ধর্মীয় গ্রন্থগুলোর সার্বজনীন ব্যখ্যা কি? ধর্মীয় একই বাণীর ব্যাখ্যা মাওলানা বা পুরুতভেদে ভিন্ন হয়। শিয়া, সুন্নি, আহমদীয়া, কাদিয়ানী থেকে শুরু করে শুধুমাত্র মুসলিমদের মধ্যেই হাজারটা বিভাজন। এবং এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে মারামারি-ঠাপাঠাপি লেগেই রয়েছে। আবার প্রত্যেক গোষ্ঠীই কোরান-হাদিসকে অনুসরণ করেন।
সুন্নীদের হাতে শিয়া এবং শিয়াদের হাতে সুন্নী খুন হচ্ছে। প্রত্যেকেই নিজেদেরটা ঠিক মনে করে এবং অপরটাকে বেঠিক মনে করে। তাহলে ইসলাম ধর্মের সার্বজনীন ব্যাখ্যা কি? কে ঠিক?
আমাদের দেশের সুন্নী মুসলিমরা বলবে যে, তারা সঠিক। কিন্তু সেটা কোনো উত্তর নয়।
পাকিস্তানে তালেবানেরা মসজিদে বোমা হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটাচ্ছে। আমাদের দেশের অনেক মুসলিম বলবে, ওরা ইসলামের পথে নেই। কিন্তু তালেবানেরা যারা এই কাজটি করছে তাদের বক্তব্যও জানা উচিত। তারাও কোরান বের করে জিহাদের জন্য কত কিছু করা যায় তারও ব্যাখ্যা দিবে। অর্থাৎ সবার কাছেই তালগাছ আমার। এখানে সার্বজনীন কোনো মানদণ্ড নেই।
এই সামহয়্যারেই কত মুসল্লি ধর্মীয় পোস্ট মারার মাধ্যমে ডিজিটাল তাবলীগ করছেন। এই মুসল্লিদের মধ্যেও কিবোর্ডের ঠাপাঠাপি লেগেই রয়েছে। কেও বলে জাকির লায়েক ভুল, কেও বলে সঠিক। এবং একে অপরকে নির্বোধ জ্ঞান করেন। যদিও এটা কিবোর্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে তাই রক্ষা। কিন্তু সার্বজনীন গ্রাহ্য ব্যাখ্যা না থাকায় পৃথিবী জুড়ে চলছে ঠাপাঠাপি। অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যেও বিভাজন রয়েছে। তবে তূলনামূলকভাবে সহনশীল হওয়ায় তাদের মধ্যে ঠাপাঠাপির মাত্রা কম মুসলিমদের তূলনায়। ঠাপাঠাপির মাত্রা কম হোক বা বেশি হোক, ধর্মগন্থ তথা ঈশ্বরের বানীর সার্বজনীন না হওয়ায় পৃথিবীজুড়েই অশান্তি রয়েছে। যদিও কথিত শান্তির জন্যই নাকি ধর্মের উৎপত্তি।
শান্তির জন্য ধর্মের আবির্ভাব হলেও ধর্মের কারনেই মানবজাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে এবং হচ্ছে। আমাদের দেশের মুসলিমদের অনেকেই এর ব্যাখ্যা করে বলেন যে, ইসলামের ভুল ব্যাখ্যার কারনে অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
আমার প্রশ্ন হলো, ধর্মে বা ধর্মীয় গ্রন্থে ভুল ব্যখ্যার অবকাশ রাখা হলো কেন? ধর্মে বা ধর্মীয়গ্রন্থগুলোতে ভুল ব্যাখ্যার অবকাশ রাখার কারনেই তো এতো অশান্তি। এর ব্যর্থতাও ধর্মের ওপরই বর্তায়।
সৃষ্টিকর্তা যদি বানী দিতে চান তবে তিনি তার সৃষ্টিজগতের সব মানুষের জন্যই বাণী দিবেন। এবং সবাই সেটা বুঝবে। কারন বানী হবে সার্বজনীন। কিন্তু বানীর ব্যাখ্যা সার্বজনীন না হওয়ায় শিয়া-সুন্নি থেকে হাজারটা গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়েছে মানুষ। বানী সার্বজনীন না হওয়ায় মানুষ ভিন্ন ব্যাখ্যা করে নানাভাবে বিভক্ত হয়ে মারামারি-ঠাপাঠাপি করছে। এই অশান্তির দায়ভার তাহলে কার ওপর বর্তায়?? ভুল ব্যাখাকারীদের নাকি ভুল ব্যাখ্যার অবকাশ রাখার কারনে??
ব্লগের ওলামাদের প্রতি আমার এই প্রশ্নটি রেখে লালনের গানের একটি উক্তি স্মরণ করছি
''এক কানা কয় আরেক কানারে
চলো এবার ভবো পাড়ে
নিজে কানা পথ চেনে না
পরকে ডাকে বারংবার''
আরও কিছু অসঙ্গতি নিয়ে আমার মধ্যে কিছু প্রশ্ন রয়েছে। এ নিয়ে 'সৃষ্টিকর্তা কি ছোটোলোক'' শিরোনামে আমি একটি গদ্য রচনা করেছিলাম। সময় থাকলে পড়ার আহবান জানাই
Click This Link