রাশেদের খুব মন খারাপ,মুখ ভার করে ঘরে বসে আছে সে।বউ চলে গেলে যা হয়।পাড়া পড়শিরা এসেছে,কেউ শান্তনা দিচ্ছে,আবার কেউ মুখ-বিকৃত করে বলাবলি করছেন- অমন মেয়েমানুষ ঘরে না থাকায় ভাল।
রাশেদের কপাল মন্দ,এদানিং সময়টা খারাপ যাচ্ছে। কাজে বেরিয়ে এই ক-দিনে একটা কিছুও হাত সাফাই করতে পারেনি।বাড়ি ফিরে শুনল--বউ পালিয়েছে।রাশেদ পেশায় একজন চোর।পড়শীরা সবাই তাকে ঘৃনা করে,তবও এখন তার বিপদে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন,এত কষ্টের মাঝেও সবার সহানুভূতি দেখে নিজেকে ধন্য মনে করছে সে,কারণ এই মানুষ গুলো আজীবন তাকে ঘৃনাই করেছে।
চুরির বাজার খারাপ হয়ে যাচ্ছে দিনদিন।রাশেদের মত চুনোপুঁটিরা খাবি খাচ্ছে,আর রাঘব-বোয়ালরা
দান মারছে।সোনার জিনিষ এখন খুব কম লোক ব্যবহার করে,এখন ইমিটেশন-যুগ।পিতলের থালা-বাটির জায়গা নিয়েছে মেলামাইন,স্টেনলেস স্টিল।বাড়ীতে কেউ এখন টাকা রাখেনা, টাকা রাখে ব্যাংকে।সেই তুলনায় পকেটমারদের রমরমা।রেজা সর্দার কতদিন ডাকছে--আমার দলে ভিড়ে যা,এমন কাজ শিখিয়ে দেব,রাজার হালে থাকবি।অন্যদিকে মহাজন চোখ রাঙায়-আমাকে ছাড়লে হাপিশ করে দেব,যেমন করে হোক মালপত্র আন।
রাশেদ গেছিল অন্য গ্রামে চুরি করতে।আর এরই মধ্যে বউ পালিয়েছে।না,কোন চোরের হাত ধরে নয়,এক ফেরীওলার সাথে।পড়শীদের কেউ একজন বলল- পালিয়ে আর যাবে কতদূর,শেষগতি ওই পতিতা-পল্লী।একজন বলল- চলে গেছে তো কি হয়েছে, তুই আবার বিয়ে করবি রাশেদ।
রাশেদ বলল-না।
-তবে যে তোর বংশের নাম মুছে যাবে।
-যাক মুছে,আমার বাবা চোর ছিল,তাই আমি চোর।বউ পালিয়ে ভালই করেছে,চোর জন্ম দেওয়ার চেয়ে বেশ্যাগিরি ঢের ভাল।
পড়শীরা সবাই নিরবে চলে গেলেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:২০