ষেত্রে।
আমার মনে এই প্রশ্নটা আজ উঁকি মেরেছে। উত্তর জানি না।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১০ বিকাল ৫:১৫