২০১১ সালে আরব বসন্তের পর উত্তর আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ তিউনিসিয়ায় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু হলেও সাম্প্রতিক সময়ে আবার দেশটি স্বৈরশাসনের পথে হাটছে। গত ৬ই অক্টোবর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদ ৮৯ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হন। এই নির্বাচন কে ঘিরে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচন কমিশন ও আদালতের অধস্তনতা, প্রার্থী বাছাইয়ের জটিল প্রক্রিয়া, প্রতিযোগী প্রার্থীদের গ্রেপ্তার, ভোটের দিন রাস্তায় বিক্ষোভ এবং তিউনিসিয়ার নির্বাচনের ইতিহাসে কম সংখ্যক ভোটার উপস্থিতি নির্বাচন কে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
আরব বসন্তের মাধ্যমে দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা বেন আলীর পতনের পর মূলত তিউনিসিয়ার গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।এর ধারবাহিকতায় ২০১৯ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে জয়ী হন কাইস সাইদ। ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকেই কাইস সাইদের মধ্যে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। ২০২০ সালে করোনা, বেকারত্ব বৃদ্ধি , পানির সংকট এবং প্রধান রাজনৈতিক দল আননাহদার সাথে অন্য দলগুলোর মতানৈক্যের সুযোগে কাইস সাইদ ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী হিশাম মেসিসির সরকাকে বরখাস্ত স্বঘোষিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন। এরপর তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দেন।এই অভ্যুত্থান কে সমর্থন দিয়েছিল ও টিকিয়ে রেখেছিল সেনাবাহিনী। ২০২১ সাল থেকে দেশটিতে ডিক্রি দ্বারা শাসন চলছে। কাইস সাইদ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের একক ভাবে সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন।পূর্বে প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা ভাগাভাগি ছিলো।
২০২২ সালে কাইস সাইদ পার্লামেন্ট নির্বাচন দেন। এই নির্বাচনে বড়ো কোনো দলের অংশগ্রহণ এবং ভোট দিতে দেখা যায় নি। মাত্র ৮ শতাংশ ভোট পড়েছিল। তবুও কাইস সাইদ তার সরকার চালিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। বর্তমানে তিউনিসিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ, বেকারত্ব ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি, পানির সংকট এবং রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশটির শাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
অনেকে গত ৬ই অক্টোবরের নির্বাচনে কাইস সাইদের নিরঙ্কুশ বিজয়কে দেশটিতে স্বৈরশাসকের দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার অভাস হিসাবে দেখছে।কাইস সাইদ নির্বাচন কমিশন কে ব্যবহার করে জনপ্রিয় প্রার্থীদের প্রার্থীতা বাতিল করিয়েছেন। নির্বাচননের দিন বিরোধী দলের নেতা আয়াচি জামিল কে ভুয়া স্বাক্ষর দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। দেশটির এই অরাজক পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর সাথে আমেরিকার সখ্যতা বেড়ে চলছে। ব্যয় বৃদ্ধির কারণে যতই প্রশাসনে নিয়োজিত থাকা ব্যক্তিদের ছাটাই করা হচ্ছে ততই দেশটিতে সামরিক শক্তিকে নীতিনির্ধারকের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে।