পেন্টের ভেতরে ভেজা এবং আঠালো স্পর্শ। পরিণতির এক পূর্বলক্ষ্মণ। তরল বন্যায় আগেই পা ভেসে গেছে। এখন ঊরুর পেছনে গরম হিমবাহ। আঠালো। চিটচিটে
সামান্য সময় আর। সঞ্চিত অক্সিজেন এখন দাঁত কামড়ে চালাচ্ছে মেশিন। কিন্তু জ্বালানি রিজার্ভের তলানিতে। ফুসফুস-পাত্রের নিচের ময়লা অক্সিজেন-পোড়া কালো ধোঁয়ায় দম বন্ধ ভেতরের। ধাক্কায় ফেটে যাবে বুক। ফেটে যাবে? আহ্ যদি ফাটে তবে জীবনের সবচে কাক্সিক্ষত জিনিসটি দেখব। আমার হৃৎপিণ্ড। বড়ো শখ
কণ্ঠনালীতে শক্ত হচ্ছে নাইলন কর্ড। কপালের পরিমাণ এখন আর চার আঙুল নেই। মাত্র এক আঙুল। চোখ দুটো বাড়তে বাড়তে দখল করে নিয়েছে কপালের বহু জমি। জিহ্বার দৈর্ঘ্য বাড়ছে। মুখের ভেতরে জমি সংকট। জিহ্বা বের হয়ে আসতে চাইছে মুখের বাইরে। অথচ এইমাত্র; পায়ের লাথিতে চেয়ার ফেলে দেয়ার আগ পর্যন্ত আমার সবচে অনুগত বন্ধু ছিল সে। চুপচাপ বসে থাকত ভেতরে। অথচ...
কিন্তু তার আকার ছিল লম্বা লকলকে লাল। দু’পাটির চারটি দাঁতই ধারাল। নিঃশ্বাসে ফোঁস ফোঁস। শরীরে আঁশ। পিচ্ছিল। গোল দৃষ্টি। ঘাসের আড়ালে এঁকেবেঁকে গড়িয়ে চলা কালো জীব। ...তার জন্য কি আমি দায়ী ছিলাম? এই যে এখন দড়িতে ঝুলন্ত। কেন? কী পাপ করেছি। নিজেকে কেন শাস্তি দিচ্ছি। তবে কি সহোদরার শাড়ি খোলার জন্য? সেটা কি পাপ ছিল? নাকি যে ভয়ে সে শাড়ি খুলেছিল সে ভয় ছিল ভাতের। তাই? ভাতের ভয়। ঘরের ভয়। বড়ো আদিম। বড়ো মৌলিক ভয়। আদিম অস্ত্র ছাড়া আমার হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না
তরুণী বোন। নাকি তার লাশ? ছটফট করছে বিছানায়। অশ্র“। এত জল কোথায় পেলো সে? সে কি চেয়েছিল আমাকে বন্যায় ভাসাতে? তার পরের দিনগুলো ছিল তার কান্নার। নির্বাক। এবং এ কান্না আর আমার চোখে পড়ল না সে কোথাও চলে যাবার পর। শুনেছি একটা ভালো বেশ্যাপাড়ায় আছে। বোকা মা কান্নাকাটি করে বলত মেয়েকে খুঁজে আনতে। আমি ঘুরে এসে বলতাম পাইনি। সেও খুঁজেছে কিছুদিন। এক সময় নীরব এবং চূড়ান্ত নীরব তারপর
মা কি কিছুই বোঝেনি? একদম না? বোনটি যখন ছিল কান্নার রোগী তখনও না? হয়ত। হয়ত না। সন্তান জন্ম দিলেই মানুষ কিছু বোকা হয়ে যায়। অথবা বোকা না হলে
সন্তান জন্মের ক্ষমতা আসে না
কিন্তু আমি কি চেয়েছিলাম সহোদরার বিছানা নোংরা করে দিতে? আমিতো চেয়েছি আলাদা বিছানা
আলাদা বিছানা ছিল ভাঙাচোরা। আলাদা নারী ছিল পুতুল পুতুল। সে নারী আমার হয়নি। হতে দেয়নি। কে? আমি? নাকি আমার ভাঙা বিছানা?
সে চলে গেল অন্য মোলায়েম বিছানায়। বিছানা। বিছানা তৈরি করে কে? শোনো সেই বিছানার কারিগর। আমি... আমি... বিছানার রাজনীতিবিদ হব
ছোট বোনটি খুব কাছে ছিল...। এবং...। সেদিনই প্রথম টের পেলাম বিবর্তন। আমার শরীরে আঁশ। চিকচিকে পিচ্ছিল। বোনটি স্মরণ করিয়ে দিলো। আমি আর মানুষ নই
সমস্ত শরীর থেকে সরে গেল জনকের ছোঁয়া- জননীর আদর। নতুন পোশাক আমার। আঁশযুক্ত। পিচ্ছিল। ...মাথার চুল নেমে ঢেকেছে কপাল। ঘন দাড়িতে আবৃত মুখ। মোটা ফ্রেমের কালো চশমা চোখে। শার্ট-পেন্ট-জুতা-মোজা-গ্লাভস। ব্যাস। বাইরে থেকে কেউ আঁশ দেখবে না আমার
দু’মাসের মধ্যে নিঃশ্বাসে ফোঁস ফোঁস শব্দ টের পেলাম। জিহ্বা লকলকে হলো। দুপাটির ছেদনদাঁত হলো বর্শা। মাড়ির ভেতরে বিষথলি। অভ্যাস করলাম পিচ্ছিলতর প্রাণীর মতো বুকে মাটি ঠেলে হাঁটার। পেছনের ছোট ফোঁকর গলে চলার
কী চমৎকার। ...একটা বাড়ির চাকর
গর্বিত তিন সন্তানের বাবা-মা বুড়োবুড়ি। দেশে পাহারা দিচ্ছে অঢেল সম্পত্তি। সন্তানরা বাইরে। আমি ওদের সেবা করি। বুড়োর সিগনেচার নিয়ে ব্যাংকে যাই। টাকা তুলি। বাজার করি। দুজন চাকর বিদেয় হলো আমার হাতে চুরিতে ধরা পড়ে। বুড়োবুড়ির বিশ্বাস বন্ধক পেলাম। তাদেরকে বাবা এবং মা বলে ডাকি। তারা সন্তুষ্ট। তাদের শেষ জীবনে তাদের জন্য ভাবার মতো কেউ একজন আছে। আমি আর ঠিক চাকর নই। চাকর-ড্রাইভার-মালি আর গার্ডদের উপরওয়ালা। বাড়ির কনিষ্ঠ সদস্য। মালিকপক্ষ
বুড়ি কিছুটা অসুস্থ। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। ডাক্তার ওষুধ লিখে দেয়। নিজের হাতে খাইয়ে দেই যতœ করে সময় ধরে। একদিন নতুন আরেকটা ওষুধ দিলো ডাক্তার। বোতলটা খুললাম আমার ঘরে এনে। অর্ধেকটা ফেলে দিয়ে অন্য বোতল থেকে আরেকটা ওষুধে ভরলাম শূন্যস্থান। খুব যতেœ চার চামচ ওষুধ কাপে ঢেলে খাওয়ালাম বুড়িকে। বুড়ির ঘরের দরজা ভেতর-বন্ধ। এ ঘরে আমি আর বুড়ি। দুপুরে খেয়ে বুড়ো ঘুমুচ্ছে অন্য ঘরে
বুড়ি ছটফট করছে। আমি দর্শক। আমাকে বলল ডাক্তারে খবর দিতে। আমি চুপচাপ। বুড়ি বুকে ধরে বমি করছে। এখন বলছে হাসপাতাল-ক্লিনিক। আমি নীরব। বুড়ি নিজেই দরজা খুলতে চাইল। আমি ধরে এনে বসিয়ে দিলাম বিছানায়। চিৎকার করতে চাইল। মুখে হাত চাপা দিলাম। চেপে শুইয়ে দিলাম। ধরে রাখলাম পেশাব-পায়খানায় গড়াগড়ি করে নিস্তেজ না হওয়া পর্যন্ত
এবার আমি সরব। চিৎকার। এক টানে বুড়িকে পাঁজাকোলা করে দরজা খুলে বাইরে। আমি চিৎকার করছি। চেঁচাচ্ছে চাকররাও। বুড়োর ঘুম ভেঙে গেছে। ড্রাইভার...
বমি আর পায়খানায় লেপ্টে আছি আমি। এক দৌড়ে সিঁড়ি ভেঙে নিচে এবং লাফিয়ে গাড়িতে। ক্লিনিক
আমাকে নামিয়ে গাড়ি ফিরল বুড়োকে আনতে। ডাক্তার পরীক্ষা করল। দুঃখিত। শুনেই এক চিৎকারে আমি অজ্ঞান। টের পেলাম আমাকে নিয়ে টানাটানি হচ্ছে। বুড়োর স্বর যখন শুনলাম তখনও আমার জ্ঞান ফেরেনি। যখন ফিরল। দেখলাম পাশে বুড়ো। উঠেই আমি হাউমাউ। বমি-পায়খানায় লেপ্টে জড়িয়ে ধরলাম বুড়োকে। বুড়ো আমাকে
সান্ত্বনা দিলো। শান্ত হলাম। ম্লান মুখে শুরু হলো ঘটনার ধারাবিবরণ; নতুন বোতলের ওষুধ খাওয়ানোর সাথে সাথেই বমি এবং... তারপর ক্লিনিক। তারপর... তারপর... আমি অজ্ঞান। ডাক্তার বলল ওষুধটা বিষাক্ত ছিল। বিষক্রিয়ায় মারা গেছেন তিনি
ছেলেমেয়ে এল আমার ফোন পেয়ে। দাফন। আমার পরামর্শে বড়ো ছেলে মামলা করল ওষুধ কোম্পানী আর ডাক্তারের নামে। এবং তাদের যাবার সময়। আরো মুষড়ে পড়া বুড়োর সম্পূর্ণ দায়িত্ব দিয়ে গেল আমার উপর। বলল আমি তাদের আরেক ভাই। আমি কথা বলছিলাম না। কাঁদছিলাম। সান্ত্বনা দিলো ওরা- সবাইতো একদিন না একদিন মরবেই। শান্ত হও। শান্ত হও। তবুও শান্ত হতে পারলাম না আমি সবাই চলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত
সবাই চলে গেলে আমি আরো ঘনিষ্ঠ হলাম বুড়োর। তাকে পত্রিকা পড়ে শোনাই। চিঠি পড়ে শোনাই। আগের কাজগুলোও করি। মাঝে মাঝে বুড়ো চশমা ছাড়াই চেকে সই করে। আমি ব্যাংকে যাই। ভাড়া বাসাগুলোর ভাড়া তুলি। এখন মাসিক বেতন নিতেও অস্বীকার করি। একদিন বললাম ভাড়াটিয়ারা আমাকে ভাড়া দিতে নারাজ। তারা বলে আমি কে। শুনে বুড়ো ঠিক করল আমাকে লিখিত তত্ত্বাবধায়ক করে দেবে। উকিল ডেকে সে অনুযায়ী কাগজপত্র তৈরি হলো। কিন্তু সই করার সময় বুড়োর চশমাজোড়া কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। দুটো চাকরকে মারধর করলাম রেগে। রান্না করার যে মেয়েটা বাচ্চা নিয়ে কাজ করতে আসে। তাকে তাড়ালাম বাচ্চাকে চোর বানিয়ে। তারপর বুড়োই আমাকে শান্ত করল। বলল পড়ে শোনাতে। শোনালাম। বুড়ো কলম চাইল। কলম আনার জন্য উঠে এলাম আমি। নিজের ঘরে এসে কাগজটা বদলালাম। তারপর কলম তুলে দিলাম বুড়োর হাতে। বুড়ো সই করল আমার দেখিয়ে দেয়া জায়গায়
বুড়ো জাগে খুব ভোরে। সবার আগে। নিচে বাগানে হাঁটে রোদ ওঠার আগ পর্যন্ত। অথবা ইজি চেয়ারে বসে থাকে
শেষ রাতেই তার দরজায় বসে থাকলাম। জ্যাকেটের ভেতরে চার কোণা রড। পিতলের পাত লাগানো সিঁড়ির কোণাগুলোর যে আকৃতি আমারটারও তাই
ঘুম ভেঙে বুড়ো দেখল আমাকে। যদিও সে হাঁটতে পারত ভালোই তবুও তাকে ধরে এগুতে লাগলাম সিঁড়ির দিকে। বুড়ো সামনে। আমি পেছনে। সিঁড়ির মুখে এসে হঠাৎ তার চুলের মুঠো ধরে টান দিলাম পেছনে। বুড়ো কিছু বোঝার আগেই তার টানটান কণ্ঠনালীতে ধা করে বসিয়ে দিলাম সেই রড। তারপর টেনে শুইয়ে মুখ চেপে রাখলাম যাতে শব্দ না হয়। অন্য হাতে চেপে রাখলাম শ্বাসনালী। দরকার ছিল না। তবুও। বুড়ো এমনিতেই আর শ্বাস নেয়নি। একবার শুধু আমার দিকে তাকিয়ে নিস্তেজ হয়ে গেল
নিশ্চিত হয়ে তাকে দাঁড় করালাম সিঁড়ির মুখে। তারপর ধাক্কা মেরে ছেড়ে দিলাম নিচে। গড়াতে গড়াতে এক জায়গায় আটকে গেল বুড়ো। আমি গিয়ে আবার শুয়ে পড়লাম আমার ঘরে চুপচাপ
ঘণ্টাখানেক পরে হৈচৈ। আমি শুয়ে আছি রাতের পোশাকে। শীতের দিনে আমার উঠতে আরো ঘণ্টাখানেক বাকি। কেউ এসে দরজা ধাক্কাল। আমি নীরব। আবার। আবার। এবার ঘুম জড়ানো কণ্ঠে ধমক লাগালাম। কিন্তু বাইরে আরো ধাক্কা-ধাক্কি। ডাকাডাকি। সর্বনাশ-সর্বনাশ শুনলাম কয়েকবার। একরাশ বিরক্তি নিয়ে দরজা খুললাম শীতের সকালে গেঞ্জি ট্রাউজার আর স্পঞ্জের স্যান্ডেল পরে
পরের কাজ মুখস্থ। দৌড়ে সিঁড়ি। ঝাঁপিয়ে লাশ তুলে শোয়লাম সোফায়। কেউ একজনের মুখে- সব শেষ শুনে কান্না। হঠাৎ কেউ বলল থানা। লাফিয়ে পড়লাম টেলিফোনে
পুলিশ এসে দেখল প্রচণ্ড শীতে কাঁপছি-কাঁদছি। স্যান্ডেলটিও এখন পায়ে নেই। যে চাকরটা প্রথম দেখেছে তাকে ওরা কিছু জিজ্ঞেস করল। পিতলে বাঁধানো সিঁড়ির কোণা পরীক্ষা করল। কণ্ঠনালীর আঘাত পরীক্ষা হলো। বলল সিঁড়িতে পড়ে কণ্ঠনালীতে আঘাত পেয়ে মারা গেছেন। লাশ মর্গে নিতে হবে। আমি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম। দোহাই আপনাদের। বাবা বড়ো কষ্ট পেয়ে মরেছেন। তাকে আর কাটা-ছেঁড়া করবেন না
পুলিশ অফিসার হাসল। আমাকে টেনে নিলো এক পাশে। কিছু কথা বলল। আমি আমার ঘর থেকে ফিরে এসে একটা প্যাকেট তুলে দিলাম তার হাতে। চলে গেল তারা
এলাকার লোকজন নিয়েই দাফন হলো। সপ্তার ভেতরে এল ছেলেমেয়ে। নীরবে থাকল মাস খানেক। তাদের যতœ করলাম। একদিন হিসেব চাইল। একটা দলিলের ফটোকপি বের করে দিলাম। মরার আগে স্থাবর-অস্থাবর সব কিছু তিনি উইল করে দিয়ে গেছেন আমাকে। ওরা বিক্ষুব্ধ। মানতে চাইল না। অবিশ্বাস। চিৎকার। আমি চুপচাপ বেরিয়ে এলাম। তখন রাত। পরদিন পুলিশ ওদেরকেই বের করে দিলো
সেই থেকে আমি আছি মোটামুটি নির্ঝঞ্ঝাট। আমার এখন মোলায়েম বিছানা। তুলতুলে। জেনে গেছি পুরো পৃথিবীটাই আমার হতে পারত। হয়নি। পূর্বপুরুষ বোকা ছিল। নির্বোধ। তাই ভাড়া করা ছাপড়াতে মরেছে জনক। কবরের জায়গাও ছিল না নিজের। তার কবরে এখন হয়ত হাড়গোড় ফেলে দিয়ে তৈরি হয়েছে আরেক নির্বোধের কবর। এভাবে চলবে অনন্তকাল। এক নির্বোধ চাপা পড়বে আরেক নির্বোধের নিচে। এক নির্বোধ ঢেকে দেবে আরেক নির্বোধের নাম-ধাম-পরিচয়। কিন্তু আমি জনতার কাতারে আর জনগণ হব না। আমি একজন। খেলা করা মানুষ
খেলা। মগজ নিয়ে মগজের খেলা। মজা। এবং আনন্দ আর তরতর করে সিঁড়ি বাওয়া। মানুষকে দিয়ে মানুষ খাওয়ানো। ভেড়া বানানো। পুতুল। পুতুল দিয়ে পুতুল খেলা.... অভিশাপ?
দেয়তো অভিশাপ। অনেকেই দেয়। কিন্তু অভিশপ্ত হবার মতো সময় কোথায়। পুরোদমে সাপ। চেহারা ঢাকার আর প্রয়োজন নেই। অসংখ্য ছোট ছোট সাপ সারাক্ষণ কিলবিল করে আমার আশেপাশে। তারাই আমাকে পাহারা দেয় কিংবা আড়াল করে রাখে দরকার মতো
কারা যেন বলে পৃথিবী মানুষের রাজত্ব। কথাটা ভুল। পৃথিবীতে মানুষ নামে কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব নেই। আছে শুধু সাপ আর ভেড়া। সাপেরা প্রয়োজনে ভেড়ার মাংস কেটেকুটে খায়। বিক্রি করে দোকানে ঝুলিয়ে। আর মারা যাবার সময় ভেড়ারা এই ভেবে তৃপ্তি পায় যে তারা কুরবানি হচ্ছে বৃহত্তর স্বার্থে। এ একটা সান্ত্বনা। শহীদের মহান মর্যাদা পাবার একটা অমূল্য সুযোগ ভেড়াদের জন্য
ব্যাপারটা চমৎকার। ভেড়ারাই ভেড়াদের টাইটেল দেয় বীর এবং শহীদ। এবং আরো চমৎকার। দাঁতভাঙা সাপরাও মাঝে মাঝে ভেড়া হয়ে যায়। আবার ভেড়া থেকেও কেউ কেউ দ্রুত সাপে পরিণত হয়
মা আর মেয়ে। মানুষ দুটো সাপ গোত্রের হলেও আমি তাদেরকে ভেড়ার দলে পাঠিয়েছি আবার। কিছু সাপের ভেতর থেকে ভেড়ার আচরণ কোনো দিন যায় না। আমার এক সাপ বন্ধু একদিন খাঁটি ভেড়ার মতো আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলো তার পাবদা মাছের মতো টসটসে সুন্দরী বৌর সাথে। তার সাথে কচি শসার মতো টিনএজ মেয়ে
বন্ধুটির বিবর্তন তরান্বিত করলাম। তারপর তার বৌর কাছে যেতে মনসার কতো ফোঁকড়। মেয়ের কাছে আমার ডাকনাম মামা। একদিন খেলা খেলা খেলা। ভাগ্নির সম্মানে বিছানার একটা চাদর ফেলে দিতে হলো খেলা-খেলার লাল রংয়ে রঙিন হয়ে ওঠায়। তারপর খেলা খেলা খেলা। এবং খেলা
কিন্তু কেন যেন ভাগ্নির মা আর আমাকে সহ্য করতে পারত না। হয়ত মেয়ের সামনে সে ছিল নিতান্তই ম্লান। তাই। মেয়ের ছিল ক্রমশ ফুটে ওঠার দিন। একদিন গেলে তার একটি একটি নতুন পাপড়ি ফোটে। আর মায়ের ছিল ঝরবার দিন। একদিন গেলে একটি করে পাপড়ি খসে যায় তার। কী কষ্ট। কী কষ্ট রে সাপ-মানুষ-ভেড়া কিংবা ভেড়া-মানুষ-সাপ। ভয়ংকর কষ্ট। যন্ত্রণা। ক্রমশ নিজের নিঃশেষ হয়ে যাবার ছবি দেখা। আর সেই ছবি আরো নারকীয় যখন চোখের সামনে শনৈ শনৈ বাড়ে প্রতিদ্বন্দ্বীর ঐশ্বর্য
দারুণ লাগে আমার
সে বাড়িতে আমার অবাধ যাতায়াত। গৃহকর্তার বিশ্বস্ত বন্ধু। মেয়ের আশ্চর্য শুভাকাক্সক্ষী মামা। অবশ্য ভাগ্নির মা আমাকে নিষেধ করত। কিন্তু মাঝে মাঝেই তার নিষেধের ঠোঁট বন্ধ করে দিতাম। সে আবার গলে যেত। প্রসাধনে নিজেকে যোগ্য করে তুলত আবার মেয়ের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতার। দারুণ মজার খেলা। দারুণ
আমার দুই প্রেমিকার স্বামী এবং বাবা হঠাৎ নিখোঁজ হলো একদিন। তারপর আর ও বাড়িতে যাইনি আমি। সাবধান। বরাবর সাবধান। মেয়েটি আসত আমার বাসায়। বাসায় কেন যাই না। প্রশ্ন করলে বলতাম তোমার মা পছন্দ করেন না। ব্যাস। বিশ্বাস করত। কী চমৎকার ভেড়া। কাঁচা খাও। মদ বানিয়ে খাও। রোস্ট করে খাও। ইচ্ছে হলে চাটনি করে চেটে চেটে খাও। খেয়ে খেয়ে এদের জন্মকে সার্থক করে দাও। পূর্ণ করে দাও
বন্ধুটি বেঁচে থাকতেই তার বৌ আমাকে অভিশাপ দিয়েছিল। মেয়ে দিলো যখন তাকে আর আসতে নিষেধ করলাম তখন। আমার কানে কিছুই যায়নি। সবারইতো একটা
সান্ত্বনার পথ থাকা উচিৎ
কিন্তু চল্লিশ বছর বয়স। ... আমার। ...এখন। এবার আমাকে বয়সের ঢালু সিঁড়ি বেয়ে নামতে হবে ওপারে। নিচে। অসহ্য। অসম্ভব। নিজের নিঃশেষ হওয়া আমি দেখব দাঁড়িয়ে? শত্র“রা হাসবে। তাদের অভিশাপ কার্যকর হয়েছে ভেবে তৃপ্তি পাবে? অসম্ভব। আমি নামতে আসিনি। উঠতে এসেছি। আমি সেখান থেকে নেমে যাব প্রকৃতির নির্দেশে? অসম্ভব। আমি প্রকৃতি মানি না। আমার আশপাশে কিলবিল সাপ; আমারই উচ্ছিষ্টে বেঁচে থাকা। শেষমেশ তাদের দাঁত বসবে আমার দেহে? আর আমি চমৎকার ভেড়া সেজে অভিশাপ দেবো? ঠাটা পড়- ঠাটা পড়। হেই আল্লা- হেই ভগবান- হেই ঈশ্বর ঠাটা ফেলে মেরে ফেল্ তাকে?
না। বিজয়ী মানুষ নিজেকে অভিশাপ দেয়ার সুযোগ করে দেয় না
আমার চল্লিশ বছর বয়স। উচ্ছিষ্ট রেখে যাচ্ছি শেয়াল-কুকুরের জন্য। ভেড়ারা উচ্ছিষ্ট কুড়িয়ে খেতেও জানে না। হাতি মরলেও মূল্যবান। তার মৃতদেহে পুষ্টি পায় অসংখ্য দাঁতাল পশু। আমার টাকা। বাড়ি-গাড়ি নিয়ে কাড়াকাড়ি করবে সাপ-কুকুর-শেয়াল। আর সেই মেয়েটি। আমার সহোদরা। তাকে দিয়েছি মাত্র একটি অংশ। এতেই তার তিন-জন্মের সমৃদ্ধি দেখে সে পাগল। সে কৃতজ্ঞ। বিশ্বাসঘাতক ভাই কিংবা সাপ সহোদর বলে ঘৃণা করতে পারেনি সে। ভেড়াদের মগজে ঘৃণা নেই। তারা দান নিতে খুশি। দাতার পরিচয়ে দানের মাহাত্ম হেরফের হয় না ভেড়াদের কাছে
আমার প্রথম প্রেমিকা। আমার দাঁতে বিষ জমার প্রথম দিকেই যে হঠাৎ বিধবা হয়ে গেল। তার মেয়ের জন্য এক অংশ। বিধবার মেয়েদের হাতে পয়সা থাকলে তারা খুব চমৎকার পুতুল হয়। ওর মেয়েও তাই হবে। এবং বাকি সব নতুন নতুন চক্রান্ত-খুন-হত্যা এবং প্রতারণার মাঠ হবার জন্য উন্মুক্ত রইল। আমার লাশও তার মধ্যে একটি। যদি কেউ বুদ্ধিমান থাকে তো প্রথমেই দখল করবে আমার মৃতদেহ
একচল্লিশতম জন্মদিন আজ। আমার মাথার উপর সিলিং ফ্যানের হুক। একটি শক্ত নাইলন দড়ি ঝুলে আছে তাতে। ...বুলেট চলত। কিন্তু বড়ো দ্রুত কাজ সারে সে। বিষে দুর্গন্ধ। তাছাড়া ফাঁসে ঝুললে শূন্যে ঝোলা যায়। আমার জন্ম মাটিতে। আমি থেকেছি অনেক উপরে। আমার মৃত্যুও হবে উপরে। শূন্যে
যে চেয়ারে উঠে দড়িটা পরেছি গলায় পায়ের লাথিতে ওটা এখন অনেক দূরে পড়ে আছে। এবং...
এই মাত্র আলোকিত ঘরে লোডশেডিং
১৯৯৪.০২.১৬-২০ বুধ- রোববার
............................................
উকুন বাছা দিন
প্রকাশক- শুদ্ধস্বর। প্রচ্ছদ- শিশির ভট্টাচার্য্য। ২০০৫