হাত পিছমোড়া করে বাঁধা। ঠেলতে ঠেলতে আমাকে একটা বাথরুমে ঢোকালো তারা। বাথরুমটা বেশ বড়োসড়ো। ফ্লোরে একটা কমোড। আমাকে চিৎ করে শুইয়ে কমোডের প্যানের মধ্যে একজন পা দিয়ে আমার মাথা চেপে ধরল। কপালটা গিয়ে আটকে গেলো প্যানের ভেতরের খাঁজে। এটা বোধহয় খুব একটা কেউ ইউজ করে না। পচা জিনিসপত্রের গন্ধ এসে লাগছিল নাকে
একজন পা দিয়ে আমার বুকে চেপে ধরল। আর দুইজন চেপে ধরল দুই পায়ে। ঘাড়টা পড়েছে কমোডের একটা পা-দানির উপর। মাথাটা নিচের দিকে চেপে দেয়ায় গলাটা একেবারে টানটান হয়ে আছে। টানটান গলায় একজন বটি দাওটা চালিয়ে দিলো
দাওটা মোটেও ধারালো না। আর ওই লোকটার বোধহয় মুরগি কাটার অভিজ্ঞতাও নেই। না হলে চামড়ার ইলাস্টিসিটি; চামড়ার নিচে শ্বাসনালি আর কণ্ঠনালীর মতো দুইটা পিছলা পাইপ; ছোটবড়ো অনেকগুলো শিরা উপশিরা; এগুলোর চাকু ফিরিয়ে দেবার কৌশল এবং তা এড়ানোর তরিকা তার জানা থাকত
কাটছে না দেখে সে যত চাপ দেয় তাতে শ্বাসনালি ভেতরে তত থেঁতলে যায় কিন্তু কাটে খুবই কম। লোকটা বোকার মতো একবার দাওয়ের দিকে আর আরেকবার আমার গলার দিকে তাকায়। এই অবস্থা দেখে লিডার আমার মাথা চেপে ধরার দায়িত্ব দাও ওয়ালাকে দিয়ে নিজেই দাওটা বাগিয়ে ধরে প্রথমেই বটির চোখা মাথা দিয়ে আমার টানটান গলায় একটা কোপ বসিয়ে দিলো কুড়ালের মতো। বটির পুরো মাথাটা ঢুকে গেলো গলার ভেতর
এবার বটির মাথায় কাটা গর্ত ধরে দিলো প্রথম পোচটা। খসখসের সঙ্গে সামান্য কিছু কটকট শব্দ করে কয়েক পোচের মধ্যেই বটি দাও গিয়ে ঘাড়ের হাড়ে লাগল। সে উঠে দাঁড়াতেই একজন বলল- টুকরা করে ফেল
- এখন টুকরা করলে বডি থেকে সব রক্ত বেরোবে না। রক্ত বের হোক পরে আলাদা করা যাবে
যে দুইজন আমার দুই পা চেপে ধরেছিল মনে হলো তারা দুইজন শূন্যে লাফাচ্ছে আমার পায়ের সাথে। বুকে চেপে থাকা পাবলিকের কয়েকবার পড়তে পড়তে ঠেসে চেপে ধরতে হচ্ছে আমার বুক
রক্ত এতো স্পিডে বের হয় জানা ছিল না। শরীরের অংশ থেকে রক্ত বের হয়ে গিয়ে বাড়ি খাচ্ছে মাথার সাথে লেগে থাকা গলার অংশে। তারপর গলার কাটা অংশের খাদ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে কমোডে। মূল স্রোতের পাশাপাশি আরো কিছু ছোটখাট স্রোত গিয়ে উড়ে পড়ছে এদিক সেদিক। কোনোটা দেয়ালে। কোনোটা মাথা চেপে রাখা ছেলেটার পায়ে
আস্তে আস্তে পা দুটো থেমে গেলো। তারপর থামল বুকের মোচড়। এবার সবাই ধরাধরি করে আমার পা দুটো এনে দেয়ালে তুলে দিয়ে চেপে ধরে রাখল যাতে রক্তগুলো সব নিচের দিকে নেমে এসে কমোডে পড়ে
এর মধ্যেই ছিটিয়ে থাকা রক্ত ধোয়ার কাজে লেগে গেলো একজন। রক্ত পড়া যখন প্রায় শেষ তখন আমাকে আবার তুলে নিয়ে শুইয়ে দেয়া হলো বাথরুমের ফ্লোরে। শরীর থেকে জামা কাপড় খুলে একটা গাছের গুঁড়ি পায়ের নিচে ঢুকিয়ে একজন হাড়ের মধ্যে কোপ লাগালো। কিন্তু স্প্রিংয়ের মতো ফিরে গেলো দাও। লিডার হাসলো- ছাগলের বাচ্চা। হাড্ডি কাটতে হয় আড়াআড়ি কোপে
এবার ছেলেটা আড়াআড়ি কোপ মারায় কাজ হলো। কিন্তু টুকরাটাকে আলাদা করে নিতে তাকে মারতে হলো প্রায় দশটা কোপ
বাম পায়ের টুকরাটা আলাদা করে হাঁটুর কাছে কোপ বাগিয়ে ধরতেই লিডার তাকে সরিয়ে দিয়ে নিজে বটি দাও ঘষে ঘষে আমার হাঁটুর জোড়ার চারপাশের চামড়া মাংস আর রগ কেটে দাওয়ের মাথা ঢুকিয়ে একটা চাড় দিতেই হাঁটুর অংশটা আলাদা হয়ে এলো। একইভাবে শরীর থেকে রানের অংশটা আলাদা করে একজনকে বলল আরেকটা দাও এনে ওটাকে দুই টুকরা করার জন্য
সিম্পলি বটি দাওয়ের মাথা দিয়ে ঠুকে ঠুকে জোড়ায় জোড়ায় সে খুলে ফেলতে লাগল বেশ দ্রুত। আর টুকরোগুলোকে মুগুরের উপর রেখে অন্য একটা দাও দিয়ে ছোট টুকরা করতে লাগল সেই আনাড়ি লোকটা
পায়ের দিক শেষ করে ঘাড়টা মুগুরের উপর রেখে এক পা বুকের উপর তুলে আরেক পায়ে একটা চাপ দিলো মাথায়। মট করে শব্দ হলো। তারপর বটিদাও ঘষে ঘষে মাথাটাও আলাদা করে আমাকে উপুড় করে নিলো। হাত দুটোকে খুলে বটি দাওয়ের মুখ দিয়ে মেরুদণ্ডের জোড়ার ফাঁকে ফাঁকে টোকা দিয়ে পাঁচ জায়গায় জোড়া খুলে ফেলে উঠে দাঁড়াল- একটা ঝামেলা হবে
- কী ঝামেলা
- ভুঁড়ির ভেতরের জিনিসগুলা এইখানেই ফেলে যেতে হবে না হলে গুঁতাগাতি লেগে ভুঁড়ি ফেটে গেলে পানি পড়বে চুঁইয়ে চুঁইয়ে
এবার আমাকে ধরাধরি করে পেটের দিকটা কমোডের কাছে নিয়ে লোকটা এক কোপে বটি দাওয়ের মাথা আমার নাভির একটু উপরে ঢুকিয়ে একটা মোচড় দিলে। সাথে সাথে পেট থেকে বেশ কিছু তরল বের হয়ে গিয়ে পড়ল কমোডে। এবার আমাকে সরিয়ে নিয়ে এসে আলাদা করা মেরুদণ্ডের খণ্ডগুলো দেখে দেখে বটি দাওয়ের মাথা ঢুকিয়ে পিঠ থেকে পেট পর্যন্ত পাঁজরের ফাঁকে ফাঁকে বটি ঘষতে ঘষতে পুরো পাঁচ টুকরো করে ফেলল শরীরটাকে। নাড়িভুঁড়িগুলো টুকরা না করে শুধু শরীর থেকে কেটে আলাদা করে রাখল এক জায়গায়। দু তিনটা নাড়ির মুখে গিঁট দিয়ে রাখল যাতে ভেতর থেকে আর কোনো তরল বের হতে না পারে
কতগুলো পলিথিনের প্যাকেট নিয়ে এলো এবার একজন। খণ্ড খণ্ড আমাকে পলিথিনে ভরে নিয়ে এলো বাথরুম থেকে বের করে। এখানে কয়েকটা টিভির কার্টুন রাখা। প্যাকেটগুলো কার্টুনে ভরে প্যাক করে ধরাধরি করে নিয়ে গিয়ে একটা মাইক্রোর ভ্যানে তুলে তারা রওয়ানা দিলো
রক্তের সঙ্গে পানি তার সঙ্গে ওদের জুতার ধুলোবালি। একটা খসখসের সাথে থলথলে ভাব। আর মাংসগুলোও যেন কেমন হ্যাংলা। সবগুলা চামড়ার সীমার বাইরে এসে উঁকি দেয়। তার উপর পিছলা পলিথিন
যত টাইট করেই পলিথিন বাঁধুক না কেন এক ধরনের পিছলা দোলা কোনোমতেই থামছিল না। পলিথিন খামচে ধরে যে একটু স্থির হবো তারও উপায় নেই। হাত দুইটা আলাদা আলাদা প্যাকেটে। মাথার সাথে একই প্যাকেটে রেখেছে নাড়িভুঁড়িগুলা। এগুলো এমনিতেই বেহুদা লটরপটর করে। এমনিতেই থলথলে। এইদিকে দোলে তো ওই দিকে দোলে
শালারা কেটে টুকরা করার পরে পুরা শরীরে পানি মারলেও মাথায় কোনো পানি মারেনি। জুতা দিয়ে মাথা চেপে রাখার সময় অনেকগুলো বালি ঢুকে গিয়েছিল চোখের মধ্যে। সেগুলো এখনও আছে
গাড়িটাকে একটা কুরিয়ার সার্ভিসের অফিসের সামনে থামিয়ে হইচই শুরু করে দিলো লিডার- লোক কই। আস্তে ধরো। ভেতরে নিয়ে একপাশে রাখবে...
গাড়ি থেকে আর কেউ নামলো না। কুরিয়ারের কামলারা প্যাকেটগুলো তুলে নিয়ে কাউন্টারের সামনে একপাশে সাজিয়ে রাখল। মোট ছয়টা টিভির প্যাকেট
কাউন্টার থেকে একজন আওয়াজ দিলো- কী জিনিস?
- কী জিনিস তা তো দেখবেনই। তার আগে তো ঠিকানা লিখতে হবে?
- মার্কার লাগবে?
- না ঠিকানা লেখা কাগজ সাথে আছে শুধু একটু টেপ বা গাম লাগবে। আছে?
- হ্যাঁ আছে
- তাইলে খাড়ান আমি ঠিকানার কাগজগুলা নিয়ে আসি
কাউন্টারের লোকটা একটা টেপ বের করে কাউন্টারের উপর রাখল। লিডার বের হয়ে গেলো ঠিকানার কাগজ আনতে
অনেকক্ষণ পরে তাদের খেয়াল হলো ঠিকানা আনতে গিয়ে কেউ আর ফিরে আসেনি এবং প্যাকেটগুলোও পোস্ট করেনি কুরিয়ারে। যারা প্যাকেটগুলো গাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসছিল তাদের একজন গিয়ে দেখে রাস্তায় সেই গাড়ির কোনো নাম গন্ধ নেই
প্রথমে প্যাকেটগুলো ঠেলা ধাক্কা। তারপর তুলে একটু আছাড়। তারপরে হৈচৈ ফোন এবং পুলিশ এবং প্যাকেটের মুখ কাটা
প্যাকেট কাটার আগে যারা এনে রেখেছিল তাদেরকে পুলিশের কিছু প্রশ্ন এবং প্যাকেট খোলার পরে আরোও কিছু প্রশ্ন। তারপর আবার প্যাকেটের মুখ বন্ধ করে ফেলা। তারপর আরো অনেকক্ষণ ওয়াকিটকি প্রশ্ন এবং আবার প্যাকেটের মুখ খোলা এবং একটা একটা করে টুকরা বের করে তার বর্ণনা কিংবা সুরতহাল লেখা
- সামনের দুইটা দাঁত ভাঙা। মনে হয় আগে কিছু ঘুসাঘুসি হইছিল
- চোখের মধ্যেই বালি। মনে হয় চোখে বালি দিয়া আন্ধা বানাইয়া কাবু করছিল
- মাথার পেছন দিকে পুরানা গু... এইডা এইখানে আইলো কেমনে?
কোন টুকরা কতটুকু উত্তর দিকে আর কতটুকু দক্ষিণ দিকে। কোন প্যাকেটের উপর কোন প্যাকেট। প্যাকেটগুলো কীসের। পলিথিন কীভাবে গিঁট মেরে রাখা সব লিখে-টিকে আমাকে আবার প্যাকেট করে তোলা হলো পুলিশ ভ্যানে। সঙ্গে কুরিয়ারের লোক। তবে এবার প্যাকেটগুলো করা হয়েছে যাচ্ছেতাই ভাবে। নিজের মাংসের সাথে নিজে ধাক্কা খেয়ে বিরক্তি লাগছে। আর মাংসগুলোও কেমন যেন পিছলা
পুলিশ ভ্যান গিয়ে থামল হাসপাতালের মর্গে। টপাটপ লোকগুলো গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে অনেকক্ষণ পরে ফিরে এসে বাকশগুলো নিয়ে গেলো মর্গের ভেতরে
ডোমটা বেশ কাজের। সে সবগুলো প্যাকেট খুলে শুরু করল মাথা থেকে। মাথাটা নিয়ে টেবিলের উপর প্রথমে সাজিয়ে রেখে একটা কাঠি দিয়ে কাটা অংশগুলো নেড়েচেড়ে কী কী যেন বলে গেলো আর একজন পাশে দাঁড়িয়ে লিখে গেলো বর্ণনা- শ্বাস নালি থেঁতলানো। কণ্ঠনালী ধারালো কিছু দিয়ে কাটা। শিরদাঁড়া চাপ দিয়ে জোড়া খোলা...
সিরিয়ালি সে আমার অংশগুলো টেবিলের উপর সাজিয়ে রেখে খচাখচ সুঁই সুতা চালিয়ে আমাকে আবার পুরোটা বানিয়ে ফেলল। তবে আমার ধারণা আমার মূল উচ্চতা থেকে এখনকার উচ্চতা একটু বেশিই হবে। পেটের চামড়া জোড়া দেবার আগে পেটের মধ্যে সে নাড়িভুঁড়ির সাথে হৃৎপিণ্ড আর ফুসফুসটাও ঢুকিয়ে সেলাই মেরে দিলো
বাহ
আমি আবার অখণ্ড হয়ে গেছি
শুধু পার্থক্য হলো আমার হৃৎপিণ্ড আর ফুসফুস দুটোই এখন পাকস্থলীতে
২০০৮.১০.০৮ বুধবার