somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার লেখা প্রথম গল্প একটু পড়লে খুশি হব .................... "মাছিদ"

১৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাছিদ
মাজেদ সাহেব একটা বিষয় নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে চিন্তা করছেন, সেটা হল মাছির ঘ্রান শক্তি। চিন্তার সাথে সাথে তার মধ্যে বিরক্তিকর ভাবও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণ একটি মাছি তাকে বিরক্ত করছে। নাকের উপর বসে, আবার উড়ে যায়। তিনি সেটাকে তাড়াতে পারছেন না। তার হাত চাদেরর মধ্যে। তিনি শীতের সকালে হেলান দিয়ে চেয়ারে বসে রোদ তাপাচ্ছেন। শীতের কারণে হাত বের করতে ইচ্ছে করছে না, আবার মাছির জ্বালাতনও তিনি সহ্য করতে পারছেন না।
মাছির ঘ্রান শক্তি প্রখর। কোন জায়গায় যদি খাবারের গন্ধ পায় সেখানেই ছুটে যায়। প্রথমে একটা মাছি আসে,কিছুক্ষন পর আবার একটা মাছি, এভাবে অনেক মাছির সমাগম হয়। এদের মধ্যে যোগাযোগ অনেক ভাল। আচ্ছা, এদের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম কি? মানুষের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম যেমন টেলিফোন,মোবাইল,ইন্টারনেট। তেমনি মাছিদেরও কি এমন কোন প্রযুক্তি আছে, যা তারা ব্যবহার করে? মাছিরা কি সাধারণত মিষ্টি জিনিস পছন্দ করে কারণ বেশির ভাগ মাছিকেই দেখা যায় মিষ্টি জাতীয় খাবারের উপর ঊড়ে বেড়াতে। কিন্তু মাজেদ সাহেব সকাল থেকে কোন মিষ্টি জাতীয় খাবার খান নি। শুধু তেল মাখা মুড়ি খেয়েছেন।চা
খাবার কথা ছিল,কিন্তু চা এখনও আসেনি। না আসার কারন তিনি বুঝতে পারছেন না। আগে একটা মাছি ছিল, তার সাথে আর একটা মাছি যোগ দিয়েছে। প্রথম মাছিটা তাকে খবর দিয়েছে, এখন দুইটা মাছি তাকে আক্রমণ করছে। তাদের হাত থেকে বাঁচার কোন চেষ্টা তিনি করছেন না।
মাজেদ সাহেব ভাল করে লক্ষ্য করলেন, মাছি দুইটির হাত আছে এবং তারা অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করছে।তাদের একজন সাংকেতিক ভাবে কথা বলছে মাউথস্পীকার এর মাধ্যমে। আর এক জন নাকের উপর বসে পিঠ ব্যাগ থেকে কি সব বের করছে। মাজেদ সাহেব দেখতে চেষ্টা করছেন মাছি গুলো কি করে, কিন্তু তিনি ভালভাবে দেখতে পারছেন না। তার দৃষ্টি ঘোলা হয়ে আসছে। তিনি চেষ্টা করছেন দৃষ্টি ঠিক রাখতে কিন্তু তিনি পারছেন না। প্রথম মাছিটা মাজেদ সাহেবের নাকের উপর ইনজেকশন দ্বারা “বেস্করমা” ভাইরাস পুশ করল। অবাক কাণ্ড! মাত্র ৩ সেকেন্ড এর মধ্যে তিনি অতি ক্ষুদ্র মাছিতে পরিনত হয়ে গেলেন। তার দুইটা পাখা গজিয়েছে। এর মধ্যে অনেক মাছি চলে এসেছে। মাজেদ সাহেব এর খুব আনন্দ হচ্ছে।তিনটি সামরিক মাছি তাকে নিয়ে গিয়ে বিশেষ যানে উঠালেন। যানের ভিতর সাদা বাতি জ্বলছে। দুইটা মাছি সেই যান নিয়ন্ত্রণ করছে। একটা বড় মাছি তার দিকে এগিয়ে আসছে। তার পরনে সামরিক পোশাক ও অনেক ব্যাজ। সে হয়তো এই অভিযানের প্রধান। সে মাজেদ সাহেবের সামনে এসে দাড়াল এবং অন্য মাছিদের সাংকেতিক ভাষায় চলে যেতে বলল।তারা তারা চলে গেল। প্রধান মাছির মুখ খুব গম্ভীর। মাজেদ সাহেব কে সে সন্মান জানিয়ে বলল, “আমাদের দুনিয়াতে আপনাকে স্বাগতম। আপনার নাম এখন থেকে মাছিদ”। মাছিদ নামটা যেন চারিদিকে প্রতিধ্বনিত হল। “ মাছিদ,মাছিদ,মাছিদ.........”।
তিনি চোখ মেলে তাকালেন।তার কাজের ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে, হাতে এক কাপ চা।আসে পাশে তাকিয়ে দেখলেন কোন মাছি নাই। তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।কাজের ছেলেটা এখনও দারিয়ে আছে। তাকে যতক্ষন যেতে না বলা হবে সে যাবে না।
চেয়ার থেকে সোজা হয়ে বসে তিনি ঘড়ি দেখলেন। ঘড়িতে ১০:২৬ টা বাজে। চায়ের কাপটা নিয়ে কাজের ছেলেকে বিদায় করলেন।
মাজেদ সাহেবের চা মুখে দিতেই মনে পড়লো তার ছেলে আজ বিদেশ থেকে আসছে। আজকের তারিখটা তিনি মনে করার চেষ্টা করলেন কিন্তু পারলেন না। তবে আজ একটা বিশেষ দিন, সেটা মনে করতে পারছেন।এই দিনে তার প্রিয় মানুষ টিকে পৃথিবী থেকে হারিয়েছিলেন।তার ছেলে শুধু এই দিনটিতেই দেশে আসে। তিনি চাকরী থেকে অবসর নিয়েছেন দুই বছর হল। সারাদিন তিনি বাড়িতেই থেকন বলে মাথার ভিতর আজেবাজে চিন্তা ভর করে। তিনি স্বপ্নর কথা মনে করলেন এবং মৃদ হাসলেন।ছেলেকে এয়ারপোর্ট থেকে আনতে যেতে হবে। ছেলের আসার কথা দুপুর ১২টার সময়, এখনও অনেক সময় আছে। তিনি গোসল সেরে সকালের নাস্তা করলেন।
দুপুরে কি খাওয়ার আয়োজন করা যায় তা নিয়ে চিন্তা করা যেতে পারে। হাসানের মায়ের প্রিয় খাবার রান্না করা যেতে পারে। তাতে হাসানের মন খারাপ হয়ে যেতে পারে,তাতে কি? তাতে কিছু যায় আসেনা। তিনি কাজের ছেলেকে বাজারের তালিকা দিলেন এবং ড্রাইভার মিজানকে গাড়ি বার করতে বললেন। মিজান অনেক দিনের পুরান লোক, কিছুটা মাই ডিয়ার টাইপ।
মাজেদ সাহেব ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি পরলেন।আজ তার সবচাইতে কষ্টের দিন। সেক্ষেত্রে নীল রং এর কিছু পরতে পারতেন কিন্তু নীল রঙ তার একদম পছন নয়।এমন কি হাসানের মায়েরও নীল রঙ একদম পছন্দ নয়।
প্রথম বার তিনি তার ছেলের বউকে দেখবেন,এর আনন্দও কম না।হাসান বাবা মার বিনা অনুমতিতে বিয়ে করেছে।ওর মায়ের ইচ্ছে ছিল ছেলেকে নিজের হাতে বিয়ে দেবেন।তা আর হয়নি, হয়তো আল্লাহতালা তা চাইনি।চার বছর হল ছেলে বিয়ে করেছে,এর মধ্যে সে একবারও তার বউকে দেশ এ নিয়ে আসে নি।
ঢাকা শহরের অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। প্রধান সমস্যা যানজট। মাজেদ সাহেবের শাহাবাগ থেকে ফার্মগেট আসতে এক ঘন্টা সময় লাগলো। আজ মনে হয় যানজট খুব বেশি।গাড়ী আর নড়ছে না। তিনি গা এলিয়ে দিয়ে বাইরে তাকালেন।
মানুষ জন ব্যাস্ত ভাব্র হাঁটাচলা করছে।মানুষ গুলোর পাখা আছে এবং চেহারা কিছুটা বিকৃত। চার পা, দুই হাত আর দুইটি পাখা আছে। বেশ মজার। তিনি পিঠে হাত দিলেন, তারও পাখা আছে। তিনি পাখা নাড়াবার চেষ্টা করছেন,জায়গা ছোট বলে পাখা নাড়াতে কষ্ট হচ্ছে।পাখা একটু ছিড়ে গেল। তাতে কি, তিনি উড়বেন এটাই বড় ব্যাপার।হঠাৎ খেয়াল করলেন তিনি উড়তে পারছেন। উড়তে উড়তে আচমকা তিনি একটা বিদ্যুতের খুটির সাথে ধাক্কা খেলেন.........।
“মিজান ! এত জোরে ব্রেক করলে কেন?”
“ছার, সামনের গাড়ি ব্রেক করলি আমি কি করব?”
তিনি ঘড়ি দেখলেন, এখন বাজে ১২:৫৬ মিনিট। গাড়ীটা এখন বেশ গতিতেই এগুচ্ছে।
“বিমান বন্দর যেতে আর কত সময় লাগতে পারে মিজান?”
“ছার বেশি সময় লাগবে না, খুব জোর ৩০ মিনিট লাগতে পারে”।
মিজানের কথা মিথ্যা হয়নি। তিনি ঘড়ি দেখলেন, ১:১৫ মিনিট বাজে। গাড়ি থেকে নেমে তিনি দাড়াতে চেষ্টা করলেন,কিন্তু পারছেন না।পা কেমন অসাড় লাগছে। তিনি চারিদিক দেখতে চেষ্টা করলেন, কিছু ঝাপসা আবার কিছু পরিষ্কার।
মিজান বলল,“ ছার, ভাইজান আসছে, সাথে বিদেশী মেডাম,একটা ছোট মেয়েও আছে।“আলাহ! কি সুন্দর দেখতে মেয়েডা”।
মাজেদ সাহেব ভালভাবে দেখার চেষ্টা করলেন, কিন্তু কিছুই দেখতে পারলেন না।তার মনে হল তিনটা মাছি তার দিকে এগিয়ে আসছে, তাদের মধ্যে একটা ছোট মাছি,দুইটা বড় মাছি। মাছি গুলা প্রায় কাছে চলে এসেছে। ছোট মাছিটা তার নাম ধরে ডাকছে “মাছিদ - মাছিদ - মাছিদ”। এত ছোট মাছি তাকে নাম ধরে ডাকবে! মাজেদ সাহেবের খুব রাগ হতে লাগল। তবে শুনতে খুব ভাল লাগছে। বাচ্চাটির কন্ঠ খুব মিষ্টি এবং সুরেলা। তিনি ছোট হাতের ছোয়া অনুভব করলেন। কিন্তু হটাত তিনি খেয়াল করলেন, তিনি তাদের থেকে কেন যানি দূরে সরে যাচ্ছেন,কেন? তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করলেন ছোট হাতটি ধরে রাখার জন্য কিন্তু তিনি পারছেন না। তিনি আবার চেষ্টা করলেন,কিন্তু পারছেন না প্রতিবারই তিনি ব্যর্থ হচ্ছেন।
আস্তে আস্তে তিনি দূরে সরে গেলেন। তাঁর মাথা ভিতর মাছিদ মাছিদ ডাকটা ক্রমেই বাড়তে থাকে। একটি বিন্দুতে পরিনিত হয়ে যাচ্ছেন তিনি আর শব্দটা.........
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×