চেম্বারে বসে একটি মামলার ফাইল তৈরী করছে এডভোকেট হাসান মাহমুদ। হঠাৎ এক যুবকের প্রবেশ।
-বসতে পারি?
-অবশ্যই.........
-বিপদে পড়ে এসেছি,একটু সাহায্য করতে পারবেন?
-বলুন কি করতে পারি আপনার জন্য?
-একটা সুইসাইড নোট লিখবো।কিন্তু ...কিভাবে লিখবো বুঝতে পারছি না,তাই আপনার শরণাপন্ন হওয়া।
-এ এমন কঠিন কাজ কি?ঐ লিখে দিন আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।
-তাহলে তো মশায় আপনার কাছে আসা লাগতনা,আমার মৃত্যুর জন্য আসলেই একজন দায়ি।আর সেজন্যেই আমি সুইসাইড নোট টা লিখতে চাই,কিন্তু কি লিখবো তা বুঝতে পারছি না।তাই ভাবলাম আপনি উকিল মানুষ.........
-আপনি কি সিরিয়াস?
হাসান সাহেবের কথা শুনে ছেলেটা হেসে উঠলো।হাসিটার মাঝে একটা তীব্র তাচ্ছিল্য লুকিয়ে আছে।তার মানে সে সিরিয়াস।মানুষ যখন খুব কাছের মানুষ কিংবা প্রিয়জনের কাছ থেকে অনেক বেশী কষ্ট পায়- তখন সে আত্নহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাবোধ করেনা।
-কি ব্যাপার হেল্প করবেন না?
-হুম...... অবশ্যই করবো,তার আগে বলবেন আপনি কেন আত্নহত্যা করতে চান।যদি বলতে আপনার আপত্তি না থাকে।
-হ্যাঁ বলছি, তবে বলে রাখছি-আমাকে কোন প্রকার উপদেশ দিতে পারবেন না।
-দেখুন আমি উকিল,উপদেশ দিতে ফি নেই।আপনি যেহেতু সুইসাইড করবেন,সেহেতু এখন আপনার কাছে টাকা না থাকাটাই স্বাভাবিক।আর তাই আপনাকে উপদেশ দেবার প্রশ্নই আসে না।
-আমি একজনকে ভালবাসতাম......
-লাভ কেস......??
-হুম
-আপনাকে ছেড়ে আপনার চেয়ে স্মার্ট,টাকা ওয়ালা ছেলের প্রেমে পড়েছে?
-না,বিয়ে করেছে।
-ও আচ্ছা,আসুন সুইসাইড নোট লেখি।
-একটুতা ড়াতাড়ি লিখুন প্লিজ।
-আচ্ছা ওর কি শাস্তি আপনি চান?
-অনেক অনেক বড় শাস্তি যেন হয় ওর।
হাসান সাহেবের কলম ছুটে চলেছে খসখসে কাগজের বুকে।লেখার দিকে তাকাচ্ছে না ছেলেটি,অন্যমনস্ক হয়ে কি যেন ভাবছে।একটু লিখার পর হাসান সাহেব......
-মেয়েটি আপনাকে বিয়ে করতে চায় নি কেন?
-ওর বাসায় ম্যানেজ করতে পারেনি,বলেছে সে পরিস্থিতির স্বীকার,সে ই... কারন,তাই বাবা মার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করেছে।জানিনা অন্যকোন কারণ ছিল কিনা।
-মেয়েটার তো বিরাট বড় সাজা হওয়া দরকার।বাসায় ম্যানেজ না করে প্রেম করতে পারিস,আর বিয়ে করতে পারিস না?মেয়েরা এমনই হয়,প্রেম করে নিজের ইচ্ছেয় আর বিয়ে করে মা বাবার ইচ্ছায়।
-সেজন্যেই আপনি এমন ভাবে লিখে দিন যেন ওর অনেক বড় সাজা হয়।
ছেলেটি অন্যদিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছে।তারমানে ছেলেটির কষ্ট হচ্ছে।এটাই সুযোগ.....
-আপনি ওকে অনেক বেশি ভালোবাসেন তাই না?
-হ্যা অনেক অনেক বেশী।সেও আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসতো।আচ্ছা ওর শাস্তি কি হতে পারে?
-অনেক বড় শাস্তি হবে।তীব্র যন্ত্রনা দিয়ে মেরেও ফেলতে পারে,বিবেকের তাড়নায় সেও সুইসাইড করতে পারে,কারণ পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় আদালত হচ্ছে মানুষের বিবেক।
-অনেক যন্ত্রনা দেবে?
-হ্যা অনেক বেশি যন্ত্রনা,যা সহ্য করার ক্ষমতা মানুষের নেই,সাজাও হতে পারে।
-তাহলে এরকম শাস্তি দেয় কেন?
-ঐ যে সুইসাইড নোট যারা লিখে তাদের জন্য। আপনি ওর জন্য সুইসাইড করলে পরোক্ষভাবে আপনার মৃত্যুর জন্য ওই মেয়েই দায়ী।
ছেলেটা ফ্যালফ্যাল করে হাসান সাহেবের দিকে তাকিয়ে আছে।
-আমি সুইসাইড করবো না,আমি ওকে এত বেশি যন্ত্রনা দিতে পারবো না।
-আমি জানতাম পারবেন না।তারপরেও লিখে দিলাম,এই নিন আপনার সুইসাইড নোট।
ছেলেটি সুইসাইড নোটের দিকে তাকাল- তাতে লিখা......
" ভালবাসার মানুষের অমঙ্গল কামনা করা যায়না,
ভালবাসার মানুষের কখনো ক্ষতি করা যায়না "
ছেলেটি নিঃশব্দে বেরিয়ে গেল,বিষণ্ণ মনে হেটে চলেছে পিচ ঢালা পথ ধরে...............