গতকাল আপনাদের দেখিয়েছিলাম আমাদের চলচ্চিত্রের সোনালি দিনের ছায়াছবি গুলোর দুর্লভ কিছু পোস্টার । আজ আপনাদের সেই দুর্লভ পোস্টারগুলোর শেষ পর্ব দিলাম যেখানে আজ পাবেন অনেক কালজয়ী ছবির অসাধারণ সব পোস্টার । তাহলে আসুন দেখতে থাকি -
[img|https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/images/thumbs/Kobiokabbo_1368541000_38-Photo0946.jpg
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত প্রথম ছবি 'ওরা ১১ জন' ।
[img|https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/images
ত্রিভুজ প্রেমের অমর ছবি 'অবুঝ মন'। শৈশবে পরিবারের সাথে হলে দেখা অন্যতম সেরা একটি সাদাকালো ছবি ।
৭০ দশকের কালজয়ী ত্রিভুজ প্রেমের ছবি 'অবুঝ মন' । ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন রাজ্জাক, শাবানা, সুজাতা, শওকত আকবর, খান জয়নুল , হাসমত প্রমুখ ।
সঙ্গীত পরিচালনায় - শহীদ আলতাফ মাহমুদ
চিত্রগ্রহন ঃ আব্দুল লতিফ বাচ্চু
পরিচালনায় - কাজি জহির
ওয়াসিম, ববিতা , জাভেদ , সুচরিতা ও মিজু আহমেদ এর একটি দুর্দান্ত ছবি ছিল 'নিশান'
সারেং বউ ঃ ৭০দশকের শেষ দিকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের আলোচিত , সমালোচিত ব্যবসা সফল কালজয়ী এবং ১০০ ভাগ বাণিজ্যিক একটি ছবির নাম ‘সারেং বউ’ । জাহাজের এক সারেং এর জীবন ও পারিপার্শ্বিক ঘটনার উপর নির্মিত ছবিটি যা এইকালে নির্মাণ করলে অনেকে ছবিটিকে তথাকথিত আর্ট ফিল্ম বলে ভাবতে পারেন । এখনও অনেকে এই ছবিটিকে আর্টফিল্ম / ভিন্নধারার ছবি মনে করে ভুল করে থাকেন । ‘সারেং বউ’ একটি পরিপূর্ণ (১০০ভাগ) মূলধারার বাণিজ্যিক ছবি ছিল। আসলে তিন দশক পরে আজও আলম খানের সুরের ও আব্দুল জব্বারের কণ্ঠের কালজয়ী গান ‘ ওরে নীল দরিয়া’ গানটি শুনলে সকল শ্রোতা দর্শকদের ছবিটি দেখার স্বাদ জাগে সেই আগের মতোই । খ্যাতিমান উপন্যাসিক ও লেখক শহীদ শহিদুল্লাহ কায়সারের একটি উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়ন ‘সারেং বউ’ যার পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন । ছবিটির শেষ দৃশ্যটি ছিল সেই সময়ে বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সাহসি ,আলোচিত ও সমালোচিত দৃশ্য। ফারুক , কবরী, গোলাম মোস্তফা, আরিফুল হক, নার্গিস , বাবর, দারাশিকো ও শিশুশিল্পী অনুর সাবলীল অভিনয়, রফিকুল বারির চিত্রায়ন আর আব্দুল্লাহ আল মামুন এর দক্ষ পরিচালনায় ছবিটি হয়েছিল জীবন ঘনিষ্ঠ একটি শৈল্পিক ছবি । আজও দর্শক ‘সারেং বউ’ ছবির কথা ভুলতে পারেনি ও পারবেও না । আমাদের মুলধারার বাণিজ্যিক ছবি যে কত সিমাবদ্ধতার মাঝেও কত মান্সম্পন্ন ছবিতে ভরপুর ছিল তার একটি অন্যতম উদাহরন ‘সারেং বউ’ ।
চিত্রনায়ক সোহেল রানার প্রথম ছবি যার প্রযোজক ও পরচালক ছিলেন তিনি নিজেই মাসুদ পারভেজ নামে ।
আমার দেখা অন্যতম একটি সেরা ছবি কবির আনোয়ারের সুপ্রভাত যেখানে একদল নতুন অভিনেতা অভিনেত্রী অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন ।
দেওয়ান নজরুল এর একটি সুপারহিট অ্যাকশন ছবি দোস্ত দুশমন । যা ছিল হিন্দি 'শোলে'র রিমেক । এই ছবিতে জসীম ভিলেন হিসেবে দুর্দান্ত অভিনয় করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন ।
প্রয়াত পরিচালক শিবলি সাদিক এর প্রথম পরিচালিত ছবি 'নোলক' যা এক কথায় অসাধারণ । এই ছবিটির সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন ফেরদৌসি রহমান ।
কাজী হায়াত এর পরিচালিত প্রথম ছবি 'দি ফাদার' । এই ছবিটি ব্যবসায়িক ভাবে ব্যর্থ হওয়ায় ছবির প্রযোজকের অফিসে কাজী হায়াত আর প্রবেশ করতে পারেননি । সেই থেকে কাজী হায়াত পুরোপুরি বাণিজ্যিক ছবি বানানো শুরু করেন যা তাকে এনে দেয় খ্যাতি এবং তিনি হয়ে উঠেন আমাদের বাণিজ্যিক ছবির অন্যতম সাহসী ও মেধাবী পরিচালক যিনি একাধিক রাজনৈতিক বক্তব্য প্রধান ছবি উপহার দিয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন ।
হলে দেখা অন্যতম সেরা ও প্রিয় একটি ছবি এই 'ছুটির ঘণ্টা' । পরিচালক আজিজুর রহমান এর একটি কালজয়ী সিনেমা । আজো হলের ভেতর থেকে দর্শকদের টলমলে চোখ নিয়ে বের হওয়ার কথা মনে পড়ে ।
প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র 'এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী' ।
জন্ম থেকে জ্বলছি ঃ ১৯৮১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাণিজ্যিক ছবিগুলোর মাঝে একটি অসাধারন ছবির নাম ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ ছবিটি । আমজাদ হোসেন এর কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ , গীত ও পরিচালনায় এবং আলাউদ্দিন আলীর সঙ্গীত পরিচালনায় অসাধারন সব গানের ছবি ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ । রফিকুল বারির অসাধারন চিত্রায়ন এবং বুলবুল আহমেদ , ববিতা, আশিস কুমার লৌহ , আনোয়ারা ও মাস্টার শহীদ এর দুর্দান্ত সাবলীল অভিনয়ে ছবিটি হয়ে উঠেছিল একটি জীবন ঘনিষ্ঠ ছবি । এই ছবিটির একাধিক গান রয়েছে আমাদের কালজয়ী বাংলা চলচ্চিত্রের গানের তালিকায় যা হলো বাবা বলে গেলো - , ‘জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো’ ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসতো ‘ , ‘দুঃখ ভালোবেসে প্রেমের খেলা’ গানগুলো ।।
৮০র দশকের শুরুতে মুক্তিপ্রাপ্ত মাসুদ পারভেজ পরিচালিত একটি জমজমাট সামাজিক অ্যাকশন ছবির নাম ‘জীবননৌকা’ । একজন নিতিবান পুলিশ অফিসারের কাহিনী নিয়ে গড়ে উঠেছিল ছবিটির গল্প যে চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন প্রযোজক –পরিচালক মাসুদ পারভেজ নিজেই অর্থাৎ সোহেল রানা । ছবিটির গল্প যেমন ছিল দুর্দান্ত ঠিক তেমনি গানগুলোও ছিল অসাধারন । সবগুলো গানের সুর করেছিলেন সুরসম্রাট আলম খান । ছবিটির গানগুলোর মাঝে কালজয়ী গানে ঠাই করে নিয়েছল তুমি কি এখন আমারই কথা মুক্তি পাওয়ার অনেক পরে সপরিবারে ছবিটি দেখেছিলাম সেই ছেলেবেলায় যা আজ এক টুকরো সুখস্মৃতি হয়ে আছে ।
শরৎচন্দ্রের কালজয়ী উপন্যাস 'দেবদাস' এর প্রথম নির্মাণ
এর পোস্টার ।
শৈশবে পরিবারের সাথে দেখা অন্যতম একটি প্রিয় ছবি 'পুরস্কার' এর পোস্টার ।
পরিবারের সাথে হলে দেখা ভারত -পাকিস্তান ও বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনার একটি অসাধারণ বাণিজ্যিক ছবি এহতেশাম পরিচালিত 'দূরদেশ' এর পোস্টার । এই ছবিতে ছিলেন নাদিম, শর্মীলি ঠাকুর, ববিতা সহ সব নামীদামী তারকারা ।
মমতাজ আলীর নসীব ঃ
৮০র দশকের শুরুর দিকে মুক্তিপ্রাপ্ত সামাজিক অ্যাকশন ছবির জনপ্রিয় পরিচালক মমতাজ আলী পরিচালিত সুপারহিট ছবি 'নসীব' । পরিবারের সাথে হলে দেখা ছবিগুলোর মধ্য আমার কাছে আজো ভালো লাগার তালিকায় থাকা ছবির মাঝে একটি এই ছবিটি । ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন উজ্জ্বল, শাবানা, ইলিয়াস কাঞ্চন, রোজিনা , টেলিসামাদ , দারাশিকো প্রমুখ । এই ছবির সংগীত পরিচালনায় ছিলেন আলাউদ্দিন আলী । ছবিটির পরিবেশনায় ছিল 'এঞ্জেল ফিল্মস' ।
১৯৮৮/৮৯সালের দিকে সিলেটের নন্দিতা সিনেমা হলে মা খালাদের নিয়ে ১০ /১২ জনের একটা বিশাল দল মিলে ছবিটি দেখেছিলাম । ক্যানসার আক্রান্ত এক তরুনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয় ছবিটি ......সাথে ছিল আলম খানের সুর করা দুর্দান্ত সব গান ...... এই ছবিগুলো যারা দেখেনি তারা কোনদিন বুঝতে পারবে না আমাদের তত্থপ্রজুক্তির সুবিধাহীন দিনগুলোতে মুলধারার বাণিজ্যিক ছবিগুলো কি ছিল ,কেমন ছিল তা । আলম খানের সুরের এই ছবির গানগুলো ছিল অসাধারণ - তুই তো কাল চলে যাবি যা আজো বারবার শুনি ।
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ব্যবসা সফল ছবি 'বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না'র পোস্টার । তোজাম্মেল হক বকুলের প্রথম পরিচালিত ছবি ছিল এটি । শুধু কলকাতার একটি প্রেক্ষাগৃহে চলেছিল টানা ৫২ সপ্তাহ যা বাংলা চলচ্চিত্রের একটি বিরল রেকর্ড ।
'বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না ' ছবির পর যে ছবিটিকে সর্বকালের সেরা ব্যবসাসফল ছবি হিসেবে ২য় স্থান দেয়া হয় এটি সেই 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত 'ছবির পোস্টার। এই ছবির মাধ্যমেই সুপার হার্টথ্রব সালমান ও মৌসুমির চলচ্চিত্রের আগমন ঘটে আর সেই সাথে শুরু হয় বাংলা চলচ্চিত্রের দুর্দান্ত সেরা সময়ের শেষ কয়েকটি বছর ।
এই পোস্টটি স্নেহের ছোট ভাই ব্লগার দীপ উৎসর্গ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম মাত্র ।
একটি Radio bg24 এর নিবেদন