somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষুদ্র ঋণের দায় মেটাতে কিডনি বিক্রি

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি শুরু হয় এক সপ্তাহ থেকে। অর্থাৎ বিনিয়োগের আগেই মূলধন থেকে কিস্তির টাকা শোধ করতে হয় কৃষককে। ফলে আসল চলে যায় সুদের সঙ্গে। ফলে আরেক যায়গা থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হন তারা। এভাবে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ে একজন কৃষক। ক্ষুদ্র ঋণ ভালো কাজ করে মুদির দোকানের মতো দৈনিক ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে। যাইহোক ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণের মহিমা পাঠের জন্য বিবিসির এই প্রতিবেদনটি পাঠের আহবান জানাই:

ক্ষুদ্র ঋণের দায় মেটাতে কিডনি বিক্রিক্ষুদ্র ঋণের দায় মেটাতে কিডনি বিক্রি

বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ঋণের বিপ্লব বহু মানুষকে স্বনির্ভর করেছে বলে দাবি করা হয়। কিন্তু জয়পুরহাটের এক নিভৃত গ্রামে কয়েকজন মানুষ তাদের ক্ষুদ্র ঋণের দায় মেটাতে বেছে নিয়েছেন কিডনি বিক্রির মত চরম পথ। বিবিসির সাংবাদিক সোফি কাজিনসের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।

সম্পর্কিত বিষয়
বাংলাদেশ
ঢাকার উত্তরে ছয় ঘন্টার দূরত্বে জয়পুরহাট জেলায় ছবির মতো শান্ত সুন্দর এক গ্রাম কালাই। গ্রামের বুক চিরে চলে গেছে ধূলি ধুসর এক রাস্তা। দুপাশে সবুজ ধানের ক্ষেত। বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি ঘরবাড়ীর বাইরে খেলছে নগ্নদেহ শিশুরা।

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের আরও লক্ষ লক্ষ মানুষের মতো এই শিশুরাও এক কঠিন জীবনের মুখোমুখি। দারিদ্রের চক্র থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এখানে অনেক মানুষ ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থাগুলো থেকে ঋণ নেয়। কিন্তু এই ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে অনেকেই আরও কঠিন সমস্যায় পড়ে।

ক্ষুদ্র ঋণ পরিশোধ করার জন্য অনেকে এমনকি তাদের শরীরের অঙ্গ পর্যন্ত বিক্রি করছেন।

শরীরের অঙ্গ বিক্রির ঘটনা নতুন কোন বিষয় নয়। দক্ষিণ এশিয়ায় দরিদ্র মানুষেরা অনেকদিন ধরেই এই কাজ করছেন। কিন্তু যেটা অজানা, তা হলো ক্ষুদ্র ঋণের দায় শোধ করার জন্যও এখন অনেকে শরীরের অঙ্গ বিক্রির দিকে ঝুঁকছেন।

কিডনি বিক্রয়

মোহাম্মদ আখতার আলমের বয়স ৩৩। তাঁর পেটে ১৫ ইঞ্চি দীর্ঘ একটি কাটা দাগ। তাঁর একটি কিডনি অপসারণ করা হয়েছিল, সেই দাগ রয়ে গেছে শরীরে।

বাংলাদেশে কেবল মাত্র নিজের পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্য কারও জন্য অঙ্গ দান করা বেআইনি।

কিডনি অপসারণের অস্ত্রোপচারের পর যে পরিচর্যার দরকার ছিল, তা ঠিকমত পাননি মোহাম্মদ আখতার। ফলে তার শরীরের অর্ধেক এখন অবশ হয়ে গেছে। তিনি এখন কেবল এক চোখে দেখতে পান। ভারী কোন কাজ-কর্ম করতে পারেন না।


ক্ষুদ্র ঋণ শোধে কিডনি বিক্রি করেছেন মোহাম্মদ আখতার আলম
সংসার চালাতে মোহাম্মদ আখতার এখন একটি ছোট্ট দোকান দিয়েছেন। সেখানে তিনি বিক্রি করেন চাল, ময়দা থেকে শুরু করে বাচ্চাদের জন্য নানা মিষ্টি খাবার।

বছর কয়েক আগে পর্যন্ত মোহাম্মদ আখতার আলম ছিলেন ভ্যান চালক। মোট আটটি প্রতিষ্ঠান থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। এসব ঋণের যে কিস্তি আসতো, ভ্যান চালিয়ে তা পরিশোধ করতে পারতেন না।

এরকম সময়ে একদিন শরীরের অঙ্গ বিক্রির প্রস্তাব এলো তাঁর কাছে।

“আমার ভ্যানগাড়িতে চড়ে লোকটি যাচ্ছিল। সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো কেন আমি এই কাজ করি।”

“আমি তাকে বললাম আমি খুবই গরীব এবং সাত-আটটা এনজিও থেকে আমি ঋণ নিয়েছি। তখন আমার ঋণের পরিমাণ প্রায় এক লাখ টাকার মতো। এনজিওগুলোকে টাকা শোধ দিতে পারছি না। টাকা শোধ করার জন্য আমি বাড়ির ফার্ণিচার, রান্নার হাঁড়ি-কুড়ি পর্যন্ত বিক্রির চেষ্টা করেছি।”

ঋণের চক্র

"এনজিওগুলোর কাছ থেকে যে টাকা ধার নিয়েছিলাম, সেই টাকা শোধ দিতে না পেরেই আমি কিডনি বিক্রি করি।"
মোহাম্মদ আখতার আলম

মোহাম্মদ আখতার আলম এক ঋণের চক্রে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তিনি প্রথমে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেন। সেটা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার পর অন্য এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তা শোধ করার চেষ্টা করেন।

সেদিনের ভ্যানগাড়ির সেই যাত্রী ছিলেন মানুষের অঙ্গ কেনা-বেচার দালাল। লোকটি তাকে চার লাখ টাকায় একটি কিডনি বিক্রি করতে রাজী করিয়ে ফেললো।

এর ১৭ দিন পর মোহাম্মদ আখতার আলম ঢাকার এক বেসরকারি হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেন। তার শারীরিক অবস্থা খুবই সংকটজনক। কিডনি বিক্রি করে যে টাকা পাওয়ার আশা তিনি করেছিলেন, পেয়েছেন তার কয়েকভাগের একভাগ।

“এনজিওগুলোর কাছ থেকে যে টাকা ধার নিয়েছিলাম, সেই টাকা শোধ দিতে না পেরেই আমি কিডনি বিক্রি করি। আমরা গরীব, অসহায় মানুষ। সেজন্যেই এটা করেছিলাম। এখন আফসোস করি, কেন করলাম!”

কালাই গ্রামেরই আরেক বাসিন্দা মোহাম্মদ মোকাররম হোসেন। ক্ষুদ্র ঋণের চক্করে পড়ে তিনিও কিডনি বিক্রি করেছেন।

“এনজিওর টাকা শোধ করতে আমি কিডনি বিক্রি করি।”

মোকাররম হোসেনের কিডনি অপসারণ করা হয় ভারতে। ডাক্তার তাঁকে জানিয়েছিল এতে কোন ঝুঁকি নেই। কিন্তু এখন তিনি কোন ভারী জিনিস কাজ করতে পারেন না।

ঋণ দিয়ে ঋণ শোধ


ক্ষুদ্র ঋণের চক্রে জড়িয়ে যাচ্ছেন অনেক মানুষ
ক্ষুদ্র ঋণকে লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মানুষের ত্রাতা হিসেবে দেখা হয়। জামানত ছাড়া ঋণ নিয়ে গরীব মানুষ যাতে আয়বৃদ্ধি মূলক কাজ-কর্মে লিপ্ত হতে পারে, সেটাই ক্ষুদ্র ঋণের মূল লক্ষ্য।

কিন্তু এই ঋণ মানুষ কিভাবে শোধ করছে, সেদিকে খুব কমই নজর দেয়া হয়েছে। অনেক মানুষ একাধিক ঋণ নেয়ার পর আবার নতুন করে ঋণ নিচ্ছেন কীনা—সেটা জানার কোন উপায় ক্ষুদ্র ঋণপ্রদানকারি সংস্থাগুলোর নেই।

এর ফলে অনেক মানুষ একটা ঋণ শোধ করতে আরেক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে এক চক্রে আটকে পড়েন। এর পরিণামে তাদের কিডনি বিক্রির মতো চরম সিদ্ধান্তও নিতে হয়।

বাংলাদেশে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেচা-কেনার ব্যবসা নিয়ে গত ১২ বছর ধরে গবেষণা করছেন মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির নৃতত্ত্বের অধ্যাপক মনির মনিরুজ্জামান। তিনি বললেন, অনেক মানুষ সংকটে পড়ার পর মনে করে তাদের সামনে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি ছাড়া আর কোন বিকল্প খোলা নেই।

“এনজিওদের কাছ থেকে যারা ঋণ নিয়েছে, তাদের অনেকের ধার-দেনাই কিন্তু সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। যেহেতু তারা আর ঋণ শোধ করতে পারছে না, তখন তারা মনে করছে একটা পথই খোলা আছে। তা হলে শরীরের কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে দেয়া।”

অধ্যাপক মনিরুজ্জামান তাঁর গবেষণার কাজে মোট ৩৩ জন মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন যারা তাদের কিডনি বিক্রি করেছেন। এদের অনেকে তাকে জানিয়েছেন, ঋণ শোধ করতে না পেরেই তার এই চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

ঋণ শোধের জন্য চাপ

তিনি অভিযোগ করেন গ্রামীণ ব্যাংক বা ব্রাকের মতো এনজিওর কর্মকর্তারা ঋণ শোধের তাগিদ দেয়ার জন্য ঋণগ্রহীতার বাড়ীতে গিয়ে বসে থাকেন। তাদের নানাভাবে হয়রানি করেন, ভয়-ভীতি দেখান। এমনকি পুলিশের কাছে অভিযোগ করবেন বলে হুমকি দেন।

"যেহেতু তারা আর ঋণ শোধ করতে পারছে না, তখন তারা মনে করছে একটা পথই খোলা আছে। তা হলে শরীরের কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে দেয়া"
অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি

“একজন আমাকে জানিয়েছিলেন, ঋণ শোধ করতে না পেরে তিনি এক বছরের জন্য গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, যাতে তাকে এনজিও কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হতে না হয়।”

“এনজিওগুলে ঋণ আদায়ের জন্য যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছিল, তা লোকটি আর সইতে পারছিল না। শেষ পর্যন্ত সে তার একটি কিডনি বিক্রি করে দেয়।”

গ্রামীণ ব্যাংক এধরণের কোন হয়রানি বা চাপ সৃষ্টির কথা অস্বীকার করেছে। গ্রামীণ ব্যাংক আরও জানিয়েছে, আজ পর্যন্ত তারা কোন ঋণ গ্রহীতার বিরুদ্ধে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার জন্য পুলিশে মামলাও করেনি।

গ্রামীণ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, “আমরা যে পদ্ধতিতে কাজ করি, সেখানে এরকম পদক্ষেপ গ্রহণের কোন দরকারই নেই।”

তিনি জানান, ঋণ পরিশোধে কেউ ব্যর্থ হলে তার জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতাদের কোন জরিমানা দিতে হয় না। আর ঋণ গ্রহীতারা যে কোন সময় তাদের ঋণ পরিশোধের মেয়াদ নতুন করে নির্ধারণের আবেদন করতে পারে। তাদের ওপর কোন চাপ নেই।

“যারা ঋণ নিচ্ছেন তাদের কিন্তু ঋণের চাইতেও বেশি টাকা বা ঋণের প্রায় ৭৫ শতাংশের সমপরিমাণ সঞ্চয় আছে। কাজেই ঋণের কিস্তি শোধ করতে গিয়ে তাদের সংকটে পড়ার কোন কারণ নেই।

ব্রাকও ঋণগ্রহীতাদের চাপ দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ব্রাকের একজন বিশ্লেষক মোহাম্মদ আরিফুল হক বলেন, ঋণের কিস্তি পরিশোধের বিষয়টি ব্রাকে সেরকম বড় কোন সমস্যাই নয়।“ঋণ শোধের জন্য আমরা কোন বাড়তি চাপ দেই না।”

ব্রাকের ক্ষুদ্র ঋণের সুদ হচ্ছে ২৭ শতাংশ। অন্যদিকে গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণে সুদের হার সর্বোচ্চ বিশ শতাংশ।

ক্ষুদ্র ঋণ খাতে সুদের হার হিসেবে করা হয় শোধ হতে বাকী আসলের ওপর ভিত্তি করে। এর মানে হচ্ছে শুরুতে যে ঋণ নেয়া হয়েছিল, সেই পুরো ঋণের ওপর সুদ নেয়া হয় না। সুদ দিতে হয় যে টাকা শোধ হতে বাকী তার ওপর।

"ঋণের কিস্তি পরিশোধের বিষয়টি ব্রাকে সেরকম বড় কোন সমস্যাই নয়।“ঋণ শোধের জন্য আমরা কোন বাড়তি চাপ দেই না।"
আরিফুল হক, বিশ্লেষক, ব্রাক

মোহাম্মদ আরিফুল হক স্বীকার করেন যে তাদের যে ৪৩ লক্ষ ঋণ গ্রহীতা রয়েছেন, এদের এক তৃতীয়াংশের একাধিক ঋণ আছে।

“আপনি এরকম লোক পাবেন যারা তিনটি পৃথক সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছে। বাংলাদেশে যেসব ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা আছে, আপনি দেখবেন তিরিশ শতাংশ ক্ষেত্রে তারা একই গ্রাহকদের নিয়েই কাজ করছেন।”

মোহাম্মদ আরিফুল হক বলেন, একই মানুষ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিচ্ছেন কিনা তা যাচাই করার কোন পদ্ধতিগত ব্যবস্থা নেই। তবে তারা কাউকে ঋণ দেয়ার আগে প্রতিবেশিদের দরোজায় কড়া নেড়ে অন্তত তার অর্থনৈতিক অবস্থা জানার চেষ্টা করেন।গ্রামীণ ব্যাংকও দাবি করছে যে কেউ একাধিক ঋণ নিয়েছে কিনা তারা সেটা যাচাই করে দেখে।

কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, বাস্তবে এসব যাচাই করা খুবই কঠিন।

সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় বলা হচ্ছে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ পরিশোধ কাঠামো এবং গ্রামের মানুষের আয়-উপার্জনের অনিশ্চয়তা—এই দুয়ে মিলে সমস্যা অনেক জটিল হয়ে পড়েছে।

জাপানের একটি গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপিং ইকনমিক্সের এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, ঋণ শোধের জন্য অনেকে তাদের সম্পদ বিক্রি করে দিচ্ছে। অনেকে চড়া সুদে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে, যাতে কিস্তি শোধে ব্যর্থতার দায়ে তারা ভবিষ্যতে ক্ষুদ্র ঋণ পাওয়ার অধিকার না হারায়।

দারিদ্র বিমোচন


দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের অবদান নিয়ে সন্দিহান অনেকে
ক্ষুদ্র ঋণের ফলে দারিদ্র বিমোচন কতোটা হচ্ছে?

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থাগুলো যে প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ ধার করে, তাদের গবেষণায় দেখা গেছে মাত্র সাত শতাংশ ঋণ গ্রহীতা দারিদ্র সীমার ওপরে উঠতে পারছে। গবেষণাটি চালানো হয়েছিল ২০০৬-২০০৭ সালে।

এবছরের শুরুতে বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে পরিমাণ অর্থ ঋণগ্রহীতার ধার করেছেন, সেটা তাদের অর্জন করা সম্পদের চেয়ে অনেক বেশি।

মাইক্রো ক্রেডিট সামিট ক্যাম্পেইনের হিসেব হচ্ছে, ১৯৯০ সাল হতে ২০০৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশের এক কোটি মানুষকে দারিদ্রের চক্র থেকে মুক্ত করেছে ক্ষুদ্র ঋণ।

কিন্তু বাংলাদেশে যেখানে মানব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে অবৈধ লেন-দেন বাড়ছে, সেখানে ভালো জীবনের আশায় মিথ্যে প্রলোভনের ফাঁদে পড়বেন আরও অনেক গরীব মানুষ।

জয়পুরহাটের কালাই গ্রাম থেকে অল্প দূরে আরেকটি গ্রাম মোলামগারি। এই গ্রামের মোহাম্মদ মেহেদি হাসান তার যকৃৎ বিক্রি করতে রাজী হওয়ার আগে পর্যন্ত জানতে না আসলে যকৃৎ কি?

মেহেদি হাসানকে বলা হয়েছিল যকৃতের অংশবিশেষ অপসারণের জন্য তাঁকে সাত লক্ষ টাকা দেয়া হবে। তাঁর এই মহৎ কাজের কল্যাণে সিঙ্গাপুরের এক মানুষের জীবন বাঁচবে।

ঢাকার এক বেসরকারি হাসপাতালে মেহেদি হাসানের যকৃতের অংশবিশেষ অপসারণ করা হয়। তিনি জানেন না আসলে ঠিক কতটুকু।

সিঙ্গাপুরের যে মানুষের দেহে মেহেদি হাসানের যকৃত প্রতিস্থাপন করা হয়, সেই মানুষটি বাঁচে নি।

আর ঢাকা থেকে বাড়ী ফিরে আসার দুদিন পর এই খবর পান মেহেদি হাসান।

‘আমি ভেবেছিলাম, লিভার কেটে নেয়ার পরও আমার কোন অসুবিধা হবে না। কিন্তু মাঝে মধ্যে আমার বুকে বেদনা হয়। আমাকে দিনে ৫০ থেকে ৬০ বার প্রস্রাব করতে হয়।

কর্তিত যকৃৎ দান করে মেহেদি হাসান পেয়েছিলেন দেড় লক্ষ টাকা। কিন্তু তারপরও ঋণ শোধের জন্য তাকে বিক্রি করতে হয়েছে নিজের পৈতৃক বাড়ী।

ক্ষুদ্র ঋণ যে বিশ্বের নানা প্রান্তে লক্ষ লক্ষ মানুষকে আত্মনির্ভর করেছে তাতে সন্দেহ নেই।

কিন্তু এটাও সত্য, বিশ্বে ধনী-দরিদ্রের মেরুকরণ যত বাড়ছে, দরিদ্র মানুষের আরও বেশি করে ঋণগ্রস্থ হবে- পরিণামে তাদের অনেকে নিজেদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির মতো চরম ঝুঁকিপূর্ণ পথেও যাবে।

কালাই গ্রামে এই দুর্ভাগ্যের শিকার যারা হয়েছেন, তারা হয়তো ভাবছেন, এর পরিণাম যদি তারা আগে জানতেন!
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×